দেখতে দেখতে প্রায় ৯ মাস পার করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সময়ে সরকার বেশ কিছু ‘সংস্কার কমিশন’ গঠন করে তার সুপারিশের ‘বাস্তবায়ন’ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রীতিমতো দর-কষাকষি করছে। কোনটি তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য আর কোনটি ভবিষ্যতে বাস্তবায়নের মুখ দেখবে, তা নিয়ে আলোচনাও চলছে। সরকারের মনোযোগ ‘সংস্কার’কেন্দ্রিক হলেও রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোটি (শিক্ষা) নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবনাটি ঠিক কোন ধরনের, তা স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারেনি। এমনকি এই শিক্ষাব্যবস্থার ভেতর যুগের পর যুগ ধরে জন্ম নেওয়া ছত্রাককেন্দ্রিক সমস্যাগুলো নিরসনে কোনো কার্যকর ভূমিকা দেখা যায়নি। বরং পুরোনো নিয়মের আবহে চলছে শিক্ষার গাড়িটি। কোথাও গিয়ে থামছে আবার ধাক্কা দিয়ে চলছে।

অভ্যুত্থান–পরবর্তী সরকারের নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হলেও দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার জায়গাটির বড় অংশজুড়ে ছিল শিক্ষার সংস্কার। শিক্ষাব্যবস্থাকে ঠিক কীভাবে গতিশীল করা যায় এবং সংস্কার কমিশন ছাড়াই যেসব পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে এর আগে প্রথম আলোয় লিখেছি। অনেকেই খুব ভালো ভালো প্রস্তাব পত্রপত্রিকায় লিখছে।

কিন্তু পরিতাপের বিষয়, শিক্ষা নিয়ে আমাদের রাষ্ট্রের উদাসীনতা যেমন আগে ছিল, ঠিক তেমনি অন্তর্বর্তী সরকার এটাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে না বা করার ইচ্ছা দৃশ্যত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু কেন এমন হবে? যে ছাত্ররা তাজা রক্ত ঢেলে তাদের ক্ষমতায় আনল, যে শিক্ষার্থীরা দিনের পর দিন যাতনার মধ্য দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কাটিয়ে দিয়েছে, সেই শিক্ষার্থীদের আওয়াজ কেন এই সরকার শুনছে না? শিক্ষা উপদেষ্টা পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থার কি আদৌ কোনো পরিবর্তন হয়েছে?

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের আগে থেকে আমরা ‘নতুন শিক্ষাক্রম-২০২১’ বাতিল নিয়ে নানা সময় পত্রপত্রিকায় লিখে আসছি। এটা নিয়ে দেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। ফলে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর আগের সরকারের ওই শিক্ষাক্রম বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়, যা সবার মনে স্বস্তির বার্তা দেয়। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপানোর উদ্যোগ নেয়।

দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দেশজুড়ে ‘শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের’ মধ্যে যে সম্পর্কের অবনতি আমরা দেখতে পেয়েছি, সেই ক্ষত আজও বিদ্যমান। সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের যেভাবে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, যেভাবে শিক্ষকদের অপমান করা হয়েছে, সেটি দেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা ছিল। বিশৃঙ্খল জনতার ওই আক্রমণের পর সারা দেশের শিক্ষকদের মধ্যে ‘শিক্ষার্থী’–বিষয়ক একধরনের ভীতির সঞ্চার হয়েছে, যা কাটিয়ে ওঠা কতটা সম্ভব হয়েছে, তা আমার জানা নেই। তবে এই সম্পর্কের অবনতির খেসারত হয়তো আমাদের জাতিকে দিতে হবে।

নিষ্প্রয়োজনীয় এই কর্মকাণ্ডে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা দেশের শিক্ষকসমাজের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল। যেখানে ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে অভিভাবকত্ব ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক হওয়া উচিত ছিল, সেখানে ‘গণ-অভ্যুত্থানে’ শক্তি সঞ্চয় করা শিক্ষার্থীদের ভেতর ছড়িয়ে পড়া অধিকারের বেশি ‘ক্ষমতার’ সম্ভার দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতর একধরনের পরিবর্তন ঘটেছে, যা নিয়ে কেউই কথা বলার সাহস পায়নি। ফলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ফিল্মি স্টাইলে হামলার কথা জানিয়ে সংঘর্ষ–মারামারিতে জড়িয়েছে, ভাঙচুর করেছে, তা শিক্ষাব্যবস্থাপনায় জড়িত ব্যক্তিদের মনে ভীতির সঞ্চার করেছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের ভেতর নয়, এ ধরনের পরিস্থিতে ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়’ কার্যত দুর্বল হয়ে পড়েছিল। যার কারণে এই মন্ত্রণালয় এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে গত বছর শিক্ষার্থীদের সামান্য আন্দোলনে ‘বেশ কিছু বিষয়ে অটো পাসের’ ব্যবস্থা করে নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করে দেয়।

পাঠ্যপুস্তকের নিয়মতান্ত্রিক পড়াশোনার বাইরে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীরা দেশ গঠনে বেশি মনোযোগ দেয়। যার কারণে দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমই গণ-অভ্যুত্থানে জন্ম নেওয়া নেতাদের হাতে চলে যায়, যার খবর পত্রপত্রিকায় বের হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শক্তিশালী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ার যে আকাঙ্ক্ষা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে তৈরি হয়েছিল, তার বাস্তব প্রেক্ষাপট আমরা তৈরি করতে পারিনি। যদিও ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ছাত্রসংগঠনটির দখলে থাকা আবাসিক হলগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ফিরলেও ‘ছাত্ররাজনীতি’ নিয়ে দীর্ঘদিনের যে অস্বস্তি ছিল, তা দূর করার সৎ সাহস সরকার দেখাতে পারেনি। বরং কেবল ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকে ‘বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক’ লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির চর্চার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

যার কারণে আমরা ক্যাম্পাসগুলোয় সেই পুরোনো আধিপত্যের রাজনীতি চরিত্রই দেখতে পাচ্ছি। আগের সরকারের সময় যেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের পক্ষে স্লোগান দিত, সেখানে নতুন ক্ষমতাসীন ও অর্ধক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলোর পক্ষে স্লোগান দিচ্ছে। ফলে ‘গণতান্ত্রিক সরকার’ ব্যবস্থায় ফিরলেও ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসগুলোয় আধিপত্যের ছাত্ররাজনীতির মুনশিয়ানা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যেভাবে দলীয় কোটায় ‘উপাচার্য’রা পদায়ন হতেন, ঠিক অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরও একই প্রক্রিয়া উপাচার্যরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ফলে সরকারের আজ্ঞাবহ কিংবা সহমতের উপাচার্যরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্বীয় ‘রাজনৈতিক মতাদর্শের’ মানুষগুলোকে পদায়ন ও সুবিধা দেওয়ার চর্চা অব্যাহত রেখেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ‘একক ভর্তি পরীক্ষা’ আয়োজনের বড় সুযোগ ছিল এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়। কিন্তু আমরা দেখলাম, এই সরকার বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও ‘গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি’ পরীক্ষায় বসা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাঙন ঠেকাতে পারল না। ভবিষ্যতে এই সরকারের দুর্বলতার সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে স্মার্ট পদ্ধতিটি আদৌ চলমান থাকবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। মূলত সরকারের ভিশন স্পষ্ট না হওয়ায় কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নখদন্তহীন হয়ে পড়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সুযোগ নিয়েছে।

স্কুল ও কলেজের শিক্ষাব্যবস্থার যে পরিবর্তন প্রয়োজন, তা নিয়ে আগের সরকার ‘শিক্ষাক্রম’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেও সেটি যে কারণে অযৌক্তিক ছিল, যে কারণে বাস্তবায়নের অযোগ্য ছিল, ঠিক সেই কারণগুলোর সুরাহা প্রয়োজন ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের। আমরা ভবিষ্যতে ঠিক কোন ধরনের ‘শিক্ষাক্রম’ তৈরি করব, সেটি ঠিক কাদের অংশগ্রহণে হবে, তা আজ পর্যন্ত সরকারের পরিকল্পনায় ঢোকেনি বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। আমরা ঠিক কত দিন ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের পড়াব, তা–ও স্পষ্ট হয়নি। ফলে বিশেষ সময়ে দায়িত্ব নেওয়া সরকার ‘শিক্ষাকাঠামোর’ পরিবর্তন নিয়ে ঠিক কতটা ভাবছে, তা জানা যাচ্ছে না।

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর চার মাস পর শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে পেয়েছে, ঠিক কী কারণে, কাদের গাফিলতিতে শিক্ষার্থীরা বছরের এক–তৃতীয়াংশ সময় পার করার পর পাঠ্যবই পেল, তার যেমন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আসেনি, তেমনি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে তারা ক্ষমাও চায়নি। ফলে সমন্বয়হীনতার দৃশ্যায়ন আমরা দেখতে পেয়েছি।

শিক্ষার ওপর মরচে পড়া সংস্কৃতিগুলো যদি বিলীন করা না যায়, তাহলে ধারণা করছি, দেশের অন্যান্য সংস্কার যতই হোক, তার সুফল সাধারণ মানুষ পাবে না। শিক্ষাকাঠামোর পরিবর্তন নিয়ে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে না পারলে ভবিষ্যতে আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে।

ড.

নাদিম মাহমুদ গবেষক, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ য় ত ব গ রহণ র শ ক ষ ব যবস থ সরক র র পর ক ষ মন ত র আম দ র র জন ত ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

মণিপুরে জমি ঘিরে সংঘাত, ‘ক্রসফায়ারে’ কুকি গ্রামপ্রধান নিহত

ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে কুকিদের সঙ্গে মেইতেই সম্প্রদায়ের সংঘাত আবার বাড়ছে। দক্ষিণ মণিপুরের চূড়াচাঁদপুর জেলার লাংচিয়াংমানবি নামের একটি গ্রামে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ কুকিদের লাংচিয়াংমানবির গ্রামপ্রধানের স্ত্রী নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম হৈখোলহিং হাওকিপ।

মণিপুর পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তাদের ওপরে গুলি চালানো হলে তারা পাল্টা গুলি চালায়। এতে হাওকিপ নিহত হন।

কুকি-জো সম্প্রদায়ের বক্তব্য

তবে এই মুহূর্তে মণিপুরে আদিবাসীদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সংগঠন ইন্ডিজিনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরাম (আইটিএলএফ) জানিয়েছে, হৈখোলহিং হাওকিপ গ্রামপ্রধানের স্ত্রী ছিলেন না। তিনি নিজেই লাংচিয়াংমানবি গ্রামে কুকি-জো সম্প্রদায়ের প্রধান ছিলেন।

আইটিএলএফ বলছে, হাওকিপের একমাত্র অপরাধ, তিনি কুকি-জো সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই চূড়াচাঁদপুর জেলায় ‘ধর্মঘটের’ ডাক দিয়েছে আইটিএলএফ। কুকি-জো নাগরিক সংগঠন নামে আদিবাসীদের একটি সংগঠন ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছে।

আইটিএলএফ বলেছে, এ জঘন্য কাজটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি আরেকটি লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করে হামলা। এটি কুকি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের জাতিগত নির্মূলের পদ্ধতিগত একটি কৌশলে পরিণত হয়েছে৷ নিরাপত্তা বাহিনীকে এই ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অনুমতি দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে সরাসরি দায়ী করছে আইটিএলএফ।

কী কারণে সংঘাত

কুকি-জো ও মেইতেইরা পাশাপাশি বসবাস করে। ফলে তাদের বসবাস বা চাষের জমিও পাশাপাশি। ফলে জমি বা জমির সীমানা নিয়ে কুকি-জো ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বিরোধ বাড়ছে। দুই জমির মধ্যবর্তী অঞ্চলকে এখন সীমান্তের মতো ‘বাফার জোন’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। দুই পক্ষের মধ্যে যাতে জমি নিয়ে বিবাদ না হয়, তা মাথায় রেখে সরকারের তরফে এই ‘বাফার জোন’ তৈরি করা হয়েছিল।

ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকা জানিয়েছে, ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরে জমি নিয়ে এই ধরনের বিরোধের খবর পাওয়া যায়নি। অবশ্য ২০২৩ সালের মে মাসে যখন মেইতেইদের সঙ্গে কুকি-জোসহ অন্যান্য আদিবাসীর সংঘাত শুরু হয়, তখন জমি নিয়ে বিবাদের নানা ঘটনা ঘটেছিল। তখন সরকার দুই পক্ষকে আলাদা রাখতে ‘বাফার জোন’ তৈরি করে। ফলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরে জমি নিয়ে বিবাদ হয়নি।

গত এক সপ্তাহে অন্তত দুবার ফুবালা গ্রামে কৃষকদের মধ্যে জমির সীমানা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ১৫ জুন এক দফায় সংঘর্ষ হওয়ার পরে আবার হলো গতকাল, যার জেরে একজনের মৃত্যু হলো। এলাকায় উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।

আইটিএলএফ গতকালের এ ঘটনার জন্য মেইতেইদের দায়ী করেছে। তারা বলেছে, মেইতেইরা ‘বাফার জোনে’ নিয়মিত আক্রমণ চালাচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে নিরাপত্তাবাহিনী জানে। কিন্তু তারা দুর্বল সম্প্রদায়কে সাংবিধানিক সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার কারণেই আরও একজনের প্রাণ গেল।

এই ‘বাফার জোনে’ সংঘাত দিয়েই গতকাল নতুন করে লড়াই শুরু হয়। মণিপুর পুলিশ গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিষ্ণুপুর জেলার ফুবালা গ্রামের চাষি নিংথৌজাম বীরেন সিংকে বেলা ৩টার দিকে একজন অজ্ঞাত ও সশস্ত্র দুষ্কৃতি বাম হাতে গুলি করে। তিনি ধানখেতে কাজ করার সময় তাঁকে গুলি করা হয়। পরে তাঁকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ইম্ফলের আঞ্চলিক ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছে।

পুলিশ দাবি করছে, এ ঘটনার জেরে গতকাল বিকেলে নিরাপত্তা বাহিনী লাংচিয়াংমানবি, হেইচাংলোক, ফুবালা গ্রামের পশ্চিমাঞ্চলে এবং তার আশপাশে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরে ‘গুলি’ চালানো হলে তারা পাল্টা গুলি চালায়, যাতে হৈখোলহিং হাওকিপ নিহত হন।

হাওকিপের মরদেহ চূড়াচাঁদপুর জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর কুকিপ্রধান জেলা। ফলে হাওকিপের মরদেহ নিয়ে যাওয়ায় সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওই জেলাসহ মণিপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

মেইতেই সম্প্রদায়ের অভিযোগ

মেইতেই সম্প্রদায়ও আদিবাসীদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করছে।

মেইতেইরা বলছে, কুকি-জো সম্প্রদায়ের মানুষ ‘বাফার জোনে’ সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে, অথচ সব জেনেও সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী চুপচাপ রয়েছে। এই ঘটনার জেরে মেইতেইরা তাদের নিয়ন্ত্রিত রাজধানী ইম্ফল এবং সংলগ্ন অঞ্চলে আজ শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। গতকালের ঘটনার পরে তারা বিষ্ণুপুর এবং চূড়াচাঁদপুরের মধ্যবর্তী জাতীয় সড়কও দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। এতে মেইতেই নিয়ন্ত্রিত ইম্ফল ও বিষ্ণুপুর এবং কুকি-জো নিয়ন্ত্রিত চূড়াচাঁদপুর আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়তি বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে।

২০২৩ সালের মে মাস থেকে জাতিগত সহিংসতায় মণিপুরে ২৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ