রাইড শেয়ারিং চালকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতির সুপারিশ শ্রম সংস্কার কমিশনের
Published: 3rd, May 2025 GMT
দেশে রাইড শেয়ারিং চালকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। তাদের শ্রম অধিকার, ন্যায্য মজুরি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের স্বার্থে এই সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া সুপারিশ করা হয় একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠারও।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন। ওই প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়, এ খাতের শ্রমিকদের জন্য বিশেষ মজুরি কাঠামো নির্ধারণ ও কোম্পানিগুলোর কমিশন হার যৌক্তিক পর্যায়ে কমানো প্রয়োজন।
শ্রম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাইড শেয়ারিং, গিগ বা প্ল্যাটফর্ম অর্থনীতি খাতের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শ্রমিক সুরক্ষা, মজুরি ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়া শ্রমিকদের নিরাপত্তাঝুঁকি হ্রাস এবং যাত্রী ও চালকদের জন্য সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডেটাবেজ সংরক্ষণ ও সার্বক্ষণিক (২৪/৭) কল সেন্টার চালুরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসেবে, দেশে বর্তমানে দেশি-বিদেশি ১৫টি রাইড শেয়ারিং কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে দেশে রাইড শেয়ারিংয়ের মূল বাজার কার্যত তিনটি কোম্পানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কোম্পানিগুলোর অধীন মোট কত মানুষ (চালক) রাইড শেয়ারিং সেবা দিচ্ছেন, সেটির সুস্পষ্ট তথ্য নেই। তবে খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, সংখ্যাটি লাখের কাছাকাছি।
রাইড শেয়ারিং সেবা নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। অন্যতম বড় অভিযোগ—চালকেরা অ্যাপের মাধ্যমে না গিয়ে সরাসরি দর-কষাকষির মাধ্যমে (খ্যাপে যাত্রী নেওয়া) ভাড়া নির্ধারণ করেন। তাঁদের দাবি, রাইড শেয়ারিং কোম্পানি কমিশন বেশি নেয়, চালকের ভাগে কম টাকা থাকে।
আবার অনেক সময় অ্যাপের চেয়ে খ্যাপে অনেক বেশি ভাড়া দিতে হয় যাত্রীদের। এ ছাড়া রাস্তায় যেখানে–সেখানে পার্কিং, যাত্রীর কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে না চাওয়া, ফুটপাতে বাইক উঠিয়ে দেওয়া প্রভৃতি অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের। তবে বেশির ভাগ অভিযোগেরই কোনো সুরাহা হয় না। যদিও এই সেবাকে জনবান্ধব করার লক্ষ্যে সরকার ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা ২০১৭’ করেছিল। কিন্তু এই নীতিমালার প্রয়োগ তেমন নেই।
আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধের সুপারিশএদিকে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী জনবল কাঠামো হালনাগাদ করে আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধের সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। এর পরিবর্তে সরাসরি নিয়োগ প্রদান করার কথা বলা হয়েছে।
আউটসোর্সিং শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য আরও কিছু সুপারিশ করেছে কমিশন। যেমন দীর্ঘ সময় ধরে কর্মরত শ্রমিকদের শ্রম আইন অনুযায়ী অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মূল মালিককে দায়বদ্ধ করা। বিনা কারণে আউটসোর্সিং শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতি বন্ধ এবং প্রকল্প শেষে যোগ্য শ্রমিকদের রাজস্ব খাতে স্থায়ীভাবে নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
এ ছাড়া আউটসোর্সিং শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার, সিবিএ (কালেকটিভ বার্গেইনিং এজেন্ট) নির্বাচনে ভোটাধিকার ও অভিযোগ নিষ্পত্তির সুযোগ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প র শ কর ছ ন শ চ ত কর আউটস র স
এছাড়াও পড়ুন:
অনলাইনেও চলছে ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধ
মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক দিন ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্য যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধের প্রভাব অনলাইন ও সাইবার দুনিয়াতেও প্রভাব ফেলেছে। ইসরায়েল ইরানের একাধিক সামরিক ও পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর পর থেকেই ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সাইবার যুদ্ধ চালাচ্ছে দুই দেশের হ্যাকাররা।
ইসরায়েলে সাইবার হামলা১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে বোমা হামলা শুরু করার পর থেকে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে সাইবার হামলা প্রায় ৭০০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা র্যাডওয়্যার। দ্য জেরুজালেম পোস্টের তথ্যমতে, ইসরায়েলি অবকাঠামোর নেটওয়ার্ক লক্ষ্য করে আক্রমণ বেড়েছে। ইরানপন্থী হ্যাকার গোষ্ঠীর প্রতিশোধমূলক অভিযান পরিচালনা করছে বলে ইসরায়েল অভিযোগ করেছে। ডিডিওএস আক্রমণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা চলছে। ডেটা চুরি ও ম্যালওয়্যার আক্রমণ বেড়েছে।
ইসরায়েলের টেলিযোগাযোগব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইরান–সমর্থিত হান্ডালা হ্যাকার গ্রুপ ইসরায়েলের একটি মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কে হামলা চালিয়ে গ্রাহকদের কাছে বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভুয়া সতর্কীকরণ বার্তা পাঠিয়েছে। শুধু তা–ই নয়, ইসরায়েলি হোম ফ্রন্ট কমান্ডের ছদ্মবেশে আতঙ্কজনক বিভিন্ন বার্তাও পাঠাচ্ছে তারা।
হান্ডালা হ্যাকার গ্রুপ ১৬ জুন ইসরায়েলের বৃহত্তম জ্বালানি সংস্থা ডেলেক ও নির্মাণ সংস্থা ওয়াইজিনিউ ইদানসহ বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি সংস্থা থেকে দুই টেরাবাইটের বেশি তথ্য চুরি করেছে বলে জানা গেছে।
ইরানে সাইবার হামলাইরানে সাইবার হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের প্রেডেটরি স্প্যারো হ্যাকিং গ্রুপ ইরানের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ নোবিটেক্স থেকে প্রায় ৯ কোটি ডলারের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা চুরি করেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ইরানের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক সেপাহর তথ্য ধ্বংসের তথ্যও প্রকাশ করেছে তারা। হ্যাকার দলটির দাবি, ব্যাংকটি ইরানের সামরিক বাহিনীকে অর্থায়নে সহায়তা করছে। হ্যাকিংয়ের কারণে ব্যাংকের ওয়েবসাইট অফলাইন হয়ে যায়। ব্যাংকটির লন্ডনভিত্তিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান ব্যাংক সেপাহ ইন্টারন্যাশনাল পিএলসি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য প্রকাশ করেনি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টিভি স্টেশনকে লক্ষ্য করেও সাইবার হামলা চালানো হয়েছে। এই সাইবার হামলায় হ্যাকাররা ইরান সরকারের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে বিদ্রোহ করার আহ্বান জানিয়ে ভিডিও সম্প্রচার করেছে। তবে এই সাইবার হামলার দায় কোনো হ্যাকার দল স্বীকার করেনি।
হোয়াটসঅ্যাপের বার্তার মাধ্যমে তথ্য প্রকাশের ভয়ে ইরান সরকার তার নাগরিকদের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার না করার জন্য সতর্ক করেছে। তবে হোয়াটসঅ্যাপের মালিকানাধীন মেটার এক মুখপাত্র এই দাবিকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেন। ইরান সরকার এরই মধ্যে ইসরায়েল–সংশ্লিষ্ট সাইবার আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় নিজের সীমান্তের মধ্যে ইন্টারনেট বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা গেছে। ক্লাউডফ্লেয়ার ও নেটব্লকসের ইন্টারনেট পর্যবেক্ষকদের তথ্যমতে, রাতের বেলা ইরানে ইন্টারনেট ট্রাফিক হঠাৎ কমে যায়। প্রায় শূন্যের কাছাকাছি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেখা যায়। ক্লাউডফ্লেয়ার তেহরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খবরঅনলাইন নিউজ এজেন্সির একটি টেলিগ্রাম পোস্ট উদ্ধৃত করে জানায়, ইরানের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় শত্রুদের অপব্যবহার রোধ করার জন্য ইন্টারনেট অ্যাকসেস সাময়িকভাবে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স, দ্য রেজিস্টার, নিউআরব, রেডস্কাইঅ্যালায়েন্স, এসসিওয়ার্ল্ড ও এসইসিঅ্যালায়েন্স