মদিনা শহরের ধর্মীয় নিদর্শনগুলোর মধ্যে বিরে রুমা বা রুমা কুয়া একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এই কুয়াটি শুধু পানির উৎস নয়, বরং ইসলামি ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়ের সাক্ষী। মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সময়ে মদিনার মুসলিম সম্প্রদায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে পড়েছিল। এই সংকট দূর করতে উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর অবদান এবং তাঁর মহানুভবতা বিরে রুমা কুয়াকে ইসলামের ইতিহাসে একটি গৌরবময় স্থান দিয়েছে।

সে সময় মদিনায় রুমা নামে এক ইহুদির একটি বড় কুয়া ছিল। এই কুয়ার মালিক মুসলিমদের কাছে চড়া মূল্যে পানি বিক্রি করত। এদিকে মুসলিমরা পানির তীব্র সংকটে পড়েছে। এই সংকটের সময় মহানবী (সা.

) উপস্থিত সবাইকে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে এই কুয়া ক্রয় করে মুসলিমদের জন্য ওয়াকফ করে দেবে? আর এটা যে করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে একটি ঝরনা দান করবেন।’

এই আহ্বান শুনে উসমান (রা.) ইহুদির কাছে কুয়াটি ক্রয়ের প্রস্তাব দেন। প্রথমে সে কুয়াটি বিক্রি করতে রাজি হলো না। পরে উসমান (রা.) অর্ধেক কুয়া ক্রয়ের প্রস্তাব করেন, অর্থাৎ ইহুদি একদিন নিজে পানি নেবে এবং অন্যদিন উসমান (রা.) পানি নেবেন বলে সম্মত হয়। উসমান (রা.) তাঁর নির্ধারিত দিনে মুসলিমদের বিনা মূল্যে পানি বিতরণ শুরু করেন। এতে ইহুদির ব্যবসায় সংকট দেখা দিলে সে পুরো কুয়া বিক্রি করতে সম্মত হয়। উসমান (রা.) ৩৫ হাজার দিরহামের বিনিময়ে পুরো কুয়ার মালিকানা লাভ করেন এবং তা মুসলিমদের জন্য ওয়াকফ করে দেন।

আরও পড়ুনমদিনার ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখছেন হজযাত্রীরা২৬ জুন ২০২৪

উসমান (রা.)-এর কাজটি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

বর্তমানে রুমা কুয়াটি সৌদি আরবের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন। কুয়াটি এখনও সক্রিয় এবং এর পানি দিয়ে খেজুরবাগানে সেঁচ দেওয়া হয়। আয়তনে কুয়াটি ৮ মিটার গভীর এবং ৩.৬ মিটার চওড়া। বর্তমানে কুয়ার অবস্থান আকীক উপত্যকার মাঝখানে এবং মসজিদে কিবলাতাইন থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার উত্তরে। কুয়ার চারপাশে একটি বাগান রয়েছে। সৌদি সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় বাগানটিকে পরীক্ষামূলক কৃষি কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

রুমা কুয়ায় যেতে হলে মসজিদে নববি থেকে মানাখা সড়ক ধরে উত্তর দিকে সুলতানা সড়কে যেতে হবে। এই সড়কটি বর্তমানে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় সড়ক নামে পরিচিত। সেখান থেকে ডান দিকে একটি কালো পাহাড় পড়ে। পাহাড়ের পাশ দিয়ে পশ্চিমমুখী রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে রুমা কুয়া দেখতে পাওয়া যায়।

রুমা কুয়া শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থানই নয়, বরং এটি ইসলামি বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের এক জীবন্ত সাক্ষী, যা মুসলমানদের জন্য গর্ব ও অনুপ্রেরণার উৎস।

আরও পড়ুন মদিনা যাত্রায় মনের কোণে যত কথা২১ জুন ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য উসম ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলা: খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন শুনানি ৬ মে

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সব আসামিকে খালাসের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের (লিভ টু আপিল) শুনানি আগামী মঙ্গলবার (৬ মে)।

রোববার আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ এই দিন ধার্য করে আদেশ দেয়।

গত ১ ডিসেম্বর এই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। সে রায়ে উচ্চ আদালত বলেন, যে চার্জশিটের ভিত্তিতে বিচারিক আদালত বিচার করেছিলেন তা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না। তাই বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করা হলো।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও কয়েকশো মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।

তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।

দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারিক আদালত বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায়’ ওই হামলা ছিল একটি দলকে ‘নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা’। আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন: আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।

বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।

এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয় আদালত।

বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।

তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ‘লিভ টু আপিল’ করে রাষ্ট্রপক্ষ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ