ফরিদপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অজ্ঞাত এক মানসিক প্রতিবন্ধী নারীর হৃদয়বিদারক চিত্র ছড়িয়ে পড়ে। হতভাগ্য সেই নারীর হাতে পচন ধরেছিল। তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে স্থানীয় তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের তৎপরতা এবং চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় সেই নারীর জীবন রক্ষা পেয়েছে। এই ঘটনা মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।  

‘ফরিদপুর লাইভ’ নামে ফেসবুক পেজ থেকে গত ২৫ এপ্রিল ওই নারীর শোচনীয় শারীরিক অবস্থার বিবরণ প্রকাশ করা হয়।  পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ওই নারীর একটি হাতে মারাত্মক ক্ষত তৈরি হয়েছে। এখনই চিকিৎসাসেবা না পেলে ক্ষত শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে যা তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে। এই হৃদয়বিদারক তথ্য ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী তরুণরা পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসেন। শয়ন, রাইয়ান আহমেদ সৌরভ, বৈশাখী, আরএম হৃদয়, নাজমুল, নাইস, আনিসুর, সজল, ওয়ালিদসহ একদল তরুণ নারীটিকে খুঁজে বের করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।  

প্রাথমিক পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, হাতের সংক্রমণ এতটাই গুরুতর যে জরুরি অপারেশন ছাড়া তার জীবন বাঁচানো সম্ভব নয়। এরপর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন ডা.

মো. শাহীন জোদ্দারের নেতৃত্বে ওই নারীর চিকিৎসা শুরু হয়। গত ৪ মে চিকিৎসক দল জরুরি অপারেশন করে নারীর হাতটি কেটে ফেলেন।  

ডা. শাহীন জোদ্দার বলেন, “রোগীর অবস্থা ছিল অত্যন্ত সংকটাপন্ন। সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সময়মতো অপারেশন না হলে তার মৃত্যু অনিবার্য ছিল। তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের দ্রুত উদ্যোগ এবং মানবিকতা সত্যিই প্রশংসনীয়। তারা নিয়মিত হাসপাতালে এসে রোগীর দেখাশোনা করছেন, যা আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে।’’

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল এবং তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে। আমরা আশাবাদী, তিনি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন। তবে, তার মানসিক প্রতিবন্ধকতার কারণে দীর্ঘমেয়াদী মনোসামাজিক সহায়তা প্রয়োজন।”  

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অপারেশনের পর নিয়মিত পর্যবেক্ষণে নারীর শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। 

উদ্ধারকারী তরুণ সৌরভ, বৈশাখী ও হৃদয় বলেন, “ফরিদপুর লাইভ’ পেজে পোস্ট দেখে আমরা তাকে খুঁজতে বেরিয়েছিলাম। তার হাতের অবস্থা দেখে আমরা স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পেরে আমরা স্বস্তি পেয়েছি। এখন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য, তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।”  

এই ঘটনা মানবিকতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। তবে, নারীর পরিচয় ও পরিবারের সন্ধান পেতে স্থানীয় প্রশাসন এবং গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।  

তামিম//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সরাসরি: ইরানের পক্ষে একাত্মতা প্রকাশে ইরাকে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত

ইরাকের রাজধানী বাগদাদের সাদর সিটিকে শুক্রবার (১৭ জুন) জুমার নামাজের পর হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে। ইরানের ওপর চলমান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে তারা। অনলাইনে পোস্ট করা ফুটেজে এমনটাই দেখা গেছে।

সাদর সিটিকে ‘বিপ্লবের নগরী’ নামেও ডাকা হয। এটি মূলত বাগদাদের একটি উপশহর। এই এলাকার জনসংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি, যার বেশিরভাগই শিয়া মুসলিম।

এলাকাটি শিয়া জনপ্রিয় ধর্মীয় ও মিলিশিয়া নেতা মোকতাদা আল-সাদরের নামেই পরিচিত, যিনি ইরানের শাসক ধর্মীয় নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত।

আরো পড়ুন:

যত দ্রুত সম্ভব ট্রাম্পকে যুদ্ধে নামাতে চান নেতানিয়াহু: লেভি

যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি ১৪ বিমান ভরে সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছে ইসরায়েলকে

এই জমায়েত ইঙ্গিত দেয় যে, ইরানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক হামলাগুলোর প্রতিবাদ শুধু ইরানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা আঞ্চলিক মাত্রা লাভ করেছে, বিশেষ করে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোতে।

১৩ জুন ভোরে ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তারপর পাল্টা হামলায় নামে ইরান। উভয় দেশ হামলা ও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। 

ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছে পৌঁছে গেছে বলে অভিযোগ তুলে দেশটিতে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েল। অথচ আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা বলছে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর কাছাকাছি পৌঁছানোর কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই। অথচ এই অভিযোগে ইরানের ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। 

ইরাকে রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডার আছে বলে অভিযোগে ২০০৩ সালে হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। অথচ তেমন কোনো অস্ত্রই ছিল ইরাকে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে ইসরায়েল ইরাক মডেলে ইরানে হামলা চালাচ্ছে, যার কোনো ভিত্তিই নেই।

ইরানি সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ লিখেছে, জায়নবাদী শাসন ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে একটি উস্কানিমূলক আগ্রাসী যুদ্ধ শুরু করে। তারা ইরানের পারমাণবিক, সামরিক ও আবাসিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়, যার ফলে বহু শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিক শহীদ হন।

ইরানি সামরিক বাহিনী তাত্ক্ষণিকভাবে পাল্টা হামলা শুরু করে। ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর মহাকাশ বিভাগ ২০ জুন পর্যন্ত “ট্রু প্রমিজ থ্রি” (সত্য প্রতিশ্রুতি-৩) অভিযানের অংশ হিসেবে ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ১৬ দফায় পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ