আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের এমটিও ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম উদ্বোধন
Published: 5th, May 2025 GMT
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সদ্য যোগদানকৃত ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসারদের (এমটিও) এক বছর মেয়াদী ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে মাসব্যাপী ‘ওভারঅল ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্সের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হয়েছে।
সোমবার (৫ মে) ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. রাফাত উল্লা খান প্রধান অতিথি হিসেবে ট্রেনিং কোর্সের উদ্বোধন করেন।
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (এআইবিটিআই) এর প্রিন্সিপাল মো.
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাফাত উল্লা খান নতুন যোগদানকৃত ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসারদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, কর্মদক্ষতার মাধ্যমে একজন আদর্শ ব্যাংকার হওয়ার জন্য বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক এবং ইসলামী শরীয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকিং এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জ্ঞান অর্জন এবং ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিতে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য আনন্দ ও মনোযোগের সাথে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য তিনি এমটিওদের আহ্বান জানান।
উন্নত নৈতিক চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন এবং দায়িত্বশীলতার সাথে কর্মসম্পাদন করে ব্যাংককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমটিওদেরকে পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকা/সাজ্জাদ/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ইসল ম এমট ও
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি যেমন দিল্লি বা পিন্ডির, তেমনই ওয়াশিংটনের দাসত্বও চায় না
ড. সাইমুম পারভেজ অসলোতে এমএফ নরওয়েজিয়ান স্কুল অব থিওলজি, রিলিজিয়ন ও সোসাইটি ইউনিভার্সিটির জ্যেষ্ঠ গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক। সম্প্রতি তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে বিশেষ সহকারী নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি এর আগে ডয়চে ভেলে একাডেমি-বন রাইনজিগ ইউনিভার্সিটি, ফ্রাই ইউনিভার্সিটি ব্রাসেলস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ড. পারভেজ অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি এবং ফ্রাই ইউনিভার্সিটি ব্রাসেলস থেকে পোস্ট ডক্টরেট করেছেন। তিনি জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে ফুলব্রাইট ফেলো, ইউনিভার্সিটি অব সিডনিতে কমনওয়েলথ ফেলো এবং ফ্রাই ইউনিভার্সিটি ব্রাসেলসে মেরি কুরি ফেলো ছিলেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সহসম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম।
সমকাল: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বড় শরিকানা ছিল তরুণদের। তাদের নিয়ে বিএনপির অবস্থান কী?
সাইমুম পারভেজ: শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে মাঠের রাজনীতিতে বিএনপির তরুণদের বড় ভূমিকা ছিল। এমনকি আপনি যদি সংখ্যায়ও নজর দেন, জুলাই অভ্যুত্থানের আগেও যারা পুলিশের গুলিতে মারা গেছে, অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হয়েছে, গুমের শিকার হয়েছে, মামলা-মোকদ্দমার শিকার হয়েছে এবং ঢাকায় পালিয়ে থেকে রিকশা চালিয়েছে– তাদের বেশির ভাগই তরুণ জনগোষ্ঠী।
আওয়ামী লীগের সময়ের আন্দোলনে নিহত বিএনপিকর্মীদের বয়স খেয়াল করলে দেখবেন, তাদের প্রায় সবাই তরুণ। তারা ছোটখাটো জায়গায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেকে কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আবার খণ্ডকালীন কাজ করে নিজে চলে বা পরিবারকে চালায়। যদিও কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতারা সামনের কাতারে নেতৃত্ব দিয়েছে, তবে সংখ্যার দিকে তাকালে দেখা যায়, সংগঠন হিসেবে ছাত্রদল থেকেই সবচেয়ে বেশি নিহত ও আহত হয়েছে। সংগঠনের দিক থেকে আন্দোলনের মাঠে তারা একটি বড় শক্তি ছিল।
সমকাল: গণঅভ্যুত্থানের পর তরুণদের নেতৃত্বে অন্তত দুটি নতুন রাজনৈতিক সংগঠন গঠিত হয়েছে। এনসিপি ও আপ বাংলাদেশ। দুটি
প্রধান রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে তৃতীয় শক্তি হিসেবে এই তরুণ ধারাকে বিএনপি কীভাবে মূল্যায়ন করবে?
সাইমুম পারভেজ: এনসিপি বলুন বা আপ বাংলাদেশ বলুন, বিএনপি প্রথম থেকেই তরুণদের দল বা সংগঠনকে সমর্থন দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পেছনে বিএনপির বড় ধরনের সমর্থন ও ভূমিকা ছিল। আপনি যদি ৫ আগস্টের পর খেয়াল করে দেখেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটা বক্তৃতা ছিল। সেই বক্তৃতায় তিনি দলের সবাইকে আহ্বান জানান, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে নতুন সরকারকে সমর্থন দেওয়া ও সহযোগিতা করা, আর পুরো দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা। এখন বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আমরা সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার যে সংখ্যাটা দেখি; আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর যে হামলার সংখ্যা দেখি– ডয়চে ভেলে বা আলজাজিরার বিশ্লেষণে এর বড় অংশ অতিরঞ্জিত বলা হয়েছে। এটাও সত্য, কিছু হামলা হয়েছে। কিন্তু বড় মাত্রার হামলা যে হতে পারত, সেটা প্রতিরোধ করেছে তারেক রহমানের ওই বক্তব্য। বিএনপি নেতৃত্ব যে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, তা কর্মীরা মেনে চলেছে। ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেই বলেছিলেন, তারা ক্ষমতা ছাড়লে কয়েক লাখ হত্যাকাণ্ড হবে। সেই বিচারে দেখলে ৫ আগস্টের পর শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক পটভূমির পরিবর্তন ঘটেছে। অর্থাৎ বিএনপি প্রথম থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে; একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেছে। পরবর্তী সময়ে ছাত্ররা যখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হয়েছে, সেখানেও বিএনপি আপত্তি করেনি। বলেনি যে, আমরা তাদের চাই না।
সমকাল: তার মানে, তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির তেমন বিরোধ নেই?
সাইমুম পারভেজ: নতুন রাজনৈতিক দলটি গঠন হওয়ার আগে আমরা মাহফুজ আলমের কথায় দেখেছি; নাহিদ ইসলামের কথায়ও দেখেছি, তারা বাংলাদেশকে যে পথে দেখতে চান, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচ্যুত হলেও তা মধ্যপন্থির বাংলাদেশ। কিন্তু মধ্যপন্থি হওয়ার বিষয়টি শুধু কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করে দেখাতে হয়। মধ্যপন্থি বাংলাদেশ মানে আপনি রাজনৈতিক ভাবাদর্শে চরমপন্থি হবেন না। চরম ডানপন্থিও হবেন না, চরম বামপন্থিও হবেন না। সেই সঙ্গে আপনি বাংলাদেশের জন্মপরিচয় বা জাতীয় পরিচয়ের সূচনাবিন্দু মুক্তিযুদ্ধকে সমুন্নত রাখবেন। মুক্তিযুদ্ধ হবে আমাদের জাতীয় পরিচয়ের শক্তি বা ভিত্তি। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করেছি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন হচ্ছে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ও আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণঅভ্যুত্থান। সেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে, তার আগের আন্দোলনেও বিএনপি নেতাকর্মী, যুবদল নেতাকর্মী, ছাত্রদল নেতাকর্মী অন্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাতে হাত রেখে সহযোগিতা করেছে। একসঙ্গে যুদ্ধ করেছে, একসঙ্গে জীবন দিয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবেও ছাত্রদের এ দলকে স্বাগতই জানায় বিএনপি। সেই সঙ্গে তরুণদের এই দল যদি বিরাজনীতিকীকরণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত না হয়; যদি গণতন্ত্রবিরোধী অবস্থান না নেয় এবং জনগণের ভোটাধিকার হরণে সহায়তা না করে, তাহলে দুটি দলের মধ্যে বিরোধ হওয়ার কোনো কারণ নেই।
সমকাল: আপনি বিএনপির পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক কমিটিতে চেয়ারপারসনের ‘বিশেষ সহকারী’। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ-
ভারত সম্পর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। আপনার মূল্যায়ন কী?
সাইমুম পারভেজ: দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। কারণ এ অঞ্চলে সবচেয়ে বড় ইকোনমি হলো ভারতের। সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তি হলো ভারত। আমরা গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের আমলে দেখেছি, নানা ধরনের অন্যায্য চুক্তির মাধ্যমে রাজনৈতিক চুক্তি হতে পারে কিংবা আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি হতে পারে কিংবা পানি চুক্তি হতে পারে– বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এই বঞ্চনার জন্য আমাদের যে ক্ষোভ, সেটা তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের পর্যায়েও থাকার কথা। আশ্চর্যজনকভাবে আমরা দেখেছি, কখনও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ দেখানো হয়নি।
সমকাল: এর কারণ কী?
সাইমুম পারভেজ: হতে পারে, তারা পরিস্থিতির কারণে এসব অন্যায্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে দলটির নেতাকর্মীর মধ্যে এসব নিয়ে যে ক্ষোভ থাকার কথা, সেটাও দেখিনি। সরকার চুক্তি স্বাক্ষর করলেও নানাভাবে যে এটা ঠিক করার চেষ্টা করবে; চেক অ্যান্ড ব্যালান্স করবে, সে রকম কিছুও আমরা দেখিনি। কারণটা হচ্ছে, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া তিন-তিনবার অবৈধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যখন তারা ক্ষমতায় এসেছে, তখন একটি বৃহৎ আঞ্চলিক শক্তির সমর্থন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এই সমর্থন পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের বৃহৎ স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে। সে সময় বিএনপি প্রতিটি অন্যায্যতা ও দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলির ঘটনার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করেছে।
সমকাল: এখন এ ব্যাপারে বিএনপি কী করছে? বিএনপিও ভারতকে সমঝে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাইমুম পারভেজ: বিএনপির যখন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তখন কিছু ইউটিউব ও সামাজিক মাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সার বিএনপিকে ভারতপন্থি এবং নিজেদের ভারতবিরোধী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। তারা জনগণকে উস্কানি দিচ্ছে। তারা এগুলো অযৌক্তিকভাবে করছে। আপনি যখন ক্ষমতায় থাকবেন, রাজনীতিতে থাকবেন, তখন আপনাকে ভারতের সঙ্গে একটা ওয়ার্কিং সম্পর্ক রাখতে হবে। তার মানে এই নয়, আপনি নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের স্বার্থ দেখবেন। যে কোনো দেশের সঙ্গে দুটি নীতির ভিত্তিতে বিএনপি পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করবে। যে কোনো চুক্তির ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে কিনা; সে অনুযায়ী আমরা পর্যালোচনা করব এবং নতুন চুক্তি করব। দ্বিতীয়ত, হস্তক্ষেপ না করা। তার মানে, আমার ভূখণ্ড ব্যবহার করে কোনো দেশের ওপর হামলা চালাতে পারবে না। অথবা প্রতিবেশীর ভূখণ্ড ব্যবহার করে আমার ভূখণ্ডে হামলা করতে না পারে। এটার বরখেলাপ হলে আমরা সার্বভৌমত্বের বিরোধী অবস্থান হিসেবে দেখব।
সমকাল: গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিস্তা চুক্তি ঝুলে রয়েছে অনেক দিন। এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান কী?
সাইমুম পারভেজ: আপনি দেখবেন, ৫ আগস্টের পর ভারতবিরোধী সবচেয়ে বড় সমাবেশ করেছে বিএনপি। উত্তরবঙ্গে তিস্তা নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশ। তিস্তা নিয়ে আমাদের কর্মসূচি চলমান। বিএনপি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির নবায়নসহ অভিন্ন নদীগুলোর ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করার জন্য দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়ভাবে সবকিছু করব আমরা।
সমকাল: জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও
ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বিএনপি বিষয়টিকে কীভাবে দেখছে?
সাইমুম পারভেজ: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক যদি আমরা খেয়াল করি, তাদের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি কাশ্মীরের ঘটনার পর তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে বর্ডার ক্রসিংও আছে। বাণিজ্য সম্পর্ক ও নানা ধরনের যোগাযোগ রয়েছে। নতুন যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, আমাদের যেহেতু কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, সুতরাং পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের অবশ্যই বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য যোগাযোগ বা মবিলিটি তো থাকবেই।
সমকাল: পাকিস্তানের সঙ্গে শুধু বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকবে?
সাইমুম পারভেজ: বিএনপির পক্ষ থেকে কিংবা একজন সচেতন নাগরিক হিসেবেও আমরা বলতে পারি, মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে পাকিস্তান এক ধরনের অস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে। এসব ব্যাপার যদি সুস্পষ্ট হয়, তাহলে তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক কাঠামোর মধ্যে সব ধরনের সম্পর্ক রাখতে কোনো দ্বিধা রাখা উচিত বলে আমি মনে করি না। কথা হচ্ছে, বিএনপি মনে করে– বাংলাদেশ দিল্লির দাসত্ব করবে না; পিন্ডির দাসত্বও করবে না; ওয়াশিংটনের দাসত্বও করবে না। বিএনপি যেমন দিল্লি বা পিন্ডির, তেমনই ওয়াশিংটনের দাসত্বও চায় না।
সমকাল: ভৌগোলিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক আকারের দিক থেকে পাকিস্তান থেকে আমরা কী বাণিজ্যিক সুবিধা পেতে পারি?
সাইমুম পারভেজ: একটা কথা আমি সবসময় বলি, পাকিস্তানের চেয়েও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কিন্তু বাণিজ্যিক সম্পর্ক মানে এটা নয়, আপনি শুধু আপনার চেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন। আপনার চেয়ে দুর্বল অর্থনীতির সঙ্গেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক হতে পারে।
সমকাল: বিএনপির সর্বশেষ মেয়াদে, ২০০১-০৬ সালে তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। এখন কী পরিস্থিতি?
সাইমুম পারভেজ: বর্তমান বিশ্বে নানা ধরনের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তি রয়েছে। বাংলাদেশ কিন্তু বরাবরই জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সদস্য। যখন দুটি পরাশক্তি ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়া এবং আমেরিকা– বাংলাদেশ তখনও কিন্তু সরাসরি কোনো অবস্থান নেয়নি। বরং এক ধরনের নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রেখেছিলেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি সংকটে এক ধরনের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রেখেছিলেন। এখন আমার কাছে মনে হয়, বর্তমান পৃথিবীতে বিএনপি বিশ্বের নানা শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করবে। বিশেষত আমরা ব্যবসার ক্ষেত্রে একটা অভূতপূর্ব উন্নতি আশা করতে পারি। শুধু ইউরোপ, আমেরিকাকেন্দ্রিক আমাদের ব্যবসা হবে–
এমন কিন্তু নয়। দূরপ্রাচ্যেও আমরা মনোযোগ দিতে চাই।
সমকাল: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে চলমান ধারার বাইরে বিএনপির কি নতুন কোনো চিন্তাভাবনা রয়েছে?
সাইমুম পারভেজ: রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপির একটা সফলতার কেস রয়েছে। বিএনপি সেটা অনেক সময় সঠিকভাবে প্রচার করতে পারে না। কিংবা এ ক্ষেত্রে বিএনপির যে একটা সফলতা রয়েছে, সেভাবে জনগণ বিষয়টি জানে না। সেটা হচ্ছে, বিএনপি তাদের প্রথম সরকারের সময় রোহিঙ্গাদের একটা বড় সংখ্যক দলকে ঠিকমতো ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল। তার মানে, সেটা করার বিএনপির একটা ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু হওয়া– এটা কিন্তু নতুন ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন ধরে এটি হয়ে আসছে। কিন্তু ২০০০ সালের পরের উদ্বাস্তুর সংখ্যাটা অনেক বড়। মানবিক সহায়তা তো নিশ্চয় রয়েছে। তবে আমরা জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেব, সেই সঙ্গে বৈশ্বিক সহযোগিতা। বাংলাদেশের মতো একটি গরিব দেশ এত জনসংখ্যা অধ্যুষিত রাষ্ট্রের এত বেশি মানুষকে আমরা জায়গা দিতে পারব না। এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য সহনীয়ও নয়। যে কারণে প্রত্যাবসান খুবই জরুরি।
সমকাল: সেটা কীভাবে সম্ভব? বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিষয়টির সমাধান কীভাবে করতে চায়?
সাইমুম পারভেজ: সমাধানের উদ্যোগ এখনও নেওয়া যেতে পারে। বিএনপি ক্ষমতায় আসার জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। আমরা আশা করতে পারি, অন্তর্বর্তী সরকার সামনের দিনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক পরিষদ তৈরি করতে পারে। মিয়ানমার, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে বসে একটা কার্যকর ও সুনির্দিষ্ট সমাধানের দিকে এগিয়ে নিতে পারে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে মোটামুটি এই পদ্ধতিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের চেষ্টা করবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, এভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমারের পক্ষগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সহযোগিতা সম্ভব।
সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ।
সাইমুম পারভেজ: সমকালকেও ধন্যবাদ।