আজ ওয়ার্ল্ড হ্যান্ড হাইজিন ডে বা হাতের পরিচ্ছন্নতা দিবস। হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সবাই কমবেশি জানেন। তবে বাস্তবতা হলো, সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার চর্চা করেন না অনেকেই। তাই রোগবালাই ছড়ায়। যখন হাত ধোয়া প্রয়োজন, তখন সাবান–পানি না পেলে বিকল্প হিসেবে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে ফেলুন। বাইরে গেলে সঙ্গে রাখুন ছোট্ট একটা স্যানিটাইজারের বোতল। খাওয়ার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর ছাড়া এমন কিছু সময় হাত ধোয়া প্রয়োজন, যেসবে অনেকেই গুরুত্ব দেন না।
খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশনের সময়যিনি খাবার প্রস্তুত করেন বা যিনি পরিবেশন করেন, তাঁকে অবশ্যই সেই কাজটির আগে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। অপরিষ্কার হাতে কোনো পরিষ্কার থালাবাসন স্পর্শ করাও উচিত নয়। হাতের নখ ছোট রাখা জরুরি সবার জন্যই, বিশেষত যাঁরা খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশনের কাজ করেন।
টয়লেট ব্যবহারের আগেটয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই জানেন। তবে এ–ও খেয়াল রাখুন, অপরিষ্কার হাতে শৌচকর্ম করলে হাতে লেগে থাকা জীবাণুর কারণে প্রস্রাবে সংক্রমণ হতে পারে। তাই শৌচকর্মের আগে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করুন। বিশেষ করে নারীদের এ বিষয়ে যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। নানা কারণে নারীদের প্রস্রাবে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
হাঁচি–কাশি, নাক ও কানে হাত দেওয়ার পরহাতের তালুতে হাঁচি–কাশি চাপতে নেই। টিস্যু পেপার বা রুমাল পাওয়া না গেলেও কনুইয়ের ভাঁজে হাঁচি–কাশি চাপতে হয়। তবু যদি ভুলবশত কেউ হাতের তালুতে হাঁচি–কাশি দেন, তাঁকে অবশ্যই তখনই হাত পরিষ্কার করে ফেলতে হবে খুব ভালোভাবে। নইলে তিনি যেসব স্থানে হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন, সেখানেই রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়বে। নাক পরিষ্কার করার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। কানে আঙুল দিলেও আপনার হাতে ময়লা লেগে যেতে পারে। তাই হাত পরিষ্কার করা আবশ্যক।
বাইরে থেকে ফেরার পরকরোনাভাইরাসের মহামারির সময় বাইরে থেকে ফিরে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুললেও সময়ের আবর্তে সেই উৎসাহে ভাটা পড়েছে অনেকেরই। কিন্তু সিঁড়ির হাতল, লিফটের বোতাম, গণপরিবহনের হাতলসহ নানা জায়গা স্পর্শ করার ফলে আপনার হাতে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু লেগে যায়। মনে রাখবেন, আপাতদৃষ্টে হাত জোড়া পরিষ্কার দেখালেও আদতে তা না–ও হতে পারে। তাই অবশ্যই হাত ধুয়ে ফেলুন ঘরে ঢোকার পরপরই। বাসার নিচেই সাবান–পানির ব্যবস্থা রাখা ভালো।
ছোট শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ও অসুস্থদের স্পর্শ করার আগেছোট শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ও অসুস্থ ব্যক্তিকে স্পর্শ করার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে ভুলবেন না। তাঁদের পরার জন্য পোশাক এগিয়ে দিচ্ছেন? আগে হাত ধুয়ে নিন। তাঁদের বিছানা–বালিশ পরিষ্কার করবেন? আগে হাত ধুয়ে নিন। মোটকথা, তাঁরা যা কিছু স্পর্শ করবেন, তা আপনি স্পর্শ করার আগে নিজের হাত জোড়া পরিষ্কার করে ফেলুন। যেসব জীবাণুর জন্য আর দশজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির কোনো অসুবিধা হয় না, সেসব দিয়ে সহজেই সংক্রমণ হয়ে যেতে পারে তাঁদের। তাই অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করুন। বাড়িতে অসুস্থ ব্যক্তিকে স্পর্শ করার পর ও হাসপাতালে কাউকে দেখতে যাওয়ার পরেও হাত ধুয়ে নিতে হবে অবশ্যই।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন
আরও পড়ুনহাত–পায়ের নখ ভালো রাখবে এই ৬ খাবার০১ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র র পর র প রস র র আগ
এছাড়াও পড়ুন:
ডলারের দরে নমনীয়তা দেখায়নি সরকার, আইএমএফের সঙ্গে আজ আবার বৈঠক
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড়ে কোনো সুরাহা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে– এ মুহূর্তে ডলারের দর বাজারভিত্তিকের ক্ষেত্রে নমনীয় করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার আরেক দফা বৈঠক হবে। আজও ইতিবাচক কোনো বার্তা না এলে আগামী ১৯ মে আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির চূড়ান্ত সুরাহা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে শর্তের অগ্রগতি যাচাইয়ে গত মাসে একটি মিশন ঢাকা সফর করে। তবে কোনো সমঝোতা ছাড়াই তারা ঢাকা ছাড়ে। মূলত বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে নমনীয়তা দেখাতে চাচ্ছে না। এ কারণে আলোচনা গড়ায় ওয়াশিংটনে। গত মাসের শেষ দিকে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের ফাঁকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সাইডলাইনে আলাদা বৈঠক হয়। কিন্তু ঢাকা বা ওয়াশিংটন– কোথাও আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে পরবর্তী দুই কিস্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ। গতকাল এ নিয়ে আবার ভার্চুয়াল সভা হয়। সোমবারের এ সভায় বাংলাদেশের পক্ষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, অতিরিক্ত সচিব ড. জিয়াউল আবেদীন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান ও কবির আহাম্মদ যুক্ত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ এ মুহূর্তে ডলারের দরে নমনীয়তা না দেখানোর নীতিগত অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বর্তমান ডলারের দর বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে দরের তেমন পার্থক্য নেই। আবার বৈধ পথে রেমিট্যান্সে প্রায় ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে। ডলারের দর দীর্ঘদিন ধরে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল থাকার পরও এভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে। এ মুহূর্তে ডলারের দরে সামান্য নমনীয়তা দেখালেই দর বাড়তে শুরু করবে। ডলার বাজারে আবার অস্থিরতা শুরু হবে। ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যাবে।
এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে বাজেট সহায়তা ছাড় নিয়ে আলোচনার সময়ও আইএমএফের কিস্তির বিষয়ে সমাধানের তাগিদ দেয় সংস্থাটি। গত রোববার ইতালির মিলানে এডিবির বার্ষিক সভায় সংস্থার দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বাজেট সহায়তার বিষয়ে আলোচনার সময় এডিবি আইএমএফের বিষয় জিজ্ঞাসা করেছিল। আমরা তাদের বলেছি, আইএমএফের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, চট করে আইএমএফের কঠিন শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করা হবে না। মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো করতে চাই না। আইএমএফের কিস্তি ছাড়াই অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে। আমরা যদি আইএমএফ ও এডিবির সহায়তা নাও পাই, তাও নিজেদের মতো করে বাস্তবসম্মত বাজেট দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী দু’জনেই সম্প্রতি বলেছেন, প্রয়োজনে আইএমএফের ঋণ নেওয়া হবে না। তবে সব শর্ত মানা হবে না।
আর্থিক সংকট সামাল দিতে ২০২২ সাল থেকে কয়েক দফা আলোচনা শেষে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার অন্য সব শর্ত মেনে নিলেও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারভিত্তিকের শর্ত নিয়ে দরকষাকষি করে আসছে।