আশঙ্কাকে সত্যি করে দিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। ‘অপারেশন সিদুঁর’ নামের এই সামরিক অভিযানের আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর জুড়ে ‘সন্ত্রাসবাদী-সংশ্লিষ্ট’ ৮টি স্থানে হামলা চালানো হয়। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।

ভারতীয় সেনবাহিনী জানিয়েছে, তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল এই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দীর্ঘস্থায়ী সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে কয়েকটি।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ভারতীয় বাহিনী জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈয়বার সদর দপ্তর ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালিয়েছে।

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানে ভারতের হামলা নিয়ে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে

ভারতের হামলা: ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাবে সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা

হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে ২টি ‘জঙ্গি আস্তানা’ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। এছাড়া মুরিদকে, মুজাফফরাবাদ, কোটলি, গুলপুর, ভীমবের, চাক আমরু এবং শিয়ালকোটেও ভারত হামলা চালিয়েছে। মোট ৮টি জায়গায় ৯টি ‘জঙ্গি ঘাঁটি’ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। 

যে ৯ লক্ষবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ভারত

১.

বাহাওয়ালপুর: আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি জইশ-ই-মোহাম্মদ সদর দপ্তর।

২. মুরিদকে: সাম্বার বিপরীত সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি একটি লস্কর-ই-তৈয়বার ক্যাম্প।

৩. .গুলপুর: পুঞ্চ-রাজৌরিতে নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে।

৪. সাওয়াইতে অবস্থিত লস্কর-ই-তৈয়বার ক্যাম্প: পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৩০ কিলোমিটার ভেতরে তাংধর সেক্টরে।

৫. বিলাল ক্যাম্প: জৈশ-ই-মোহাম্মদের একটি লঞ্চপ্যাড।

৬. লস্কর-ই-তৈয়বার কোটলি ক্যাম্প: রাজৌরির বিপরীত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ।

৭. বার্নালা ক্যাম্প: রাজৌরির বিপরীত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে।

৮. ক্যাম্প সরজল: সাম্বা-কাঠুয়ার বিপরীতে আইবি থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে জইশ-ই-মোহাম্মদ ক্যাম্প।

৯. মেহমুনা ক্যাম্প: আইবি থেকে ১৫ কিমি দূরে, শিয়ালকোটের কাছে, এইচএম প্রশিক্ষণ ক্যাম্প।

এক বিবৃতিতে ভারত বলছে, “পহেলাগামে হামলার সমুচিত জবাব দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসী স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। কোনো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়নি।”

পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারতের হামলায় পাকিস্তানে ৮ জন নিহত এবং অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছে। আহতের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। 

হামলার জবাবে ভারতেও পাল্টা হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এতে তিনজন ভারতীয় নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ই ম হ ম মদ র ব পর ত অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধীদের হাতে

চট্টগ্রাম নগরে থানা-ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অনেক আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি। এসব অস্ত্র-গুলি ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। লুট হওয়া অস্ত্র কেনাবেচায় পুলিশেরও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন গত বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের আটটি থানা ও আটটি ফাঁড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। সে সময় ৮১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৪ হাজার ৩২৪টি গুলি লুট হয়। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বেশির ভাগ অস্ত্র-গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাহমুদা বেগম সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। তবে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।

গত ২১ জুলাই নগরের চান্দগাঁওয়ে ‘সন্ত্রাসী’ ইসমাইল হোসেন ওরফে টেম্পো ও শহিদুল ইসলাম ওরফে বুইসার বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। পরে পুলিশ বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার এলাকায় সন্ত্রাসী শহিদুলের আস্তানার সন্ধান পায়। সেখানে লুট হওয়া দুটি গুলি ও গুলির খোসা পাওয়া যায়।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শহিদুলের দখল করা একটি ফ্ল্যাট থেকে গুলি ও দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ফ্ল্যাটটি টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ-হাটহাজারী থানার সীমানাসংলগ্ন কুয়াইশ এলাকায় মাসুদ কায়সার ও মো. আনিস নামে দুই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি গুলির খোসা (শটগানের কার্তুজ) উদ্ধার করা হয়। সেগুলোও লুট করা গুলির খোসা বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

নিহত আনিসের স্ত্রী শামিম আকতারের অভিযোগ, সন্ত্রাসী সাজ্জাদ পুলিশের গুলি ব্যবহার করে তাঁর স্বামীসহ দুজনকে খুন করেছেন। তবে সাজ্জাদ কারাগারে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে ৩ মার্চ সাতকানিয়ায় পিটুনিতে দুজনের মৃত্যুর পর ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ যে পিস্তল উদ্ধার করে, সেটিও থানা থেকে লুট হওয়া।

১৭ এপ্রিল নগরের ডবলমুরিং থানার বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে আরিফ হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর আস্তানা থেকে একটি পিস্তল ও ৫০টি গুলি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ স্বীকার করেন, এসব অস্ত্র-গুলি থানা থেকে লুট করা। তিনি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ডাকাতি ও ছিনতাই করেন।

গত ২৫ জানুয়ারি ডবলমুরিং থানার ঝরনাপাড়ায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৬টি গুলি, ১টি রাবার বুলেটসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ডবলমুরিং থানার চৌমুহনী এলাকার চারিয়াপাড়ায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ অস্ত্রসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানায়, এসব অভিযানে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র-গুলি লুট হওয়া এবং গ্রেপ্তার ছয়জনই ছিনতাইকারী।

১৭ জুন নগরের মেরিন সড়ক থেকে পিস্তল-গুলিহ মো. রুবেল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পিস্তলটি থানা থেকে লুট হওয়া বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। এদিকে পিস্তলটি বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২১ মার্চ মো. রিয়াদ নামের পুলিশের এক কনস্টেবলসহ ছয়জনকে পতেঙ্গা ও বাকলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রিয়াদসহ তিনজন আদালতে অস্ত্র কেনাবেচায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র, গুলি উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা না করলে কিংবা মনোযোগ না দিলে জননিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা হুমকির মুখে পড়বে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ