সুরা হিজর, পবিত্র কোরআনের পঞ্চদশ সুরা, মক্কায় অবতীর্ণ। এর আয়াতসংখ্যা ৯৯। এই সুরার নামকরণ হয়েছে হিজর উপত্যকার নামানুসারে, যেখানে সামুদ জাতির বসতি ছিল। এই সুরায় সামুদ জাতির ইতিহাস, তাদের অবাধ্যতা ও ধ্বংসের বর্ণনার পাশাপাশি মানুষের সৃষ্টি, জাহান্নামের দরজা, আল্লাহর রহমত এবং অন্যান্য নবীর কাহিনি উল্লেখ রয়েছে। এই লেখায় সুরা হিজরের মূল বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
সামুদ জাতি ও হিজর উপত্যকা
হিজর হেজাজ ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী একটি উপত্যকা, যেখানে শক্তিশালী সামুদ জাতি বাস করত। তারা পাহাড় কেটে নিরাপদ বাসগৃহ নির্মাণ করেছিল। তাদের নবী সালেহ (আ.
এ ঘটনা সত্য প্রত্যাখ্যানের পরিণতি এবং সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য সতর্কবাণী হিসেবে উল্লিখিত।
আরও পড়ুনপৃথিবীর বাদশাহ২১ এপ্রিল ২০২৫মানুষ ও জিনের সৃষ্টি
সুরা হিজরে মানুষ ও জিনের সৃষ্টির বিষয়ে বলা হয়েছে: ‘আমি তো ছাঁচে-ঢালা শুকনা ঠনঠনে মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছি।...খুব গরম বাতাসের ভাপ থেকে আমি জিন সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ২৬-২৭)
আল্লাহ যখন মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা করেন, ফেরেশতারা বলেন, মানুষ পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। আল্লাহ উত্তরে বলেন, ‘আমি যা জানি, নিশ্চয়ই তোমরা তা জানো না।’ এই আয়াত মানুষের সৃষ্টির মহৎ উদ্দেশ্যের প্রতি ইঙ্গিত করে।
জাহান্নামের সাত দরজা
সুরায় জাহান্নামের সাতটি দরজার উল্লেখ রয়েছে, যেখানে অবাধ্য ও শিরককারীরা তাদের পাপের ভিত্তিতে পৃথক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে: ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সবারই প্রতিশ্রুত স্থান। তার সাতটি দরজা আছে, প্রতিটি দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণি আছে।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৩-৪৪)
তাফসিরে ইবনে আবি হাতিমে এই দরজাগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়েছে: ১. জাহান্নাম (আগুনের গর্ত), ২. সায়ির (উজ্জ্বল অগ্নি), ৩. লাজা (অতি উত্তপ্ত), ৪. হুতামা (চূর্ণবিচূর্ণকারী), ৫. সাকার (ঝলসানো ও গলানো), ৬. জাহিম (জ্বলন্ত আগুন) এবং ৭. হাবিয়া (অতল গহ্বর)।
আরও পড়ুনযাঁর নামে কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে০৮ এপ্রিল ২০২৫আল্লাহর রহমত
সুরায় গুনাহগারদের জন্য আল্লাহর ক্ষমার বার্তা রয়েছে: ‘আমার দাসদের বলে দাও যে আমি ক্ষমা করি, আমি দয়া করি। আর আমার শাস্তি তো বড় কষ্টকর শাস্তি।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৯-৫০)
এই আয়াত বান্দাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার উৎসাহ দেয়, কারণ আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করতে সক্ষম।
ইবরাহিম (আ.) ও লুত (আ.)-এর কাহিনি
সুরায় ইবরাহিম (আ.)-এর মেহমানদের কথা উল্লেখ রয়েছে, যাঁরা ফেরেশতা ছিলেন। তাঁরা ইবরাহিম (আ.)-কে ১২০ বছর বয়সে পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দেন। তিনি বলেন, ‘যারা পথভ্রষ্ট, তারা ছাড়া আর কে তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়?’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৫৬)
একইভাবে লুত (আ.)-এর কওমের ধ্বংসের বর্ণনা এসেছে। ফেরেশতারা লুত (আ.)-কে রাতের মধ্যে পরিবার নিয়ে জনপদ ত্যাগ করতে বলেন। তাঁর কওম অতিথিদের প্রতি খারাপ আচরণের চেষ্টা করলে লুত (আ.) তাদের বাধা দেন। অবশেষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে একটি গুরু গুরু শব্দ ও কঙ্কর বর্ষণের মাধ্যমে তাদের শহর ধ্বংস হয়। (সুরা হিজর, আয়াত: ৬৫-৭৪)
আরও পড়ুনকোরআনের যে আয়াত শুনে ইসলামে আগ্রহী হলেন একজন০৪ ডিসেম্বর ২০২৪সুরা ফাতিহার মর্যাদা
সুরায় সুরা ফাতিহার শ্রেষ্ঠত্বের কথা উল্লেখ রয়েছে: ‘আমি অবশ্যই তোমাকে (সুরা ফাতিহার) সাত আয়াত দিয়েছি, যা বারবার আবৃত্তি করা হয় এবং দিয়েছি মহা কোরআন।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৮৭)
এই আয়াত সুরা ফাতিহার গুরুত্ব ও পবিত্র কোরআনের মহিমা তুলে ধরে।
সুরা হিজর সামুদ জাতির অবাধ্যতা ও ধ্বংসের মাধ্যমে সত্য প্রত্যাখ্যানের পরিণতি স্মরণ করায়। একই সঙ্গে এটি মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য, আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত এবং নবীদের কাহিনির মাধ্যমে ইমানদারদের জন্য পথনির্দেশ প্রদান করে। জাহান্নামের সাত দরজার বর্ণনা অবাধ্যতার ভয়াবহতা তুলে ধরে, আর সুরা ফাতিহার মর্যাদা কোরআনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করে। এই সুরা আমাদের একত্ববাদের প্রতি অবিচল থাকতে এবং আল্লাহর রহমতের প্রতি আশাবাদী হতে উৎসাহিত করে।
আরও পড়ুনযে ঘটনায় কোরআনের আয়াত নাজিল হয়১১ নভেম্বর ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রআন র আল ল হ র জন য অব ধ য
এছাড়াও পড়ুন:
সরাসরি: ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি ‘আগ্রাসনের’ নিন্দা ওআইসির
ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পক্ষগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার জন্য মন্ত্রিপর্যায়ের যোগাযোগ গ্রুপ গঠন করবে, যার উদ্দেশ্য হবে উত্তেজনা প্রশমনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা এবং ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধ করা।
ইস্তাম্বুলে রবিবার (২২ জুন) ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ ঘোষণায় ৫৭ সদস্যের এই সংস্থা ‘ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসনের’ নিন্দা জানিয়েছে এবং ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করার জরুরি প্রয়োজনীয়তা এবং এই বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ওআইসি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে তারা যেন এই আগ্রাসন বন্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং ইসরায়েলের সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়ী করে।
আরো পড়ুন:
হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন ইরানের পার্লামেন্টে
ইসরায়েলি হামলার প্রধান প্ররোচনাকারী যুক্তরাষ্ট্র: ইরান
ওআইসি একটি পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং এটিকে একটি বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধি বলে বর্ণনা করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন উত্তেজনা অঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে আরো হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শনিবার রাতে (মধ্যপ্রাচ্য সময় ভোরে) ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলও হামলা অব্যাহত রেখেছে। জবাবে ইরান ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছে। এর মধ্যে উত্তেজনা প্রশসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে; তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কারো কথা শুনছে না। তাদের মতো বয়ান তৈরি করে তারা ইরানে হামলা অব্যাহত রেখেছে। ইরান বারবার বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। আন্তর্জাতিক আনবিক সংস্থা-আইএইএ বলেছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর কাছাকাছি বা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে; এমন কোনো প্রমাণ তারা পায়নি। তবে এসব ভাষ্য মানতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের দেশের গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যও খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি ইসরায়েলের অভিযোগকে আমলে নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র হামলা করার পর ইরান এখন কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়, তার ওপর পরিস্থিতির বাঁক কোন দিকে যায়, সেটি নির্ভর করছে। এরই মধ্যে ইরানের পার্লামেন্টে হরমুজ প্রাণালি বন্ধের প্রস্তাব পাশ হয়েছে। মুহুর্তে মুহূতে পরিস্থিতি নতুন বাঁক নিচ্ছে।
ঢাকা/রাসেল