সুরা হিজর, পবিত্র কোরআনের পঞ্চদশ সুরা, মক্কায় অবতীর্ণ। এর আয়াতসংখ্যা ৯৯। এই সুরার নামকরণ হয়েছে হিজর উপত্যকার নামানুসারে, যেখানে সামুদ জাতির বসতি ছিল। এই সুরায় সামুদ জাতির ইতিহাস, তাদের অবাধ্যতা ও ধ্বংসের বর্ণনার পাশাপাশি মানুষের সৃষ্টি, জাহান্নামের দরজা, আল্লাহর রহমত এবং অন্যান্য নবীর কাহিনি উল্লেখ রয়েছে। এই লেখায় সুরা হিজরের মূল বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

সামুদ জাতি ও হিজর উপত্যকা

হিজর হেজাজ ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী একটি উপত্যকা, যেখানে শক্তিশালী সামুদ জাতি বাস করত। তারা পাহাড় কেটে নিরাপদ বাসগৃহ নির্মাণ করেছিল। তাদের নবী সালেহ (আ.

) তাদের একত্ববাদের দাওয়াত দেন, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। আল্লাহ তাদের পরীক্ষার জন্য একটি উট প্রেরণ করেন এবং তা হত্যা করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তারা উটটি হত্যা করে এবং অবাধ্যতার পরিণতি হিসেবে ভূমিকম্পের মাধ্যমে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: ‘হিজরবাসীরাও রাসুলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল। আমি ওদেরকে আমার নিদর্শন দিয়েছিলাম, কিন্তু ওরা তা উপেক্ষা করেছিল। ...তারপর এক সকালে এক বিকট শব্দ ওদেরকে আঘাত করল।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৮০-৮৪)

এ ঘটনা সত্য প্রত্যাখ্যানের পরিণতি এবং সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য সতর্কবাণী হিসেবে উল্লিখিত।

আরও পড়ুনপৃথিবীর বাদশাহ২১ এপ্রিল ২০২৫

মানুষ ও জিনের সৃষ্টি

সুরা হিজরে মানুষ ও জিনের সৃষ্টির বিষয়ে বলা হয়েছে: ‘আমি তো ছাঁচে-ঢালা শুকনা ঠনঠনে মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছি।...খুব গরম বাতাসের ভাপ থেকে আমি জিন সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ২৬-২৭)

আল্লাহ যখন মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা করেন, ফেরেশতারা বলেন, মানুষ পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। আল্লাহ উত্তরে বলেন, ‘আমি যা জানি, নিশ্চয়ই তোমরা তা জানো না।’ এই আয়াত মানুষের সৃষ্টির মহৎ উদ্দেশ্যের প্রতি ইঙ্গিত করে।

জাহান্নামের সাত দরজা

সুরায় জাহান্নামের সাতটি দরজার উল্লেখ রয়েছে, যেখানে অবাধ্য ও শিরককারীরা তাদের পাপের ভিত্তিতে পৃথক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে: ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সবারই প্রতিশ্রুত স্থান। তার সাতটি দরজা আছে, প্রতিটি দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণি আছে।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৩-৪৪)

তাফসিরে ইবনে আবি হাতিমে এই দরজাগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়েছে: ১. জাহান্নাম (আগুনের গর্ত), ২. সায়ির (উজ্জ্বল অগ্নি), ৩. লাজা (অতি উত্তপ্ত), ৪. হুতামা (চূর্ণবিচূর্ণকারী), ৫. সাকার (ঝলসানো ও গলানো), ৬. জাহিম (জ্বলন্ত আগুন) এবং ৭. হাবিয়া (অতল গহ্বর)।

আরও পড়ুনযাঁর নামে কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে০৮ এপ্রিল ২০২৫

আল্লাহর রহমত

সুরায় গুনাহগারদের জন্য আল্লাহর ক্ষমার বার্তা রয়েছে: ‘আমার দাসদের বলে দাও যে আমি ক্ষমা করি, আমি দয়া করি। আর আমার শাস্তি তো বড় কষ্টকর শাস্তি।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৯-৫০)

এই আয়াত বান্দাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার উৎসাহ দেয়, কারণ আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করতে সক্ষম।

ইবরাহিম (আ.) ও লুত (আ.)-এর কাহিনি

সুরায় ইবরাহিম (আ.)-এর মেহমানদের কথা উল্লেখ রয়েছে, যাঁরা ফেরেশতা ছিলেন। তাঁরা ইবরাহিম (আ.)-কে ১২০ বছর বয়সে পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দেন। তিনি বলেন, ‘যারা পথভ্রষ্ট, তারা ছাড়া আর কে তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়?’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৫৬)

একইভাবে লুত (আ.)-এর কওমের ধ্বংসের বর্ণনা এসেছে। ফেরেশতারা লুত (আ.)-কে রাতের মধ্যে পরিবার নিয়ে জনপদ ত্যাগ করতে বলেন। তাঁর কওম অতিথিদের প্রতি খারাপ আচরণের চেষ্টা করলে লুত (আ.) তাদের বাধা দেন। অবশেষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে একটি গুরু গুরু শব্দ ও কঙ্কর বর্ষণের মাধ্যমে তাদের শহর ধ্বংস হয়। (সুরা হিজর, আয়াত: ৬৫-৭৪)

আরও পড়ুনকোরআনের যে আয়াত শুনে ইসলামে আগ্রহী হলেন একজন০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সুরা ফাতিহার মর্যাদা

সুরায় সুরা ফাতিহার শ্রেষ্ঠত্বের কথা উল্লেখ রয়েছে: ‘আমি অবশ্যই তোমাকে (সুরা ফাতিহার) সাত আয়াত দিয়েছি, যা বারবার আবৃত্তি করা হয় এবং দিয়েছি মহা কোরআন।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৮৭)

এই আয়াত সুরা ফাতিহার গুরুত্ব ও পবিত্র কোরআনের মহিমা তুলে ধরে।

সুরা হিজর সামুদ জাতির অবাধ্যতা ও ধ্বংসের মাধ্যমে সত্য প্রত্যাখ্যানের পরিণতি স্মরণ করায়। একই সঙ্গে এটি মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য, আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত এবং নবীদের কাহিনির মাধ্যমে ইমানদারদের জন্য পথনির্দেশ প্রদান করে। জাহান্নামের সাত দরজার বর্ণনা অবাধ্যতার ভয়াবহতা তুলে ধরে, আর সুরা ফাতিহার মর্যাদা কোরআনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করে। এই সুরা আমাদের একত্ববাদের প্রতি অবিচল থাকতে এবং আল্লাহর রহমতের প্রতি আশাবাদী হতে উৎসাহিত করে।

আরও পড়ুনযে ঘটনায় কোরআনের আয়াত নাজিল হয়১১ নভেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক রআন র আল ল হ র জন য অব ধ য

এছাড়াও পড়ুন:

উটের মুজিজা ও জাহান্নামের দরজা

সুরা হিজর, পবিত্র কোরআনের পঞ্চদশ সুরা, মক্কায় অবতীর্ণ। এর আয়াতসংখ্যা ৯৯। এই সুরার নামকরণ হয়েছে হিজর উপত্যকার নামানুসারে, যেখানে সামুদ জাতির বসতি ছিল। এই সুরায় সামুদ জাতির ইতিহাস, তাদের অবাধ্যতা ও ধ্বংসের বর্ণনার পাশাপাশি মানুষের সৃষ্টি, জাহান্নামের দরজা, আল্লাহর রহমত এবং অন্যান্য নবীর কাহিনি উল্লেখ রয়েছে। এই লেখায় সুরা হিজরের মূল বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

সামুদ জাতি ও হিজর উপত্যকা

হিজর হেজাজ ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী একটি উপত্যকা, যেখানে শক্তিশালী সামুদ জাতি বাস করত। তারা পাহাড় কেটে নিরাপদ বাসগৃহ নির্মাণ করেছিল। তাদের নবী সালেহ (আ.) তাদের একত্ববাদের দাওয়াত দেন, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। আল্লাহ তাদের পরীক্ষার জন্য একটি উট প্রেরণ করেন এবং তা হত্যা করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তারা উটটি হত্যা করে এবং অবাধ্যতার পরিণতি হিসেবে ভূমিকম্পের মাধ্যমে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: ‘হিজরবাসীরাও রাসুলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল। আমি ওদেরকে আমার নিদর্শন দিয়েছিলাম, কিন্তু ওরা তা উপেক্ষা করেছিল। ...তারপর এক সকালে এক বিকট শব্দ ওদেরকে আঘাত করল।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৮০-৮৪)

এ ঘটনা সত্য প্রত্যাখ্যানের পরিণতি এবং সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য সতর্কবাণী হিসেবে উল্লিখিত।

আরও পড়ুনপৃথিবীর বাদশাহ২১ এপ্রিল ২০২৫

মানুষ ও জিনের সৃষ্টি

সুরা হিজরে মানুষ ও জিনের সৃষ্টির বিষয়ে বলা হয়েছে: ‘আমি তো ছাঁচে-ঢালা শুকনা ঠনঠনে মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছি।...খুব গরম বাতাসের ভাপ থেকে আমি জিন সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ২৬-২৭)

আল্লাহ যখন মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা করেন, ফেরেশতারা বলেন, মানুষ পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। আল্লাহ উত্তরে বলেন, ‘আমি যা জানি, নিশ্চয়ই তোমরা তা জানো না।’ এই আয়াত মানুষের সৃষ্টির মহৎ উদ্দেশ্যের প্রতি ইঙ্গিত করে।

জাহান্নামের সাত দরজা

সুরায় জাহান্নামের সাতটি দরজার উল্লেখ রয়েছে, যেখানে অবাধ্য ও শিরককারীরা তাদের পাপের ভিত্তিতে পৃথক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে: ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সবারই প্রতিশ্রুত স্থান। তার সাতটি দরজা আছে, প্রতিটি দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণি আছে।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৩-৪৪)

তাফসিরে ইবনে আবি হাতিমে এই দরজাগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়েছে: ১. জাহান্নাম (আগুনের গর্ত), ২. সায়ির (উজ্জ্বল অগ্নি), ৩. লাজা (অতি উত্তপ্ত), ৪. হুতামা (চূর্ণবিচূর্ণকারী), ৫. সাকার (ঝলসানো ও গলানো), ৬. জাহিম (জ্বলন্ত আগুন) এবং ৭. হাবিয়া (অতল গহ্বর)।

আরও পড়ুনযাঁর নামে কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে০৮ এপ্রিল ২০২৫

আল্লাহর রহমত

সুরায় গুনাহগারদের জন্য আল্লাহর ক্ষমার বার্তা রয়েছে: ‘আমার দাসদের বলে দাও যে আমি ক্ষমা করি, আমি দয়া করি। আর আমার শাস্তি তো বড় কষ্টকর শাস্তি।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৯-৫০)

এই আয়াত বান্দাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার উৎসাহ দেয়, কারণ আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করতে সক্ষম।

ইবরাহিম (আ.) ও লুত (আ.)-এর কাহিনি

সুরায় ইবরাহিম (আ.)-এর মেহমানদের কথা উল্লেখ রয়েছে, যাঁরা ফেরেশতা ছিলেন। তাঁরা ইবরাহিম (আ.)-কে ১২০ বছর বয়সে পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দেন। তিনি বলেন, ‘যারা পথভ্রষ্ট, তারা ছাড়া আর কে তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়?’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৫৬)

একইভাবে লুত (আ.)-এর কওমের ধ্বংসের বর্ণনা এসেছে। ফেরেশতারা লুত (আ.)-কে রাতের মধ্যে পরিবার নিয়ে জনপদ ত্যাগ করতে বলেন। তাঁর কওম অতিথিদের প্রতি খারাপ আচরণের চেষ্টা করলে লুত (আ.) তাদের বাধা দেন। অবশেষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে একটি গুরু গুরু শব্দ ও কঙ্কর বর্ষণের মাধ্যমে তাদের শহর ধ্বংস হয়। (সুরা হিজর, আয়াত: ৬৫-৭৪)

আরও পড়ুনকোরআনের যে আয়াত শুনে ইসলামে আগ্রহী হলেন একজন০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সুরা ফাতিহার মর্যাদা

সুরায় সুরা ফাতিহার শ্রেষ্ঠত্বের কথা উল্লেখ রয়েছে: ‘আমি অবশ্যই তোমাকে (সুরা ফাতিহার) সাত আয়াত দিয়েছি, যা বারবার আবৃত্তি করা হয় এবং দিয়েছি মহা কোরআন।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৮৭)

এই আয়াত সুরা ফাতিহার গুরুত্ব ও পবিত্র কোরআনের মহিমা তুলে ধরে।

সুরা হিজর সামুদ জাতির অবাধ্যতা ও ধ্বংসের মাধ্যমে সত্য প্রত্যাখ্যানের পরিণতি স্মরণ করায়। একই সঙ্গে এটি মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য, আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত এবং নবীদের কাহিনির মাধ্যমে ইমানদারদের জন্য পথনির্দেশ প্রদান করে। জাহান্নামের সাত দরজার বর্ণনা অবাধ্যতার ভয়াবহতা তুলে ধরে, আর সুরা ফাতিহার মর্যাদা কোরআনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করে। এই সুরা আমাদের একত্ববাদের প্রতি অবিচল থাকতে এবং আল্লাহর রহমতের প্রতি আশাবাদী হতে উৎসাহিত করে।

আরও পড়ুনযে ঘটনায় কোরআনের আয়াত নাজিল হয়১১ নভেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ