নিহত জঙ্গিদের রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়েছে পাকিস্তান: বিক্রম মিশ্রি
Published: 8th, May 2025 GMT
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, অপারেশন সিঁদুরে নিহত জঙ্গিদের রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়েছে পাকিস্তান, নিহত জঙ্গিদের দেহ মোড়ানো হয়েছে দেশটির জাতীয় পতাকায়।
আজ বৃহস্পতিবার ভারতের নয়া দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র সচিব।
সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের অপপ্রচার ও সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি। বিক্রম মিশ্রি পাকিস্তানের জঙ্গিদের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়ে বলেছেন, ভারত তার নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো আপস করবে না।
আরো পড়ুন:
ভারতের জম্মু শহরে বিস্ফোরণ, ব্ল্যাকআউট
ভারতে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, দাবি ভারতীয় মিডিয়ার
তিনি বলেন, “আমরা যতটা জানি, এই ঘটনায় (অপারেশন সিঁদুর) মৃত জঙ্গিদের শেষকৃত্যে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়েছে পাকিস্তান, এটাই হয়তো ওদের প্রথা।”
অপারেশন সিঁদুরের পর ভারত স্পষ্ট বার্তা দেয়, হামলা চালানো হয়েছে কেবল জঙ্গি ঘাঁটিতেই। যদিও পাকিস্তান অভিযোগ তোলে ধর্মীয় স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারত।
বৃহস্পতিবার সকালে ভারত পাকিস্তানের লাহোরের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমে হারপি ড্রোন ব্যবহার করে পাল্টা হামলা চালায়। মিশ্রি জানান, এই হামলা পাকিস্তানের আক্রমণের সমান তীব্রতায় এবং একই ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল।
এদিন পররাষ্ট্র সচিব জানান, ‘‘ভারত পরিষ্কার করে জানাচ্ছে জঙ্গি ঘাঁটিতেই হামলা চালানো হয়েছে। কোনো ধর্মীয় স্থানে করা হয়নি। পুঞ্চে গুরুদ্বোয়ারে আক্রমণ করেছে পাকিস্তান। তাতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সকাল পর্যন্ত ১৬ জন মারা গেছেন, ৫৯ জন আহত। পাকিস্তান সাম্প্রদায়িক কথার মাধ্যমে রাজনীতি করছে। পহেলগাঁও’তে আপনারা অবশ্যই দেখেছেন বেছে বেছে মারা হয়েছে।’’
পররাষ্ট্র সচিব আরো জানান, ‘‘২২ এপ্রিল আক্রমণ শুরু করেছিল ওরা। পহেলগাঁওয়ের সেই আক্রমণের জবাব আমরা দিচ্ছি। ওরা এটা শুরু করেছিল। ভারত জাতিসংঘকে রিপোর্ট দিয়েছে। আমরা আবার দেব নানা তথ্য তাদের। টিআরএফ নিয়ে পাকিস্তান তাদের জবাব এড়িয়েছিল। ভারতের জবাব সংযত। আমরা শুরু করিনি। আমরা ওদের যথাযথ জবাব দিচ্ছি।”
মিশ্রি জানান, হামলার জন্য দায়ী ছয় জঙ্গিকে নির্মূল করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় তদন্তের দাবি জানিয়েছিল পাকিস্তান। এ প্রসঙ্গে বিক্রম মিশ্রী বলেন, ‘‘পাকিস্তান হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছে। ওদের তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রী বলছেন, সেখানে জঙ্গি নেই। আমরা প্রকৃত পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করেছি। সবাই জানে লাদেন কোথায় ছিল, আর তাকে কে শহীদ বলেছিল। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক স্তরে নানা মিথ্যা কথা বলে চলেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কী বলছে আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। পাকিস্তান চায় যৌথ তদন্ত কমিটি। কিন্তু ওদের ট্র্যাক রেকর্ড আপনারা জানেন। মুম্বাই, পাঠানকোটে ওরা কি করেছিল সেটা সকলে জানে। কাসভ গ্রেপ্তার হওয়ার পরে, নানা তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তা জানানোর পরে ওরা কী বলেছিল নিশ্চয়ই জানেন।’’
পাকিস্তানের মন্ত্রীদের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগাযোগ আছে বলেই এদিন দাবি করলেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব। তুলে ধরলেন প্রমাণও। তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তান জাতিসংঘে ‘টিআরএফ’ (পহেলগাঁওতে হামলাকারী জঙ্গি সংগঠন) এর নাম নিতে বিরোধ করেছিল। পাকিস্তানের মন্ত্রীদের সঙ্গে আতঙ্কবাদীদের যোগ রয়েছে।”
সাংবাদিকদেরকে ছবি দেখিয়ে মিশ্রি বলেন, “কফিনের সামনে কারা দাঁড়িয়ে আছে। কফিনে পাকিস্তানের পতাকা দেওয়া। এর থেকে বুঝতেই পারছেন ওদের যোগাযোগ।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা বেছে বেছে জঙ্গি ঘাঁটিতেই আক্রমণ করেছি। ভারত একাধিকবার নেগোশিয়নের প্রস্তাব দিয়েছিল পানি চুক্তির। পাকিস্তান বারবার নিয়ম ভেঙেছে। ভারতের সহনশীলতা হলো গত ৬৫ বছর ধরে ভারত সহ্য করেছে। পাকিস্তান শুধু প্রোপাগাণ্ডা তৈরি করছে। পাকিস্তানের সমস্ত হামলার জবাব দেবে ভারত।’’
মিশ্রি জানান, অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকা হয়েছিল। তিনি বলেন, “ভারত তার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার বিষয়ে কঠোর। পাকিস্তান যদি আরো হামলা চালায়, তবে ভারত যথাযথ জবাব দেবে।”
মিশ্রি জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং চীন, বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশ শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেন, “ভারত শান্তি চায়, কিন্তু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।”
মিশ্রি ইন্ডাস ওয়াটার ট্রিটি প্রসঙ্গে বলেন, “ভারতের ধৈর্যের কারণেই আমরা ৬৫ বছর ধরে ইন্ডাস ওয়াটার ট্রিটি মেনে চলেছি, কিন্তু পাকিস্তানের উসকানির জবাব দেওয়া হবে। ভারত এই চুক্তি মেনে চলেছে, কিন্তু পাকিস্তানের ক্রমাগত উসকানি এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ করছে।” তিনি পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের সমর্থন বন্ধ করার আহ্বান জানান।
মিশ্রি ভারতের অভ্যন্তরে স্লিপার সেল সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তান সরাসরি সংঘর্ষ এড়িয়ে স্লিপার সেল ব্যবহার করতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুত।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পরর ষ ট র র মন ত র কর ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৬ জন নিহত
ভারতের উত্তরকাশীর গঙ্গনানি এলাকার কাছে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ছয়জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেরাদুন থেকে গঙ্গোত্রী ধামে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে।
কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে গঙ্গোত্রী জাতীয় সড়কের গঙ্গনানি এলাকার কাছে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ, এসডিআরএফ, অগ্নিনির্বাপণ, চিকিৎসা ও বিপর্যয় মোকাবিলায় নিয়োজিত অন্যান্য কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।
হেলিকপ্টারটি হেলি অ্যারোট্রান্স কোম্পানির। সকালে দেরাদুনের সহস্রধারা হেলিপ্যাড থেকে হরশিল যাওয়ার উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে এটি। হেলিকপ্টারে পাইলটসহ মোট সাতজন ছিলেন। ঘটনাস্থলেই পাঁচজন ও একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
পুলিশ জানায়, যাত্রীদের মধ্যে চারজন মুম্বাইয়ের ও দুজন অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন নারী ও একজন পুরুষ (পাইলট)। ৫১ বছর বয়সী অন্ধ্রপ্রদেশের এক ব্যক্তি আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হেলিকপ্টারটি চার ধাম যাত্রার গঙ্গোত্রী ধামে যাচ্ছিল।
হেলিকপ্টারটি হেলি অ্যারোট্রান্স কোম্পানির। সকালে দেরাদুনের সহস্রধারা হেলিপ্যাড থেকে হরশিল যাওয়ার উদ্দেশে উড্ডয়ন করে এটি। হেলিকপ্টারে পাইলটসহ মোট সাতজন ছিলেন। ঘটনাস্থলেই পাঁচজন ও একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।এসডিআরএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হেলিকপ্টারটি প্রায় ২০০-২৫০ মিটার গভীর খাদে পড়ে যায়। উদ্ধারকারী দল সেখানে একটি বেজ স্থাপন করে খাদে নেমে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন রবিন সিং। হেলিকপ্টারে সাতজন ছিলেন। একজন পাইলট ও ছয়জন যাত্রী। পুলিশ এবং অন্যান্য জরুরি পরিষেবা ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে এসডিআরএফ উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে।