আওয়ামী লীগের বিচার ও দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তাঁর সঙ্গে সেখানে আরও অনেকে যোগ দিয়েছেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের বিচার ও দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে নানা স্লোগান দিচ্ছেন।

এই কর্মসূচিতে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

আজ বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এক ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ ঘোষণা দেন, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করা ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ (পথনকশা) না পাওয়া পর্যন্ত রাত ১০টা থেকে যমুনার সামনে তিনি অবস্থান নেবেন।

রাত ১০টার পর হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সেখানে তাঁর সঙ্গে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা যোগ দিয়েছেন। অবস্থান কর্মসূচিতে ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচির কারণে যমুনার সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এই কর্মসূচি চলার মধ্যেই রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, ফ্যাসিস্ট ও খুনি আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। আসামিদের জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারের রাষ্ট্রপতিকে চোখের সামনে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। বিচার প্রশ্নে সরকারের প্রতি আমাদের অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে।’

নাহিদ ইসলাম ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরও লিখেছেন, ‘জুলাইয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল খুনিদের বিচার এবং মুজিববাদীরা বাংলার মাটিতে আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না। আজ রাতেই ফয়সালা হবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে। আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না আসা পর্যন্ত আমরা রাজপথ থেকে উঠব না।’

জুলাইয়ের সব শক্তি, শহীদ পরিবারের সদস্যদের ও আহতদের রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি লিখেছেন, ‘বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম অবস থ ন আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি পথনকশা তৈরি করা হচ্ছে–বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের করা শুল্কনীতি নিয়ে যেসব কথাবার্তা হয়, সেগুলোর একটি বড় অংশ অনুমাননির্ভর। তবে উচ্চ শুল্ক আরোপের পেছনে বাণিজ্য–ঘাটতির বাস্তবতাও ছিল। এ জন্য আমরা স্পষ্ট হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে কিছু পণ্যের তালিকা ও একটি পথনকশা নির্ধারণ করেছি। এর মাধ্যমে আশা করছি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য–ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারব।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাসিক ওয়েবিনারে বাণিজ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী)।

ওয়েবিনারে আকাশপথে ট্রান্সশিপমেন্ট বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে জানতে চান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান। জবাবে শেখ বশীরউদ্দিন বলেন, ‘সাধারণত এ ধরনের ট্রান্সশিপমেন্ট প্রদানকারী দেশের খরচ উৎস দেশের তুলনায় কম হয়। এ কারণে বিভিন্ন দেশ অন্য দেশ থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নেয়। তবে নতুন পরিস্থিতিতে আমরা কিছু সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়েছি। এর মাধ্যমে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পণ্য পরিবহনে আরও দক্ষ ও প্রতিযোগীসক্ষম হতে পারব।’

এ খাতে কিছু কাজের উদাহরণ দিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘সম্প্রতি একটি নতুন কার্গো বিমানবন্দর চালু করা হয়েছে। ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মতো কয়েকটি বিমানবন্দর রয়েছে, যেগুলোকে কাজে লাগানো সম্ভব। কক্সবাজারে আমরা রানওয়ে দীর্ঘ করছি, যাতে বোয়িং ৭৪৭-৮০০ ধরনের বড় কার্গো বিমান অবতরণ করতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে একটি দেশীয় এয়ারলাইনের জন্য নতুন একটি বিমান অনুমোদন দিয়েছি। আমি আরও বিদেশি কার্গো পরিবহনকারী বিমান সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এ জন্য কিছু বিধিনিষেধও শিথিল করা হবে, যাতে নতুন কার্গো বিমান পরিষেবা ও ব্যবসা শুরু করা যায়।’

দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, সরকারি প্রায় ৩০টি পাটকল এবং প্রায় সমসংখ্যক বস্ত্রকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব কারখানা খুব দীর্ঘ মেয়াদে, ন্যূনতম ৩০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হবে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রায় ৩ বছর ভাড়ামুক্ত সুবিধা থাকবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, দেশে শস্য উৎপাদনের পর অনেক অপচয় ঘটে। এ জন্য সরকার বাফার বা সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। সরকার ইতিমধ্যে এ খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও প্রয়োজন।

জ্বালানি তথা গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ ও দাম নিয়ে উদ্যোক্তারা অসুবিধায় রয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, দেশে গ্যাস বিতরণের জন্য একটি ভালো সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে পর্যাপ্ত রিগ্যাসিফিকেশন স্টেশন নেই। জ্বালানি মন্ত্রণালয় নতুন রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট নির্মাণ করছে, যার মাধ্যমে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এনে তা রিগ্যাসিফাই করে পাইপলাইনের মাধ্যমে বিতরণ করা সম্ভব হবে।

ভোলায় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ভোলায় প্রাকৃতিক গ্যাস উদ্বৃত্ত রয়েছে। সেখানে যেকোনো আগ্রহী বিনিয়োগকারী এলে দ্রুতই গ্যাস–সংযোগ পেতে পারেন।

দেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর কাঠামোগত সংস্কার করা হবে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের খসড়া প্রস্তুত করেছি। এটি বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য রয়েছে।’

অতীতে অনেক সময় প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মনোনীত ব্যক্তিরাই শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন, সমিতি ও চেম্বারের নেতৃত্বে এসেছেন উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য ও শিল্প সংগঠনগুলোর কার্যক্রম আরও গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা এবং যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি পথনকশা তৈরি করা হচ্ছে–বাণিজ্য উপদেষ্টা