সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ‘সেফ এক্সিট’ দেওয়ায় ঢাবিতে বিক্ষোভ
Published: 9th, May 2025 GMT
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের ‘সেফ এক্সিট’ (নিরাপদে দেশ ছাড়ার সুযোগ) দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের পদত্যাগ করার দাবি জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। পরে রাত ১০টার দিকে একই জায়গায় সমাবেশ করে ‘জুলাই ঐক্য’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব রেজওয়ান আহমেদ বলেন, ‘বিএনপি বলছে আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের নেতা–কর্মীরা বিএনপিতে যোগ দিতে পারবেন। বিএনপি–জামায়াত নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, সেটা নিয়ে আমরা সন্দিহান।’
রেজওয়ান আহমেদ বলেন, ‘যেসব উপদেষ্টা আজকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন, আওয়ামী লীগের দোসরদের সেফ এক্সিট দিচ্ছেন; আমরা আহ্বান করব, আপনারা পদত্যাগ করুন। নাহয় দেশের শিক্ষার্থীরা আপনাদের পদ থেকে টেনে নামাবে।’
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আরেক নেতা হাবিবুর রহমান বলেন, দুই হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে গড়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ ছিল খুনি (আওয়ামী) লীগের বিচার করা। কিন্তু এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় সংস্কার হলো খুনি লীগারদের পুনর্বাসন।
পরে জুলাই ঐক্য প্ল্যাটফর্মের সমাবেশে সরকারের উদ্দেশে ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, কারা সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে সেফ এক্সিট দিয়েছেন, তাঁদের নাম প্রকাশ করুন। আর আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে কতটুকু অগ্রসর হয়েছেন, সেটা জানান।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ৯ মাস পর বুধবার দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের আরও অনেককে আসামি করা হয়।
আরও পড়ুনআবদুল হামিদের দেশত্যাগ: এসপি প্রত্যাহার, আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব ক র ষ ট রপত আবদ ল হ ম দ স ফ এক স ট সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
পানির জন্য সর্বাত্মক যুদ্ধের শঙ্কা
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনার একটি প্রধান কারণ হলো, পানিসম্পদ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন। ভারত ইতোমধ্যেই চেনাব নদীর পানিপ্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে। আর এতেই পাকিস্তান আরও সংকটে পড়েছে। এই পানি নিয়ে টানাপোড়েনে দুই দেশের সংঘাত সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২২ এপ্রিল কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পাদিত দীর্ঘদিনের ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ থেকে সরে এসেছে ভারত। দেশটি চেনাবের পানিপ্রবাহও কমিয়ে দিয়েছে। এতে পাকিস্তান পানি সংকটের মুখে পড়েছে। এই অবস্থায় ইসলামাবাদ খুবই অসন্তুষ্ট। এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধও স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পানি চুক্তি স্থগিত করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি ভারত। গত বুধবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডের ৯টি স্থানে সামরিক হামলা চালায় দেশটি। সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে পারাপারও বন্ধ করেছে দুই দেশ। পাকিস্তানকে পানির সংকটে ফেলতে চায় ভারত। পানি চুক্তির সব বিধান নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় দিল্লি।
১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় সিন্ধু পানি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল সিন্ধুর ব্যবস্থার পানিবণ্টন নিয়ন্ত্রণ করা। চুক্তি অনুসারে, ভারত পূর্বাঞ্চলের নদী রাবি, বিয়াসসহ তিনটি নদীর ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। অন্যদিকে পাকিস্তান পশ্চিমের
তিনটি নদী সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে, যা দেশটির জলসম্পদের ৮০ শতাংশ প্রয়োজন মেটায়। চুক্তি অনুসারে কোনো পক্ষ এককভাবে চুক্তি থেকে সরে যেতে পারবে না। কিন্তু ভারত একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে গেছে।
নদীগুলোর পানিপ্রবাহের ধরন ও নদী নেটওয়ার্ক কাঠামো প্রক্রিয়া ভারতের অনুকূলে। এজন্য ভারত পানিপ্রবাহ কমিয়ে দিলে তা পাকিস্তানের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই অবস্থায় সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করায় পাকিস্তানের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে। ভারত নদীগুলোর পানিপ্রবাহের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এতে পাকিস্তানে পানির ঘাটতি কিংবা বন্যা সৃষ্টি হতে পারে।
জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ওই সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। তাদের অধিকাংশই পর্যটক। ভারত এই হামলায় পাকিস্তানকে দোষারোপ করে। ভারতের জনগণের মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার দাবি উঠতে থাকে। এই অবস্থায় গত বুধবার ভারত পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর আগে দেশটি পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে পানিপ্রবাহ বন্ধ করার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বিশ্বব্যাংকও পানি চুক্তি স্থগিত করার বিষয়ে ভারতের বিরোধিতা করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিপ্রবাহ বন্ধ করা প্রকৃতির স্বাভাবিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটানোর শামিল। এই পরিস্থিতির ফলাফল অত্যন্ত খারাপ হতে পারে। মানবসভ্যতা টিকে থাকার সঙ্গে যা সরাসরি জড়িত। এই অবস্থায় ভারতের পদক্ষেপে পাকিস্তান স্বাভাবিকভাবে ক্ষুব্ধ হতে বাধ্য। কারণ পানির প্রবাহ কমে গেলে নদীগুলো শুকিয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে দেখা দিতে পারে খরা, অনাবৃষ্টি কিংবা দুর্ভিক্ষ। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পানিপ্রবাহ সংকটে উত্তপ্ত আবহাওয়া বিরাজ করে থাকে।
ভারত-পাকিস্তানের এই জলযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক যুদ্ধেও রূপ নিতে পারে। নিজ স্বার্থে প্রতিবেশী দেশের মধ্যে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিলে সেই ক্ষতি ভারতের দিকেও পরিচালিত হতে পারে। এই জলযুদ্ধ বিশ্বের বড় বড় যুদ্ধের কারণে হতে দেখা গেছে। নীল নদের পানিপ্রবাহ নিয়ে যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে। জর্ডান নদীর প্রবাহ রোধ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতেরও একটি কারণ। সূত্র: আলজাজিরা, জিও নিউজ।