সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের বিদেশ যাওয়ার ঘটনায় পুলিশের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁর নিজের জেলা কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী ও ঢাকা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে নিয়োজিত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া উপপরিদর্শক ও সহকারী উপপরিদর্শক পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি কী প্রক্রিয়ায় আবদুল হামিদ বিদেশ গেছেন, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার ভোররাতে আবদুল হামিদ থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। বেলা গড়াতেই এই খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানায় যুব অধিকার পরিষদ।
ছাত্রনেতাদের ক্ষোভ শুধু ফেসবুকে সীমাবদ্ধ থাকেনি। দিনাজপুর সফররত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বৈষম্যবিরোধী স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেখানেই ঘোষণা দেন, আবদুল হামিদের দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, ‘তাদের (আবদুল হামিদকে বিদেশে যেতে সহায়তাকারীদের) কোনো অবস্থায় ছাড় দেওয়া যাবে না। আর যদি শাস্তির আওতায় না আনি, তাহলে আমি চলে যাব।’ 

সন্ধ্যায় নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর সড়কে ক্ষুব্ধ একদল শিক্ষার্থী স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ করে। এ সময় উপদেষ্টা বলেন, সাবেক এই রাষ্ট্রপতিকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। 

সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের ঘটনায় গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক  হাসনাত আবদুল্লাহ। তাঁর সঙ্গে সেখানে আরও অনেকে যোগ দিয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগের বিচার ও দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে নানা স্লোগান দিচ্ছেন। এই কর্মসূচিতে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

অবশ্য এর আগে সন্ধ্যায় তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুকে জানান, ‘দল হিসেবে লীগের বিচারের প্রভিশন (বিধান) যুক্ত করা হবে। ফ্যাসিস্ট লীগের বিচার হবেই। বিচার কাজ ত্বরান্বিত করতে ট্রাইব্যুনাল-২ গঠিত হচ্ছে।’ পরে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা আছে। গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় বিস্ফোরক আইনসহ দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলাটি করা হয়। ওই মামলায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকেও আসামি করা হয়েছে।
আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় গতকাল দিনভর নানা ক্ষোভ-বিক্ষোভের পর সন্ধ্যায় ঢাকায় পুলিশ সদরদপ্তর থেকে জানানো হয়, সাবেক রাষ্ট্রপতির বিদেশ গমনের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফ ও এটিএসআই মো. সোলায়মান এবং কিশোরগঞ্জ সদর থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আজহারুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

এর ঘণ্টাখানেক পর পুলিশ সদরদপ্তর থেকে আরেক বার্তায় জানানো হয়, কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে। আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তদন্ত তদারকিতে গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। 

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, বুধবার রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের টিজি ৩৪০ নম্বর ফ্লাইটে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন আবদুল হামিদ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শ্যালক অধ্যাপক ডা. আ ন ম নৌশাদ খান এবং ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ।
এর আগে রাত ১১টার দিকে আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে যান। ইমিগ্রেশনের প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে থাইল্যান্ড যাওয়ার সবুজ সংকেত পান তিনি। আবদুল হামিদের দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাঁকে যেতে দেওয়া হয় বলেও জানিয়েছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। 
সাবেক এই রাষ্ট্রপতির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি বেশ কয়েক মাস ধরেই শারীরিকভাবে অসুস্থ। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে চোখের অসুখসহ কিডনি ও পাইলসের সমস্যা বেড়েছে। ফলে গেল সপ্তাহে তাঁকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শেই তিনি থাইল্যান্ড গেছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। 

পরোয়ানা বা নিষেধাজ্ঞা নেই
স্থানীয় সূত্র জানায়, আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ আদালত থেকে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল না। তাঁর দেশত্যাগেও কোনো নিষেধাজ্ঞার তথ্য পাওয়া যায়নি। কিশোরগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. টুটুল উদ্দিন জানান, সদর উপজেলার উত্তর লতিবাবাদ এলাকার আবু তাহের ভূঁইয়ার ছেলে বিএনপি কর্মী তহমুল ইসলাম মাজহারুল বাদী হয়ে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, আবদুল হামিদসহ ১২৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি (নম্বর ২২) করেন। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনসহ একাধিক ধারায় মামলাটি করা হয়েছে। 
আওয়ামী লীগ মনোনীত এমপি হিসেবে আবদুল হামিদ ডেপুটি স্পিকার ও স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রথম দফায় দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এর পর তিনি ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তাঁর মেয়াদ শেষে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মোঃ সাহাবুদ্দিন। 

সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে সুযোগ-সুবিধা
আইন অনুযায়ী, সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে অবসর ভাতা ও চিকিৎসার সুবিধাসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা পান আবদুল হামিদ। একজন পূর্ণ মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসা সুবিধার পাশাপাশি একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটেনডেন্ট (সাহায্যকারী), দাপ্তরিক ব্যয়ও পাওয়ার কথা তাঁর। এটা আবার সময়ে সময়ে সরকার দ্বারা নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা বলা আছে আইনে। 
এ ছাড়া সরকারি অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিনামূল্যে সরকারি যানবাহন ব্যবহার এবং আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ, কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং দেশের ভেতর ভ্রমণকালে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্টহাউসে বিনা ভাড়ায় অবস্থানের সুবিধা রয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে। 

ফেসবুকে ক্ষোভ, সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়ে অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ সময় তারা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিচারের ধীরগতি নিয়ে সরকারের প্রতি অসন্তোষ জানান। তাদের কেউ কেউ সরকারের দুই ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদ এবং মাহফুজ আলমকে পতদ্যাগের আহ্বান জানান। 
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুক পোস্টে বলেন, শুধু এই মাসেই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ও হাইকমিশন বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ও সামরিক পর্যায়ে অন্তত ২৩টি মিটিং করেছে। লিখে রাখেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের সুযোগ করে দিতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচারের নামে কালেক্ষপণ করা হচ্ছে। 

আরেক পোস্টে হাসনাত বলেন, খুনিকে দেশ থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, পুলিশ আসামি ধরলেও আদালত থেকে জামিন দেওয়া হয়। … আর আপনারা বলছেন আওয়ামী লীগের বিচার করবেন? তা ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তী সরকার), এখন পর্যন্ত কী কী বিচার ও সংস্কার করেছেন?
অপর যুগ্ম আহ্বায়ক রিফাত রশীদ তাঁর স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আবদুল হামিদকে ইউনূস সরকার সেফ এক্সিট দিল কেন? এই সরকার শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করছে। জুলাই ব্যর্থ হলে আমি অন্তত কিছু বেইমানের ইতিহাস লিখে যেতে চাই, যারা ব্যক্তিগত স্বার্থে জুলাইকে বিক্রি করে দিয়েছে।’

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, মিথ্যা মামলায় নাম না দিতে টাকা নেওয়া হচ্ছে, আবার নাম কেটে দিতে হলেও টাকা দিতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের চাপ প্রয়োগে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। অন্যদিকে টাকা বা ম্যানপাওয়ারের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অসংখ্য সন্ত্রাসীকে শেল্টার দেওয়া হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার জুলাইকে বিক্রি করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মিরাজ মিয়া। তিনি বলেন, খুনিদের যারা সেফ এক্সিট দেয়, আলোচনা না করে যারা করিডোর দেয়, তারা আমার-আপনার সরকার হতে পারে না। এই সরকার আর দেশের পক্ষে নেই।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগে আলটিমেটাম
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদের অঙ্গ সংগঠন যুব অধিকার পরিষদ। গতকাল গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আতাউর রহমান খানের হাতে এ স্মারকলিপি তুলে দেয়। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন সংগঠনের নেতাকর্মী।

রাতে যমুনা ঘেরাও 
গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে গতকাল রাতে হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এতে জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, জুলাই ঐক্য, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। 
পুলিশ-র‍্যাব প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’, ‘খুনি লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে, ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’  ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। 
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারকে আর  সময় দিতে রাজি নই। লাশ হয়ে ফিরব, না হয় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। 

যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, সপ্তাহখানেক আগে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিষয়টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
রাত পৌনে ১১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানান আসিফ মাহমুদ। পরে রাত পৌনে ১টার দিকে আরও একটি পোস্ট দেন তিনি। এতে লিখেন, ‘যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কিছুদিন আগেই হয়েছে। এটা আন্দোলন দমনের কোনো প্রক্রিয়া নয়। বরং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পথেই আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।’ 
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, গণহত্যাকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ ও নিশ্চিহ্ন করাই জুলাইয়ের অঙ্গীকার।’ 

এর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাবির মুখে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আবদ ল হ ম দ র দ শত য গ স ব ক র ষ ট রপত আবদ ল হ ম দ র ব র ষ ট রপত র ক শ রগঞ জ কর মকর ত র জন ত ক ম হ ম মদ সরক র র অবস থ ন এনস প র র ঘটন য় ফ সব ক য বল গ মন ত র আওয় ম গতক ল স গঠন তদন ত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক রাষ্ট্রপতির বিদেশ গমনে বাধা দেওয়ার দায়িত্ব আইন মন্ত্রণালয়ের নয়: আসিফ নজরুল

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনে বাধা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশ ও গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর, যা কোনোভাবেই আমার আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় নয়।

শুক্রবার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।

ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কিছু মানুষ জঘন্য মিথ্যাচার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছে। আমি আপনাদের সুস্পষ্টভাবে জানাতে চাই খুনের মামলার আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনে বাধা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশ ও গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর, যা কোনোভাবেই আমার আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় নয়।’

সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে কেন আটক করা হলো না এই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছেন নিম্ন আদালতের বিচারকরা। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আদালতের বিচারকদের দায়িত্ব বিমানবন্দর পাহারা দেওয়া না বা কারো চলাচলে বাধা দেওয়া না।’

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ নিয়ে আসিফ নজরুল বিরোধিতা করছে এমন কিছু বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওঠে আসার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের সুযোগ রাখার লক্ষ্যে আইসিটি আইনে সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিধান আইন মন্ত্রণালয়ের খসড়ায় ছিল। আইন উপদেষ্টা হিসেবে আমি নিজে এটা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উত্থাপন করেছি। আমার উত্থাপিত খসড়ার আমিই বিরোধিতা করবো এটা কীভাবে সম্ভব? উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কোনো উপদেষ্টা কী ভূমিকা রেখেছেন এ নিয়ে আমাকে, ছাত্র উপদেষ্টাদের বা অন্য কাউকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন। সেখানে যা সিদ্ধান্ত হয় তার দায় দায়িত্ব আমাদের প্রতিটি উপদেষ্টার। আমাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রশ্নে কোনো দ্বিমত নেই। তবে পদ্ধতি নিয়ে সবার নিজস্ব মত থাকতেই পারে।’

এসম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে, আইসিটি আইন চাইলেই আমরা কয়েকদিনের মধ্যে সংশোধন করতে পারবো। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য সন্ত্রাস দমন আইন সহ অন্য আইনগুলোও আছে। কাজেই আইন কোন সমস্যা না। রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ চাইলে বা বিচারিক আদালত এ সম্পর্কে কোনো পর্যবেক্ষণ বা রায় আসলে অবশ্যই আইনানুগভাবে দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যাবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ