গ্রাহকের অজান্তে ঋণ, রাজধানীর হাটখোলা শাখায় গ্রাহকের ভিড়
Published: 9th, May 2025 GMT
ইউনিয়ন ব্যাংকের রাজধানীর মতিঝিলের হাটখোলা শাখায় এক তুঘলকি কাণ্ড ঘটে গেছে। কয়েকজন গ্রাহকের অজান্তে তাঁদের নামে ঋণ মঞ্জুর করে নিজেদের পকেটে ভরার অভিযোগ উঠেছে কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ কারণে শাখাটির ব্যবস্থাপককে ইতিমধ্যে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে তদন্তও শুরু করেছে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়। এদিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা ওই শাখার কর্মকর্তাদের গত বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখেন। এরপরই বিষয়টি জানাজানি হয়।
যখন এ ঘটনা ঘটে, তখন ব্যাংকটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ইউনিয়ন ব্যাংক এস আলম গ্রুপের দখলে ছিল। গ্রুপটির কর্ণধার সাইফুল আলমের মাত্র ২৪ বছর বয়সী ছেলে আহসানুল আলমকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। পরে চেয়ারম্যান হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো.
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে ইসলামী ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মু. ফরীদ উদ্দীন আহমদকে। ইতিমধ্যে ব্যাংকটিতে এমডি হিসেবে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির। তাঁরা এখন অনিয়ম খুঁজে বের করার পাশাপাশি ব্যাংকটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
যেটা হয়েছে, সেটা ২০১৩ সালে শুরু হয়েছে। আমি এক বছর দায়িত্বে ছিলাম। আমার সময়ে এমন ঋণ হয়েছে ৮ লাখ টাকা। এটা যেভাবেই হোক ব্যাংককে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।জাকির হোসেন, সাবেক ব্যবস্থাপক, হাটখোলা শাখা, ইউনিয়ন ব্যাংক।ইউনিয়ন ব্যাংকের হাটখোলা শাখাটি ঢাকার মতিঝিলের ইত্তেফাক ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। ব্যাংক প্রতিষ্ঠার বছর ২০১৩ সালে এ শাখা চালু করা হয়। শাখাটিতে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বে ছিলেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা। তাঁরা নানা সময়ে শাখাটি থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে এস আলমকে সুবিধা দেন। এখন শাখাটির আমানতের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। ঋণের সিংহভাগ বিভিন্ন নামে এস আলম গ্রুপ নিয়ে গেছে বলে ব্যাংকটির তদন্তে উঠে এসেছে। ফলে এটি গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে সমস্যায় পড়েছে।
ইউনিয়ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, কয়েকজন গ্রাহকের নামে ঋণ রয়েছে—এমন খবর এর মধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে। যদিও তাঁরা ঋণের টাকা পাননি। গত কয়েক দিনে এমন ১২-১৫ জন গ্রাহক ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের নামে প্রায় এক কোটি টাকা ঋণের সন্ধান মিলেছে। এ জন্য তাঁরা ঋণ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যাংকের কাছে। তবে ব্যাংক এতে রাজি হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার ওই গ্রাহকেরা শাখাটির কর্মকর্তাদের আটকে রাখেন। ২০২৩ সালে এ শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন জাকির হোসেন। তাঁকে ইতিমধ্যে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আগে কর্মরত ছিলেন, এমন কয়েকজন কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে জাকির হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেটা হয়েছে, সেটা ২০১৩ সালে শুরু হয়েছে। আমি এক বছর দায়িত্বে ছিলাম। আমার সময়ে এমন ঋণ হয়েছে ৮ লাখ টাকা। এটা যেভাবেই হোক ব্যাংককে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
এ নিয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক এ এন এম সাদান জাহান প্রথম আলোকে বলেন, অনেকের নামে ঋণ রয়েছে। কিন্তু তাঁরা ঋণ পাননি বলে জানাচ্ছেন। প্রধান কার্যালয় বিষয়টি তদন্ত করছে। এরপরই পুরো তথ্য পাওয়া যাবে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৮৭ শতাংশ। এই ব্যাংকের ৯০ শতাংশ ঋণ বিভিন্ন নামে এস আলম গ্রুপ নিয়ে গেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে ইউনিয়ন ব্যাংকের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলায় ২০২২ ও ২০২৩ সালে দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণের কম্বল বিতরণের নামে অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে প্রায় ২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, ৭ লাখ ৮৫ হাজার কম্বলের বিপরীতে অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে এ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
মামলায় মোকাম্মেল হক চৌধুরী ছাড়াও ব্যাংকটির সাবেক দুই চেয়ারম্যান আহসানুল আলম এবং মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনকেও আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবর, সাবেক পরিচালক মারজিনা শারমিন, মো. রাশেদুল আলম, শওকত হোসেন, মোহাম্মদ ফজলে মোরশেদ, হালিমা বেগম, ওসমান গণি, মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ মোস্তান বিল্লাহ, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আবদুল কুদ্দুস ও মো. আবদুস সালামকে আসামি করা হয়েছে।
একই মামলায় ব্যাংকটির হেড অব এফএডি ও সিএফও রুহুল আমিন, হেড অব পিআরডি এ কে এম জহির উদ্দীন ইকবাল চৌধুরী, সিনিয়র ক্যাশ অফিসার মো. বোরহান উদ্দীন চৌধুরী, ক্যাশ ইনচার্জ আবদুল হালিম এবং অপারেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ রাশিদ শহীদও আসামি। নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী সানি এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর জনি মিয়াকেও আসামি করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এস আলম গ র প ২০১৩ স ল কর মকর ত ম হ ম মদ গ র হক র র ব যবস ল আলম
এছাড়াও পড়ুন:
আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন চয়নিকা চৌধুরী
চেক ডিজঅনার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দুই দিন পর আদালতে আত্মসমর্পণ করায় জামিন পেয়েছেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (৮ মে) ঢাকার ৭ম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ মো. বুলবুল ইসলামের আদালতে আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
এর আগে, গত ৬ মে মামলার ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় চয়নিকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আদালত।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সালাম হিমেল এ তথ্য জানিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন চয়নিকা চৌধুরী। তবে পূর্বের ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তাকে তিরস্কার করেন বিচারক। পরে তার জামিন মঞ্জুর করেন।
২০১৩ সালের ১৪ মে এই মামলা করেন প্রযোজক রাশেদুল ইসলাম রিয়াজ। এ মামলার পর ২০১৪ সালে ২ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন চয়নিকা চৌধুরী। ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ৭ম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, চয়নিকা চৌধুরীর মাধ্যমে প্রযোজক রাশেদুল ইসলাম রিয়াজ 'জীবন সুন্দর হোক' নাটক নির্মাণের প্রস্তুতি নেন। এজন্য ২০১২ সালের ২৪ আগস্ট তাদের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী চয়নিকাকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা দেন বাদী। একইসঙ্গে ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর চয়নিকা বাদী রিয়াজকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন।
অভিযোগে বলা হয়, আসামি চুক্তিবদ্ধ হয়েও নাটক নির্মাণ করেননি। যোগাযোগ করলে তিনি নাটক নির্মাণ করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তখন টাকা ফেরত চাইলে তিনি ২০১৩ সালের জানুয়ারি চেক নগদায়ন করতে অনুরোধ করেন। পরে একাধিকবার টাকা নগদায়ন করতে গেলে চেক ডিজঅনার হয়। টাকা ফেরত চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হলেও তিনি টাকা ফেরত দেননি।