প্রতিবছরের মতো এবারও হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। হজযাত্রীদের বড় অংশই বয়স্ক। তাঁদের অনেকেরই আছে নানা ক্রনিক রোগ, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, হাঁপানি ইত্যাদি। হজে গিয়ে যেন তাঁরা সুস্থ থাকতে পারেন, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। প্রতিবছর হজে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসল্লি অসুস্থ হয়ে পড়েন, অনেকে মারাও যান।
সংক্রমণ
হজে লাখ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটে। তাই এখানে যেকোনো সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া সহজ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ। কারণ, এই জীবাণু বাতাসে ড্রপলেট আকারে ছড়ায়। বয়স্ক ও ডায়াবেটিসের রোগীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে বলে সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন। তাই ফ্লু, নিউমোনিয়া এড়াতে মুখে মাস্ক পরুন, বারবার হাত পরিষ্কার করুন। হাঁচি–কাশির আদবকেতা মেনে চলুন। সম্ভব হলে যাওয়ার আগে ফ্লু ও নিউমোনিয়ার টিকা দিয়ে নিন। আরেকটি জটিল সংক্রমণ হলো মেনিনজাইটিস বা মস্তিষ্কের পর্দার প্রদাহ, যা প্রাণঘাতী হতে পারে। এটিও ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। হজে যাওয়ার আগে মেনিনজাইটিসের টিকা নেওয়া জরুরি। যেকোনো জ্বর, কাশি, জ্বরের সঙ্গে ঘাড় শক্ত হওয়া, শরীরে র্যাশ দেখা দিলে দ্রুত মেডিকেল ক্যাম্পের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রস্রাবে সংক্রমণ হলে জ্বরের সঙ্গে প্রস্রাবে জ্বালা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে।
ডায়রিয়া
বাইরের খাবার খেতে হয় বলে বদহজম বা ডায়রিয়া হতে পারে। এমন হলে মুখে খাওয়ার স্যালাইন খাবেন, বমি থাকলে শিরায় স্যালাইন নিতে হবে। ডায়রিয়া বা বমি হলে কী ওষুধ খাবেন, তা জেনে নিয়ে সঙ্গে বহন করুন। বাসি–পচা খাবার খাবেন না।
হজযাত্রীদের বড় অংশই বয়স্ক। হজে গিয়ে যেন তাঁরা সুস্থ থাকতে পারেন, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি।পানিশূন্যতা
সৌদি আরবে অনেক গরম, তাই পানিশূন্যতা হতে পারে যে কারও। প্রচুর পানি পান করতে হবে। যদি মাথা ব্যথা করে, চোখ বসে যায় ও প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, তবে বুঝবেন ডিহাইড্রেশন হচ্ছে। পানির সঙ্গে অন্যান্য তরলও পান করবেন। অনেকে টয়লেটে যাওয়ার ভয়ে পানি কম খান, যা একেবারেই ঠিক নয়। হিট স্ট্রোক এড়াতে ছাতা বা হ্যাট ব্যবহার করবেন। ঢিলেঢালা কাপড় পরবেন।
দীর্ঘমেয়াদি রোগে সতর্কতা
যাঁদের হাঁপানি আছে, তাঁরা যথেষ্ট ইনহেলার ও ওষুধ সঙ্গে নেবেন। ডায়াবেটিসের রোগীরা থার্মোফ্লাস্কে ইনসুলিন নিতে পারেন। গ্লুকোমিটারে মাঝেমধ্যে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করবেন ও সে অনুযায়ী মাত্রা ঠিক করবেন। সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ করতে চেষ্টা করবেন। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা রক্তচাপ মাপার যন্ত্র নিতে পারেন। অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার খেলে রক্তচাপ বাড়তে পারে।
পায়ের যত্ন
অনেক হাঁটতে হয় বলে পায়ে আঘাত, ঘা হতে পারে। সঠিক মাপের আরামদায়ক জুতা পরতে হবে। একাধিক জুতা সঙ্গে নেওয়া ভালো। খালি পায়ে হাঁটার জায়গায় মোজা পরে নেওয়া উচিত। বারবার অজু করার পর পায়ের আঙুলের ফাঁকগুলো মুছে নেবেন। পায়ে কোনো ক্ষত হলে অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগান বা ড্রেসিং করে নিন।
অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ, ইমেরিটাস অধ্যাপক, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় পার্টির সম্মেলন কাল, ইসির প্রতিনিধি চেয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে
আগামীকাল শনিবার জাতীয় পার্টির যে সম্মেলন হবে, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অবহিত করে প্রতিনিধি পাঠানোর আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জি এম কাদেরবিরোধী অংশের প্রধান নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আদালতের আদেশ ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই কাউন্সিল আয়োজন করেছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা অবহিত করেছি এবং কাউন্সিলে তাদের প্রতিনিধি আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’
কাউন্সিল উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে আজ শুক্রবার সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এ কথা বলেন।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আমরা জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। কাউন্সিল করে আমরা গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা বাতিল করে দেব। কোনো একক নেতৃত্বে নয়, জাতীয় পার্টি চলবে যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে।’
গত ৩০ জুলাই জি এম কাদেরের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত করেছে জি এম কাদেরের বিরোধী অংশ। এরপর তিনি শনিবার দলের সম্মেলন আহ্বান করেন।
এর উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আগামীকাল শনিবার জাতীয় পার্টির সম্মেলন হবে ঐতিহাসিক। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের মধ্যে দীর্ঘদিনের যে বিভেদ রয়েছে, সে বিভেদ শেষ করে দিয়ে বৃহত্তর ঐক্য করে পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টির নবযাত্রা শুরু হবে। এই কাউন্সিলে সারা দেশ থেকে জাতীয় পার্টির কয়েক হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট অংশ নেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির কো–চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দেশের মানুষ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা দেখেছিল, সেই প্রত্যাশাকে বাস্তবতায় রূপ দিতে জাতীয় পার্টি নতুন অভিযাত্রায় নেমেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ৩০ জুলাই ২০২৫ তারিখে ঢাকার একটি নিম্ন আদালতের আদেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। আদালতের এই আদেশের ফলে পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম এক অনিশ্চয়তা ও স্থবিরতার মুখে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সময়সীমার বিধিবিধান এবং জাতীয় পার্টির মতো একটি বৃহৎ ও জনগণনির্ভর রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বশূন্য বা স্থবির থাকা কোনোভাবেই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পক্ষে সহায়ক নয়। এই বিবেচনায় দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০(২)(খ) ধারা অনুযায়ী যথাযথ সাংগঠনিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
মুজিবুল হক বলেন, এই ধারার ক্ষমতাবলে ৫ আগস্ট জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সভা হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে দলকে সাংগঠনিক স্থবিরতা থেকে মুক্ত করে গণতন্ত্র, গঠনতন্ত্র এবং নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষায় অতি দ্রুত জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি।
মুজিবুল হক আরও বলেন, উপরন্তু দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে যে আশাবাদ, উদ্দীপনা এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছে, সেটা বাস্তবায়নে এটি (কাউন্সিল) সময়োচিত ও আবশ্যক পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি আবারও প্রমাণ করেছে, এই দল কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি, একটি আদর্শভিত্তিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখন হতাশা, বিভ্রান্তি ও দিশাহারা ভাব বিরাজ করছে, তখন জাতীয় পার্টি ঐক্যের বার্তা নিয়ে দেশবাসীর সামনে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কো–চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান, শফিকুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভুইয়া, আরিফুর রহমান খান, সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম, জিয়াউল হক মৃধা, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, খান মো. ইসরাফিল, ইয়াকুব হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন, শফিকুল ইসলাম, জামাল রানা প্রমুখ।