আওয়ামী লীগের অধ্যায় ৫ আগস্ট সমাপ্ত হয়েছে, পুনরায় চালু করা যাবে না
Published: 9th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগের অধ্যায় ৫ আগস্ট সমাপ্ত হয়ে গেছে, এটাকে পুনরায় চালু করা যাবে না। এখন আওয়ামী লীগকে শুধু দলীয়ভাবে নিষিদ্ধ করলে হবে না, যারা গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত, অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত, যারা গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের সঙ্গে জড়িত, সেসব আওয়ামী লীগ নেতাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। আজ শুক্রবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাসংলগ্ন ফোয়ারার সামনের জমায়েতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে যমুনার সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচির পর আজ দুপুরে জুমার নামাজের পর ফোয়ারার সামনে বড় জমায়েত করা হয়। এই জমায়েতে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
সেখানে বক্তব্যে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রশ্ন করে বলেন, জুলাই গণহত্যার আট মাস পরে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সবাই মিলে কেন বোঝাতে হচ্ছে? তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে শুনতে পেয়েছি, প্রধান উপদেষ্টা নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসার চেষ্টা করছেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে, ঐকমত্যে পৌঁছে তারপর নাকি সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, আপনাকে আলোচনা করতে হবে মুগ্ধর মা, ওয়াসিমের মা ও আবু সাঈদের বাবার সঙ্গে। আপনাকে আলোচনা করতে হবে রাজনৈতিক কারণে উঠিয়ে নেওয়া ইলিয়াসের স্ত্রীর সঙ্গে।’
আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই রাজনৈতিক দল নয় বলে মন্তব্য করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের স্তরে স্তরে আওয়ামী লীগের হাতে রক্ত লেগে রয়েছে। আমরা সহজভাবে যদি বলতে চাই, ১০০টা ফেরাউন, ১০০টা নমরুদকে যদি একসঙ্গে করা হয়, তাহলেও একটা হাসিনা পাওয়া যাবে না।’
এ দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতিবিদদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রয়েছে উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, ‘আপনাদের দীর্ঘ দেড় দশকের লড়াই–সংগ্রামকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। একই সঙ্গে এই জিনিসটি আপনাদের কাছে আহ্বান, আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টারটা ৫ আগস্ট ক্লোজড হয়ে গেছে, এটাকে রি–ওপেন করার চেষ্টা কইরেন না।’
এ প্রসঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমাদের বলা হয়, বিদেশ থেকে নাকি ইনক্লুসিভ ইলেকশনের (অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন) একধরনের চেষ্টা হয়েছে। ২০২৪ সালে যখন বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, তখন ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিল? ২০২৪ সালে ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিল? মিডনাইট ইলেকশনের সময় ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিল? বাংলাদেশের রাজনীতি এই ভূখণ্ডের মধ্য থেকে নির্ধারিত হবে। বিদেশের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশের রাজনীতি নির্ধারিত হবে না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই প্রজন্মের যে কনফ্লিক্ট, এখনই শেষ হয়ে যাক, আজকেই শেষ হয়ে যাক, সেটাই আমরা চাই। আওয়ামী লীগ নামক ভাইরাস নিয়ে এই বাংলাদেশে আমরা এক দিনও থাকতে চাই না।.
অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্ন, দাবি
জুমার নামাজের পর থেকেই প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের কাছের ফোয়ারার সামনে জমায়েত শুরু হয়। বেলা ২টা ৪০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথমেই পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আশরাফ উদ্দীন মাহাদী। এরপর ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুর বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।’
ইসলামী যুব মজলিসের সভাপতি তাওহীদুল ইসলাম তুহিন বলেন, ছাত্র-জনতাকে সামনে থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি পূরণ করতে হবে।
ছাত্রনেতাদের বক্তব্যের পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা কীভাবে পালিয়ে যাচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেই প্রশ্ন রেখে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘এখনো প্রতিটা মন্ত্রণালয়ে, প্রতিটা সেক্টরে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা ঘাপটি মেরে বসে আছে। আমরা চাই, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার শেষে এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বিচারের পরে এই দেশে একটা সুন্দর-সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমরা আগে স্থানীয় নির্বাচন চাই, তারপরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাই।’ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের এই আন্দোলনে সব দলকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
শাহবাগে যাওয়ার আগে অবস্থান কর্মসূচিতে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আওয়ামী লীগকে যত দিন নিষিদ্ধ না করা হবে, তত দিন তাঁরা ঘরে ফিরে যাবেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতা যে জন্য রক্ত দিয়েছেন, এই রক্তের সঙ্গে আপনারা গাদ্দারি করছেন। ছাত্র-জনতার রক্তের সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে আপনারা ক্ষমতায় এলেন আর আওয়ামী লীগকে পালাতে সুযোগ করে দিচ্ছেন। আপনাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না।’
আজিজুল হক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যাঁরা আওয়ামী লীগের পক্ষে দালালি করছেন, যে রাজনৈতিক নেতাদের অন্তরে আওয়ামী–প্রেম এখনো বুদ্বুদ করছে, তাঁদের বলি, আওয়ামী–প্রেম যদি আপনাদের অন্তরে থাকে তাহলে বাংলাদেশে নয়, দিল্লি চলে যান। আমাদের কথা স্পষ্ট, কোনো ধানাইপানাই করে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে রক্ত দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, জীবন দেব, কিন্তু আওয়ামী রাজনীতি খতম না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সর্বদলীয় সভা ডাকার আহ্বান জানান এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিকভাবে, সর্বাত্মকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে শুধু দলীয়ভাবে নিষিদ্ধ করলে হবে না, যারা গুম-খুন, অর্থ পাচার ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের সঙ্গে জড়িত, সেসব আওয়ামী লীগ নেতাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।’
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে যদি নিষিদ্ধ না করা হয় এবং ৩৬ জুলাইয়ের (৫ আগস্ট) মধ্যে যদি জুলাই সনদ ঘোষণা করা না হয়, তাহলে জুলাই জনতা শাহবাগ ছাড়বে না—এমন হুঁশিয়ারি দেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি।
জুলাই অভ্যুত্থানের আহতদের মধ্যে খোকন চন্দ্র বর্মণ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই।’
প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও এই কর্মসূচিতে এসেছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। তাঁদের জন্য ভ্রাম্যমাণ গাড়ি ও ট্যাংকে করে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছিল ঢাকা ওয়াসা। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সে অস্থায়ী মেডিকেল বুথ প্রস্তুত ছিল। তাপপ্রবাহ থেকে বিক্ষোভকারীদের স্বস্তি দিতে বেলা তিনটা থেকে ঢাকা উত্তর সিটির স্প্রে ক্যাননে করে কর্মসূচিস্থলে পানি ছিটানো হয়। বিকেল পাঁচটার পর থেকে শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ চলছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল দ শ র র জন ত ন ষ দ ধ কর আপন দ র ৫ আগস ট র স মন ইসল ম সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র নেই, ইউরোপ কি একা পুতিনকে রুখতে পারবে
ট্রাম্প ইউক্রেন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ইউরোপকে এখনই ঠিক করতে হবে, সে কি লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেবে, না রাশিয়ার জয়ের মূল্য দেবে।
কিছুদিন আগেও ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় মিত্র ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তারা অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করত। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ ট্রাম্পকে আর তেমন ভাবায় না। তিনি রাশিয়ার কথাই বারবার বলছেন। ন্যাটোকে তুচ্ছ করেছেন। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা নিয়ে রসিকতা করেছেন। যদিও পুতিন সম্প্রতি বলেছেন ‘পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে’।
ট্রাম্প আর ইউক্রেনের সমর্থক নন। তিনি কোনো গ্রহণযোগ্য শান্তি-উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেননি। সব মিলিয়ে ইউক্রেন বিষয়ে তাঁর কথার এখন তেমন মূল্য নেই। তবে এসবের খেসারত দিচ্ছে ইউক্রেন। দুই সপ্তাহ আগে ইউক্রেন শুরু করেছে ‘অপারেশন স্পাইডারওয়েব’। রাশিয়ার ভেতরে ড্রোন হামলার মাধ্যমে ডজনখানেক বিমানঘাঁটি ও সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। হোয়াইট হাউস দ্রুতই জানায় যে এতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ট্রাম্প আবার বললেন, তিনি যুদ্ধ থেকে ‘সরে যাবেন’।
এই ঘটনার পর ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় দফা শান্তি আলোচনা ভেঙে পড়ে। একমাত্র চুক্তি হয়, ছয় হাজার মৃত সেনার মরদেহ বিনিময়। এর মধ্যেই ট্রাম্পের তরফে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জানালেন, তিনি চান জেলেনস্কি ও পুতিন সরাসরি কথা বলুন। তবে তখন সময় পেরিয়ে গেছে।
২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরও বহুবার দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে চাপ দিয়েছে, রাশিয়াকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে। ইউরোপীয় নেতারা কিছুটা প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু ইউরোপের নিরাপত্তার পুরো দায় কাঁধে তোলেননি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা কমছে। ট্রাম্প নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। ইউরোপ পড়েছে ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে। ইউরোপ এখন একা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৈরি হওয়া ন্যাটো জোটের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় ভিত্তি ইউরোপের প্রতিশ্রুতি।
প্রশ্ন হলো, এই সময়ের দাবি কি ইউরোপ পূরণ করতে পারবে? ইউরোপের দেশগুলো কি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াই একটি কার্যকর নিরাপত্তা জোট গড়তে পারবে? তা কি সম্ভব?
২০২৫ সালের শুরুতে ইউক্রেন নিজে প্রায় ৪০ শতাংশ সামরিক চাহিদা পূরণ করছিল। বাকি ৩০ শতাংশ দিচ্ছিল ইউরোপ, ৩০ শতাংশ আসছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আগে ইউক্রেনের প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ যুক্তরাষ্ট্র জোগাত। ইউরোপ মরিয়া হয়ে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে। কিন্তু ইউরোপের অস্ত্রশিল্প অনেক দিন ধরে পিছিয়ে আছে। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ২০ লাখ কামান গোলা তৈরি করবে ইউরোপ; যা ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রের সর্বনিম্ন চাহিদা মাত্র। রাশিয়া যদি ইউক্রেন দখল করে, তবে কেবল জার্মানিরই খরচ হবে বর্তমান সহায়তার ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি। কারণ হবে শরণার্থী স্রোত, জ্বালানিসংকট, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তা হুমকি। একটি বড় উদ্যোগ নিচ্ছে চেক প্রজাতন্ত্র।
২০২৬ সালের শেষ নাগাদ তারা ইউক্রেনকে ১৮ লাখ কামান গোলা সরবরাহ করবে। এই প্রকল্পে কানাডা, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্কসহ বেশ কিছু দেশ অংশ নিচ্ছে। এটি সময়মতো পৌঁছালে যুদ্ধের গতিপথে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে পারে। মে মাসের শেষ দিকে জার্মানি আর ইউক্রেন এক চুক্তি করেছে। এর মাধ্যমে ইউক্রেনেই দীর্ঘ পাল্লার অস্ত্র তৈরি করা হবে স্থানীয় শিল্প ও প্রকৌশল দক্ষতা কাজে লাগিয়ে। ইউক্রেনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র ব্রিটেন ঘোষণা করেছে ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের নতুন ড্রোন প্যাকেজ। এই প্যাকেজ ২০২৬ সালের মধ্যে ১ লাখ ড্রোন সরবরাহ করবে।
সম্প্রতি ট্রাম্প ফক্স নিউজে বলেন, ইউক্রেনে আমেরিকানদের করের টাকা ‘অপচয়’ হচ্ছে। মন্তব্যটা বিভ্রান্তিকর। যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সাল থেকে ইউক্রেনকে প্রায় ১২৮ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছে। এর মধ্যে ৬৬.৫ বিলিয়ন সামরিক সহায়তা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সদস্যদেশগুলো ১৩৫ বিলিয়ন ইউরো দিয়েছে—৫০ বিলিয়ন সামরিক, ৬৭ বিলিয়ন আর্থিক ও মানবিক, ১৭ বিলিয়ন ইউরো শরণার্থী সহায়তা। যুক্তরাজ্য দিয়েছে আরও ১২.৮ বিলিয়ন পাউন্ড। এসব কোনো দান নয়। এগুলো কৌশলগত বিনিয়োগ। রাশিয়া যুদ্ধে জিতলে এই দেশগুলোর লোকসান হবে আরও বেশি।
ইউরোপ নেতৃত্ব দিচ্ছে নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রেও। ২০১৪ সাল থেকে, বিশেষ করে ২০২২-এর পর রাশিয়ার অর্থনীতিকে লক্ষ্য করে ১৭ দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এতে যুদ্ধ না থামলেও রাশিয়ার ওপর চাপ বেড়েছে। ২০ মে ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপের পরদিনই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য সবচেয়ে বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ ঘোষণা করে।
বিশ্লেষণ বলছে, এই নিষেধাজ্ঞা যদি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায়, তবে রাশিয়ার বার্ষিক ক্ষতি হবে ১০ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার। এমনকি এর আংশিক প্রয়োগেও যুদ্ধের অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।
ইইউর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাইজা কাল্লাস বলেছেন, ‘যত দিন রাশিয়া যুদ্ধ চালাবে, তত কঠিন হবে আমাদের জবাব।’ এখন ইউরোপকে শুধু কথায় নয়, কাজে তা প্রমাণ করতে হবে। ড্রোন থেকে কামান, নিষেধাজ্ঞা থেকে অস্ত্র উৎপাদন—ইউরোপ এখন ধীরে ধীরে বক্তব্য থেকে কৌশলে রূপ নিচ্ছে। কিন্তু এই গতি থামা চলবে না। এটি আর শুধু ইউক্রেনের যুদ্ধ নয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরে গেছে। ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প নয়। সেই এখন শেষ প্রতিরক্ষা। যদি ইউরোপ ব্যর্থ হয়, ইউক্রেনও ব্যর্থ হবে। আর সেই সঙ্গে ধূলিসাৎ হবে স্বাধীন ও নিরাপদ ইউরোপের স্বপ্ন।
● সের্হেই মাইডুকোভ ইউক্রেনীয় লেখক
আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ