চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনের জন্য প্রশাসকের মেয়াদ বৃদ্ধির দাবি
Published: 10th, May 2025 GMT
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের শতবর্ষী পুরোনো সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসকের মেয়াদ আগামী ৭ জুলাই শেষ হচ্ছে। প্রশাসকের মেয়াদ শেষ হতে চললেও এখনো নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। এ অবস্থায় প্রশাসকের বর্তমান মেয়াদে নির্বাচন করা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ কারণে প্রশাসকের মেয়াদ বৃদ্ধির দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদলের পর ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর থেকে শুরুতে তাঁকে ১২০ দিনের জন্য প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর এই মেয়াদ আরও ৯০ দিন বাড়ানো হয়েছিল। বর্ধিত সেই মেয়াদও জুলাইয়ে শেষ হতে যাচ্ছে। কিন্তু দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানোর পরও চেম্বারের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী চেম্বার নির্বাচনের ৯০ দিন আগে নির্বাচন বোর্ড ও নির্বাচন আপিল বোর্ড গঠন এবং ৮০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করতে হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা না হলেও এক মাস আগে নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। পাশাপাশি দুটি ভোটার শ্রেণি বাদ দিতে হবে। এসব কাজ না করে নির্বাচন করলে তাতে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রশাসকের মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো দরকার।
আগস্টে হতে পারে নির্বাচন
এ বিষয়ে চেম্বারের প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা প্রথম আলোকে বলেন, আগামী জুলাই-আগস্টে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রশাসকের মেয়াদের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন বোর্ডের প্রধান সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছেন। নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
চেম্বারের নির্বাচন বোর্ডের প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক মনোয়ারা বেগমকে। গত ২৭ এপ্রিলের আগপর্যন্ত অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এ দায়িত্বে ছিলেন মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা। নির্বাচনের বিষয়ে জানতে নির্বাচন বোর্ডের প্রধান মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
চট্টগ্রাম চেম্বারে শেষ ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর আর কোনো ভোট হয়নি। এ সময় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ নির্বাচনের নামে প্রভাব খাটিয়ে ও কারসাজি করে নিজের পছন্দের ও দলের লোকেদের ভোটার বানিয়েছেন। তাঁদের মধ্য থেকে কিছু ব্যক্তিকে নেতা বানিয়ে তিনি চেম্বারে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চেম্বারের সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, সহসভাপতিসহ ২১ পরিচালক ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন।
‘সব সদস্য ভোটার নয়’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসক নিয়োগের পর থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত চেম্বারের নতুন সদস্য হয়েছেন ৫ হাজার ৭৮৭ জন। এর মধ্যে সাধারণ সদস্য ৩ হাজার ২৬৭ এবং সহযোগী সদস্য ২ হাজার ৫২০ জন। এর মধ্যে আগে একসময় চেম্বারের সদস্য ছিলেন কিন্তু পরে আর হননি, এমন ব্যবসায়ীও আছেন। প্রতি অর্থবছরে সদস্যপদ হালনাগাদ করতে হয়। হালনাগাদ ও নতুন সদস্য মিলে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত চেম্বারের মোট সদস্য ১৩ হাজার ৬০০ জন।
নতুন সদস্যদের কেউ কেউ বলেন, এক দশক পর চেম্বারে সুষ্ঠু ভোট হবে, এমন প্রত্যাশা থেকে তাঁরা নতুন করে সদস্য হয়েছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক ব্যবসায়ী আবার চেম্বারমুখী হয়েছেন। নতুন সদস্যদের মধ্যে খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও আছেন।
তবে আগস্টে নির্বাচন হলে নতুন যুক্ত হওয়া অনেক সদস্য ভোট দিতে পারবেন না। কারণ, সদস্য হওয়ার পর নির্ধারিত সময়সীমা অতিবাহিত না হলে ভোটার হওয়ার বিধান নেই। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সহকারী সচিব (সদস্যপদ শাখা) সৈয়দ সালাওয়াত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের তারিখ থেকে ১২০ দিন আগে যাঁরা সদস্য হয়েছেন, তাঁরাই কেবল ভোটার হবেন। তবে যেহেতু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি, তাই সদস্য নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান আছে।
সিদ্ধান্ত আসেনি দুই শ্রেণির
চট্টগ্রাম চেম্বারের ২৪ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের ১২ জন পরিচালক সাধারণ সদস্যদের ভোটে, ৬ জন সহযোগী সদস্যদের ভোটে, ৩ জন টাউন অ্যাসোসিয়েশন থেকে ও ৩ জন পরিচালক ট্রেড গ্রুপ থেকে নির্বাচিত হন। এর মধ্যে শুধু একটি ভোট পেয়েও পরিচালক হওয়ার সুযোগ রয়েছে ট্রেড গ্রুপ ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণিতে। বাকি দুই শ্রেণিতে তিন-চার হাজার ভোটের দরকার হয়।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণির সদস্য বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়েছে ‘চট্টগ্রাম সচেতন ব্যবসায়ী সমাজ’ নামের একটি গ্রুপ। এ নিয়ে তারা চেম্বারের প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছে। পরে চেম্বার প্রশাসক চিঠিটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের কাছে পাঠিয়েছেন। যদিও এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই দুটি শ্রেণি মূলত চেম্বারের নির্বাচনে ‘পকেট ভোট’ হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমেই একটি গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে চেম্বার দখল করে রেখেছিল।
সচেতন ব্যবসায়ী সমাজের আহ্বায়ক এস এম নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও পকেট ভোটগুলো বাদ না দিয়ে নির্বাচন হলে তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। আবার দুই শ্রেণির বিষয়েও মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত আসেনি। তাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য প্রশাসকের মেয়াদ বাড়ানো উচিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় র ন ব যবস য় ন র জন য হয় ছ ন ন র পর আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
মানিকগঞ্জে হালনাগাদ নেই সরকারি ওয়েবসাইট
মানিকগঞ্জে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের ওয়েবসাইটগুলো দীর্ঘদিন ধরে হালনাগাদ না হওয়ায় সেবাগ্রহীতারা ডিজিটাল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারি সেবা ডিজিটালাইজেশনের যুগে জেলার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটে নেই সদ্য প্রকাশিত তথ্য, আপডেট নেই নিরাপত্তা প্রোটোকল। এমনকি অনেক লিংক ঠিকমতো কাজও করে না। ফলে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন পুরনো ও অরক্ষিত ওয়েবসাইটগুলো ‘সাইবার নিরাপত্তা’ ঝুঁকিতে রয়েছে।
জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ‘চিকিৎসকের সহকারী পাচ্ছেন নির্বাচন কর্মকর্তার ফোন কল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর কয়েকটি দপ্তর ওয়েবসাইটগুলো হালনাগাদ করলেও বেশিরভাগ ওয়েবসাইট বছরের পর বছর অরক্ষিতভাবে পড়ে আছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি সরকারি দপ্তরকে নিয়মিত ওয়েবসাইট হালনাগাদ করতে হবে। মাসে অন্তত একবার আপডেট নিশ্চিত করতে হবে। আর অ্যাক্সেসিবিলিটি ও নিরাপত্তা মানদণ্ডও পূরণ করতে হবে। কিন্তু মানিকগঞ্জে খুব কম ওয়েবসাইটই এসব মানদণ্ড অনুসরণ করছে।
জেলার সরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, এলজিইডি, বন বিভাগ, উপজেলা পর্যায়ের সরকারি দপ্তরসহ অন্তত ১৫টির বেশি ওয়েবসাইটে সর্বশেষ তথ্য আপডেট করা হয়নি। কিছু ওয়েবসাইট খুলতেই সার্ভার এরর দেখায়। আবার কোথাও পুরনো নোটিশ এখনো প্রথম পাতায় ঝুলছে। আর কয়েকটি ওয়েবসাইট শুধু কর্মকর্তা কর্মচারিদের তথ্য আপডেট করেন। কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্য আপডেট করেন না। আবার কোন কোন দপ্তরের কর্মকর্তা কয়েক বছর আগে বদলি হলেও তার নাম এখনও ওয়েবসাইটে শোভা পাচ্ছে।
বেউথা এলাকার রিয়াদ হাসান বলেন, “ওয়েবসাইটগুলোতে কিছু তথ্য থাকলেও প্রয়োজন মাফিক তথ্য থাকে না। নিয়মিত হালনাগাদ না করায় অনেক সময় নট ফাউন্ড লেখা আসে। এতে সময় নষ্ট হয়, আবার অনেক সময় ভুল তথ্য নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়।”
নারী উদ্যোক্তা খাদিজা বেগম জানান, সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী নির্ধারিত সেবার হালনাগাদ তথ্য ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় না। উন্নয়ন প্রকল্পের পূর্নাঙ্গ তথ্যও ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা হয় না। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সরকারি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
সাংবাদিক সোহেল হোসেন বলেন, “আমি প্রায় সময় বিভিন্ন দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু বেশিরভাগ সাইটেই বছরের পর বছর কোনো আপডেট নেই। অনেক ওয়েবসাইটে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তথ্য পর্যন্ত সঠিক নয়। যে কর্মকর্তা তিন বছর আগে বদলি হয়ে গেছেন, তার নাম এখনো সেখানে আছে।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক ( সুজন) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “সরকারি তথ্য পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ওয়েবসাইট। কিন্তু মানিকগঞ্জের ওয়েবসাইটগুলোর এই নাজুক অবস্থা ডিজিটাল সেবাকে পুরোপুরি ব্যাহত করছে। শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থী, গবেষক, সাংবাদিক কেউই প্রয়োজনীয় তথ্য সময় মতো পাচ্ছেন না। জেলা পর্যায়ের ওয়েবসাইটগুলো দেখলে মনে হয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের নজরদারি নেই।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, “শুধু হালনাগাদ না থাকা নয়, এসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অত্যন্ত দুর্বল। কোনো সিস্টেমে কোথায় দুর্বলতা আছে এবং সেই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে কেউ ঢুকতে পারে কি না এটা পরীক্ষা করাই হলো VAPT (ভালনারেবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড পেনেট্রেশন টেস্টিং)। সরকারি নির্দেশে থাকার পরও এসব মানা হচ্ছে না। ফলে এসব ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীরা ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। একটি নিরাপদ, গতিশীল ও নিয়মিত পরিচালিত ওয়েবসাইট শুধু প্রশাসনিক সেবাই সহজ করে না; এটি সরকারি সিস্টেমের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি করে। এই পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি।”
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, “ওয়েবসাইটগুলো হালনাগাদ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রতিটি দপ্তরকে ওয়েবসাইট আপডেটের জন্য নির্দেশ দিয়েছি। কয়েকটি দপ্তর কাজ শুরু করেছে, বাকিরাও দ্রুত সম্পন্ন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
ঢাকা/এস