অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক শুরু হয়েছে। শনিবার রাত ৮টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জরুরি এই বৈঠক শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আইসিটি অ্যাক্টে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রস্তাবনা নিয়ে আজ রাতে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে আলোচনা হবে। শনিবার বিকেলে যশোরের কেশবপুর পাথরা পল্লী উন্নয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ কথা জানান।
এর আগে গত শুক্রবার, অন্তর্বর্তী সরকার আইসিটি আইনে অবিলম্বে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিচার সম্পন্ন করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা লক্ষ্যে আইনটি সংশোধন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
সাভার–ধামরাইয়ের কৃষক রক্ষায় পদক্ষেপ নিন
ঢাকার সাভার ও ধামরাই—এ দুই গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় কৃষিজমি দ্রুত কমে যাওয়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তার মূলে রয়েছে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন এবং শিল্পবর্জ্যের ভয়াবহ দূষণ। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দশকে এ অঞ্চলে শিল্পকারখানার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৯৪ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৮৩২–এ দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে কৃষিজমির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, সাভারে যা ২ হাজার ৫১০ হেক্টর ও ধামরাইয়ে ১ হাজার ১২৭ হেক্টর। শিল্প ও কৃষির মধ্যকার অসম লড়াইয়ে এভাবে কৃষিজমি বিলীন হয়ে যাওয়াটা খুবই উদ্বেগজনক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহায়তায় করা নমুনা পরীক্ষায় এ বিপর্যয়ের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মিলেছে। এর থেকে জানা যাচ্ছে, কারখানার নালা এবং কৃষিজমির জমা পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ (ডিও) এত কম যে জলজ জীবন প্রায় ‘প্রাণঘাতী পর্যায়ে’ চলে গেছে। পানিতে অ্যামোনিয়া, ফসফেট ও নাইট্রেটের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। বিশেষ করে ট্যানারিশিল্পের ক্রোমিয়াম ও ক্যাডমিয়াম এবং ডাইং ও ওষুধ কারখানার নিকেল ও সিসা মাটিতে মিশে মাটিকে বিষাক্ত করছে।
গবেষকেরা বলছেন, ভারী ধাতুগুলো মাটি থেকে শস্যে চলে যাচ্ছে। এর ফলে ফসলের গুণাগুণ পরিবর্তিত হচ্ছে, উৎপাদন কমছে এবং এই ধাতুগুলো খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। এই দূষণের মূল কারণ হলো শিল্পকারখানার মালিকদের আইন না মানার প্রবণতা এবং প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কার্যকর উদ্যোগের অভাব।
নগরবিদদের মতে, আইন ও নীতি অনুযায়ী শিল্পকারখানা নির্দিষ্ট এলাকায় হওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কারখানাগুলো কৃষিজমির ভিত উঁচু করে গড়ে উঠছে এবং তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন না করেই অবাধে সেগুলো নালা, খাল এবং নদীনালার মধ্য দিয়ে কৃষিজমিতে ফেলছে। স্থানীয় খালগুলো দখল ও ভরাট হয়ে সরু হয়ে যাওয়ায় কারখানার বর্জ্য উপচে কৃষিজমিতে জমা হচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, একসময় যে জমি থেকে ২৫ মণ ধান পাওয়া যেত, এখন সেখানে চাষ করাই সম্ভব হচ্ছে না। তখন কম দামে জমি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকেরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘কারখানার পচা পানির কারণে ফসল হয় না, হুদাই খাজনা দিতে হয়।’
স্থানীয় প্রশাসনকে অভিযোগ জানিয়েও কোনো স্থায়ী সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। ‘গায়ের জোরে’ শিল্পমালিক নিজ স্বার্থে পরিবেশ ধ্বংস করছেন আর প্রশাসন যেন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। পরিবেশ রক্ষার আইন থাকা সত্ত্বেও কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও যখন তা প্রয়োগ হয় না, তখন বোঝা যায় মুনাফার কাছে পরিবেশ ও জীবনের মূল্য কত তুচ্ছ।
এ পরিস্থিতি কেবল পরিবেশদূষণ বা কৃষিজমি কমার সমস্যা নয়; এটি খাদ্যনিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য এবং সুশাসনের ওপর একটি বড় আঘাত। রাষ্ট্রের উচিত অবিলম্বে কার্যকর তদারকি এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দূষণকারী শিল্পকারখানাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। নিয়মিত মাটি ও পানি পরীক্ষা করে ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রবেশ বন্ধ করা আবশ্যক।