সদ্য স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিআই পণ্য ‘মাগুরার হাজরাপুরী লিচু’ মৌসুমের প্রথম লিচু সংগ্রহ অনুষ্ঠান আজ রবিবার (১১ মে) দুপুরে সদরের হাজরাপুর ইউনিয়নের ইছাখাদায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দুই দিনব্যাপী লিচু মেলার উদ্বোধন হয়েছে।
মাগুরা জেলা প্রশাসক অহিদুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ মেলার শুভ উদ্বোধন করেন। এর আগে সদরের ইছাখাদার সাখাওয়াত হোসেনের লিচু বাগানে মাগুরা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিবুল হাসানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা, মাগুরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহমদ, মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তাজুল ইসলাম ও নারী উদ্যোক্তা জেনিস ফারজানা প্রমুখ।
সভায় জানানো হয়, মাগুরার সদর উপজেলার হাজরাপুর এলাকার লিচু অনন্য বৈশিষ্ট্য হওয়ায় ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট জেলা প্রশাসক ‘মাগুরার হাজরাপুরী লিচু’ কে জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্যের স্বীকৃতি দিয়ে আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ সালের ২৪ এপ্রিল জিআই স্বীকৃতি দেয় সরকার।
আরো পড়ুন:
এ সপ্তাহের রাশিফল (১০-১৬ মে)
কালো জাতের আখ চাষে সফল মাসুদ
সভায় বক্তারা বলেন, ‘‘মাগুরার হাজরাপুরী লিচুকে সরকার জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা মাগুরাবাসীর জন্য গর্বের। তাই এ পণ্যের প্রচার ও প্রসার আমাদের করতে হবে।’’
মাগুরার হাজরাপুরী লিচুর অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো- এ লিচুর খোসা পাতলা, রসালো, সুস্বাদু এবং মিষ্টি ঘ্রাণসমৃদ্ধ। এ লিচু কাঁচা অবস্থায় সবুজ ও পাকার পরে মেজেন্টা রঙ হয়। লিচু গাছের সংরক্ষণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। আগাম এ জাতের লিচু মে মাসের শুরুতে সংগ্রহ করা হয়।
আলোচনা শেষে হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দুই দুইব্যাপী লিচু মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এ মেলায় হাজরাপুর, হাজীপুর, মির্জাপুর, রাঘবদাইড়, শিবরামপুর ও নড়িহাড়ি গ্রামের লিচু চাষিরা বিভিন্ন জাতের লিচুর প্রদর্শনীতে অংশ নেয়।
মাগুরা সদর উপজেলা হাজরাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে অন্তত এক হাজার চাষি বিশেষ জাতের এ লিচু চাষে জড়িত।
শাহীন/মাগুরা/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।