ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে তেহরান। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শন সীমিত করার বিল অনুমোদনের মাধ্যমে এই চাপ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছে। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়; আইএইএর বিরুদ্ধে বিল অনুমোদনের পরও সংস্থাটির কর্মকর্তাদের তেহরান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তেহরান পশ্চিমা শক্তিকে চাপে রাখার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এপির এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।  

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ওই বিলটির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত সুরক্ষা চুক্তির অধীনে আইএইএর সঙ্গে সমস্ত সহযোগিতা অবিলম্বে স্থগিত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পারমাণবিক স্থাপনা ও বিজ্ঞানীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ কিছু নির্দেশনা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে।

আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধের সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষেপেছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে ইরানের। অথচ তারা আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা অগ্রহণযোগ্য। 

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার এক্স পোস্টে বলেন, ‘আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছে ইরান। দেশটি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক বাধ্যবাধকতা ও প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করেছে।’ 

অবশ্য মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে ইসরায়েলকে মনে করা হয়। তারাও আইএইএর প্রবেশাধিকার দেয়নি। গত ১৩ জুন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনা ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে হামলা চালালে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়।   

এদিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। কর্মসূচি কয়েক দশক পিছিয়ে গেছে। ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যের পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ দেখাতে পারেননি। পরে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁস হওয়া তথ্যে বলা হয়েছিল, পারমাণবিক স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি। ইরান কয়েক মাসের জন্য কর্মসূচিতে ফিরতে পারে। এই বক্তব্য ট্রাম্প প্রশাসন অস্বীকার করে। তারা জোর দিয়ে জানায়, হামলায় স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। তখনও এ বক্তব্যের পক্ষে নথি ছিল না। 
সর্বশেষ গত বুধবার প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, ‘মার্কিন হামলা ইরানের কর্মসূচি দুই বছর পিছিয়ে দিয়েছে। আমরা বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো ধ্বংস করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা মারাত্মক হ্রাস পেয়েছে।’ এবারও পার্নেল তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে কোনো তথ্য-প্রমাণ হাজির করেননি। বরং তিনি আবারও বলেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা মূল্যায়নে এমনটাই ‘ধারণা’ করা হচ্ছে।   

এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সিবিএস নিউজের একটি সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তেহরান এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক। তবে আলোচনা এত তাড়াতাড়ি পুনরায় শুরু হবে, তা তিনি মনে করেন না। অন্যদিকে কূটনীতির দরজা কখনোই বন্ধ হবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। 

এদিকে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোট বলেন, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত বন্দিদের মুক্তির ওপর নির্ভর করছে। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দুই ফরাসি নাগরিক সিসিল কোহলার ও জ্যাক প্যারিসকে আটক করে ইরান। 

ইরান ও সিরিয়া নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে গোপন আলোচনা করেছে ইসরায়েল। ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর তেলআবিব বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছে।  

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল আব্দুর রহিম মুসাভি। তিনি বলেন, যদি শত্রুরা ইরানের বিরুদ্ধে আবার কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তাদেরকে আরও ‘বিধ্বংসী প্রতিক্রিয়া’ মোকাবিলা করতে হবে।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র পরর ষ ট র ইসর য় ল সহয গ ত

এছাড়াও পড়ুন:

মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ২ বছর পিছিয়েছে: পেন্টা

মার্কিন বিমান হামলার ফলে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনার পারমাণবিক কর্মসূচি অন্তত ২ বছর পিছিয়ে গেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। খবর সিনহুয়ার।

বুধবার (২ জুলাই) পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছি। আমাদের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা প্রতিবেদন এ তথ্য নিশ্চিত করছে।” 

পার্নেল আরো বলেন, “আমরা যেসব গোয়েন্দা তথ্য দেখেছি তাতে আমাদের বিশ্বাস, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।”

আরো পড়ুন:

মার্কিন অস্ত্র সহায়তা স্থগিতে রুশ হামলা জোরদারের শঙ্কায় ইউক্রেন

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে বললেন ট্রাম্প

প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য জানায়নি পেন্টাগন। 

গত ২২ জুন, মার্কিন বাহিনী ইরানের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা- নাতাঞ্জ, ফোরডো এবং ইসফাহানে হামলা চালায়।

গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ফোরডোতে কী ঘটেছে তা কেউ সঠিকভাবে জানে না। আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি তা হলো, স্থাপনাগুলো গুরুতর ও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করছে।”

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বুধবার (২ জুলাই) আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে তেহরানের সহযোগিতা স্থগিত করে একটি আইন প্রণয়নের নির্দেশনা জারি করেছেন।

ইরানের সাংবিধানিক পরিষদের মুখপাত্র হাদি তাহান নাজিফের মতে, আইনটিতে ইরানের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, পারমাণবিক স্থাপনা ও বিজ্ঞানীদের নিরাপত্তা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইন অনুসারে, ভবিষ্যতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আইএইএর যেকোনো পরিদর্শনের জন্য তেহরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন লাগবে।

এদিকে, এর জবাবে আইএইএ এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা এই প্রতিবেদনগুলো সম্পর্কে অবগত। আইএইএ ইরানের কাছ থেকে আরো আনুষ্ঠানিক তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছে।”

বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখার সময় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের প্রধান মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক ইরানের সিদ্ধান্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি এটিকে ‘স্পষ্টতই উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেন।

ডুজারিক বলেন, “জাতিসংঘ প্রধান আইএইএর সঙ্গে ইরানের সহযোগিতার বিষয়ে বরাবরই স্পষ্ট অবস্থানে ছিলেন। তিনি পারমাণবিক ইস্যুতে আইএইএর সঙ্গে সকল দেশকে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।”

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের মতে, আইএইএর সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ‘অগ্রহণযোগ্য’।

বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্রুস বলেন, “আমরা ‘অগ্রহণযোগ্য’ শব্দটি ব্যবহার করব। কারণ ইরান এমন এক সময়ে আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যখন তাদের কাছে পথ পরিবর্তন করে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।” 

তিনি বলেন, “ইরানের আর দেরি না করে জাতিসংঘের সংস্থা আইএইএর সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করা উচিত।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পশ্চিমা শক্তিকে চাপে রাখার কৌশলে তেহরান
  • মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ২ বছর পিছিয়েছে: পেন্টা
  • ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পেন্টাগনের মূল্যায়নে কী বেরিয়ে এল
  • আইএইএ ইরানের পরমাণু স্থাপনা আর পরিদর্শন করতে পারবে না, যদি না...