Samakal:
2025-11-03@03:35:21 GMT

আমানত পরিস্থিতির উন্নতি

Published: 3rd, July 2025 GMT

আমানত পরিস্থিতির উন্নতি

ব্যাংক খাতের আমানত পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত এক বছরে আমানত ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়ে ১৯ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তিন মাস আগে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। মূলত ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করায় আমানতের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তবে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অনেকে ভালো ব্যাংকে রাখছে। যে কারণে কিছু ব্যাংকে আমানত কমার ধারা অব্যাহত আছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে আমানত বেড়েছে ৪০ হাজার ১৮ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরের পর প্রতি মাসেই প্রবৃদ্ধি একটু করে বাড়ছে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয় ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে আরও বেড়ে ৯ দশমিক ১২ শতাংশ হয়। সেখান থেকে মার্চে আরও বেড়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত ঋণ ৮ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। তিন মাস আগে গত ডিসেম্বর শেষে যেখানে স্থিতি ছিল ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের আমানত বাড়লেও কিছু ব্যাংকে এখনও আমানত উত্তোলনের চাপ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর ঋণ ফেরত আসছে কম। আবার নতুন করে সেভাবে আমানত পাচ্ছে না। এতে করে সরকারি-বেসরকারি খাতের ১১টি ব্যাংকের আমানত কমে গেছে। এ তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সমস্যাগ্রস্ত জনতা ও বেসিক ব্যাংক। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল, এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, এবি, বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক ও মধুমতি ব্যাংক।
ব্যাংকাররা জানান, বিগত সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক দখল, ঋণের নামে লুটসহ বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ঋণের ৮০ শতাংশই নিয়ে গেছে দখলদাররা। ফলে কোনো কোনো ব্যাংকের ৯৮ শতাংশ ঋণ এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এরকম অবস্থায় চরম আস্থাহীনতায় পড়ে ব্যাংকগুলোর সঞ্চয় ভাঙার চাপ রয়েছে। আবার ঋণ আদায় সেভাবে হচ্ছে না। এসব ব্যাংক এখন ১২ থেকে ১৩ শতাংশ সুদ অফার করেও সাড়া পাচ্ছে না। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ধার নিয়ে কোনো মতো চালু রেখেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে ৬টি ইসলামী ব্যাংকের সম্পদের গুণগতমান (একিউআর) যাচাই করে পাঁচটি মিলে একটি ব্যাংক করার উদ্যোগ নিয়েছে। আরও ১১টি ব্যাংকের একিউআর করার প্রক্রিয়া চলমান আছে। ব্যাংক খাতের প্রতি আস্থা বাড়াতে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কিছু ব্যাংকে আমানতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি
কিছু দিন আগেও দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অনেকেই নিজের কাছে রাখছিল। তবে সেই পরিস্থিতির এখন উন্নতি হয়েছে। আবার ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি কমে আসায় এখন সঞ্চয় কিছুটা বাড়ছে। যে কারণে গত মার্চ শেষে উন্নতি হয়েছে ব্যাংক খাতের আমানত পরিস্থিতির। কয়েকটি ব্যাংকের আমানত অনেক বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত আমানত প্রবৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। ব্যাংকটির আমানত ৩৮ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়ে ৭৬ হাজার ৫৪ কোটি টাকা হয়েছে। সিটি ব্যাংকের প্রচলিত ব্যাংকিংয়ে ২৫ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে আমানত ৪৭ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা হয়েছে। একই সময়ে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৫২৯ কোটি টাকায় ঠেকেছে। ইস্টার্ন ব্যাংকে ২৫ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে ৪৬ হাজার ৯০২ কোটি টাকা হয়েছে। ব্যাংকটির ইসলামী ব্যাংকিংয়ে আমানত রয়েছে আরও ৯৪৬ কোটি টাকা। আমানত প্রবৃদ্ধিতে পর্যায়ক্রমে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে যমুনা, ডাচ্‌-বাংলা, ট্রাস্ট, পূবালী, ঢাকা, এমটিবি ও ব্যাংক এশিয়া।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত র প রব দ ধ গত ম র চ সরক র ইসল ম দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ