ব্যাংক খাতের আমানত পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত এক বছরে আমানত ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়ে ১৯ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তিন মাস আগে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। মূলত ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করায় আমানতের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তবে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অনেকে ভালো ব্যাংকে রাখছে। যে কারণে কিছু ব্যাংকে আমানত কমার ধারা অব্যাহত আছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে আমানত বেড়েছে ৪০ হাজার ১৮ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরের পর প্রতি মাসেই প্রবৃদ্ধি একটু করে বাড়ছে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয় ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে আরও বেড়ে ৯ দশমিক ১২ শতাংশ হয়। সেখান থেকে মার্চে আরও বেড়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত ঋণ ৮ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। তিন মাস আগে গত ডিসেম্বর শেষে যেখানে স্থিতি ছিল ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের আমানত বাড়লেও কিছু ব্যাংকে এখনও আমানত উত্তোলনের চাপ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর ঋণ ফেরত আসছে কম। আবার নতুন করে সেভাবে আমানত পাচ্ছে না। এতে করে সরকারি-বেসরকারি খাতের ১১টি ব্যাংকের আমানত কমে গেছে। এ তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সমস্যাগ্রস্ত জনতা ও বেসিক ব্যাংক। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল, এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, এবি, বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক ও মধুমতি ব্যাংক।
ব্যাংকাররা জানান, বিগত সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক দখল, ঋণের নামে লুটসহ বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ঋণের ৮০ শতাংশই নিয়ে গেছে দখলদাররা। ফলে কোনো কোনো ব্যাংকের ৯৮ শতাংশ ঋণ এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এরকম অবস্থায় চরম আস্থাহীনতায় পড়ে ব্যাংকগুলোর সঞ্চয় ভাঙার চাপ রয়েছে। আবার ঋণ আদায় সেভাবে হচ্ছে না। এসব ব্যাংক এখন ১২ থেকে ১৩ শতাংশ সুদ অফার করেও সাড়া পাচ্ছে না। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ধার নিয়ে কোনো মতো চালু রেখেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে ৬টি ইসলামী ব্যাংকের সম্পদের গুণগতমান (একিউআর) যাচাই করে পাঁচটি মিলে একটি ব্যাংক করার উদ্যোগ নিয়েছে। আরও ১১টি ব্যাংকের একিউআর করার প্রক্রিয়া চলমান আছে। ব্যাংক খাতের প্রতি আস্থা বাড়াতে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কিছু ব্যাংকে আমানতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি
কিছু দিন আগেও দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অনেকেই নিজের কাছে রাখছিল। তবে সেই পরিস্থিতির এখন উন্নতি হয়েছে। আবার ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি কমে আসায় এখন সঞ্চয় কিছুটা বাড়ছে। যে কারণে গত মার্চ শেষে উন্নতি হয়েছে ব্যাংক খাতের আমানত পরিস্থিতির। কয়েকটি ব্যাংকের আমানত অনেক বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত আমানত প্রবৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। ব্যাংকটির আমানত ৩৮ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়ে ৭৬ হাজার ৫৪ কোটি টাকা হয়েছে। সিটি ব্যাংকের প্রচলিত ব্যাংকিংয়ে ২৫ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে আমানত ৪৭ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা হয়েছে। একই সময়ে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৫২৯ কোটি টাকায় ঠেকেছে। ইস্টার্ন ব্যাংকে ২৫ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে ৪৬ হাজার ৯০২ কোটি টাকা হয়েছে। ব্যাংকটির ইসলামী ব্যাংকিংয়ে আমানত রয়েছে আরও ৯৪৬ কোটি টাকা। আমানত প্রবৃদ্ধিতে পর্যায়ক্রমে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে যমুনা, ডাচ্-বাংলা, ট্রাস্ট, পূবালী, ঢাকা, এমটিবি ও ব্যাংক এশিয়া।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর স থ ত র প রব দ ধ গত ম র চ সরক র ইসল ম দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক
রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।
শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।
শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।
তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।
গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।