ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় দখলে নিয়ে দলীয় কার্যক্রম শুরু করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

গতকাল শনিবার দুপুরে চরফ্যাশন পৌরসভার কলেজ রোডে আওয়ামী লীগের তিনতলা ভবন দখলের পর এনসিপির সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। আজ রোববার সেখানে এনসিপির দলীয় কার্যক্রম শুরু করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির স্থানীয় নেতাদের বাড়িঘরসহ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের আসবাব ভাঙচুর করে কাগজপত্র পুড়িয়ে দেয় ছাত্র-জনতা। তার আগে কার্যালয়ে লুটপাট চালানো হয়। এর পর থেকে পড়ে ছিল কার্যালয়টি। ছয় মাস আগে তিনতলা ভবনের নিচতলায় এক নারী চা বিক্রি শুরু করেন। ভবনটির সব দরজা-জানালা খোলা ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, গতকাল শনিবার দুপুরে হঠাৎ ভবনটিতে এনসিপির সাইনবোর্ড টানানো দেখা যায়। এনসিপির উপজেলার নেতা পরিচয়দানকারী ওয়াহিদ ফয়সালের নেতৃত্বে কার্যালয়টি দখলে নেওয়া হয়। তখন তাঁর সঙ্গে মো.

শাহাবুদ্দিন, আমজাদ হাবিব, নুরে আলম নাসিম, শরিফ হোসাইনসহ কর্মীরা ছিলেন। রোববার ভবনের ছাদে মাইক লাগিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রচারণা চালানো হয়।

জানতে চাইলে দখলে নেতৃত্ব দেওয়া ওয়াহিদ ফয়সাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা (এনসিপি) দখলকারী না। আওয়ামী লীগ দখল করেছে, সেটা আগে জানতে হবে। ২০১১-১২ সালের দিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই ভবন নির্মাণ করেছে। এই জমির অর্ধেক মানুষের রেকর্ডীয় সম্পত্তি (চান্দিনা ভিটা) এবং বাকি অর্ধেক সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি। আমরা দখল করার আগে জমির প্রকৃত মালিকের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছি এবং সরকারি অংশ লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’

আরেক নেতা মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আসলে আমরা ভবনটি দখল করিনি। এটা অযত্নে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল, পরিষ্কার করে ব্যবহার শুরু করছি মাত্র।’

ভোলায় এনসিপির সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা ইয়াছির আরাফাত বলেন, চরফ্যাশন উপজেলায় এনসিপির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ওয়াহিদ ফয়সাল, হাসান মাহমুদ, শাহাদাত খন্দকার, বাহারুল ইসলাম, মো. শুভ, মঞ্জু, হাফেজ শাহাবুদ্দিনসহ ১০ জন। চরফ্যাশন উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় দখলের বিষয়টি তাঁরা জেনেছেন এবং কেন্দ্রকে জানিয়েছেন। দখলের কাজে জেলা বা কেন্দ্রের কোনো নির্দেশনা ছিল না। চরফ্যাশন এনসিপি এই দখল জেলা বা কেন্দ্রকে না জানিয়ে করেছে। কেন্দ্র খুব শিগগিরই আওয়ামী লীগের কার্যালয় দখলমুক্ত করার নির্দেশনা দেবে।

এ বিষয়ে চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান হাওলাদার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এনস প র স উপজ ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দুই পা হারালেও মনোবল হারাননি আমজাদ

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম একটি শোকের দিন বললে ভুল হবে না। সাভারের রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারান প্রায় এগারো শ শ্রমিক, আহত হন আরও প্রায় আড়াই হাজার। ভবনটিতে কাজ করা কর্মী ও তাঁদের পরিবারের জীবনে নেমে আসে মানবিক বিপর্যয়।

এই ভয়াবহ শিল্প-দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন ভবনটিতে কাজ করা কুড়িগ্রামের আমজাদ হোসেনও। যদিও প্রাণে বেঁচে যান তিনি, কিন্তু চিরতরে হারিয়ে ফেলেন দুটি পা। পরিবারের কর্মক্ষম মানুষটি মুহূর্তের মধ্যেই পঙ্গুত্ব বরণ করেন, সমাজ ও পরিবারের গ্লানিতে পরিণত হন। জীবন যেন থমকে যায়।

প্রথম এক বছর পঙ্গুত্ব আর হতাশার মধ্যেই কাটে আমজাদের। নিজের ভবিষ্যৎ, পরিবারের দায়িত্ব—সবকিছু নিয়ে ছিল দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তা।

আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ওই দুর্ঘটনা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে প্রায় দেড় বছর লেগে গেছে। আগে সুস্থ ছিলাম, দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াতাম। যেখানে খুশি সেখানে ঠিকভাবে যাওয়া যেত। কিন্তু দুর্ঘটনার পর বাড়িতে আসার পর আর সেরকমটা করা হয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর যখন জ্ঞান ফিরে পেলাম, শুয়ে শুয়ে ভাবতাম এখন কী করব। কী করলে জীবন চলবে। সংসার চলবে।’

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা সত্ত্বেও থেমে যাননি আমজাদ। প্রবল মনোবল আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, জীবনে নতুনভাবে পথচলার। আর এই যাত্রায় তাঁর পাশে দাঁড়ায় বেসরকারি মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক। ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে তাঁর নতুন জীবনের শুরু।

আমজাদ হোসেন বলেন, ‘দোকান শুরু করার পর ভাবি, কোন জিনিসটি করলে দোকান সবচেয়ে ভালো চলবে। তারপর ভাবছিলাম রিচার্জের ব্যবসা কীভাবে করা যায়। নিজে নিজেই ভাবছিলাম কার কাছ থেকে এই সিমগুলো পাওয়া যাবে। কার মাধ্যমে এই সিমগুলো নিলে ব্যবসা করা যাবে...।’

স্মৃতি হাতড়ান আমজাদ, ‘বাংলালিংকের মনু নামের একজন ছিলেন, মারা গেছেন। উনি একদিন আমার দোকানে এসে বলেন, কী ব্যাপার, তোমার দোকানে কি রিচার্জের সিম নেই? আমি বলি, না ভাই, নেই। তখন তিনি বলেন, তাহলে তোমাকে বাংলালিংকের একটা সিম দিই? আমি রাজি হই। রিচার্জের সিম দেওয়ার কিছুদিন পরেই উনি পোস্ট কোড করে দেন। তখন টপ-আপ আমার কাছে ছিল না। বাংলালিংকের সঙ্গে প্রথম কাজ শুরু করি, আমি রিচার্জের কাজ করব বাংলালিংকের—যেন অন্য রকম একটি ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করতে থাকে।’

বর্তমানে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মোবাইল রিচার্জ বিক্রিকারী দোকানের মালিক আমজাদ। মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করেন এই দোকান থেকে। শুধু অর্থনৈতিক সাফল্যই নয়, সামাজিকভাবেও তিনি হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয় একজন ব্যক্তি।

গ্রামের অনেকেই জানান, এলাকায় আগে তাঁরা এ ধরনের সেবা পাননি। আমজাদ হোসেনের কারণেই এই সেবা পাচ্ছেন। বাংলালিংকের সহায়তায় এবং আমজাদের ইচ্ছাশক্তির জোরেই আজ তিনি সফল।

নিজের জীবন বদলে দিয়ে অন্যদেরও অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘যদি মনোবল শক্ত না থাকত তাহলে আমার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হতো না।’

আমজাদের মতে, বাংলালিংক কেবল একটি মোবাইল অপারেটরই নয়, বরং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার একটি প্ল্যাটফর্ম। সমাজের পিছিয়ে পড়া অসংখ্য মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করে আসছে বাংলালিংক। আর প্রতিনিয়ত তৈরি করছে ‘দিনবদলের গল্প’।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দুই পা হারালেও মনোবল হারাননি আমজাদ