আইসিসির এপ্রিলের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ
Published: 14th, May 2025 GMT
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দারুণ পারফরম্যান্স করায় আইসিসির এপ্রিল মাসের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি ও নিউজিল্যান্ডের পেসার বেন শিয়ার্সকে পেছনে ফেলে মিরাজের এপ্রিল মাসের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার খবরটি আজ আইসিসির ওয়েবসাইটে জানানো হয়।
সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে আইসিসির মাসসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হলেন মিরাজ। ক্যারিয়ারে এই প্রথম আইসিসির মাসসেরা হলেন ২৭ বছর বয়সী এই স্পিন অলরাউন্ডার।
গত এপ্রিলে সিলেট ও চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ ১–১ ব্যবধানে ড্র করে বাংলাদেশ। এই দুই টেস্টে ৩ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৮.
এপ্রিল মাসের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার পর আইসিসিকে মিরাজ বলেছেন, ‘আইসিসির মাসসেরা হওয়া অবিশ্বাস্য সম্মান। যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য আইসিসির পুরস্কারই সর্বোচ্চ, আর বৈশ্বিকভাবে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়াটা আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। এসব মুহূর্ত আমার ক্যারিয়ারের গতিপথকে মনে করিয়ে দেয়। ক্যারিয়ারের শুরুতে ২০১৬ অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে সেরা খেলোয়াড় হওয়া ছিল আমার জন্য অনেক বড় প্রেরণা। এই পুরস্কারটিও তেমনই বিশেষ কিছু।’
মিরাজ আরও বলেছেন, ‘আইসিসির এমন স্বীকৃতি আমাকে দেশের জন্য আরও ভালো করার প্রেরণা। সতীর্থ, কোচ ও ভক্তদের ধন্যবাদ জানাই—এই পুরস্কার তাদেরও।’ বাংলাদেশের পুরুষ ক্রিকেটারদের মধ্যে মিরাজের আগে সর্বশেষ আইসিসির মাসসেরা হয়েছেন সাকিব, ২০২৩ সালের মার্চে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই টেস্টের এই সিরিজেই বল হাতে ঝলক দেখান মুজারাবানি। ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার এ পেসার দুই টেস্ট মিলিয়ে নেন ১০ উইকেট। এর ৯টিই সিলেটে, যা চার বছর পর জিম্বাবুয়েকে টেস্ট জেতাতে সহায়তা করে। সিলেট টেস্টে সেরা খেলোয়াড়ও হন মুজারাবানি।
নিউজিল্যান্ডের পেসার সিয়ার্স গত মাসে আলো ছড়িয়েছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। নিজেদের মাঠে বাবর–রিজওয়ানদের ৩–০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করে কিউইরা।সিয়ার্স প্রথম ওয়ানডেতে খেলেননি। শেষ দুই ওয়ানডেতে সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগান, পাঁচটি–পাঁচটি করে নেন ১০ উইকেট।
২০২১ সাল থেকে মাসসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার দিচ্ছে আইসিসি। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির একটি স্বাধীন ভোটিং একাডেমি সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করেন। প্যানেলে আছেন সাবেক ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও ক্রীড়া সাংবাদিক। এ ছাড়া দর্শকেরাও আইসিসির ওয়েবসাইটে গিয়ে মনোনীত তিন খেলোয়াড়ের একজনকে ভোট দিতে পারেন।
নারী–পুরুষ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের চার ক্রিকেটার চারবার আইসিসির মাসসেরা হলেন। ২০২১ সালের মে মাসে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই পুরস্কার জেতেন মুশফিকুর রহিম। সাকিব জিতেছেন দুবার—২০২১ সালের জুলাইয়ের পর ২০২৩ সালের মার্চে। একমাত্র বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটার হিসেবে নাহিদা আক্তার আইসিসির মাসসেরা স্বীকৃতি পেয়েছেন ২০২৩ সালের নভেম্বরে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ক র প রথম হওয় র উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রকল্পে অর্থায়ন রয়েছে প্রাইম ব্যাংকের
কৌশলগতভাবে পরিবেশ ও সমাজের উন্নতি করে, একই সঙ্গে ভালো মুনাফা দেয়—এমন টেকসই প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে যেকোনো ব্যাংক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। এতে পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি অর্থনীতিতে নতুন সুযোগ তৈরি হয় এবং ব্যাংকের সুনাম বাড়ে। প্রাইম ব্যাংকও টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে পরিবেশ ও সমাজে ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরিতে কাজ করছে। আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও কার্বন নিঃসরণ কমায় এমন বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়মিত অর্থায়ন করছি।
প্রাইম ব্যাংক টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসনের বিষয়গুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। বিশেষ করে কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (সিএমএসএমই) এবং নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় সহযোগিতা করা হয়। গ্রিন ফাইন্যান্স সাপোর্ট ডেস্ক ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে ব্যাংকটি। প্রাইম ব্যাংকের এসব নীতির ফলে একদিকে দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত ও সামাজিক ঝুঁকি কমছে; অন্যদিকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও মুনাফার স্থিতিশীলতা বাড়ছে। পাশাপাশি অনাদায়ি ঋণের আশঙ্কা কমছে।
টেকসই ঋণের আওতায় পরিবেশগত দিকের পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের খাতকেও বুঝায়। আর পরিবেশবান্ধব বা গ্রিন অর্থায়নের আওতায় শুধু পরিবেশবান্ধব খাতে ঋণ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে প্রাইম ব্যাংকের পরিবেশবান্ধব ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। এটি ব্যাংকের মোট ঋণের এক–তৃতীয়াংশ। ২০২৩ সালে এই খাতে ঋণ ছিল বিতরণ করা মোট ঋণের ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২৪ সালে প্রাইম ব্যাংকের টেকসই ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮০ হাজার ৪১৬ কোটি টাকায়, যা ব্যাংকের মোট ঋণের ৮০ শতাংশের বেশি। ২০২৩ সালে এটি ছিল মাত্র ৩৮ শতাংশ।
অর্থাৎ, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব—উভয় খাতেই ভালো করছে প্রাইম ব্যাংক। এটি সম্ভব হয়েছে মূলত ব্যাংকের টেকসই অর্থায়ন নীতির সঠিক বাস্তবায়ন এবং পরিবেশ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্পে বিনিয়োগের ফলে। এ প্রচেষ্টার কারণেই প্রাইম ব্যাংক তিন বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই উন্নয়ন রেটিংয়ে শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক হিসেবে স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া ইউরোমানি প্রকাশনা সংস্থা বাংলাদেশে ইএসজি মানদণ্ডে সেরা ব্যাংক হিসেবে প্রাইম ব্যাংককে টানা তিন বছর ধরে পুরস্কৃত করছে।
প্রাইম ব্যাংক ২০১৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বার্ষিক টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি জাতিসংঘের নেট-জিরো ব্যাংকিং অ্যালায়েন্সে যোগ দেয়। সেই ধারাবাহিকতায় গত বছর ব্যাংকের প্রথম জলবায়ু কৌশল প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া ঋণ প্রদানে ইএসজি মানদণ্ড অনুসরণ শুরু করে প্রাইম ব্যাংক।
প্রাইম ব্যাংকের পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন প্রকল্পগুলো দেশের ব্যাংকিং খাতে টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের ক্ষেত্রে একটি মডেল হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবেশবান্ধব পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয় প্রাইম ব্যাংক। উন্নত যন্ত্রপাতি ক্রয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণে এসব ঋণ দেওয়া হয়। যেমন নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান ফারিহা স্পিনিং মিলসকে প্রাইম ব্যাংক প্রায় ১২৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এই টাকা ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি তাদের স্পিন্ডল বা সুতা পাকানোর যন্ত্রের সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছে। এতে একদিকে কাজের গতি বেড়েছে; অন্যদিকে, বছরে প্রায় ৩ হাজার ৯৭৩ টন কার্বন নির্গমন কমাতে সহায়তা করছে। এই সম্প্রসারণের ফলে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ১ হাজার ৮২৪ জনের। আরেক রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান এবিআর স্পিনিং মিলসে ১২৮ কোটি টাকা অর্থায়ন করে প্রাইম ব্যাংক। এই অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন করে বছরে প্রায় ৪৫ লাখ ৮৭ হাজার কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারছে; এতে কার্বন নির্গমন কমবে প্রায় ৩ হাজার ৭৩ টন।
ফারেবা নাজ শাওলী
উপপ্রধান, টেকসই অর্থায়ন, প্রাইম ব্যাংক