মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে আরও ৪৪ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
Published: 14th, May 2025 GMT
মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ৪৪ জনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। আজ বুধবার ভোরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাঁদের দেশের ভেতর ঠেলে পাঠিয়েছে। বিজিবি তাঁদের আটক করেছে। আটক সবাই বাংলাদেশের নাগরিক বলে বিজিবি নিশ্চিত করেছে। তাঁদের পুলিশে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
বড়লেখার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুমান করা হচ্ছে, লাতু ও পাল্লাথল সীমান্তের মধ্যবর্তী কোনো স্থান দিয়ে ভোররাতে তাঁদের ঢুকিয়েছে। ৫টা ৫২ মিনিটের দিকে একজনের ফোনে আমি জানতে পারছি, কিছু লোক পাল্লাথল রাস্তা দিয়ে আসছেন। পরে বিজিবি তাঁদের আটক করেছে। ৪৪ জনের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ১৩ শিশু আছে।’ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তাঁদের স্থানীয় একটি বালিকা বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে।
বিজিবি-৫২–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ৪৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নারী-শিশু আছে। ভোরের দিকে তাঁদের ঠেলে দিয়েছে। সকাল থেকে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাঁরা বাংলাদেশি। তাঁদের বাড়ি নীলফামারী, কুড়িগ্রামের দিকে। সবাইকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হবে। তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে পুশব্যাক ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এরিয়া বড়, পাহাড়ি এলাকা। একটা পিলার থেকে আরেক পিলারে যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগে।’
প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, ৭ মে থেকে আজ ১৪ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের চার জেলার সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ২৭২ জনকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬ জনকে খাগড়াছড়ি, ৭৮ জনকে সাতক্ষীরা, ১১৮ জনকে মৌলভীবাজার এবং ১০ জনকে মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
৯ মে শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ৭৮ জনকে ফেলে রেখে যায় বিএসএফ। তাঁরা কয়েক দিন না খেয়ে থাকার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে একজনের হাত ভেঙে গেছে আর কয়েকজনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য অনুসারে, তাঁদের বেশ নিষ্ঠুরতার সঙ্গে চোখ বেঁধে গুজরাট থেকে উড়োজাহাজ-লঞ্চে করে বাংলাদেশে আনা হয়েছে।
আরও পড়ুনসুন্দরবনে বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৩ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর১৩ মে ২০২৫আরও পড়ুনগুজরাট থেকে উড়োজাহাজ-লঞ্চে করে চোখ বেঁধে আনা হয়েছে, জানালেন ভুক্তভোগীরা১২ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এসএফ
এছাড়াও পড়ুন:
ভোলায় ক্ষোভ উপেক্ষা করে এলপিজি সিলিন্ডার বিতরণকাজের উদ্বোধন
ভোলায় বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার দাবি উপেক্ষা করে সরকারি মূল্যে এলপিজি সিলিন্ডার বিতরণকাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভোলার ৫৬৮ জন গ্রাহকের মধ্যে সিলিন্ডার বিতরণের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।
আজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সিলিন্ডার বিতরণকাজের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান। তবে দীর্ঘদিন ধরে বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংযোগ নিতে সাধারণ গ্রাহক, ঠিকাদার, রাজনৈতিক দলের নেতাসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের অনেকে সংযোগ নিতে টাকা জমাও দিয়েছেন।
সিলিন্ডার বিতরণকাজের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান। তিনি বলেন, আবেদনের ভিত্তিতে ৫৬৮ জন গ্রাহকের মধ্যে এলপিজি সিলিন্ডার বিতরণ করা হবে। যাঁরা আবেদন করবেন, তাঁরাই এ সিলিন্ডার সংগ্রহ করতে পারবেন। এ জন্য লাইসেন্সের মাধ্যমে ভোলায় ছয়জন পরিবেশক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রথমে আবেদনের সঙ্গে এসব গ্রাহককে ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ হাজার ৪৩০ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন কার্ড নিতে হবে। ওই কার্ড দেখিয়ে ৮২৫ টাকা জমা দিলে পরিবেশক সিলিন্ডার দেবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আমিন উল আহসান বলেন, যে ২ হাজার ১০০ গ্রাহক আবাসিক খাতে গ্যাসের সংযোগ নেওয়ার জন্য সরকারি ফান্ডে টাকা জমা দিয়েছেন, কিন্তু গ্যাসের সংযোগ পাননি, তাঁদের ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। এটা শুধু সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির নয়, সব কোম্পানির আবাসিক খাতের গ্রাহকদের গ্যাসের সংযোগ দেওয়া বন্ধ আছে।
বিপিসির চেয়ারম্যান যখন সিলিন্ডার বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করছিলেন, তখন কয়েক শ গ্রাহক ও ঠিকাদার বিচ্ছিন্নভাবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ করছিলেন। কয়েক বছর আগে তাঁরা বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংযোগ নিতে ঠিকাদার নিয়োগ করে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিকে ডিমান্ড নোট, পৌরসভাকে সড়ক কর্তন ফিসহ একেকজন দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন বলে জানান। অনেকের বাসার সামনে রাইজার বসেছে, পাইপলাইনও টানা হয়েছে। কিন্তু সংযোগ না দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস বিতরণের উদ্বোধনে তাঁরা ক্ষুব্ধ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আবাসিক খাতে গ্রাহক টাকা জমা দিয়েছেন; কিন্তু তাঁদের গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার সুযোগ হয়নি। তাঁদের টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এখন গ্রাহকদের যে অভিযোগ, তাঁরা দ্রুত গ্যাসের সংযোগ নেওয়ার জন্য সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির লোকজন, ঠিকাদার ও সড়ক কাটার জন্য নির্ধারিত ফি ছাড়াও অনেক টাকা ঘুষ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে যদি আমরা কোনো লিখিত অভিযোগ পাই, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহানের সভাপতিত্বে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গৌতম চন্দ্র কুন্ডু, পুলিশ সুপার মো. শরীফুল হক, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী (আলমগীর), সদস্যসচিব মো. রাইসুল আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।