মালয়েশিয়া শ্রমবাজার চালুর সম্ভাবনা, আজ বৈঠক
Published: 15th, May 2025 GMT
মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার বন্ধ থাকার এক বছর পার হয়ে গেছে। এটি নতুন করে চালু করতে বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল।
বৈঠকের পর বিদ্যমান সমঝোতা স্মারকের অধীনে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত মঙ্গলবার মালয়েশিয়ায় গেছে। প্রতিনিধিদলের অপর দুই সদস্য হলেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নেয়ামত উল্ল্যা ভূঁইয়া ও উপসচিব মো.
মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় আজ বৃহস্পতিবার দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করার কথা রয়েছে উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তারা বলেন, সফরে মূলত মালয়েশিয়া শ্রমবাজার চালু নিয়েই আলোচনা হবে। সেখানে অনুষ্ঠেয় বৈঠক থেকেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে। এরপর দুই দেশের গঠিত যৌথ কারিগরি কমিটির সভায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে। যৌথ কারিগরি কমিটির সভায় এবার সব বৈধ এজেন্সির কর্মী পাঠানোর সুযোগ রাখার বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হবে। যদিও দেশটিতে কর্মী পাঠাতে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকে এজেন্সি বাছাইয়ের দায়িত্ব মালয়েশিয়া সরকারের হাতে দেওয়া আছে। এ সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। তাই নতুন করে চুক্তি করার সুযোগ নেই। তবে বিদ্যমান সমঝোতা স্মারক কিছুটা সংশোধন করার জন্য প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ।
দুই দেশের মধ্যে যৌথ কারিগরি কমিটির সভা করতে কয়েক দফায় মালয়েশিয়াকে চিঠি পাঠানো হয়। অবশেষে গত মাসে বৈঠকের বিষয়ে সম্মতি দেয় মালয়েশিয়া।১৪টি দেশ থেকে কর্মী নিত মালয়েশিয়া। তবে ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশসহ সবার জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। তখন দেশটিতে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে চক্র তৈরির অভিযোগ উঠেছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার হয়ে উঠেছিল মালয়েশিয়া। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই বন্ধ বাজার চালু করতে উদ্যোগী হয়। দুই দেশের মধ্যে যৌথ কারিগরি কমিটির সভা করতে কয়েক দফায় মালয়েশিয়াকে চিঠি পাঠানো হয়। অবশেষে গত মাসে বৈঠকের বিষয়ে সম্মতি দেয় মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়ার বাজার অতীতে একাধিকবার বন্ধ হয়েছে। প্রথমবার বাজার বন্ধের আগের দুই বছরে (২০০৭ ও ২০০৮ সাল) দেশটিতে যান মোট চার লাখের বেশি কর্মী। দ্বিতীয় দফায় বাজার বন্ধের আগে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে যান মোট প্রায় তিন লাখ কর্মী। আর সবশেষ ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত গেছেন প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী।গত মাসে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনারের কাছে পাঠানো এক চিঠি বলা হয়, ২১ থেকে ২২ মে ঢাকায় যৌথ কারিগরি কমিটির সভা করার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে মালয়েশিয়া। এতে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ।
২০০৪ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় গেছেন প্রায় ১৩ লাখ বাংলাদেশি কর্মী। এর মধ্যে এক বছরে সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছেন ২০২৩ সালে—সাড়ে তিন লাখের বেশি।
মালয়েশিয়ার বাজার অতীতে একাধিকবার বন্ধ হয়েছে। প্রথমবার বাজার বন্ধের আগের দুই বছরে (২০০৭ ও ২০০৮ সাল) দেশটিতে যান মোট চার লাখের বেশি কর্মী। দ্বিতীয় দফায় বাজার বন্ধের আগে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে যান মোট প্রায় তিন লাখ কর্মী। আর সবশেষ ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত গেছেন প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী।
বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার খোলাটা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি শ্রমিক পাঠানোর সুযোগটি যেন আগের মতো কিছু নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য সীমাবদ্ধ না থাকে।রামরুর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক তাসনীম সিদ্দিকীমালয়েশিয়ায় নতুন করে আরও কয়েক লাখ কর্মী পাঠানোর সুযোগ আছে বলে মনে করছেন রিক্রুটিং এসেন্সির মালিকেরা। তবে তাঁরা বলছেন, এই শ্রমবাজার চালুর ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ অভিবাসন খরচ কমানো।
সবশেষ ২০২২ সালে বাজার চালু হলে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর খরচ ৭৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। যদিও পরে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসে, দেশটিতে যেতে কর্মীদের কাছ থেকে এজেন্সিগুলো গড়ে নিয়েছে পাঁচ লাখ টাকার বেশি।
এদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু নিয়ে সরকারের কাছে ১০টি সুপারিশ করেছে অভিবাসীদের নিয়ে কর্মরত ২৩টি বেসরকারি সংগঠন। তারা বলছে, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে পুরোনো অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি ঘটার সুযোগ যাতে তৈরি না হয়, সরকার সর্বতোভাবে সেই চেষ্টা করবে বলে আশা করছে সংগঠনগুলো।
অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরুর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক তাসনীম সিদ্দিকী মনে করেন, বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার খোলাটা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি শ্রমিক পাঠানোর সুযোগটি যেন আগের মতো কিছু নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য সীমাবদ্ধ না থাকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকের ব্যয়ও যাতে সীমিত থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ রমব জ র চ ল ২০২৪ স ল র ল খ কর ম প রব স দ শট ত কল য ণ সরক র সমঝ ত
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্রোহ, বেদনা ও বীরত্বের ডিজিটাল আর্কাইভ
২০২৪ সালের জুনের শেষ ভাগ থেকে আন্দোলনটা দানা বাঁধে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি এসে সেই আন্দোলনে রক্ত ঝরে। গুলি চালায় পুলিশ, শহীদ হন রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ ছয়জন। সেই শুরু। এর পর থেকে তরুণদের সেই আন্দোলনে চলতে থাকে নির্যাতন–নিপীড়ন, গুলি, চলে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ।
শুরু থেকেই প্রথম আলো জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরেছে। রেখেছে মৃত্যুর হিসাব, করেছে মানবিক ও বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন। গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে বিদ্রোহ–বেদনা ও বীরত্বের কথা উঠে এসেছে সেসব প্রতিবেদনে। দমন–পীড়নের সাহসী ছবি প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন ও পত্রিকায়।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত সেসব প্রতিবেদন, সাক্ষাৎকার, মতামত, ছবি, ভিডিও জড়ো করা হয়েছে এক জায়গায়। যেখানে পাওয়া যাবে অভ্যুত্থান সময়ের খুঁটিনাটি তথ্য ও বিশ্লেষণ। প্রথম আলোর বিশেষ এই আর্কাইভ সাইটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ২০২৪’। সাইটটির ঠিকানা: https://services.prothomalo.com/ bidrohe-biplobe/
আর্কাইভ সাইটটি সবার সামনে উপস্থাপন করতে গত শনিবার বিকেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ কর্মীদের নিয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। শুরুতেই প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান সাইটটি নির্মাণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে বহু কাজ আমরা করেছি। আমরা আমাদের সেরা কাজ করেছি সে সময়। আমাদের সাংবাদিক, ফটোসাংবাদিক তাঁরা তাঁদের সেরা কাজটুকু দিয়েছেন। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন।’
জুলাই জাগরণ নিয়ে প্রথম আলোর অনেক কাজের একটি ছিল ক্রোড়পত্র নিয়ে। প্রথম আলোর সম্পাদক বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পরপর গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথম ক্রোড়পত্র করল প্রথম আলো। নাম ছিল ‘বিদ্রোহে–বিপ্লবে’। এরপর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গত নভেম্বরে একে একে আরও চারটি ক্রোড়পত্র করা হলো।
জুলাই জাগরণ নিয়ে পাঠকের তোলা ছবি ও ভিডিও নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে প্রথম আলো। সেই প্রতিযোগিতার নাম ছিল ‘ক্যামেরায় বিদ্রোহ’। সেখান থেকে বাছাই করে ২০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। বাছাই করা সেসব ছবি রাখা আছে প্রথম আলোর এই আর্কাইভ সাইটে।
জুলাই জাগরণের ছবি নিয়ে ফটো জার্নাল করা হয়েছে। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশ করা হয় ছয়টি বই। বানানো হয় তিনটি তথ্যচিত্র। গত জানুয়ারিতে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করে প্রথম আলো। সেখানে আট শহীদের নানা স্মারকও ছিল। যে কেউ চাইলে সাইটটিতে ঢুকে গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে প্রথম আলোর এ আয়োজন দেখে আসতে পারেন।
সম্পাদক মতিউর রহমান বললেন, এই সাইটটি জুলাই গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে করা প্রথম আলোর সব কাজের পূর্ণাঙ্গ এক উপস্থাপনা।
বৈঠক শেষে সাইটটি সবাইকে দেখানো হয়।
কী কী আছে সাইটে
আর্কাইভ সাইটটিতে মোট ১৪টি সেকশন ও সাব–সেকশন আছে। শুরুতেই আছে ৩৬ দিনের আন্দোলনের দিনপঞ্জি। কবে, কোথায় উল্লেখযোগ্য কী কী ঘটনা ঘটেছে, ছবিসহ তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ আছে। সেসব দিনে উল্লেখযোগ্য কী কী ঘটনা ঘটেছিল এবং সেসব নিয়ে প্রথম আলো যে প্রতিবেদন ও ছবি ছেপেছিল, তা–ও দেখা যাবে ওই সেকশনে। তার নিচে একনজরে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন জুলাই জাগরণে হতাহতের তথ্য–উপাত্তে।
আন্দোলনের শুরুর দিকে প্রথম যে স্লোগানটি স্বৈরাচার সরকারের ভিত নাড়িয়ে দেয়, সেই স্লোগান ছড়িয়ে পড়েছিল সবার মুখে মুখে, ‘আমি কে তুমি কে, রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’ এমনি আরও স্লোগান তখন হয়ে উঠেছিল গণমানুষের কথা। ঘটনার ক্রমানুসারে বাছাই করা সেসব স্লোগান নিয়ে করা হয়েছে একটি সাব–সেকশন, নাম দেওয়া হয়েছে ‘মুক্তির স্লোগান’। আছে প্রথম আলোর সংবাদকর্মীদের করা তিনটি তথ্যচিত্র।
মৃত্যুঞ্জয়ীদের বাছাই করা ২৪টি গল্প রয়েছে। আবু সাঈদ থেকে শুরু করে মুগ্ধ, ফারহানদের কথা আছে সেখানে। আছে দেশের বিজ্ঞজন ও প্রাগ্রসর চিন্তার মানুষদের চিন্তাভাবনা ও তাঁদের মতামত। আছে নবীন–প্রবীণদের কিছু সাক্ষাৎকারও।
৩৬ দিনের আন্দোলনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনাপ্রবাহের ছবিও রাখা আছে এই সাইটে। পৃথক বাটনে ক্লিক করে অনেকগুলো গ্রাফিতির ছবিও দেখতে পাবেন। যেগুলো প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিকদের ক্যামেরায় উঠে এসেছিল। ভিডিও আছে কিছু।
সাইটটির শেষ ভাগে আছে জুলাই জাগরণ নিয়ে প্রথম আলোর বিশেষ প্রদর্শনী। গত জানুয়ারিতে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ওই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে জুলাই জাগরণের শহীদদের নানা স্মৃতি স্মারক ঠাঁই পায়। এসবই কম্পিউটারের সামনে বসে দেখা যাবে। প্রদর্শনীর ৩৬০ ডিগ্রি ভার্চ্যুয়াল উপস্থাপনাটিও বেশ দৃষ্টিনন্দন।