দুর্যোগ মোকাবিলায় ২৭ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
Published: 15th, May 2025 GMT
২০২৪ সালের আগস্টে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পূর্বাঞ্চলের পুনরুদ্ধার কার্যক্রম জোরদার ও ভবিষ্যৎ দুর্যোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২৭ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।
গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার, কৃষি খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জীবিকা উন্নয়নে এই সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।
‘বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি, ইমার্জেন্সি প্রিপারেডনেস অ্যান্ড রেসপন্স’ (বাংলাদেশের টেকসই পুনরুদ্ধার, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও মোকাবিলা) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে গ্রামীণ ও বন্যা প্রতিরোধ অবকাঠামো নির্মাণ ও পুনর্গঠন করা হবে। এতে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ সুরক্ষা পাবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীল কৃষির প্রসার ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবিকা সহায়তা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এদেশীয় প্রধান গেইল মার্টিন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন ও দুর্যোগ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয় দেশ হিসেবে পরিচিত। ক্রমবর্ধমান জলবায়ু ঝুঁকি ও ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ জনগণ ও অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলছে। এ প্রকল্প দেশের দুর্যোগ প্রস্তুতিব্যবস্থা শক্তিশালী করবে এবং সিলেট ও চট্টগ্রামে বন্যাকবলিত মানুষের জীবিকা ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ৭৯টি বহুমুখী বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও সংস্কার এবং সড়ক ও সেতু জলবায়ু সহনশীল করে পুনর্গঠন করা হবে। স্বাভাবিক সময়ে এসব আশ্রয়কেন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি বাঁধ, খাল পুনঃখননসহ বন্যা প্রতিরোধ অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও পূর্বাভাসব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়তা দেওয়া হবে। নৌকা, সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ ও মহড়ার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের দুর্যোগ প্রস্তুতির সক্ষমতা গড়ে তোলা হবে।
বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ দুর্যোগ ঝুঁকিব্যবস্থাপনা–বিশেষজ্ঞ ও প্রকল্প দলের প্রধান স্বর্ণা কাজী বলেন, এই প্রকল্প শুধু পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের জন্য নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগ সহনশীলতা গঠনের লক্ষ্যেও নেওয়া হয়েছে। ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সমন্বিত ও টেকসই পন্থা নিশ্চিত করবে এই প্রকল্প। লক্ষ্য, কেউ যেন পিছিয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করা।
প্রকল্পের মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের আর্থিক সহায়তা, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ এসব অর্থনৈতিক কর্মসূচি ও নগদভিত্তিক সহায়তার সুফল পাবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ৬৫ হাজার কৃষক পরিবারকে জলবায়ু সহনশীল, উচ্চ ফলনশীল ও টেকসই কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তা, কৃষি যন্ত্রপাতি, সেচ ও সংরক্ষণ সুবিধা প্রাপ্তিতে সহায়তা করা হবে। উন্নত বীজ ও চারা উৎপাদনের জন্য গড়ে তোলা হবে ‘বীজ গ্রাম’, নারীদের পারিবারিক ও সামাজিক বাগান তৈরিতে উৎসাহিত করা হবে। এ ছাড়া কৃষক নিয়ে দল গঠনের মাধ্যমে টেকসই কৃষিচর্চার প্রচারে সহায়তা দেওয়া হবে। ফলে খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টিমান বৃদ্ধি পাবে।
এই বহুমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে বন্যা পুনরুদ্ধার–সংক্রান্ত অন্যান্য উদ্যোগে নেই—এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতেও সহায়তা দেওয়া হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রথম দাতা সংস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়া শুরু করে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংক মোট ৪৫ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে , যার বেশির ভাগই সুদমুক্ত ঋণ ও অনুদান। সম্প্রতি বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় সুদমুক্ত ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর একটি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র য গ প রস ত ত প রকল প র অবক ঠ ম সহনশ ল জলব য় ট কসই
এছাড়াও পড়ুন:
একটি দল গণভোটে না দেওয়ার জন্য ক্যাম্পেইন করছে: আখতার
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন,“ইদানিং একটি দলের নেতারা চূড়ান্তভাবে গণভোটের রায়কে প্রত্যাখ্যান করার মতামত ব্যক্ত করছেন। তারা গণভোটে না দেওয়ার জন্য ক্যাম্পেইন করেছেন।কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ সেটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই তারা সেই ক্যাম্পেইন থেকে সরে আসতে তারা বাধ্য হয়েছে।”
শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের কনফারেন্স রুমে এনসিপির কৃষিবিদ উইং এর আয়োজনে ‘তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা: জাতীয় অর্থনীতির নতুন শক্তি' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে অনেক বিষয়ে ‘অস্পষ্টতা’ খেয়াল করেছি
এনসিপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় বাড়ল
তিনি বলেন, “আমরা যখন কৃষি কৃষক নিয়ে কথা বলছি তখন বাংলাদেশের রাজনীতির বড় দুটি দলের অবস্থান খুবই ভয়ঙ্করভাবে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে। দুইটা বড় দল কৃষকের ন্যায্য দাম এবং সংস্কারের জন্য জনগণকে মুখোমুখি দাড় করিয়েছে। একটি দল কৃষি পণ্যের ন্যায্য দাম চাওয়ার কথা বলে জনগণের প্রত্যাশিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার যে সংস্কার সেটাকে গৌণ করে ফেলছে। আবার আরেকটি দল আলু না গণভোট স্লোগানের মধ্য দিয়ে আলুর যে ন্যায্য দাম অর্থাৎ কৃষি পণ্যের ন্যায্য দাম যে কৃষকেরা পাচ্ছেন না সেটাকে তারা গৌণ করে ফেলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় কৃষি পণ্যের ন্যায্য দাম এবং সংস্কারের জন্য গণভোট দুটাই একই সঙ্গে সমান্তরালে গুরুত্বপূর্ণ।”
আখতার হোসেন বলেন, “বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জুলাই সনদের বিষয় নিয়ে অনেকগুলো দল নিজেদের জায়গা থেকে মন্তব্য করছেন সেটাকে আমরা সন্দেহের চোখে দেখি না। আমরা ঐক্যমত্য কমিশনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ গণভোট এবং পরবর্তী সংসদকে ক্ষমতা প্রদানের মধ্য দিয়ে সংবিধানের মৌলিক সংস্কার গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে একমত হয়েছি।”
এনসিপির এই নেতা বলেন, “গণভোটের রায় বাধ্যতামূলক হবে কি না? গণভোটের রায়ের মধ্য দিয়ে সংবিধানের সংশোধনী আনা যাবে কি না? সে প্রশ্ন যারা করছেন তারা কিন্তু শিক্ষিত মানুষ। তারা এটাও জানেন যে পৃথিবীর অনেক দেশে সংবিধান প্রণয়নের পর গণভোটের মধ্য দিয়ে সেই সংবিধানকেই পাস হতে হয়। যদি সেই গণভোটের সংবিধান পাস না হয় তাহলে সেটা সংবিধান হিসেবেই গৃহীত হয় না।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, জুলাই জাতীয় সনদ সংবিধান সংস্কার যে আদেশ জারি করা হয়েছে সেখানে অনেকগুলো জায়গাতে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। সংস্কারের বিষয়বস্তুগুলোকে রাজনৈতিক দলের আওতাধীন করে ফেলা হয়েছে এবং তাদের মতিগতির ওপর অস্পষ্ট অবস্থায় রেখে বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে জুলাই সনদের বস্তু দিয়ে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব কিনা সে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।”
এনসিপির সদস্য সচিব বলেন,“আমরা সরকারের কাছে আহ্বান রাখব অতিদ্রুত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশের অস্পষ্টতাগুলো দূরীকরণ করে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের রায়কে মেনে নিয়ে বাংলাদেশে যেন একটি শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সে রাস্তায় তৈরি করবেন।”
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন এনসিপি র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ ও কৃষিবিদ উইং এর নেতারা।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ