সেতুর অভাবে দুর্ভোগ ৩৫ গ্রামের মানুষের
Published: 15th, May 2025 GMT
মির্জাপুর পৌর এলাকার লৌহজং নদীর কুমুদিনী হাসপাতাল ঘাটে সেতু না থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অন্তত ৩৫ গ্রামের মানুষ। তারা এই ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সভা-সমাবেশ করছেন, তবে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাশ।
মির্জাপুর পৌর এলাকার লৌহজং নদীতে কুমুদিনী হাসপাতাল খেয়াঘাট। এই খেয়াঘাট হয়ে উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ৩৫ গ্রামের মানুষ নিয়মিত চলাচল করে থাকেন। খেয়াঘাটে একটি সেতু না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ঘুরে হাসপাতালে যাতায়াত করতে হয়। লৌহজং নদীর কুতুববাজার ও পাহাড়পুর এলাকায় দুটি সেতু নির্মিত হলেও কুমুদিনী হাসপাতাল খেয়াঘাটে সেতু না থাকায় মানুষের ভোগান্তি কমেনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমুদিনী হাসপাতাল খেয়াঘাটে সেতু না থাকায় মির্জাপুরের দক্ষিণাঞ্চলসহ আশপাশের অনেক মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভরা বর্ষায় ঘাটে খেয়ানৌকায় পারাপার হতে হয়। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে চলাচলের জন্য স্থাপন করা হয় বাঁশের সাঁকো। কয়েক মাস আগেও প্রায় এক লাখ টাকা ব্যয়ে সাঁকো স্থাপন করা হয়। গত ৩ মে সন্ধ্যায় স্রোতে কচুরিপানার চাপে সাঁকোটি ভেঙে যায়। নদী পারাপারে ব্যবস্থা না থাকায় লোকজন প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে কুতুববাজার ও পাহাড়পুর এলাকার দুই সেতু দিয়ে গন্তব্যে যান। এ কারণে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় নষ্ট হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতি বছরই ভেঙে যায় বাঁশের সাঁকো। এতে ভোগান্তির শিকার হন তারা। এর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অথচ এই ঘাট ইজারা দেয় জেলা পরিষদ।
গতকাল সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভেঙে যাওয়া সাঁকো তিন দিন আগে মেরামত করা হয়েছে। নদীতে পানি আগের চেয়ে কম। স্রোতও কমে গেছে। সাঁকো দিয়ে লোকজন কোনো রকমে নদী পার হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। কুমুদিনী হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং স্কুল ও কলেজ, ভারতেশ্বরী হোমসের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই নদীর দক্ষিণ পাড়ে থাকেন। তারাও শুকনো মৌসুমে সাঁকো বর্ষায় নৌকা ব্যবহার করে নদীর উত্তর পাড়ে যান।
মির্জাপুর সাহাপাড়ার বাসিন্দা ডা.
পাহাড়পুর গ্রামের বাসিন্দা সালাহ উদ্দিন ডন জানান, কুমুদিনী হাসপাতাল খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণ তাদের দীর্ঘদিনের দাবি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ ব্যাপারে কাজ করতে হবে।
মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মনিরল সাজ রিজন বলেন, লৌহজং নদীর ওই ঘাটটি কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের নিজস্ব রাস্তার সঙ্গে যুক্ত। এলজিইডি থেকে ওই ঘাটে সেতু নির্মাণ করা যাবে, তবে কুমুদিনী কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।
কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রদীপ কুমার রায় জানান, ওই স্থানে সেতু নির্মাণের অনুমতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। রাস্তাটিতে রোগীসহ হাসপাতালের কর্মী ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা চলাচল করেন। সেতু নির্মাণ করা হলে যান চলাচল করলে দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। এ জন্য সেতু নির্মাণে কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহ। তবে এলাকাবাসীর দাবি অনুযায়ী ওই স্থানে ফুট ওভারব্রিজ হলে ভালো হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প র এল ক
এছাড়াও পড়ুন:
অবশেষে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা গরু ফেরত দিলেন, দল থেকেও বহিষ্কার
ঝালকাঠির রাজাপুরে নার্গিস বেগম (২৫) নামে সেই গৃহবধূর গরু ফিরিয়ে দিয়েছেন অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বেল্লাল হোসেন খান। তবে গরু ফিরিয়ে দেওয়ার আগে একটি কাগজে ২৬ হাজার ৬শত টাকা পাওনা আছে বলে ওই নারীর কাছ থেকে সই নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও গরু ফিরিয়ে দেওয়ার সময় ওই নারীকে চড় থাপ্পড়ও মারা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেলে রাজাপুর শুক্তাগড় ইউনিয়নের কেওতা ঘিগরা মাদরাসায় এক সালিসি বৈঠকে গরুটি ফেরৎ দেওয়া হয়।
এদিকে এ ঘটনায় রাজাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ স্থায়ীভাবে দলের পদ থেকে বেল্লাল খানকে বহিষ্কার করেছে।
অভিযুক্ত বেল্লাল খান (৫৮) উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তবে তিনি নিজেকে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিতেন।
রাজাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রতন দেবনাথ ও সদস্য সচিব আমিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, আপনি মো. বেল্লাল হোসেন খান রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা অবগত হই যে, পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে জনৈক আবু বক্করের ( ভুক্তভোগী নারী নার্গিস বেগমের স্বামী) পোষা গাভী (গরু) তার গোয়াল থেকে নিয়ে এসেছেন। যাহা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আমরা অত্যন্ত ব্যথিত হই। আপনার এই কর্মকাণ্ড কোন সভ্যসমাজের আচরণ হতে পারে না। যেহেতু আপনি জেনে শুনে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয়েছেন তাই দল আপনার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সমস্ত পদ ও পদবী এবং দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজাপুর শুক্তাগড় ইউনিয়নের কেওতা ঘিগরা মাদরাসায় সালিসি বৈঠকে ভুক্তভোগী নারী নার্গিস বেগমের কাছ থেকে একটি কাগজে ২৬ হাজার ৬ শত টাকা পাওনা আছে বলে ওই নারীর কাছ থেকে সই নেওয়া হয়। পরে তার গরুটি ফেরৎ দেওয়া হয়।
এ সময় অভিযুক্ত বেল্লাল হোসেন খান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা নাজমুল হুদা ওরফে চমনসহ স্থানীয় বিএনপি'র নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী নার্গিস বেগম বলেন, “আমি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করায় সালিসি বৈঠকে উপস্থিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা নাজমুল হুদা ওরফে চমন আমাকে থাপ্পড় মারেন। পরে জোরপূর্বক একটি সাদা কাগজে ২৬ হাজার ৬ শত টাকা পাওনা আছে বলে আমার কাছ থেকে সই নেওয়া হয়। পরে আমার গরুটি ফেরৎ দেওয়া হয়।”
অভিযুক্ত বেল্লাল হোসেন খান বলেন, “একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে আমি গ্রান্টার হয়ে নার্গিস বেগমের স্বামী আবু বক্করের জন্য ২০ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করে দেই। সেই টাকা সুদে আসলে ৩০ হাজার টাকা হয়। সেই ঋণের জন্য কর্তৃপক্ষ আমাকে চাপ সৃষ্টি করে। তাই বাধ্য হয়ে গরুটি নিয়েছি। আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে মুরুব্বীদের উপস্থিতিতে একটি সাদা কাগজে ২৬ হাজার ৬ শত টাকা পাওনা আছে বলে স্বাক্ষর রেখে গরু ফেরৎ দিয়েছি।”
গত বুধবার (১৫ মে) সকালে উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ঘিগড়া গ্রামের একটি মাঠ থেকে গরুটি নিয়ে যান বেল্লাল।
তিনি শুক্তাগড় ইউনিয়নের বামন খান গ্রামের আজিজ খানের ছেলে এবং একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ও রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালামের আজাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
ভুক্তভোগী নার্গিস বেগম শুক্তাগড় ইউনিয়নের ঘিগড়া গ্রামের আবু বক্করের স্ত্রী। আবু বক্কর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। গরুটি ফেরত পেতে বৃহস্পতিবার সকালে গরুর বাছুর নিয়ে ঝালকাঠির আদালতপাড়ায় হাজির হন নার্গিস বেগম। সকালে ঝালকাঠির আদালতপাড়ায় অবস্থিত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলের দ্বিতীয় তলায় একজন আইনজীবীর চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন নার্গিস বেগম। এ সময় তার সঙ্গে শিশুসন্তানসহ গরুর বাছুরটি ছিল। নার্গিসের শিশুসন্তানটিকে বাছুরটি ধরে কান্না করতে দেখা যায়।
নার্গিস বেগমের অভিযোগ, “স্বামী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় বেল্লাল ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না পেয়ে গরুটি নিয়ে গেছে। গরুর বাছুরটি মাকে হারিয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেছে।”
রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বিষয়টি নিয়ে একটি সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।”
রাজাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রতন দেবনাথ বলেন, “দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বেল্লাল হোসেন খানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি যে ঘটনা ঘটিয়েছেন তা দলের জন্য লজ্জার।”
ঢাকা/অলোক/টিপু