আজ ১৭ মে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। ‘ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লিগ’–এর উদ্যোগে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিনটি বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস হিসেবে পালিত হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন ও দীর্ঘজীবী হোন’।
সংগঠনটি বলছে, বিশ্বে উচ্চ রক্তচাপে রোগীর প্রায় অর্ধেকই জানেন না যে তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। কারণ, বেশির ভাগ উচ্চ রক্তচাপ রোগীর উপসর্গ থাকে না। অজানা উচ্চ রক্তচাপ বা অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হঠাৎ হতে পারে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর, ব্রেইন স্ট্রোক। সুতরাং শুধু উচ্চ রক্তচাপ সময়মতো শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়।
রক্তচাপ মাপার সঠিক নিয়ম
রক্তচাপ মাপার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে চা, কফি বা ধূমপান করবেন না।
কমপক্ষে ৫ মিনিট শান্ত হয়ে বসে বিশ্রাম নেওয়ার পর রক্তচাপ মাপতে হবে।
পিঠে হেলান দিয়ে দুই পা মেঝেতে রেখে দুই হাত সামনের টেবিল বা চেয়ারের হাতলে রেখে বসতে হবে।
রক্তচাপ মাপার সময় চুপচাপ থাকুন। কথা বলা বা নড়াচড়া করা যাবে না।
যন্ত্রের কাফ কনুইয়ের ভাঁজের ১ ইঞ্চি ওপরে বাঁধবেন। খুব ঢিলে বা খুব টাইট করে বাঁধা যাবে না। কাফ বাঁধার আগে বাহুর কাপড় সরিয়ে নিন অথবা ঢিলেঢালা পাতলা হাতার কাপড় পরে নিন।
কমপক্ষে ১-২ মিনিট বিরতিতে তিনবার মাপুন। শেষ দুবারের গড় ফলাফল বিবেচনায় নিন।
প্রথমবার দুই হাতেই মাপুন। যে হাতে বেশি পাওয়া যাবে সেটিকে বিবেচনায় নিন।
এক সপ্তাহে দুই–চার দিন পর আবার মেপে নিশ্চিত হোন, আপনার উচ্চ রক্তচাপ আছে কি না। উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হলে নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে অন্তত বছরে একবার মেপে দেখুন।
রক্তচাপ মাপার যন্ত্র কোনটি ভালো
সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপার জন্য নির্ভুলতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই রক্তচাপ মাপতে কোন পদ্ধতি বেছে নেবেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রক্তচাপ মাপার জন্য একটি অ্যানালগ রক্তচাপ মাপার যন্ত্র ও স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করা হয়। এটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও সঠিক ফলাফল দেয়। ডিজিটাল রক্তচাপ মাপার যন্ত্রের সুবিধা হলো, এটি প্রশিক্ষণ ছাড়াই যে কারও পক্ষেই মাপা সহজ। ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে, যন্ত্রটি ভালো মানের কি না, তা দেখে ব্যবহার করতে হবে।
রক্তচাপ ম্যানুয়াল ও ডিজিটাল উভয় যন্ত্র দিয়ে কখনো মেপে দেখার পর একই ফল পাওয়া গেলে ডিজিটাল মেশিনটির ওপর ভরসা করা যেতে পারে।
কখন বলবেন উচ্চ রক্তচাপ
স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১২০/৮০ মিলিমিটার পারদের নিচে।
কারও রক্তচাপ ১৪০/৯০ বা তার বেশি হলে উচ্চ রক্তচাপ বলে বিবেচনা করা যায়।
ওপরের দুটি রক্তচাপের মাঝামাঝি রক্তচাপ পাওয়া গেলে তাকে প্রাক্-উচ্চ রক্তচাপ বলে।
ডা.
শরদিন্দু শেখর রায়, সহকারী অধ্যাপক, হৃদরোগ বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হাসপাতালে হামলা, লাশের স্তূপ
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টার মধ্যেই ইসরায়েল হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে অন্তত ৮৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খান ইউনুসের ইউরোপীয় হাসপাতালের গাড়ি পার্কিংয়ে বোমা হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।
হামলার তীব্রতার কারণে কিছু মৃতদেহ হাসপাতাল এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। গত মঙ্গলবার রাতে উত্তর গাজার হাসপাতালেও ভারী বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পূর্ণ শক্তি নিয়ে গাজায় সেনা প্রবেশের ঘোষণা দেওয়ার পরই এসব হামলা চালানো হচ্ছে। দখলদার বাহিনীর দাবি, হাসপাতালে হামলার লক্ষ্য হামাসপ্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যা করা। হামাস জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর হত্যাযজ্ঞ গাজায় ইসরায়েলের পতন ডেকে আনবে।
বিবিসি জানায়, রাতের হামলায় উত্তর জাবালিয়া এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। মঙ্গলবার রাতের হামলায় উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৪৮ ফিলিস্তিনি নিহত হন। জাবালিয়া শহর এবং শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলায় নিহতদের মধ্যে ২২ শিশু ও ১৫ নারী রয়েছেন। অনলাইনে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে মেঝেতে কমপক্ষে এক ডজন মৃতদেহ দেখা গেছে।
এদিকে গাজায় মার্কিন-ইসরায়েল বিতর্কিত মানবিক সহায়তা পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ। এর পরিবর্তে ইসরায়েলকে গাজার ওপর থেকে দুই মাসের অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলো। যুক্তরাজ্যের জাতিসংঘ দূত বারবারা উডওয়ার্ড ইসরায়েলকে অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ সহায়তা পুনরায় প্রবেশে জাতিসংঘকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং মানবিক সহায়তা নিয়ে বলেন, মানবিক সহায়তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা জঘন্য মানসিকতার পরিচয়।
সৌদি আরব সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাজায় সংঘাত বন্ধ করার জন্য কাজ করছেন। সব পক্ষের বন্দিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু নেতানিয়াহু বলেছেন, এমন অবস্থা তৈরি করা হবে, যাতে যুদ্ধ করার মতো পরিস্থিতি গাজায় আর না থাকে।
ত্রাণ সহায়তা প্রকল্পের আড়ালে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে এমন তথ্য উঠে এসেছে আলজাজিরার প্রতিবেদনে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি ঘটনায় জানা যায়, ওই সময় গাজায় ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র মিলে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে। এর আগে এক মাস ধরে মানবিক সহায়তা বন্ধ রাখা হয়। পরে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিগত ঠিকাদারের মাধ্যমে আটা সরবরাহের ব্যবস্থা করে এবং জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত মানুষের বুকে গুলি চালানো হয়। ট্যাঙ্কগুলো আহতদের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হয়। এতে অন্তত ১১০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ওই ঘটনাটি ‘ময়দার গণহত্যা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫২ হাজার ৯০৮ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ১৯ হাজার ৭২১ জন আহত হয়েছেন। এদিকে কাতারের দোহায় যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। কাতারের মধ্যস্থতায় এই আলোচনায় ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছে মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। এতে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। তিনি যুদ্ধ অবসানের আলোচনায় অগ্রগতির প্রত্যাশা করেছেন।
অন্যদিকে, গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ট্রাম্পের উপস্থিতিতে জিসিসি নেতাদের বৈঠকে তিনি বলেন, যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ। আমাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি ‘নতুন দিগন্ত উন্মোচন’ হবে।
গাজার জাতিসংঘ সহায়তা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি অবরোধ অব্যাহত থাকায় উপত্যকায় পানি সরবরাহ কমে যাচ্ছে।