বিষাক্ত বর্জ্য ও কেমিক্যালের কারণে পানি দূষণ বেড়ে যাওয়ায় চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে আবারও মরে ভেসে উঠছে দেশীয় মাছ। শুক্রবার জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে দশানি পর্যন্ত মেঘনা পাড়ের বিভিন্ন স্থানে মরা মাছ ভেসে থাকতে দেখা যায়। 

এদিন মাছ ধরতে নদীতে নেমে জেলেরা দেখেন, পানিতে ভেসে রয়েছে অসংখ্য মরা মাছ। এর মধ্যে রয়েছে জাটকা, চেউয়া, বেলে, টেংরা, পুটি, চাপিলাসহ অসংখ্য ছোট-বড় দেশীয় মাছ।

অন্যদিকে পচা মাছের দুর্গন্ধে নদী পাড়ের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। তারা জানান, দূষণ হওয়ার কারণে এখন নদীর পানি খাওয়া ও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কী কারণে বারবার মাছ মারা যাচ্ছে এবং পানি দূষণ হচ্ছে, তার সমাধান চান তারা।

দশানি এলাকার বাসিন্দারা জানান, বাচ্চারা নদীতে খেলতে যায়, গোসল করে। এখন তো মনে হচ্ছে পানিতে হাত দিলেও অসুস্থ হয়ে যাবে। 

এদিকে জাটকা মরে ভেসে উঠায় চিন্তিত মেঘনার জেলেরা। তারা বলেন, এভাবে জাটকা মারা গেলে মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যাবে না।  

ষাটনল এলাকার জেলে পলাশ বর্মন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই এমন হচ্ছে। কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। জাটকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মাছশূন্য হয়ে যাবে নদী।’

দশানি এলাকার মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যা দেখতেছি, তাতে আগামী দিনগুলায় নদী থেকে মাছ পাওয়া কঠিন হইবো।’

পার্শ্ববর্তী কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো.

শামসুদ্দিন বলেন, ‘যেসব এলাকায় মাছ মরে যাচ্ছে, ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। নদীর এই অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। মাছ মরার এই ঘটনা শুধু পরিবেশের ক্ষতি নয়, মানুষের জীবিকার ওপরেও সরাসরি আঘাত। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই নদীর ওপর নির্ভরশীল।’ 

তিনি বলেন, ‘বারবার অভিযোগ করলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমি উপজেলা পরিষদে বিষয়টি তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠাবো। নদী বাঁচলে আমরা বাঁচবো।’

মতলব উত্তর উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, ‘এটি নিছক মাছ মরার ঘটনা নয়, এটি একটি জলজ পরিবেশগত দুর্যোগ। শীতলক্ষ্যা থেকে আসা দূষিত পানির প্রবাহ একাধিকবার এই এলাকায় বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এটি প্রথম নয়, একাধিকবার ঘটেছে এমন ঘটনা।’ 

তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের মার্চ ও ২০২৪ সালের আগস্ট মাসেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। তখনও মেঘনার পানি দূষিত হয়ে মাছের মৃত্যু হয়। তবে এবার পরিমাণ আরও বেশি দেখা যাচ্ছে।’

পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠন ‘মতলবের মাটি ও মানুষ’ এর সভাপতি শামীম খান বলেন, ‘নদীকে কেন্দ্র করে হাজারো পরিবার মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। বারবার দূষণে নদী মৃতপ্রায়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রয়োজন দ্রুত আন্তঃজেলা পরিবেশ কমিশন গঠন এবং কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘মাছ মরে যাওয়ার এই ঘটনায় শুধু পরিবেশ নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শত শত জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরাও। নদীর ওপর নির্ভরশীল হাজারো মানুষের জীবিকাও এখন হুমকির মুখে।’

চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, মেঘনা নদীতে মাছ মরে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে গত ৩০ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নদীর পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায়, পিএইচ ও অক্সিজেনের হার কমে গিয়েছিল। এছাড়া নদীর তলদেশ দিয়ে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও ক্যামিক্যালযুক্ত পানি বয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নতুন করে আবার কেন মাছ মারা যাচ্ছে, সেটি তদন্ত করে দেখতে হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ ন বল ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদপুরে মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় দুই সহোদরকে ছুরিকাঘাত

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় ও জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাঁর বড় ভাইকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার উত্তর উপাদী গ্রামে ওই দুজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

আহত এসএসসি পরীক্ষার্থীর নাম সাব্বির হোসেন (১৮) ও তাঁর বড় ভাই সাদ্দাম হোসেন (২৪)। সাব্বির হোসেনকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে এবং সাদ্দাম হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনায় থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

আহত দুজন উত্তর উপাদী গ্রামের শহীদ তালুকদারের ছেলে। সাব্বির এ বছর মতলব জেবি সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আহত দুজনের পরিবারের সঙ্গে একই গ্রামের কাজল ফকির ও তাঁর ছেলে বাদশা ফকিরের দীর্ঘদিনের জমিসংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গতকাল রাত ১০টার দিকে সাব্বিরের বাড়ির সামনে রাস্তায় মাদক বিক্রি করছিলেন বাদশা ফকির। এ সময় সাব্বির ও সাদ্দাম বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বাদশা ফকির সঙ্গে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে সাব্বির ও সাদ্দামকে পেট ও পিঠে ছুরিকাঘাত করেন। তাঁদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে বাদশা ফকির পালিয়ে যান। পরে স্বজনেরা দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

শহীদ তালুকদার অভিযোগ করেন, মূলত মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ার কারণে তাঁর দুই ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করেন বাদশা ফকির। এ ঘটনায় আজ সকালে কাজল ফকির ও বাদশা ফকিরকে আসামি করে থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে কাজল ফকির ও তাঁর ছেলে বাদশা ফকিরের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁরা ফোন ধরেননি। স্থানীয় লোকজন বলেন, ঘটনার পর থেকে তাঁরা গা-ঢাকা দিয়েছেন।

মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালেহ আহাম্মদ বলেন, এ ঘটনায় থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাঁদপুরে মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় দুই সহোদরকে ছুরিকাঘাত