চাঁদপুরে মেঘনায় আবারও ভেসে উঠছে মরা মাছ
Published: 17th, May 2025 GMT
বিষাক্ত বর্জ্য ও কেমিক্যালের কারণে পানি দূষণ বেড়ে যাওয়ায় চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে আবারও মরে ভেসে উঠছে দেশীয় মাছ। শুক্রবার জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে দশানি পর্যন্ত মেঘনা পাড়ের বিভিন্ন স্থানে মরা মাছ ভেসে থাকতে দেখা যায়।
এদিন মাছ ধরতে নদীতে নেমে জেলেরা দেখেন, পানিতে ভেসে রয়েছে অসংখ্য মরা মাছ। এর মধ্যে রয়েছে জাটকা, চেউয়া, বেলে, টেংরা, পুটি, চাপিলাসহ অসংখ্য ছোট-বড় দেশীয় মাছ।
অন্যদিকে পচা মাছের দুর্গন্ধে নদী পাড়ের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। তারা জানান, দূষণ হওয়ার কারণে এখন নদীর পানি খাওয়া ও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কী কারণে বারবার মাছ মারা যাচ্ছে এবং পানি দূষণ হচ্ছে, তার সমাধান চান তারা।
দশানি এলাকার বাসিন্দারা জানান, বাচ্চারা নদীতে খেলতে যায়, গোসল করে। এখন তো মনে হচ্ছে পানিতে হাত দিলেও অসুস্থ হয়ে যাবে।
এদিকে জাটকা মরে ভেসে উঠায় চিন্তিত মেঘনার জেলেরা। তারা বলেন, এভাবে জাটকা মারা গেলে মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যাবে না।
ষাটনল এলাকার জেলে পলাশ বর্মন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই এমন হচ্ছে। কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। জাটকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মাছশূন্য হয়ে যাবে নদী।’
দশানি এলাকার মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যা দেখতেছি, তাতে আগামী দিনগুলায় নদী থেকে মাছ পাওয়া কঠিন হইবো।’
পার্শ্ববর্তী কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো.
তিনি বলেন, ‘বারবার অভিযোগ করলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমি উপজেলা পরিষদে বিষয়টি তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠাবো। নদী বাঁচলে আমরা বাঁচবো।’
মতলব উত্তর উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, ‘এটি নিছক মাছ মরার ঘটনা নয়, এটি একটি জলজ পরিবেশগত দুর্যোগ। শীতলক্ষ্যা থেকে আসা দূষিত পানির প্রবাহ একাধিকবার এই এলাকায় বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এটি প্রথম নয়, একাধিকবার ঘটেছে এমন ঘটনা।’
তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের মার্চ ও ২০২৪ সালের আগস্ট মাসেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। তখনও মেঘনার পানি দূষিত হয়ে মাছের মৃত্যু হয়। তবে এবার পরিমাণ আরও বেশি দেখা যাচ্ছে।’
পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠন ‘মতলবের মাটি ও মানুষ’ এর সভাপতি শামীম খান বলেন, ‘নদীকে কেন্দ্র করে হাজারো পরিবার মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। বারবার দূষণে নদী মৃতপ্রায়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রয়োজন দ্রুত আন্তঃজেলা পরিবেশ কমিশন গঠন এবং কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘মাছ মরে যাওয়ার এই ঘটনায় শুধু পরিবেশ নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শত শত জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরাও। নদীর ওপর নির্ভরশীল হাজারো মানুষের জীবিকাও এখন হুমকির মুখে।’
চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, মেঘনা নদীতে মাছ মরে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে গত ৩০ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নদীর পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায়, পিএইচ ও অক্সিজেনের হার কমে গিয়েছিল। এছাড়া নদীর তলদেশ দিয়ে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও ক্যামিক্যালযুক্ত পানি বয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নতুন করে আবার কেন মাছ মারা যাচ্ছে, সেটি তদন্ত করে দেখতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব শ ন বল ন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
স্ত্রীর কাছে ‘ইয়াবা কেনার টাকা না পেয়ে’ বসতঘরে আগুন, স্বামীকে পুলিশে সোপর্দ
স্ত্রীর কাছে ইয়াবা কেনার টাকা না পেয়ে এক ব্যক্তি নিজ বসতঘরে আগুন দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। এতে মালামালসহ ঘরটি পুড়ে গেলেও দৌড়ে প্রাণে বেঁচেছেন তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে। পরে ওই ব্যক্তিকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন এলাকাবাসী।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বারোআনি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম সুজন (৫০)।
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় কয়েক বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ইয়াবা কেনার জন্য স্ত্রী পেয়ারা বেগমের কাছে টাকা চান সুজন। পরে সেই টাকা না পেয়ে স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সুজন নিজ বসতঘরে পেট্রল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই সময় তাঁর দুই মেয়ে ও স্ত্রী ঘরেই ছিলেন। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে তাঁরা দৌড়ে বাইরে চলে যান। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে এর আগেই বসতঘরটির অধিকাংশ মালামাল পুড়ে গেছে। পরে উত্তেজিত জনতা সুজনকে পিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।
পেয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামী মাদকাসক্ত। ইয়াবা কেনার টাকা চেয়ে না পেয়ে তাঁকে ও মেয়েদের পুড়িয়ে মারার জন্য এ কাজ করেছেন সুজন। এ ঘটনার বিচার চান তিনি।
তবে এ ঘটনায় আজ সকাল পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ বা মামলা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল হক। তিনি বলেন, আটক ব্যক্তিকে থানাহাজতে রাখা হয়েছে।