বর্ষা মৌসুম আসার আগেই সুনামগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন নদীতে বাড়তে শুরু করেছে পানি। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি আর পাহাড়ি ছরা হয়ে নেমে আসা ঢলের কারণে হু হু করে বাড়ছে পানি। এমন অবস্থায় বিভিন্ন হাওরসংলগ্ন এলাকার ফসল রক্ষা বাঁধগুলো ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
 তাহিরপুরের যাদুকাটা, বৌলাই, পা‌টলাই ও রক্তি নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল হচ্ছে স্রোত। এতে হাওরের স্থায়ী বাঁধগুলোর ওপর পানির চাপ বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত এসব বাঁধ এলাকা পর্যবেক্ষণ করে হাওরে পানি ঢোকার পথ করে দিতে হবে। নইলে পানির চাপে বাঁধে ভাঙন ধরার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলার বৃহৎ বোরো ফসলের অঞ্চল তাহিরপুর উপজেলায় রয়েছে শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া, হালিরসহ ২৩টি হাওর। এসব হাওরে ধান কাটা শেষ হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে। এ বছর বৈশাখের শুরুতে ব্যাপক খরা থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি ঝরছে বেশ। এতে করে স্থানীয় ছরাগুলো ধরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে নদীর পানি।
ধান কাটা শেষ হওয়ায় এ সময় হাওরে পানি ঢোকা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই কৃষকের। বরং এই সময় মাছের প্রজননের জন্য হাওরে পানি থাকা জরুরি। সেই সঙ্গে পানির চাপ সামাল দিতে হাওরের দিকে পানির প্রবাহ নির্বিঘ্ন করা আবশ্যক।
এ ২৩টি হাওরের মধ্যে পানির প্রবেশ ও নিষ্কাশনের জন্য শনির হাওর ও মাটিয়ান হাওরে স্লুইসগেট (জলকপাট) রয়েছে। সমসার হাওরে স্লুইসগেট থাকলেও ৪ বছর ধরে সেটি বিকল হয়ে আছে। এছাড়া মহালিয়া, বলদা, বনুয়া, নান্দিয়া, গুরমা বর্ধিতাংশ, নোয়াল, গলগরিয়া, কাটুয়াউরা, পালই, ছিরিয়ারগাঁও হাওর, তালইর বিলসহ ১৯টি হাওরসংলগ্ন বাঁধে কোনো স্লুইসগেট নেই। 
যার ফলে একযোগে সব নদীর পানি বাড়তে থাকায় স্থায়ী বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হাওরপারের কৃষকরা জানান, গত দু’দিন ধরে প্রতিটি নদীতে যে হারে পানি বাড়তে দেখা যাচ্ছে তাতে অল্প সময়ের মধ্যে বাঁধগুলো চাপের মুখে পড়বে। হাওরে পানি প্রবেশের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা না গেলে বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হবে স্থানীয়দের। যে কোনো সময় এসব স্থায়ী বাঁধের যেকোনো অংশে ভাঙন ধরতে পারে।
স্থানীরা বলছেন, এমন সময় ন্যূনতম সময় নষ্ট না করে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ (পাউবো) সংশ্লিষ্টদের উচিত বাঁধসংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করে যে সব স্থানে বাঁধ কেটে দিলে কম ক্ষতিতে পানি হাওরে প্রবেশ করতে পারে তা নিশ্চিত করা।
তা না হলে আগামী বোরো ফসলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হবে। বর্তমানে হাওরগুলোতে মা মাছগুলো পোনা ছাড়া শুরু করেছে। এক শ্রেণির মৎস্যজীবী প্রচুর পরিমাণে পোনা আহরণ করে প্রতিনিয়ত বাজারে এনে বিক্রি করছে। এমন অবস্থায় হাওরে পর্যাপ্ত পানি থাকলে সেই প্রবণতা কমবে।
নান্দিয়া হাওরপারের বাসিন্দা ছিলানি তাহিরপুর গ্রামের আব্দুল হালিম বলেন, পাটলাই নদীর পানি প্রচুর পরিমাণ বাড়ছে। জিনারিয়া, পানা, বনুয়া, নান্দিয়া, গুরমার বর্ধিতাংশ, নোয়াল, গলগরিয়া, কাটুয়াউরা, পালই, ছিরিয়ারগাঁও হাওর, তালইর বিলসহ আশপাশের অনেক হাওরে পানিপ্রবাহের জন্য কোন স্লুইসগেট নেই। এসব হাওরপারের কৃষকরা দুশ্চিন্তায় আছেন।
শনির হাওরপারের ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কৃষক মহসিন মিয়া বলেন, শনির হাওরে ১৫ দিন আগেই ধান কাটা শেষ। গত দু’দিন ধরে বৌলাই নদীর পানি ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। দ্রুত শনির হাওরের বগিয়ানি স্লুইসগেট খুলে হাওরে পানি প্রবেশ না করালে যেকোনো সময় বাঁধে ভাঙন ধরতে পারে।
তাহিরপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান জুনাব আলী বলেন, শনির হাওরের স্লুইসগেট খুলে দেওয়ার জন্য তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করবেন। সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষ যেন পরিস্থিতি অনুধাবনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে সেজন্য সর্বাত্মক সহায়তা করবেন। 
তাহিরপুর উপজেলায় কর্মরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা মো.

মনির হোসেন বলেন, কেবল মাটিয়ান হাওরের স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। শনির হাওরের গেট খুলে দেওয়ার জন্য ফসলরক্ষা বাঁধ কমিটি নিয়ে সভা করতে হবে। তাছাড়া যে সব হাওরে স্লুইসগেট নেই সেগুলোতে পানি প্রবেশ করানোর ব্যবস্থা করা হবে। সেক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত না নিলে বাঁধের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এর মধ্যে বর্ধিত গুরমা হাওরে পানি প্রবেশ করানোর জন্য পানা হাওরের দিকে বাঁধ কেটে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক হ ওরপ র র স ল ইসগ ট নদ র প ন র জন য হ ওর র প রব শ

এছাড়াও পড়ুন:

এনআইডি কার্যক্রম চালু হবে আরও ১২টি দেশে 

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ১০ থেকে ১২ দেশে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) কার্যক্রম চালু হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর। তবে দেশগুলোর নাম বলেননি তিনি। 

গতকাল রোববার এনআইডি ডিজি বলেন, ‘আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। তারা দূতাবাসে চিঠি দেবে। সেখান থেকে ক্লিয়ারেন্স পেলে আমরা কাজ শুরু করব। ৩১ দেশ থেকে আমরা এখনও ক্লিয়ারেন্স পাইনি। আমরা ইন্ডিভিজুয়ালি যোগাযোগ করছি। জনবল, অফিস স্পেসের জন্য অনেকে এই ক্লিয়ারেন্স দিচ্ছেন না। হুমায়ুন কবীর বলেন, এ পর্যন্ত ৯ দেশের ১৬ স্টেশনে চালু করা হয়েছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন প্রক্রিয়া। কোনো দেশে একটি, কোনো দেশে একাধিক নিবন্ধন স্টেশন চলু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৫ হাজার ১৮৪টি আবেদন এসেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৯২৬ জনের বায়োমেট্রিক গ্রহণ করা হয়েছে মিশন অফিসগুলো থেকে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করা ৯ দেশের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৯ হাজার ১৯৭ জন আবেদন করেছেন এবং  ৯ হাজার ৪২৩ জনের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সৌদি আরব থেকে আবেদন করেছেন ৩ হাজার ৫৫৪ জন, আপলোড হয়েছে ৫৭৭ জনের। যুক্তরাজ্য থেকে ৮ হাজার ৫২৯ জন আবেদন করেছেন, নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে ৩ হাজার ৯৮৫ জনের। ইতালি থেকে ৬ হাজার ৩৭২ জন আবেদন করেছেন, ২ হাজার ৪২৩ জনের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। কুয়েত থেকে আবেদন এসেছে ৩ হাজার ৭৮২ জনের, নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে ১ হাজার ৩০৩ জনের। কাতার থেকে  ২ হাজার ৮০২ জন আবেদন করেছেন, নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে ১ হাজার ৮২ জনের। মালয়েশিয়া থেকে আবেদন করেছেন ৯৪৮ জন, আপলোড হয়েছে ৩৫৬ জনের ডেটা। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় সম্প্রতি কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান এনআইডি ডিজি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ