যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গরাজ্যে ঘূর্ণিঝড় ও টর্নেডোর তাণ্ডবে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। টর্নেডোতে আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। 

এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের ১৮ জন, মিসৌরিতে ৭ জন এবং ভার্জিনিয়াতে ২ জন মারা গেছেন।

কেন্টাকির গভর্নর অ্যান্ডি বেশেয়ার জানিয়েছেন, টর্নেডোতে অঙ্গরাজ্যটির ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মিসৌরিতে সাতজন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে পাঁচ জন সেন্ট লুইস শহরের বাসিন্দা।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার ভোরে কেন্টাকি রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বের লরেল কাউন্টিতে টর্নেডো আঘাত হানে। কর্মকর্তারা বলছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

মিসৌরি কর্তৃপক্ষ জানায়, টর্নেডোতে পাঁচ হাজারের মতো ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ছাদ উড়ে গেছে, বিদ্যুতের লাইন ভেঙে পড়েছে।

শনিবার বিকেল পর্যন্ত মিসৌরি ও কেন্টাকিতে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার বাড়ি-ঘর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

সেন্ট লুইসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দমকল বাহিনী সেখানকার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ঘরে ঘরে তল্লাশি চালাচ্ছে। সেন্ট লুইসের মেয়র কারা স্পেন্সার জানান, তার এলাকায় অন্তত ৩৮ জন আহত হয়েছেন। তারা মূলত ধসে পড়া ভবন এবং উপড়ে পড়া গাছপালা থেকে আহত হয়েছেন।

কেন্টাকির কর্মকর্তারা জানান, সেখানেও কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে বলে খবর আছে। লরেল কাউন্টির পুলিশ কর্মকর্তা জন রুট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এখনও জীবিতদের খোঁজ চলছে।’

ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস অর্থাৎ জাতীয় আবহাওয়া দপ্তরের রেডারের তথ্যঅনুযায়ী, টর্নেডোটি মিসৌরিতে স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার কিছু পরে সেন্ট লুইস শহরের পশ্চিমে ফরেস্ট পার্কের কাছে আঘাত হানে- যেখানে সেন্ট লুইস চিড়িয়াখানা ও ১৯০৪ সালের অলিম্পিকের ভেন্যু অবস্থিত।

সেন্ট লুইস দমকল বিভাগ জানায়, সেন্টেনিয়াল খ্রিস্টান গির্জার ভবনের একটি অংশ ধসে পড়ার পর তিনজনকে উদ্ধার করতে হয়, যার মধ্যে একজন নিহত হয়েছেন।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুই এলাকায় দুর্ঘটনা ও লুটপাট ঠেকাতে স্থানীয় সময় রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।

মেয়র স্পেন্সার বলেন, ‘এই প্রাণহানি ও ধ্বংস সত্যিই ভয়াবহ। আমাদের সামনে অনেক কাজ পড়ে আছে। তবে এখন সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে- জীবন বাঁচানো, মানুষকে নিরাপদ রাখা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের শোক প্রকাশের সুযোগ দেওয়া।’

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানায়, পার্শ্ববর্তী ইলিনয় অঙ্গরাজ্যেও টর্নেডো আঘাত হেনেছে। এর প্রভাব পূর্বদিকে আটলান্টিক উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

শনিবার তারা সতর্ক করে জানায়, সামনের সাপ্তাহিক ছুটিতে টেক্সাসের উত্তরাঞ্চলে আরও কিছু টর্নেডো আঘাত হানতে পারে।

এই টর্নেডোগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ‘টর্নেডো অ্যালি’ নামের এলাকায় আঘাত হেনেছে, যেখানে সবচেয়ে বেশি টর্নেডো হয়। সাধারণত মে ও জুন মাসে টর্নেডোর তাণ্ডব বেশি হয়, যদিও বছরের অন্য সময়েও টর্নেডো হতে পারে।

২০০০ সাল থেকে প্রতি মে মাসে কেন্টাকিতে গড়ে পাঁচটি এবং মিসৌরিতে গড়ে ১৬টি টর্নেডো দেখা যায়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঘ র ণ ঝড় য ক তর ষ ট র কর মকর ত এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

দাবানলে পুড়ছে গ্রিস, নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে দমকলবাহিনী

গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য ক্রিট দ্বীপে ইরাপেত্রা পৌরসভার কাছে বুধবার (২ জুলাই) বিকেল থেকে একটি ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। আগুনে বনভূমি পুড়ে গেছে এবং বাড়িঘর, জ্বালানি স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

দেশটির দমকল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগুন ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের অন্তত ছয়টি এলাকায় থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

আরো পড়ুন:

গ্রিসে ফের দাবানল, বাংলাদেশিদের নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান

ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল

গ্রিসের জরুরি পরিষেবা সংস্থাগুলোর মতে, আগুনের সম্মুখভাগ এখন কমপক্ষে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত, যা নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ কঠিন করে তুলছে। ঘন ধোঁয়া বিস্তৃত এলাকাকে গ্রাস করেছে, কিছু জায়গায় দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।

লাসিথির আচলিয়া থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মাক্রি গিয়ালোস সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে, ওই এলাকায় আগুন নেভাতে দমকলকর্মীরা কাজ করছেন।

পুলিশ আগিয়া ফোটিয়ার বসতিস্থলের কাছের প্রধান রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদেরকে বাতাসের নিম্নমান, প্রচণ্ড তাপ ও ছাই পড়ার কারণে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে অনুরোধ করেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, দাবানলে আগিয়া ফোটিয়ায় বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও হোটেল পুড়ে  গেছে ও এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টের কারণে কমপক্ষে চারজন বয়স্ক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

গ্রিসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আগাম সতর্কতা হিসেবে ক্রিটের হাসপাতালগুলোকে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছে।

দাবালন ফেরমা পৌরসভাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ঘরবাড়ি ও হোটেলগুলো থেকে মানুষজনকে ব্যাপকভাবে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা জারি করেছে। 

গ্রিসের দমকল পরিষেবা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩৮টি ইঞ্জিন ও জলবাহী ট্রাকের পাশাপাশি ৪টি হেলিকপ্টার দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করছেন অন্তত ১৫৫ জন দমকল কর্মী এবং ৮টি বিশেষায়িত পদাতিক দল। 

দমকল বাহিনী আরো জানায়, অতিরিক্ত সাহায্যবাহী দল ও বিমান রাজধানী এথেন্স থেকে পাঠানো হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দমকলকর্মী ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আগুনের ভয়াবহতা অনেক বেশি এবং এটি এখনও নিয়ন্ত্রণে নেওয়া যায়নি। ঝড়ো বাতাস এবং ভূ প্রকৃতির কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা বেশ জটিল হয়ে পড়েছে।

ইউরোপের দক্ষিণে অবস্থিত গ্রিসে গ্রীষ্মকালের উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে প্রায়ই দাবানলের ঘটনা ঘটে। দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক দাবানলগুলো আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দাবানলে পুড়ছে গ্রিস, নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে দমকলবাহিনী