ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির প্রতিবাদ এবং জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার দাবিতে প্রতিবাদী কর্মসূচি করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদল।

রবিবার (১৮ মে) বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

জাবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিকের সঞ্চালনায় সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আফফান আলী বলেন, “আমরা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হচ্ছি। এটা যদি সরকার বন্ধ করতে না পারে, তাহলে মনে করবো শেখ হাসিনা সরকার আর এই সরকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।  আমরা এই সরকারকে আরো একবার সুযোগ দিচ্ছি টার্গের কিলিং বন্ধ করে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দিতে হবে। সাম্যর হত্যাকারীকে বের না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথে অবস্থান করব।”

আরো পড়ুন:

১৫৫ টাকার জন্য হত্যা, যুবকের যাবজ্জীবন

জমি নিয়ে বিরোধে বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই খুন, ভাবি গ্রেপ্তার

সদস্য জাকিরুল ইসলাম বলেন, “সাম্য হত্যার কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও এর পিছনে যারা মূল হোতা, তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি প্রশাসন। কিন্তু মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে বট বাহিনী এবং একটা পক্ষ এই হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রশাসনের এই নিরবতা দেখে আমরা সন্দিহান, এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার পাব কিনা?”

আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, “সাম্যর হত্যাকারীদের প্রশাসন এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দ্রুত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সাম্য হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ছ ত রদল স ম য হত য ছ ত রদল হত য ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রংপুরে শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রে মানসিক-যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আদালতের মামলা

রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রে (বালিকা) শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর তা আলোড়ন সৃষ্টি করলে তা আমলে নেন আদালত। গত ২৯ জুন রংপুর মেট্রো কোতোয়ালি সিআর আমলি আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদ হোসাইন স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।

এতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৬ জুন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ পর্যালোচনা করে দেখা যায়- রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন (বালিকা) কেন্দ্রে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের কারণে জীবন বাঁচাতে চার কিশোরী পালিয়ে যান। উক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা ভিকটিম এক কিশোরীর চুল কেটে দেয় এবং কেন্দ্রের অনিয়মের কথা গোপন রাখতে তাকে চাপ প্রয়োগ করেন। ভিকটিম কিশোরীর মা তাকে দেখতে গেলে পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা দুর্ব্যবহার করেন। এছাড়া গত ১২ জুন নিখোঁজ হওয়া চার কিশোরীর মধ্যে এখনও দু’জনের সন্ধান মেলেনি।

আদালত বলছে, এ অবস্থায় জনস্বার্থে ও ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে চার কিশোরী পালানোর কারণসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে বিস্তারিত তদন্ত হওয়া আবশ্যক মর্মে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনা তদন্তে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। আগামী ২৯ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত।

এদিকে, নিখোঁজের ২১ দিন পর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই পুনর্বাসনকেন্দ্র থেকে পালিয়ে যাওয়া কিশোরী রিতু আদালত চত্বরে আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের শরণাপন্ন হন। নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও আবার যেন নির্যাতনের শিকার না হতে হয় সেজন্য আদালতের মাধ্যমে নিরাপদ স্থানে তাকে রাখার আবেদন করেন। আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করেন। পিবিআই রিতুকে জিজ্ঞাসাবাদসহ নিরাপদ স্থানে রাখার কথা জানিয়েছে।

এর আগে রিতু দাবি করেন, সমাজসেবা কার্যালয় ও রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতি সপ্তাহে বাইরে থেকে বিভিন্ন পুরুষ আসে। প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন মেয়েদের ধর্ষণ করতো বহিরাগতরা। গত ১৫ জুন আমাকে ধর্ষণের দিন ছিল এবং পরবর্তী তারিখগুলোতে অন্যরা ধর্ষণের শিকার হতো। বিষয়টি জানতে পেরে সুযোগ বুঝে পুনর্বাসনকেন্দ্র থেকে স্মৃতি, কৃতি ও আশাসহ আমি পালিয়ে যাই। প্রত্যেকে যে যার মতো জায়গায় থাকে। আমি আমার এক পরিচিত আন্টির বাসায় আশ্রয় নেই। যেহেতু পুলিশ আমায় খুঁজছে, তাই আমি আদালত চত্বরে এসে আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের সহযোগিতা চেয়েছি। তারা আমাকে নিরাপদ স্থানে রাখতে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। আমি শিশুদের অত্যাচার করা সেন্টারের সব কর্মকর্তাদের বিচার চাই। 

পিবিআই রংপুরের পুলিশ পরিদর্শক মিন্টু চন্দ্র বণিক বলেন, আদালতের একটি মিস কেস আমাদের হাতে এসেছে। রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্র (বালিকা) থেকে চারজন ভিকটিম মিসিং হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে- তাদের ওপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনজন উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে উদ্ধার হওয়া রিতুকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো এবং তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতের কাছে জমা দেব।

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী জোবাইদুল ইসলাম বলেন, সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীনে থাকা রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রে ১৮ বছরের নিচে শিশুদের রাখা হয়। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের ওপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন হয়েছে। এ নিয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। যেসব শিশুদের আত্মীয়-স্বজন ছিল না, তারা নির্যাতনে মারা গেলে তাদের বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। কারো ময়নাতদন্ত হয়নি। আমি মনে করি, আদালত যেহেতু বিষয়টি আমলে নিয়েছেন এবং পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, ফলে এ থেকে সত্য বের হয়ে আসবে এবং নির্যাতনের সাথে যত বড় কর্মকর্তা জড়িত থাক না কেন, তারা আইনের আওতায় আসবে।

উল্লেখ্য, রংপুর নগরীর দেওডোবা ডাংগীরপাড় এলাকার রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্র থেকে গত ১২ জুন রাতে নিখোঁজ হন রিতু, স্মৃতি, কৃতি ও আশা নামে চার কিশোরী। ১৫ জুন পরিবারের সদস্যরা স্মৃতি ও কৃতিকে নগরীর চিড়িয়াখানা এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে আবার পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠায়। এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার হওয়া কিশোরীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। আপত্তির কারণ হিসেবে পুনর্বাসনকেন্দ্রে মেয়ের ওপর নির্যাতন ও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে তারা শঙ্কিত বলে গণমাধ্যমকে জানান। এ ঘটনায় ২৫ জুন আদালতের মাধ্যমে স্মৃতিকে নিজ জিম্মায় নেয় পরিবারের সদস্যরা।

স্মৃতি অভিযোগ করেন, গণমাধ্যমে কথা বলার কারণে পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরা তার ওপর মানসিক নির্যাতনসহ চুল কেটে দিয়েছে। নিখোঁজ চারজনের মধ্যে আশা নামের এক কিশোরীর সন্ধান মেলেনি এখনও। 

চার কিশোরী নিখোঁজের বিষয়টি স্বীকার করে রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, নির্যাতনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। মেয়েরা নিজ ইচ্ছায় পালিয়ে গেছে। পালানোর সময় আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত রুমা বেগমের কাছে চাবি ছিল। সে কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ