রাজনীতির আলাপে ভূমিহীন ও প্রান্তিক মানুষের কথা নেই
Published: 18th, May 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন আন্দোলন–সংগ্রামে শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের বড় ভূমিকা রয়েছে। অথচ এখন তারা অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। রাজনীতির আলাপে ভূমিহীন ও প্রান্তিক মানুষের কথা নেই। ভূমিহীন কৃষক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে সরকারের উদ্যোগ কম। বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন ও রাষ্ট্র সংস্কার কৃষক আন্দোলন আয়োজিত ‘ভূমিহীন কৃষক সমাবেশে’ বিশিষ্টজনদের বক্তব্যে এসব বিষয় উঠে এসেছে।
আজ রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম। তিনি বলেন, দেশের মেহনতি মানুষের টাকায় সরকার চলে। কিন্তু ভূমিহীন, প্রান্তিক মানুষের কথা সরকার আলাপ করে না।
সমাবেশে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশ যে কৃষকের দেশ, এ কথা অন্য সরকারের মতো বেমালুম চেপে গিয়ে এই জনগোষ্ঠীকে রাজনীতির আলাপ থেকে বের করে দিয়েছে। এই রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে কৃষক–শ্রমিকদের পক্ষে আইনকানুন করতে হবে। অবিলম্বে কৃষি সংস্কার কমিশন করার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ভূমি অফিসে, কৃষি অফিসে আগে সরকারি দলের কারও সুপারিশ ছাড়া, ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হতো না। সবাই পরিবর্তন আশা করেছিল। সুপারিশ ছাড়া ন্যায্য দাবি পূরণ হবে। কিন্তু নতুন সুপারিশওয়ালা তৈরি হয়েছে, নতুন লেনদেনের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যেটা গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যায় না।
ভূমি সংস্কার ছাড়া কোনো সত্যিকার পরিবর্তন হয় না উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, অনেক কমিশন হয়েছে, আবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কমিশন হয়নি। ভূমি কমিশন, শিক্ষা কমিশন হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর তো (পরিচালনার দায়িত্ব) যে কেউ দিতে পারে, ওইটা জরুরি না। জরুরি হলো ভূমিহীনদের অধিকার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া, এটা সবাই করতে পারে না।
সমাবেশে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, যারা বঞ্চিত, যারা শোষিত শ্রেণি, তারা এক কাতারে দাঁড়ালে ওই কোটিপতি শ্রেণিরা আরাম–আয়েশের জীবন কাটাতে পারবে না। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘আমি ১৮ কোটি মানুষকে খাওয়াই’ এই বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি হচ্ছে দেশের মানুষকে শোষণ করার, অন্ধকারে রাখার রাজনীতি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, একদিকে টাকাওয়ালা ভূমিদস্যুর সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কৃষক জমি হারাচ্ছে, দখলদারেরা দখল করছে। তিনি বলেন, যখন ফ্যাসিস্টকে সরানোর দরকার হয়, স্বৈরশাসন থেকে বাঁচার দরকার হয়, লাঠি, গুলি, কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচার দরকার হয়, তখন এই কৃষক–শ্রমিকেরাই রাজপথে নেমে আসেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসিরউদ্দিন, গণমুক্তি মঞ্চের আহ্বায়ক সাকিব প্রত্যয়, ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া প্রমুখ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি লিটন কবিরাজ, সঞ্চালক ছিলেন একই সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছামিউল আলম।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমন বয়ক র আল প র জন ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনীতি সাকিব-মাশরাফিদের কাজ নয়, বললেন জয়াসুরিয়া
আজ প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রিকেটারদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে কথা বলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রিকেটার সনাৎ জয়াসুরিয়া, যিনি এক সময় রাজনীতিতে যোগ দিয়ে উপমন্ত্রীও হয়েছিলেন।
সাকিব আল হাসান দেশান্তরি। মাশরাফি বিন মুর্তজা আত্মগোপনে। গতকাল গ্রেপ্তার হয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার এই হলো পরিণতি। দেশের ক্রিকেটের জন্য তাঁদের যতই অবদান থাকুক, রাজনৈতিক পরিচয় তাঁদেরকে আর তাঁদের অবস্থানে রাখেনি। রাজনীতিতে যোগ দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন প্রত্যেকে। সরকার বদলের পর এখন তো তাঁরা দেশেই ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন।
শুধু বাংলাদেশে নয়; ক্রিকেটারদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার উদাহরণ উপমহাদেশে অনেকই আছে। শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান কোচ সনাৎ জয়াসুরিয়াও আছেন সেই দলে। ২০১০ সালে ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্সের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। নির্বাচনে জিতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মাতারার সংসদ সদস্য ছিলেন, হয়েছিলেন উপমন্ত্রীও।
আজ দুপুরে কলম্বোর সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে জয়াসুরিয়ার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গও। মাতারার সাবেক সংসদ সদস্য ১০ বছরের বেশি সময় হলো রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন। তবে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁর মধ্যে অনুশোচনা রয়ে গেছে এখনো। জয়াসুরিয়া বলেছেন, রাজনীতিতে যোগ দেওয়া ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত।
শ্রীলঙ্কা দলের ক্রিকেটার, অধিনায়ক, নির্বাচক, কোচ—সবই হয়েছেন জয়াসুরিয়া। ক্রিকেটের বাইরে সংসদ সদস্য হওয়ার কথা তো বলাই হলো। সাক্ষাৎকারে জয়াসুরিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এসবের মধ্যে তাঁর দৃষ্টিতে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে কোন দায়িত্বটা।
কোচের কাজটা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে সনাৎ জয়াসুরিয়ার।