চিকিৎসক-নার্স নেই, অফিস সহায়ক দিয়েই চলছে হাসপাতাল
Published: 19th, May 2025 GMT
হাসপাতালে নেই চিকিৎসক-নার্স। কর্মরত রয়েছেন কেবল একজন অফিস সহায়ক (এমএলএসএস)। রোগী এলে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য রাখা কিছু ওষুধ বিতরণ করেন তিনি। এর বাইরে মেলে না কোনো স্বাস্থ্যসেবা। এমনই অবস্থা কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বাসিন্দা রয়েছেন ১১ হাজারের মতো। দ্বীপের একমাত্র সরকারি হাসপাতালটিতে চিকিৎসক-নার্সসহ জনবল না থাকায় জরুরি চিকিৎসাসেবা পেতে বাসিন্দাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
টেকনাফের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেন্ট মার্টিনের ২০ শয্যার হাসপাতালটিতে অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা ১৫। এর মধ্যে দুজন চিকিৎসক, চারজন নার্স, একজন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন ওয়ার্ড বয়, একজন এমএলএসএস, একজন আয়া, একজন পিয়ন, একজন স্টোরকিপার, একজন নিরাপত্তা প্রহরী, একজন ঝাড়ুদারের পদ রয়েছে। তবে এসব পদের মধ্যে কেবল এমএলএসএস পদে রমজান আলী নামের এক ব্যক্তি কর্মরত। বাকি সব পদ শূন্য পড়ে রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে দ্বীপের পশ্চিম পাড়ায় দেড় একর জমিতে প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রশাসনিক ভবন ও চিকিৎসকের আবাসিক ডরমিটরি নির্মাণ শেষে ২০০৮ সালে হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। প্রথমে ১০ শয্যা থাকলেও পরে একে ২০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে ২৩ বছরেও হাসপাতালটিতে অন্তর্বিভাগে সেবা চালু হয়নি। ২০১৪ সালে ২৬ আগস্ট দস্তগীর হোসাইন নামের একজন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। যোগদানের পর তিনি কাউকে কিছু না বলে বিনা অনুমতিতে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। এরপর আর শূন্য পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ২০২০ সালের মার্চ থেকে স্বাস্থ্য ও লিঙ্গসহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬ জন এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছিল। এর মধ্যে মেডিকেল কর্মকর্তা ২ জন, চিকিৎসা সহকারী ২ জন, ধাত্রী ৪ জন, ল্যাব টেকনিশিয়ান ১ জন, কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার ২ জন, গার্ড ২ জন, রাঁধুনি ১ জন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ২ জন ছিলেন। গত বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আবারও চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে পড়ে।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা ও ইউনিয়ন হলেও সেন্ট মার্টিনে স্বাস্থ্যসেবা নেই। কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা অত্যাধুনিক ভবনের বেশির ভাগ কক্ষ ফাঁকা পড়ে আছে। ২০ শয্যার হাসপাতাল শুধু কাগজে-কলমে, বাস্তবে তার কিছুই নেই।হাবিব উল্লাহ খান, সাবেক সদস্য, সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদদ্বীপের গলাচিপার বাসিন্দা জামালিদা বেগম বলেন, দ্বীপের বাসিন্দারা চাইলেই জরুরি মুহূর্তে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে টেকনাফ সদরের হাসপাতাল যেতে পারেন না। তাই প্রসবের সময় অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, এমন নারীদের নিয়ে বিশেষ করে ভোগান্তিতে বেশি পড়তে হচ্ছে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য হাবিব উল্লাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা ও ইউনিয়ন হলেও সেন্ট মার্টিনে স্বাস্থ্যসেবা নেই। কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা অত্যাধুনিক ভবনের বেশির ভাগ কক্ষ ফাঁকা পড়ে আছে। ২০ শয্যার হাসপাতাল শুধু কাগজে-কলমে, বাস্তবে তার কিছুই নেই।
পর্যটন মৌসুমে কিছুটা চিকিৎসাসেবা পাওয়া গেলেও বর্ষায় হাসপাতালে ভুতুড়ে পরিবেশ থাকে বলে জানান পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ। তিনি বলেন, উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে সব সময় দ্বীপের বাসিন্দারা টেকনাফ যেতে পারেন না। তাই দ্বীপের হাসপাতালটির অন্তর্বিভাগ চালু করা জরুরি।
হাসপাতালে রোগীদের জন্য শয্যা রয়েছে। তবে অন্তর্বিভাগ বন্ধ থাকায় খালি পড়ে রয়েছে এসব শয্যা। সম্প্রতি তোলা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫