রায়ের ৭ বছর পরও পলাতক মৃত্যুদণ্ডের ১৬ আসামি
Published: 19th, May 2025 GMT
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি ৭ বছর ধরে পলাতক। এর মধ্যে আটজন জামিনে মুক্ত হয়ে এবং আটজন হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক। দফায় দফায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও তাদের হদিস মিলছে না। ২০১৮ সালে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় ৩৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে থাকা মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ২৩ আসামির মধ্যে একজন মারা গেছেন। অন্য ২২ আসামির আপিল বর্তমানে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে নিষ্পত্তির জন্য কার্যতালিকাভুক্ত রয়েছে। শিগগির আপিলের শুনানি শুরু হবে।
এদিকে পলাতক আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া এবং হাইকোর্টে ৭ বছর ধরে আপিল ঝুলে থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন একরামুল হকের বড় ভাই ও মামলার বাদী জসিম উদ্দিন। তিনি সমকালকে বলেন, রায় হওয়ার পর ৭ বছর পেরিয়েছে। অথচ এক আসামিরও ফাঁসি হলো না। পলাতকরা অধিকাংশই বিদেশে অবস্থান করছেন। এরাই গডফাদার। তাদের গ্রেপ্তারে কোনো উদ্যোগ নেই। তিনি দ্রুত আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের বিলাসী সিনেমা হলের সামনে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বড় ভাই জসিম উদ্দিন মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ এ মামলায় রায় দেন ফেনীর দায়রা জজ আদালত। রায়ে ৩৯ আসামিকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। তবে মামলার প্রধান আসামি বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারসহ ১৬ জনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
রায়ে বলা হয়, স্থানীয় নির্বাচন থেকে আসামিদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কারণেই একরামকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর বিধি অনুযায়ী বিচারিক আদালত থেকে রায়ের নথিসহ ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) আবেদন হাইকোর্টে পাঠানো হয়। কারাগারে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাও জেল আপিল দায়ের করেন। মামলাটি শুনানির জন্য হাইকোর্টে কার্যতালিকাভুক্ত হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ১৬ আসামি হলেন– জাহিদ হোসেন জিহাদ, আবিদুল ইসলাম আবিদ, নাফিজ উদ্দিন অনিক, আরমান হোসেন কাউসার, জাহেদুল হাসেম সৈকত, জসিম উদ্দিন নয়ন, এমরান হোসেন রাসেল ওরফে ইঞ্জি.
পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে ফেনী সদর মডেল থানার ওসি মো. সামসুজ্জামান সমকালকে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ২০২১ সালে সর্বশেষ এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২২ জন কারাগারে। একজন কারাগারে মারা গেছেন।
এদিকে বিচারিক আদালতের রায়ে খালাস পাওয়া আসামিদের সাজা নিশ্চিতে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এর শুনানি ও ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল শুনানির সময় গ্রহণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী সমকালকে বলেন, আপিলটি বর্তমানে শুনানির জন্য কার্যতালিকায়। আসাসিপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করছি শিগগির এর শুনানি হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আস ম র জন য একর ম ৭ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভয় দেখাতে হামলা, নির্দেশদাতা এখনো পলাতক
চট্টগ্রাম নগরে কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার প্রাইভেট কার থামিয়ে হামলার ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে নগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে বান্দরবান থেকে কাজী মো. ইমন হোসেন (২৩) ও মো. সুজন (২৪)–কে গ্রেপ্তার করে ডিবি (পশ্চিম)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, এক ব্যক্তির নির্দেশে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে এ হামলা চালান। সেই নির্দেশদাতা এখনো পলাতক।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশীদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, হামলার সময় ওই ব্যক্তির মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়। কাস্টমস কর্মকর্তাকে ভয় দেখানোই ছিল হামলার লক্ষ্য। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
৪ ডিসেম্বর সকালে নগরের ডবলমুরিং থানার সিডিএ আবাসিক এলাকায় কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বদরুল আরেফিন ভাড়ায় নেওয়া প্রাইভেট কারে করে যাচ্ছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলে করে তিন ব্যক্তি তাঁদের গাড়ি থামিয়ে চাপাতি দিয়ে গাড়ির কাচে কোপ দেন। গাড়ির কাচ ভাঙার পাশাপাশি হামলাকারীরা একজন আরেকজনকে বলতে থাকেন, ‘গুলি কর, গুলি কর’। তবে দুই কর্মকর্তা দ্রুত গাড়ি সরিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসেন।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের ধারণা, সম্প্রতি বিভিন্ন অনিয়ম, রাজস্ব জালিয়াতি ও নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি আটকে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে জড়িত চক্র হামলা চালাতে পারে। কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যমানের নিষিদ্ধ পপি বীজ ও ঘন চিনি, প্রায় ৩০ কোটি টাকার নিষিদ্ধ সিগারেট এবং মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা বিপুল পরিমাণ প্রসাধনী জব্দ করা হয়েছে। এসব অভিযানে দুজন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। প্রসাধনী জব্দের পর মো. আসাদুজ্জামানকে ফোনে হুমকিও দেওয়া হয়।
হামলার নির্দেশদাতার পরিচয় এখনো প্রকাশ করেনি পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে তারা। তবে হামলায় ওই ব্যক্তির ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মো. তারেক মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, নিষিদ্ধ পপি বীজ, ঘন চিনি ও মিথ্যা ঘোষণায় আসা প্রসাধনী জব্দের কারণে একটি সিন্ডিকেট ক্ষুব্ধ। গত দুই মাসে এসব সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই বিভিন্ন নম্বর থেকে হুমকি আসছে।
আরও পড়ুনগাড়ি থামিয়ে কাচে চাপাতির কোপ, একজন বলতে থাকেন, ‘গুলি কর, গুলি কর’০৪ ডিসেম্বর ২০২৫