প্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী মালিককে শাস্তিও দিতে পারি: বাউফলের ইউএনও
Published: 19th, May 2025 GMT
পটুয়াখালীর বাউফলে ‘অবহিত না করে’ অনুষ্ঠান আয়োজন করা নিয়ে তর্কের জেরে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতিকে শাস্তির হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সোমবার দুপুরে বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগমের কক্ষে বসে তিনি এই হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেছেন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শহীদুল হক। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ এইচ এম শহীদুল হক দৈনিক কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি ও বাউফল উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি। তিনি স্থানীয়ভাবে এমরান হাসান সোহেল নামে পরিচিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও বাউফল দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল। দুপুর ১২টার সময় বিতর্ক প্রতিযোগিতার শেষ পর্বে অংশ নিতে বিদ্যালয়ে আসেন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে এসেই ক্ষুব্ধ হন তিনি। এ নিয়ে এ এইচ এম শহীদুল হকের সঙ্গে ইউএনওর কথা-কাটাকাটি হয়। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে দুজনের বাগ্বিতণ্ডার কথা শোনা যায়।
ইউএনও আমিনুল ইসলাম অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ না দেওয়ার কারণ জানতে চান শহীদুল হকের কাছে। তাঁর প্রশ্নের জবাবে শহীদুল হক বলেন, ‘আপনাকে একাধিকবার কার্যালয়ে গিয়ে পাইনি। এমনকি আপনাকে তিন দিন বিভিন্ন সময় ফোন করেছি, আপনি রিসিভ করেননি।’ এমন কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে ইউএনও বলেন, ‘আপনারা একটা আয়োজন করতেছেন, ইউএনও জানে না আপনারা কীসের আয়োজন করতেছেন, আশ্চর্য ব্যাপার। ইউএনওকে অবহিত না করে আপনাকে এ আয়োজন করার এখতিয়ার কে দিয়েছে?’
জবাবে শহীদুল হক বলেন, ‘আপনাকে আমন্ত্রণের জন্য আপনার কমপ্লেক্সে তিন দিন যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনাকে পাইনি।’ ইউএনও বলেন, ‘উপজেলা কমপ্লেক্সে কে গেছে? আপনি আমার বাংলোতে গেলেন না কেন? আমার বাংলোও একটা অফিস।’ এমন প্রশ্নের জবাবে শহীদুল হক বলেন, ‘আপনার বাংলোতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।’ এর জবাবে ইউএনও বলেন, ‘বাংলোতে যখন অ্যালাউ করব, তখন ঢুকবেন। আপনারা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হয়ে মনে করছেন আপনারা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে গেছেন। আমি আপনার ফোন ধরতে বাধ্য না। আপনি আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ফোন দিলে আমি ধরব কেন?’
এ সময় শহীদুল হক বলেন, ‘আপনি ফোনই ধরলেন না, তা হলে ব্যক্তিগত স্বার্থ, নাকি রাষ্ট্রীয় কোনো কাজ বুঝলেন কীভাবে? আপনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, একজন কৃষকের ফোনও ধরতেও বাধ্য।’ এর পর খেপে গিয়ে ইউএনও আমিনুল বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী মালিককে শাস্তিও দিতে পারি।’ তখন শহীদুল বলেন, ‘ক্ষমতা আছে, আপনি দেন শাস্তি।’ এ সময় দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
এ বিষয়ে জানতে ইউএনও আমিনুল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি কেটে দেন। পরে বার্তা পাঠিয়ে বলেন তিনি এখন ব্যস্ত। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, ‘আমার কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য এখনো আসেনি, তথ্য পেলে মন্তব্য করতে পারব।’
উপজেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সাংবাদিক এ এইচ এম শহীদুল হক বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম অনুষ্ঠানে ইউএনওকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। এসেই চটে যান।
ঘটনার বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম বলেন, ‘ইউএনও মহোদয় তাঁর বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। তাঁকে (ইউএনও) অবহিত করে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির কর্তৃপক্ষকে অনুষ্ঠান করার জন্য বলেছিলাম; কিন্তু ইউএনও মহোদয়কে অবহিত না করে তাঁরা বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়ায় ইউএনও স্যারের সঙ্গে শহীদুল হক উত্তেজিত হয়ে অসৌজন্যমূলকভাবে কথা বলেন। তখন ইউএনও স্যারও দুই-এক কথা বলেছেন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম ন ল ইসল ম অন ষ ঠ ন আপন র উপজ ল আপন ক অবহ ত ব উফল
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাভেল পাস ছাড়া সেন্টমার্টিনের টিকিট বিক্রি: কেয়ারি সিন্দাবাদকে জরিমানা
সরকার অনুমোদিত ট্রাভেল পাস ছাড়া অবৈধভাবে পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রির অভিযোগে সেন্টমার্টিনগামী কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। যাত্রার আগে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অনিয়ম শনাক্ত করলে কেয়ারি সিন্দাবাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
ময়মনসিংহে ক্লিনিকে অভিযানে কারাদণ্ড-জরিমানা
ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানে বাধা, এনসিপি নেতাকে আসামি করে মামলা
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, “তিনজন পর্যটকের কাছে ১৮০০ টাকা করে ট্রাভেল পাস ছাড়া (কিউআর কোডবিহীন) সরাসরি টিকিট বিক্রির সত্যতা পাওয়ায় জাহাজ কর্তৃপক্ষকে অর্থদণ্ড করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “নির্দেশনা অনুযায়ী এভাবে টিকিট বিক্রি করা যাবে না। প্রথমদিন হওয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়নি, মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তীতে এমন অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী জানান, কেবল কক্সবাজারের স্থানীয়রা জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। অন্যান্য পর্যটকদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে সরকার অনুমোদিত ট্রাভেল পাস নিতে হবে।
এদিকে, ১ নভেম্বর সেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও রাত্রিযাপনের অনুমতি না থাকায় পর্যটকরা তখন আগ্রহ দেখাননি। তবে, আজ ১ ডিসেম্বর থেকে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মাস রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকায় মৌসুমের প্রতীক্ষিত জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। প্রথমদিন সেন্ট মার্টিনগামী যাত্রী ছিলেন ১ হাজার ১৭৪ জন পর্যটক।
জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, প্রশাসন মোট ৬টি জাহাজকে অনুমতি দিয়েছে। যাত্রীর সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে প্রথমদিন ৩টি জাহাজ চলাচল করেছে। সেগুলো হলো- এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ।
মৌসুমের প্রথম দিনের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সেন্টমার্টিন ভ্রমণের ওপর সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা, হয়রানি রোধ ও পরিবেশ রক্ষায় নেওয়া ব্যবস্থা নিয়মিত তদারকি করা হবে।”
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান (অতিরিক্ত ডিআইজি) আপেল মাহমুদ জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ