বাউফল উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি এমরান হাসান সোহেলকে জেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বাউফলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম। সোমবার বাউফল গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বসে তিনি ওই হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি কারও ফোন ধরতে বাধ্য নই। আমাকে চিঠি দিতে হবে। আমরা প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর যে, মালিককে জেলে ভরে শাস্তি দিতে পারি।’ তাঁর এমন কথায় সেখানে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে পড়েন।

সোমবার ওই বিদ্যালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও বাউফল দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডের দিন ছিল। এ কমিটির সভাপতি ও কালের কণ্ঠের স্থানীয় প্রতিনিধি এমরান হাসান সোহেল জানান, এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য বৃহস্পতিবার তাঁর কার্যালয়ে প্রথমে যাই। তিনি তখন অফিসে ছিলেন না। এরপর শনি ও রোববার একইভাবে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রতিরোধ কমিটি তাঁর কার্যালয়ে গেলে তখনও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ওই তিনদিনই কমিটির সভাপতি তাঁকে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সর্বশেষ রোববার সন্ধ্যার পর তাঁকে ফোন দিলে তিনি ফোন কেটে দেন। এদিকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম তাঁকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি সোমবার অনুষ্ঠানস্থলে চলে আসেন। এসেই তিনি এমরান হাসান সোহেলকে দেখে রেগে যান। 

সোমবার বেলা ১২টার সময় বিতর্ক প্রতিযোগিতার শেষ পর্বে অংশ নিতে ওই বিদ্যালয়ে আসেন তিনি। এ সময় তাঁকে আমন্ত্রণ না জানানোর কৈফিয়ত তলব করেন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতির এমরান হাসান সোহেলের কাছে। তাঁর প্রশ্নের জবাবে এমরান হাসান সোহেল বলেন, একাধিকবার আপনার কার্যালয়ে গিয়ে পাইনি। এমনকি আপনাকে তিনদিন বিভিন্ন সময় ফোন করেছি, আপনি রিসিভ করেননি। এতে ইউএনও উত্তেজিত হন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আপনারা একটা অ্যারেজমেন্ট করতেছেন ইউএনও জানে না, আপনারা কিসের অ্যারেজমেন্ট করতেছেন, আশ্চর্য ব্যাপার। ইউএনওকে অবহিত না করে আপনাকে এ আয়োজন করার এখতিয়ার কে দিয়েছে।’

এ সময় এমরান হাসান সোহেল বলেন, ‘আপনাকে আমন্ত্রণের জন্য আপনার কমপ্লেক্সে তিনদিন যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনাকে পাইনি।’ জবাবে ইউএনও বলেন, ‘উপজেলা কমপ্লেক্সে কে গেছে? কমপ্লেক্সে তো কাউয়া বক থাকে। আপনি আমার বাংলোতে গেলেন না কেন? আমার বাংলো একটা অফিস।’

এমন প্রশ্নের জবাবে এমরান হাসান সোহেল বলেন, ‘আপনার বাংলোতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। জবাবে ইউএনও বলেন, ‘বাংলোতে যখন অ্যালাউ করবো তখন ঢুকবেন।’ 

তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে মনে করছেন আপনারা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে গেছেন। আমি আপনার ফোন ধরতে বাধ্য না। আপনি আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ফোন দিলে আমি ধরব কেন?’ 

এ সময় এমরান হাসান সোহেল বলেন, ‘আপনি ফোনই ধরলেন না, তাহলে ব্যক্তিগত স্বার্থ, নাকি রাষ্ট্রীয় কোন কাজ বুঝলেন কীভাবে? আপনি একজন কৃষকের ফোনও ধরতেও বাধ্য।’ এরপর ইউএনও আমিনুল বলেন, ‘আমি প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর মালিককে শাস্তিও দিতে পারি।’ তখন সভাপতি সোহেল বলেন, ‘ক্ষমতা আছে, আপনি দেন শাস্তি।’

এ সময় ইউএনও খবরপত্রের সাংবাদিক এইচ বাবলুকে তাঁর পিয়ন দিয়ে ভয়ভীতিও দেখান। ওই সাংবাদিককে দেখা করে সরি বলতে চাপ প্রয়োগ করেন ইউএনওর গাড়ি চালক।

এ বিষয়ে জানতে বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসিয়াল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, ‘আমার কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য আসেনি। তথ্য পেলে মন্তব্য করতে পারব।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব উফল ইউএনও র জন য স মব র উপজ ল ব উফল আপন র র এমন এ সময় আপন ক

এছাড়াও পড়ুন:

সোনাদিয়ায় তিনটি চিংড়িঘেরের স্থাপনা উচ্ছেদ, সরঞ্জামসহ মোটরসাইকেল জব্দ

কক্সবাজারের মহেশখালীর পরিবেশ সংকটাপন্ন সোনাদিয়া দ্বীপে আরও তিনটি চিংড়িঘেরের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে চার ঘণ্টাব্যাপী চলা অভিযানে প্যারাবন কেটে নির্মিত ঘেরগুলোর অস্থায়ী স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়।

অভিযানে গাছ কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম, একটি মোটরসাইকেল ও একটি ইঞ্জিনচালিত নৌযান জব্দ করা হয়েছে। তবে এবারও প্যারাবনের দখলদার ও অবৈধ চিংড়িঘেরের মালিকদের কাউকে আটক করা হয়নি। কোনো চিংড়ি ঘেরের বাঁধও কেটে দেওয়া হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহর নেতৃত্বে এ অভিযানে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, পুলিশ, আনসার ও বন বিভাগের শতাধিক সদস্য অংশ নেন।

এর আগে শুক্রবারও সেখানে অভিযান চালিয়ে তিনটি চিংড়িঘেরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তবে দুই দিনব্যাপী অভিযানে কারও বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার বা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ইউএনও মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকের অভিযানে তিনটি চিংড়িঘেরের চারটি অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ এবং পানি চলাচলের তিনটি স্লুইসগেট নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।’

তবে ঘেরগুলোর বাইরের বেড়িবাঁধগুলো এখনো অপসারণ করা হয়নি। এ বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘সোনাদিয়ায় গড়ে ওঠা ৪৮টি চিংড়িঘেরের প্রায় ২০ কিলোমিটার বাঁধ স্থায়ীভাবে অপসারণে আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকার প্রয়োজন। এর জন্য বরাদ্দ চেয়ে প্রাক্কলন তৈরির কাজ চলছে।’

ইউএনও বলেন, এর মধ্যে প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়িঘের নির্মাণ এবং আগুন দিয়ে প্যারাবন পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বন বিভাগ মামলা করছে না।

এ প্রসঙ্গে মহেশখালীর গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আয়ুব আলী বলেন, প্যারাবন কেটে যেসব চিংড়িঘের তৈরি হয়েছে, এসব প্যারাবন বেজার আওতাধীন ছিল। বেজা থেকে এখনো তা বন বিভাগকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়নি। তাই মামলা করতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ইউএনও বন বিভাগকে চিঠি দিলেও মামলা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে ইউএনওকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।

সোনাদিয়ায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা চিংড়িঘের। আজ দুপুরে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমরা প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর যে, মালিককে শাস্তি দিতে পারি: বাউফলের ইউএনও
  • প্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী মালিককে শাস্তিও দিতে পারি: বাউফলের ইউএনও
  • ফটকের সামনে ইটের দেয়াল
  • সোনাদিয়ায় তিনটি চিংড়িঘেরের স্থাপনা উচ্ছেদ, সরঞ্জামসহ মোটরসাইকেল জব্দ
  • ঝড়ে উপড়ে গেছে শতাধিক গাছ, বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু