চা প্রদর্শনী বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে
Published: 20th, May 2025 GMT
বিশ্বে প্রতিবছর ৬ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন চা উৎপাদিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে চীনে ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন ও বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ টন উৎপাদিত হয়। চীন বর্তমানে প্রযুক্তির সাহায্যে চা উত্তোলন করে থাকে। বাংলাদেশে তা পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। চা প্রদর্শনী ও পারস্পরিক আলোচনা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
আজ মঙ্গলবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) চা প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।
সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সামাজিক বিজ্ঞান ভবনে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাবিপ্রবি উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘চায়না-বাংলাদেশের মধ্যে চায়ের বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন দিগন্ত খুলছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে গবেষণা বাংলাদেশের চা–শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এখানে আরও নতুন উদ্ভাবনের সহযোগিতা করবে। আশা করি, চীন সরকার বাংলাদেশেও তাদের চা–শিল্পের নতুন ধারণা শেয়ার করবে এবং নতুন ভেরিয়েন্টের উদ্ভাবনে সহযোগিতায় পাশে থাকবে।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও শাবিপ্রবির রাজনৈতিক অধ্যয়ন (পলিটিক্যাল স্টাডিজ) বিভাগের অন্তর্ভুক্ত চায়নিজ কর্নারের তত্ত্বাবধায়ক সাহাবুল হকের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন শাবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাওলানা খাইরুল হোসেন, শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের শ্রমিক উপকমিটির আহ্বায়ক তাহসিন আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা লি শাওপিং।
অনুষ্ঠানে চীনের চায়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট পরিচালক ইয়াং হুই; প্রকারভেদ ও প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে চীনা শিক্ষক জং কিয়ানআন এবং চা–শিল্প নিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের শিক্ষক লি ইয়াংসি বক্তব্য দেন। এতে বাংলাদেশের চা–শিল্প নিয়ে বক্তব্য দেন শাবিপ্রবির খাদ্য প্রকৌশল ও চা–প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখার আহমেদ এবং কর্মসংস্থান ব্যাংকের পরিচালক সালাউদ্দিন বাবলু।
অনুষ্ঠানে চীনা দূতাবাসের সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা লি শাওপিং বলেন, ‘বাংলাদেশে চা একটি ঐতিহ্যবাহী পণ্য। দুই দেশের মধ্যে এই খাতে গবেষণা ও উদ্ভাবনের সুযোগ অসীম। এ ধরনের উদ্যোগ সেই পথকে প্রশস্ত করে।’
খাদ্য প্রকৌশল ও চা–প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা চা–প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হোক, উদ্ভাবনী উদ্যোগে অংশ নিক। এ প্রদর্শনী তাদের হাতে-কলমে শেখার সুযোগ তৈরি করেছে।’
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন শাবিপ্রবির পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের প্রধান সৈয়দ আশরাফুর রহমান এবং খাদ্য প্রকৌশল চা–প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন শাবিপ্রবির পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক দিলারা রহমান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শাবিপ্রবি অধ্যাপক জায়েদা শারমিন, সহকারী অধ্যাপক এমদাদুল হক, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, চা উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা।
প্রদর্শনীতে শাবিপ্রবির খাদ্য প্রকৌশল ও চা–প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে স্টল দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে ওই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ক্রীমা চক্রবর্তী মনে করেন, এ আয়োজনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে চা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটবে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমাদের ল্যাবে প্রক্রিয়াজাত করা ২২ রকমের চা প্রদর্শন করা হচ্ছে। এগুলো আমাদের হাতে তৈরি করা। বাজারের বিক্রি করা চায়ের সঙ্গে গুণগত তফাত রয়েছে। আজকের আয়োজনে চীনা কমিউনিটিকে আমাদের তৈরি চায়ের ভেরিয়েন্ট দেখাতে পারছি।’
সারা দিনব্যাপী প্রদর্শনীতে উপচে পড়া ভিড়। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক, গবেষক এবং স্থানীয় দর্শনার্থীরাও ছিলেন সমান আগ্রহী। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস, শাবিপ্রবির চায়নিজ কর্নার, খাদ্য প্রকৌশল ও চা–প্রযুক্তি বিভাগ।
আয়োজকেরা জানান, প্রদর্শনীতে দেশের নামীদামি ২০টি চা উৎপাদন ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের স্টল স্থাপন করা হয়। সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দুই দেশের নৃত্যের প্রদর্শনীর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন র নত ন উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
দেবীদ্বারে হাসনাত আবদুল্লাহর পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল
বিএনপির রাজনীতি নিয়ে মন্তব্যের জেরে কুমিল্লার দেবীদ্বারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা সদরে হাসনাতের পক্ষে ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আহত, শহীদ পরিবার ও ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলের পর বিপক্ষে প্রতিবাদ মিছিল করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
১৬ মে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘জুলাই সমাবেশে’ দেওয়া বক্তব্যে হাসনাত আবদুল্লাহ ‘বিএনপির রাজনীতিও আওয়ামী লীগের টাকায় চলে’ বলে মন্তব্য করেন। এরপর বিএনপিকে জড়িয়ে ‘অসৌজন্যমূলক’ বক্তব্য দেওয়ার প্রতিবাদে মিছিল করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। দেবীদ্বার উপজেলা বিএনপির ব্যানারে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিজভিউল আহসান মুন্সীর নেতৃত্বে কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল আহসান মুন্সীর সমর্থকেরা ওই প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেন।
এ ছাড়া গতকাল সোমবার বিকেলে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্য প্রত্যাহারে হাসনাত আবদুল্লাহকে সাত দিনের সময় বেঁধে দেয়ে কুমিল্লা বিভাগীয় (সাংগঠনিক) বিএনপি। একই সঙ্গে তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে হাসনাত আবদুল্লাহর কুমিল্লার রাজপথে জায়গা থাকবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। মূলত এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আজ দেবীদ্বারে হাসনাতের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
আজ বিকেল চারটার দিকে দেবীদ্বার রেয়াজ উদ্দিন সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে হাসনাতের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কসহ উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘হাসনাত ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘দেবীদ্বারের মাটি, হাসনাত ভাইয়ের ঘাঁটি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। পরে নিউমার্কেট স্বাধীনতা চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করা হয়।
আরও পড়ুনহাসনাত আবদুল্লাহকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান কুমিল্লা বিএনপির১৯ মে ২০২৫সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জুলাই আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও আহত কয়েকজন বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, গতকাল কুমিল্লায় বিএনপির নেতারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হাসনাত আবদুল্লাহকে নিয়ে যে ধরনের কথা বলেছেন, তাঁরা তাঁর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আজ তাঁরা স্বাধীনভাবে প্রেসক্লাবে কথা বলতে পারছেন কাদের জন্য? বিগত ১৭ বছরে ১৭ সেকেন্ডও প্রেসক্লাবে তাঁদের স্থান হয়নি। আজ তাঁরা স্বাধীনভাবে সবকিছু করতে পারছেন, এটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে।
ওই কর্মসূচির পর হাসনাতের বিপক্ষে মিছিল করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি উপজেলা সদরের মুক্তিযুদ্ধ চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। এতে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিজভিউল আহসান মুন্সীসহ স্থানীয় বিএনপির নেতারা বক্তব্য দেন।
রিজভিউল আহসান মুন্সী বলেন, ১৬ মে শিল্পকলা একাডেমিতে হাসনাত আবদুল্লাহ বিএনপিকে জড়িয়ে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেন। হাসনাতের ওই বক্তব্য বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এ বক্তব্যে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসনাত আবদুল্লাহ বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ক্ষমা না চাইলে তাঁকে কুমিল্লায় কোনো অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
গত শুক্রবার রাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জুলাই সমাবেশে’ সভাপতির বক্তব্য দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। প্রায় ২০ মিনিটের বক্তব্যের একাংশে হাসনাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও তাদের অর্থদাতারা এখনো অক্ষত রয়েছে। আমি এখন যেহেতু কুমিল্লা আছে, তাই কুমিল্লাকে নিয়ে বলতে চাই। কুমিল্লার অনেক উপজেলা রয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি পাশাপাশি বিএনপির রাজনীতিও আওয়ামী লীগের টাকায় চলে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, অতি দ্রুত আওয়ামী লীগের অর্থকাঠামো ধ্বংস করে দিতে হবে। আওয়ামী লীগের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। তাঁদের অর্থকাঠামো ঠিক রেখে আপনি কখনোই যথাযথ সংস্কার করতে পারবেন না।’
ওই মন্তব্যের পর সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদের (ওয়াসিম) উদ্দেশে হাসনাত বলেন, ‘আপনারা আমার কথায় ভুল বুঝবেন না। আমি আপনাদের ভালোর জন্য বলছি।’
আরও পড়ুনখুনিদের বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও প্রথম সংস্কার: হাসনাত আবদুল্লাহ১৬ মে ২০২৫