স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশগুলোর সামাজিক বৈধতা প্রয়োজন। সাহসী সুপারিশগুলো পৃথকভাবে চিহ্নিত করা দরকার। অন্তর্বর্তী সরকার কোন কোন সুপারিশ বাস্তবায়ন শুরু করতে পারে, সেগুলোও বাছাই করা যেতে পারে।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদন নিয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে জনস্বাস্থ্যবিদ ও অর্থনীতিবিদেরা এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের তিনজন সদস্য, দেশের শীর্ষ স্থানীয় জনস্বাস্থ্যবিদ, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সাহসী বা অত্যন্ত দৃঢ় সুপারিশগুলোই স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে ভূমিকা রাখবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া বা অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করার পাশাপাশি ওষুধপ্রাপ্তির সুপারিশগুলো সাহসী। এগুলো বাস্তবায়িত হলে স্বাস্থ্য খাতে পরিবর্তন আসবে।

হোসেন জিল্লুর বলেন, শূন্য পদ পূরণের মতো সুপারিশগুলো প্রয়োজনীয় হলেও তা স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে ভূমিকা রাখবে না। কোন সুপারিশগুলো সংস্কারে ভূমিকা রাখবে, সেগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, সংস্কার প্রস্তাবগুলোর সামাজিক বৈধতা প্রয়োজন। সামাজিক বৈধতা পেলে বাস্তবায়ন সহজ হয়।

অনুষ্ঠানে ‘স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ। তিনি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো কয়েকটি ভাগে ভাগ করে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, কমিশনের প্রতিবেদন অনেক বড়। প্রতিবেদনের একটি ছোট সংস্করণ করা যেতে পারে।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, কিছু সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বাড়বে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের চিকিৎসক রাজীব দেসহ একাধিক আলোচক বলেন, সমাজের বা পেশাজীবীদের অনেকের সঙ্গেই স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন মতবিনিময় করেনি বা তাদের বিষয়গুলো কমিশনের প্রতিবেদনে গুরুত্ব পায়নি।

এ সময় অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হোসেন জিল্লুর বলেন, প্রতিবেদনে দুটি কমতি আছে হয়তো। একটি বিষয়বস্তুর কমতি, অন্যটি পরামর্শের কমতি। এই দুটি কমতিকেই গুরুত্ব দিতে হবে, বিবেচনায় নিতে হবে।

আরও পড়ুনবিশ্লেষণ: স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদনেরই সংস্কার প্রয়োজন১৫ মে ২০২৫

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, কমিশনের প্রতিবেদনটি বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন। এটি সতর্কতার সঙ্গে পড়তে হবে, বারবার পড়তে হবে।

অনুষ্ঠানের প্রায় সব আলোচক স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনকে ধন্যবাদ জানান। তবে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, অনেক ত্রুটি ও কমতি থাকার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদন বিষয়ে ন্যূনতম কোনো সমালোচনা না হওয়া দুঃখজনক। এটি খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শাফিউন এন শিমুল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শারমিন মবিন ভূইয়া।

আরও পড়ুনস্বাস্থ্য খাত সংস্কারের কয়েকটি প্রস্তাব ‘অবাস্তব, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল’০৯ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙল ভারতের আত্রাই নদীর বাঁধ, প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে

মাত্র চার মাস আগে নির্মিত পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাটের আত্রাই নদীর বাঁধ আবারও ভেঙে পড়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন নদীর পাড়ের বাসিন্দারা। মঙ্গলবার সকালে পানির চাপে ভেঙে যায় আত্রাই ড্যামের ভারতীয় অংশ। 

উত্তরের আত্রাই নদী বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করে আবার বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, নদীতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাবার ড্যাম দেওয়ার কারণে ভারতীয় অংশ বারবার বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত বছর থেকে আত্রাই নদীতে ছোট আকারে বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করে ভারত। কিন্তু বাঁধের কাজ চলাকালীন গত ফেব্রুয়ারিতেই বন্যার পানির চাপে ড্যাম ভেঙে যায়। সেই ঘটনার পর থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোরেশোরে চলছিল মেরামতের কাজ। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে ওই মেরামত অংশ ফের ভেঙে পড়ায় নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে আত্রাই নদীর পানির স্তর বেড়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, এভাবে পানি বাড়লে ড্যামের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুরোপুরি ধসে পড়তে পারে। এতে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো তলিয়ে যাবে। নদীটি যেহেতু ভারত হয়ে বাংলাদেশে আবারও প্রবেশ করেছে, সেক্ষেত্রে নদীতে হঠাৎ পানি প্রবাহ বাড়ায় বাংলাদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে এক বছর আগে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মিত এই বাঁধ বর্ষার শুরুতেই ভেঙে যাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। ঘটনার পরই ড্যামটি পরিদর্শনে আসেন দক্ষিণ দিনাজপুরের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। 

ড্যাম নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘বাড়ি তৈরির টিএমটি রড ব্যবহার করে ড্যাম তৈরি হয়েছে। এটি চরম দুর্নীতির ফল। আমি চাই প্রশাসনিক স্তরে এই বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত হোক। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, ‘ড্যাম নির্মাণে প্রচুর টাকা নেতাদের ঘুষ হিসেবে দেওয়া হয়েছে, যার ফলেই আজ এই বিপর্যয়।’

অন্যদিকে বালুরঘাট মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান অশোক মিত্র এই ভাঙনকে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘এই ভাঙনের পেছনে কোনো মানুষের হাত নেই। দুর্নীতির অভিযোগ তোলার আগে বিজেপিকে নিজের ঘরে নজর দিতে হবে। বালুরঘাট রেলস্টেশনে তৃতীয় শ্রেণির লিড ব্যবহার করে যে কাজ হচ্ছে, সেটি কি দুর্নীতি নয়?’

তিনি আরও বলেন, ‘রাম মন্দির তৈরির পরই ছাদ থেকে জল পড়ছে—এটাও তো দুর্নীতি। সেখানেও তো বিজেপি চোখ বুজে আছে।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি মন্তব্যের মাঝে চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন আত্রাই নদী পারের গ্রামবাসীরা। ড্যামের দ্রুত সংস্কার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না মেলায় ক্ষোভও বাড়ছে জনমনে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ