১.

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হলো রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপক স্বীকৃতি। এই অগ্রগতি নিঃসন্দেহে উৎসাহের বিষয়। অন্তর্বর্তী সরকারও রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে।

শুরুতে ছয়টি এবং পরে আরও পাঁচটি বিষয়ে সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল। এরই মধ্যে এসব কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের সুপারিশ পেশ করেছে। এখন সরকারের বড় দায়িত্ব হলো এসব সুপারিশের কার্যকর ও ফলদায়ক ব্যবহার নিশ্চিত করা।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেসব সুপারিশ সম্পর্কে সব রাজনৈতিক দল একমত হবে, সেগুলো গ্রহণ করা হবে। গৃহীত সুপারিশের কিছু অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই বাস্তবায়ন করা হবে, এমনটা বলা হচ্ছে। বাস্তবায়নের দৃষ্টিকোণ থেকে যেগুলো দীর্ঘমেয়াদি চরিত্রের, সেগুলো ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সরকারের জন্য রেখে দেওয়া হবে।

সরকার একটি ঐকমত্য কমিশনও গঠন করেছে। কী কী সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে, এই কমিশন তা নিরূপণ করবে। ঐকমত্য কমিশন এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফার আলোচনা শেষ করেছে।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বিভিন্ন কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি সুপারিশের তালিকা এবং তার ভিত্তিতে একটি ছক তৈরি করেছে। এই ছকে রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘সম্মত’, ‘অসম্মত’ এবং ‘আংশিকভাবে সম্মত’—এই তিন ধরনের মতামত প্রদান এবং প্রয়োজনে ব্যাখ্যা যোগ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলো এই ছক ব্যবহার করে তাদের মতামত দিয়েছে এবং সেই সূত্রে কমিশনের সঙ্গে তাদের বৈঠক হচ্ছে। এসব বৈঠকের শেষে দেশবাসী প্রায়ই জানতে পারছে যে দলগুলো শতাধিক সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়েছে। ফলে হয়তো একটা ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে যে সংস্কারের প্রশ্নে কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে।

২.

এ ধরনের ছক এবং ‘মাল্টিপল চয়েস’ ফরম্যাটে মতামত গ্রহণের একটি অসুবিধা হলো যে সব সুপারিশকে সমগুরুত্বসম্পন্ন বলে মনে হতে পারে। স্পষ্টতই ১৬৬টি সুপারিশ সমগুরুত্বের নয়। বহুসংখ্যক কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার পরও যদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য না হয়, সে ক্ষেত্রে সংস্কারপ্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য অনর্জিতই থেকে যাবে।

রাষ্ট্র সংস্কারের মূল দুই উপাদান হলো রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সংস্কার। রাজনীতি ও প্রশাসন পরস্পর নির্ভরশীল হলেও এই দুইয়ের মধ্যে রাজনীতির ভূমিকাই প্রধান। রাজনীতি ভালো হলে, খারাপ প্রশাসনকেও ভালো করা যায়। কিন্তু রাজনীতি খারাপ হলে ভালো প্রশাসনও ক্রমে অধঃপতিত হয়। সে জন্য সব সংস্কারের মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কারের ভূমিকাই মুখ্য।

এ রকম দৃষ্টিকোণ থেকে সংবিধান এবং নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক প্রস্তাবগুলো বিশেষ গুরুত্বের দাবি করে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কারের প্রশ্নে ঐকমত্য দুরূহই থেকে যাচ্ছে।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অনেক রাজনৈতিক দল এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করছে। সুতরাং সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য সময় সম্ভবত ফুরিয়ে আসছে। এ রকম অবস্থায় রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে অগ্রসর হওয়ার উপায় কী?

৩.

ঐকমত্য কমিশন বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে ‘রুদ্ধদ্বার’ বৈঠকে মিলিত হচ্ছে। ইংরেজিতে এটাকে ‘সাইলো পদ্ধতি’ বলা যেতে পারে। এই পন্থার মূল দুর্বলতা দুটি। প্রথমত, জনগণের অন্তরালে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এসব বৈঠকে কোন রাজনৈতিক দল কী অভিমত দিচ্ছে, সে সম্পর্কে জনগণ বিস্তারিত জানতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলোও বিভিন্ন ইস্যুতে পরস্পরের অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং মতবিনিময় করতে পারছে না।

এ কারণে সম্ভবত সময় এসেছে ‘সাইলো পদ্ধতি’ পরিত্যাগ করে সব রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে ‘উন্মুক্ত আলোচনার পদ্ধতি’ গ্রহণ করা।

উন্মুক্ত আলোচনা যে সংস্কার নিয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তাভাবনার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে, তার একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ ১১ মে ‘জাতীয় নাগরিক জোট’ আয়োজিত অনুষ্ঠান। এতে সাতটি রাজনৈতিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। এ আলোচনার সময়েই প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসংখ্যার ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ নিয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের মধ্যে মতপার্থক্য প্রকাশিত হয়।

আইন উপদেষ্টা স্বৈরাচারী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ সর্বমোট দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ রাখার সুপারিশের কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দেহ ব্যক্ত করেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন যে স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠায় একাগ্র কোনো রাজনীতিবিদ নিজে দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকার পর স্বীয় বংশধর কিংবা বশংবদ কাউকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে কার্যত স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করতে পারেন। তিনি আরও যোগ করেন যে সংসদীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাসম্পন্ন অন্য কোনো দেশে এ ধরনের সীমাবদ্ধতা দেখা যায় না।

শেষোক্ত সমালোচনার উত্তরে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন যে অন্য কোনো দেশে নেই বলে বাংলাদেশে এই সীমাবদ্ধতা আরোপ করা যাবে না, তা নয়। এই উত্তর আনুষ্ঠানিকভাবে সঠিক হলেও মর্মের দিক থেকে যথার্থ কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে।

আইন উপদেষ্টার প্রথমোক্ত যুক্তির কোনো সদুত্তর ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি দিতে পেরেছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। সব মিলিয়ে বোঝা যায় যে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসংখ্যা সীমিত করার প্রস্তাবের কার্যকারিতা আরও গভীর বিবেচনার দাবি করে।

৪.

রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা ও সুপারিশেও গভীর চিন্তার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। যেমন একটি দাবি প্রায়ই করা হয় যে ১৯৭২ সালে সংবিধানের মধ্যেই ‘ফ্যাসিবাদের বীজ’ রোপিত ছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই দাবির কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয় না।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও একই রকম দাবি করে বলা হয়েছে যে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ‘প্রধানমন্ত্রীকে “নির্বাচিত একনায়কের” ক্ষমতা দিয়ে সর্বশক্তিমান করে ফেলার ব্যবস্থা করা’ হয় (প্রথম খণ্ড, পৃ. ৩০)। যাঁরা এই দাবির পক্ষে কিছু যুক্তি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন, তাঁরা সাধারণত সংবিধানের ৪৮(৩), ১৪২ অথবা ৭০ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করেন।

এটা সুবিদিত, ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শুধু প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতি ‘তাহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করিবেন’। ১৪২ অনুচ্ছেদ সংসদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের সুযোগ দেয় এবং ৭০ অনুচ্ছেদ দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যদের ভোট দেওয়া (ফ্লোর ক্রসিং) নিষিদ্ধ করে।

লক্ষণীয়, ভারতের সংবিধানেও এই তিন বিষয়েই সমরূপী অনুচ্ছেদ রয়েছে। যেমন ৭৪ নম্বর ধারায় বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতি তার সকল কার্যাবলি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার পরামর্শ অনুযায়ী সম্পাদন করিবেন’।

৩৬৮(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়, সংবিধানের কোনো সংশোধনী প্রস্তাব যদি রাজ্যসভা এবং লোকসভায় কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে পাস হয়, তবে রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করবেন এবং এই সংশোধনী গৃহীত হবে। সবশেষে ভারতের সংবিধানের ৫২ নম্বর সংশোধনী ‘ফ্লোর ক্রসিং’ নিষিদ্ধ করে।

হুবহু একই রকম সাংবিধানিক বিধান থাকা সত্ত্বেও ভারতে বাংলাদেশের মতো স্বৈরাচারের উদ্ভব ঘটেনি, কিন্তু বাংলাদেশ ঘটেছে। এতে দুটি বিষয় প্রমাণিত হয়। প্রথমত, রাজনৈতিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলো আরও গভীর চিন্তাভাবনার দাবি করে। দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসংখ্যা সীমিত করার মতো ‘উপরিভাসা’ পরিবর্তন দ্বারা ভবিষ্যতে স্বৈরাচারী শাসনের উত্থান প্রতিরোধ করা কঠিন হবে।

সত্যি সত্যি স্বৈরাচারী শাসনের প্রতিরোধ করতে চাইলে আরও গভীর পরিবর্তন প্রয়োজন হবে।

৫.

সম্প্রতি প্রকাশিত কয়েকটি বইয়ে রাজনৈতিক সংস্কার সম্পর্কে আমি কিছু আলোচনা ও প্রস্তাব উত্থাপন করেছি (দ্রষ্টব্য: গভর্ন্যান্স ফর ডেভেলপমেন্ট, ২০১৬; রাষ্ট্র সংস্কার ও সংবিধান সংশোধন, ২০২৪; আনুপাতিক নির্বাচন: কী এবং কেন, ২০২৫; এবং উন্নয়নের জন্য সুশাসন: বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কার, ২০২৫)।

এসব বইয়ে আলোচ্য কিছু প্রস্তাবের প্রতিফলন সংবিধান ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোয় দৃশ্যমান হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আনুপাতিক নির্বাচনের আংশিক প্রয়োগ, সংসদ, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির মেয়াদকাল ৫ বছর থেকে ৪ বছরে হ্রাস এবং রাষ্ট্রপতির নির্বাচন স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তকারী একটি বৃহত্তর কলেজিয়ামের ওপর ন্যস্ত করা ইত্যাদি।

কিন্তু যেভাবে এ বিষয়গুলো সুপারিশ করা হয়েছে, তাতে যৌক্তিকতার ওপর প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যেমন বাংলাদেশে সংসদের একটি উচ্চকক্ষের কেন প্রয়োজন, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত যুক্তি দেওয়া হয়নি। যুক্তির এই ঘাটতির ফলে সংসদের উচ্চকক্ষ এবং নিম্নকক্ষের ভূমিকা পৃথক্‌করণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাওয়া যায় না।

অন্যদিকে আনুপাতিক নির্বাচনের প্রয়োগ অপেক্ষাকৃত ‘লঘু’ গুরুত্বের উচ্চকক্ষের জন্য সীমিত করার ফলে এ ব্যবস্থার সম্ভাব্য সুফল অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি নিম্নকক্ষের জন্য বর্তমানে প্রচলিত আসনভিত্তিক নির্বাচনব্যবস্থা বজায় রাখার ফলে স্থানীয় সরকারব্যবস্থার বিকাশের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা রয়েই গেছে।

সুতরাং এটা স্পষ্ট যে মূল রাজনৈতিক সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে একটি পরস্পর সম্পর্কিত ‘যৌক্তিক গুচ্ছে’ পরিণত করার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর এবং ব্যাপক জনগণের সমর্থনের প্রয়োজনও রয়ে গেছে।

এই দুই প্রয়োজন মেটানোর জন্যই বর্তমানে সব রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে উন্মুক্ত আলোচনার পদ্ধতি অধিকতর কার্যকর হতে পারে। বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫৫ এবং তা আরও বাড়ছে। জনগণের অন্তরালে ‘সাইলো পদ্ধতি’র আলোচনার মাধ্যমে এত বিরাটসংখ্যক দলের মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ সম্পর্কে ঐকমত্যে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন।

পক্ষান্তরে, উন্মুক্ত আলোচনা একদিকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রশ্নে পরস্পরের অবস্থানের যুক্তি বুঝতে সহায়তা করবে। নিঃসন্দেহে দলীয় সংকীর্ণ স্বার্থের কাছে যুক্তির হারিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

কিন্তু উন্মুক্ত ‘বাহাস’ জনগণকে সংস্কারের প্রশ্নে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবস্থানের যৌক্তিকতা যাচাইয়ে সহায়তা করবে এবং তা রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তাকে প্রভাবিত করবে। জনমতের এই চাপ দলগুলোকে ক্রমেই অধিকতর যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করবে এবং তা ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য সহায়ক হবে।

এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও যে আগামী নির্বাচনের আগেই সংস্কারের প্রশ্নে ব্যাপক ঐকমত্যের সৃষ্টি হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে এর মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে দেশবাসীর জানা-বোঝার যে অগ্রগতি অর্জিত হবে, তা আগামী নির্বাচনের পরও সংস্কার অভিমুখী প্রয়াস ও যাত্রাকে সুগম করবে।

৬.

১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মতো, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ফলে সৃষ্ট সংস্কারের এই সম্ভাবনা বিনষ্ট হোক, তা আমাদের কাম্য নয়। কিন্তু জনগণের অন্তরালে ‘সাইলো পদ্ধতি’র আলোচনার মাধ্যমে এই সম্ভাবনার বাস্তবায়ন অনেকখানি অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে, এমনটাই আশঙ্কা হচ্ছে।

অপরদিকে উন্মুক্ত আলোচনার পদ্ধতি সংস্কারের সম্ভাবনার আশু বাস্তবায়ন কিংবা ভবিষ্যতের জন্য তা জাগরূক রাখার জন্য সহায়ক হবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সংস্কার অগ্রসর করার লক্ষ্যে ‘সাইলো পদ্ধতি’ থেকে সরে এসে, উন্মুক্ত আলোচনার পদ্ধতি অবলম্বনের কোনো বিকল্প আছে কি?

ড. নজরুল ইসলাম অধ্যাপক, এশীয় প্রবৃদ্ধি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও জাতিসংঘের উন্নয়ন গবেষণার সাবেক প্রধান

মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক স স ক র র র প রস ত ব র ষ ট রপত ন উপদ ষ ট অন চ ছ দ র জন য স ব যবস থ সরক র র অবস থ ন জনগণ র অন য য় ত কর র ভ বন র ন র জন মত মত গ রহণ র একট

এছাড়াও পড়ুন:

শিগগিরই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করবে কমিশন: আলী রীয়াজ

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ খুব শিগগিরই শুরু করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ তথ্য জানিয়েছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।

সোমবার (১৯ মে) বিকেলে জাতীয় সংসদের এলডি হলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। দলটির সঙ্গে এটি ১৩ মে এর মূলতবি হওয়া বৈঠক।

আলী রীয়াজ বলেন, “প্রথম ধাপের সংলাপে ভিন্নমত নিয়ে বিষয়ভিত্তক আলোচনা হবে দ্বিতীয় ধাপে। আশা করছি যে সমস্ত বিষয়ে ভিন্নমত আছে, সেগুলো নিয়ে পরবর্তী সময়ে বিষয় ভিত্তিকভাবে আলোচনা করতে পারব।”

আরো পড়ুন:

‘স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনের সুযোগ নেই’

কেসিসি নির্বাচন: হাতপাখার প্রার্থীকে জয়ী দাবি করে মামলা

তিনি বলেন, “প্রথম পর্যায়ের সংলাপের সমাপ্তি টানব এবং পরবর্তীতে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা খুব শিগগিরই শুরু করতে পারব।”

প্রথম ধাপের আলোচনার অগ্রগতি দ্রুত সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আলী রীয়াজ। গত দুই মাসের আলোচনায় অনেক বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একমত হয়েছি।

তিনি বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে প্রত্যেক অংশীদার, রাজনৈতিক দলগুলো, সুশীল সমাজ অংশীদার, রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিগুলোর ভূমিকা আছে। আমাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যে সমস্ত মতামত দেওয়া হয়েছে, তার ভিত্তিতে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার মধ্যে দিয়ে একটি জাতীয় সনদের খসড়া তৈরি করতে পারব বলে আমাদের দৃঢ় আশা। এবং সেভাবে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে।”

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।

সিপিবির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রথম ধাপের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শেষ হবে। গত ২০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সংলাপে ৩৩টি দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করেন।  

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেষ মাইলটি অতিক্রমে দুদিক থেকেই এগিয়ে আসতে হবে
  • নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা জরুরি
  • সীমান্তের অতিরিক্ত সেনা সরাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান
  • নাগরিক কোয়ালিশনের সাত প্রস্তাব কেন গুরুত্বপূর্ণ
  • ঐকমত্যের ভিত্তিতেই ‘জাতীয় সনদ’ হবে
  • ঐকমত্য কমিশন: মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবে মতপার্থক্য
  • ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনা সমাপ্ত
  • শিগগিরই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করবে কমিশন: আলী রীয়াজ
  • শেষ হয়েছে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনা