খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অন্তর্বর্তী উপাচার্য অধ্যাপক মো. হযরত আলীর প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। কুয়েটের চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষক সমিতি উপাচার্যকে দ্রুত পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।

আজ বুধবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো.

ফারুক হোসেন শিক্ষক সমিতির এসব দাবির কথা তুলে ধরেন। এর আগে একই জায়গায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এই সংকট সমাধানে উপাচার্য সক্ষম হবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা, ছাত্র-শিক্ষক সবার দাবির প্রতি অবজ্ঞা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকের দায়িত্বে থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করায় শিক্ষকেরা মনে করেন, বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য কুয়েটের দায়িত্ব পালনে অক্ষম। এমতাবস্থায় শিক্ষকেরা তাঁর প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করছেন।’

অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন আরও বলেন, চলমান সংকট দীর্ঘায়িত না করতে শিক্ষক সমিতি ভাইস চ্যান্সেলরকে সম্মানের সঙ্গে দ্রুত পদত্যাগ করার দাবি জানাচ্ছে। সেই সঙ্গে সরকারকে কুয়েটবান্ধব, যিনি সমস্যার সমাধান করে বিধিবিধান মেনে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, এমন যোগ্যতার কোনো ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি।

শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব দাবি প্রকাশ করার জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করবেন এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে প্রকৃত ঘটনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা তুলে ধরে এর সমাধান চাইবেন।

এর আগে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পূর্বঘোষণা অনুযায়ী প্রশাসনিক ভবনে তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান করেন শিক্ষক সমিতির সদস্যরা। তিন মাস আগের সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার দাবিতে ওই কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের একাংশ শিক্ষকদের কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছিল শিক্ষক সমিতি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক সমিতির দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রশাসন কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ পাঠানো হয়।

শিক্ষক সমিতি প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এটিকে প্রহসনমূলক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। পরে একাডেমিক কার্যক্রম আবার চালু করা, একটি নতুন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং আগে ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা ঘোষণার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য শৃঙ্খলা কমিটির সভা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের কথা আন্দোলনকারীদের জানান। উপাচার্যের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমিতিকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। ফলে শিক্ষক সমিতি আরও কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

এসব বিষয়ে কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য মো. হযরত আলীর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষে শতাধিক আহত হন। সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা শুরুতে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করলেও পরে তা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়। আন্দোলনের মুখে সরকার উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়।

আরও পড়ুনকুয়েটে দ্বিতীয় দিনের মতো শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচি, আবারও ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম২০ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য অবস থ ন পদত য গ

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়েটে এবার অন্তর্বর্তী উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি, অনাস্থা শিক্ষক সমিতির

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অন্তর্বর্তী উপাচার্য অধ্যাপক মো. হযরত আলীর প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। কুয়েটের চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষক সমিতি উপাচার্যকে দ্রুত পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।

আজ বুধবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন শিক্ষক সমিতির এসব দাবির কথা তুলে ধরেন। এর আগে একই জায়গায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এই সংকট সমাধানে উপাচার্য সক্ষম হবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা, ছাত্র-শিক্ষক সবার দাবির প্রতি অবজ্ঞা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকের দায়িত্বে থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করায় শিক্ষকেরা মনে করেন, বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য কুয়েটের দায়িত্ব পালনে অক্ষম। এমতাবস্থায় শিক্ষকেরা তাঁর প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করছেন।’

অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন আরও বলেন, চলমান সংকট দীর্ঘায়িত না করতে শিক্ষক সমিতি ভাইস চ্যান্সেলরকে সম্মানের সঙ্গে দ্রুত পদত্যাগ করার দাবি জানাচ্ছে। সেই সঙ্গে সরকারকে কুয়েটবান্ধব, যিনি সমস্যার সমাধান করে বিধিবিধান মেনে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন, এমন যোগ্যতার কোনো ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি।

শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব দাবি প্রকাশ করার জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করবেন এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে প্রকৃত ঘটনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা তুলে ধরে এর সমাধান চাইবেন।

এর আগে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পূর্বঘোষণা অনুযায়ী প্রশাসনিক ভবনে তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান করেন শিক্ষক সমিতির সদস্যরা। তিন মাস আগের সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার দাবিতে ওই কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের একাংশ শিক্ষকদের কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছিল শিক্ষক সমিতি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক সমিতির দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রশাসন কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ পাঠানো হয়।

শিক্ষক সমিতি প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এটিকে প্রহসনমূলক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। পরে একাডেমিক কার্যক্রম আবার চালু করা, একটি নতুন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং আগে ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা ঘোষণার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য শৃঙ্খলা কমিটির সভা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের কথা আন্দোলনকারীদের জানান। উপাচার্যের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমিতিকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। ফলে শিক্ষক সমিতি আরও কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

এসব বিষয়ে কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য মো. হযরত আলীর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষে শতাধিক আহত হন। সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা শুরুতে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করলেও পরে তা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়। আন্দোলনের মুখে সরকার উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়।

আরও পড়ুনকুয়েটে দ্বিতীয় দিনের মতো শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচি, আবারও ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ