সিনেমার গান তৈরি হয় কাহিনি আর অভিনয়শিল্পীদের বিভিন্ন ঘটনার উপস্থাপনা নিয়ে। তাই প্লেব্যাক যে কোনো শিল্পীর জন্যই সবসময় চ্যালেঞ্জিং। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে যুগ যুগ ধরে প্লেব্যাক করে যাচ্ছেন শিল্পীরা। এর মধ্যে কেউ কেউ হয়ে উঠেছেন কালের সেরা শিল্পী। প্লেব্যাকে প্রিয়মুখ হয়ে ওঠা এই সময়ের কয়েকজন তারকাকে নিয়ে লিখেছেন রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ।
একই কণ্ঠ, বহুবার শোনা; তবুও তা বেমানান মনে হয় না, যখন ভিন্ন সব অভিনয়শিল্পীর ঠোঁটে উঠে আসে নতুন গান হয়ে। এটি যারা অনবদ্যভাবে তুলে ধরতে পারেন, তারাই হয়ে ওঠেন সেই সময়ের সেরা প্লেব্যাক শিল্পী। আমাদের জন্য আনন্দ ও গর্বের বিষয় এটিই যে, বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই আমরা এমন কিছু প্লেব্যাক শিল্পীর দেখা পেয়েছি, যারা দশকের পর দশক পূরণ করে গেছেন সংগীতপ্রেমীর প্রত্যাশা।
আব্দুল জব্বার, মাহমুদুন্নবী, সৈয়দ আবদুল হাদী, সুবীর নন্দী, খুরশীদ আলম, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, এন্ড্রু কিশোর, শাম্মী আখতার, কুমার বিশ্বজিৎ, বেবী নাজনীন, খালিদ হাসান মিলু, কনকচাঁপা, আগুন, এমএ খালেক, শাকিলা জাফর, সামিনা চৌধুরীসহ অনেক শিল্পী সিনেমার গানের জন্যই আলাদাভাবে শ্রোতামনে জায়গা করে নিয়েছেন। তাদের অগ্রজরদেরও অবদান আছে সিনেমার গানকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার।
এমনকি যারা অডিও অঙ্গনে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন, তারাও প্লেব্যাকের হাতছানি এড়িয়ে যেতে পারেননি। যে কারণে তপন চৌধুরী, শুভ্র দেব, ফরিদা পারভীন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ডলি সায়ন্তনী, রিজিয়া পারভীন, মমতাজ, আসিফ আকবর, মনির খান, এসডি রুবেল, এসআই টুটুল, কানিজ সুবর্ণা, পলাশ, রবি চৌধুরী, সেলিম চৌধুরী, বারী সিদ্দিকী, আাঁখি আলমগীর, ফাহমিদা নবী, ন্যান্সি, হাবিব ওয়াহিদ, কনা, পথিক নবী, প্রতীক হাসান, তানজীব সরায়ার, মাহতিম সাকিবসহ অনেকের পা মাড়ানোর সুযোগ হয়েছে সিনে দুনিয়ায়।
ব্যান্ড তারকারাও বিভিন্ন সময় নাম লিখিয়েছেন প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে। যাদের মধ্যে মাকসুদুল হক (ফিডব্যাক/ঢাকা), আইয়ুব বাচ্চু (এলআরবি), আজম খান (উচ্চারণ), ফেরদৌস ওয়াহিদ (স্পন্দন), জেমস (নগর বাউল), হাসান (আর্ক), পার্থ বড়ুয়া (সোলস), বাপ্পা মজুমদার ও সঞ্জীব চৌধুরী (দলছুট), সুমন (অর্থহীন), পান্থ কানাই (তান্ডব), জোহাদ (নেমেসিস) শ্রোতাহৃদয় জয় করে নিয়েছেন খুব সহজেই।
একক ক্যারিয়ার গড়লেও যাদের ব্যান্ড শিল্পীর পরিচয় মুছে যায়নি, সেই তাহসান (ব্ল্যাক ব্যান্ডের সাবেক সদস্য), বালামকেও (রেনেগেডস ও ওয়ারফেজ তারকা হিসেবে পরিচিত) আমরা পেয়েছি প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে। এমনকি অভিনয়শিল্পীদেরও গায়ক-গায়িকা রূপে হাজির করার নজির রয়েছে।
চিত্রনায়ক আলমগীর, জাফর ইকবাল, মৌসুমী থেকে শুরু করে হালের আফরান নিশোকেও আমরা প্লেব্যাক করতে দেখেছি। বিভিন্ন রিয়েলিটি শো থেকে উঠে আসা শিল্পীরাও সাফল্যের ছাপ রেখেছেন প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে। যাদের মধ্যে এ সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন ইমরান মাহমুদুল ও কোনাল। একই সঙ্গে প্রীতম হাসানের নামও উচ্চারিত হচ্ছে। আলাদা অবস্থান গড়ে নিয়েছেন সিনে দুনিয়ায়। তাদের বাইরেও সালমা, নিশিতা বড়ুয়া, মুহিন, কিশোর, লিজা, পড়শী, অবন্তী সিঁথিসহ অনেকে সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়ে কুড়িয়েছেন শ্রোতা প্রশংসা। সত্যিকার অর্থে দেশীয় সিনেমার গানে শিল্পী সংখ্যা বিস্ময়জাগানিয়া। এমনকি প্লেব্যাকের জন্যই আলাদাভাবে প্রশংসিত এমন শিল্পী সংখ্যাও কম নয়।
দেশের সিনেমার বাণিজ্যে অনেক উত্থান-পতন চোখে পড়লেও গানের বেলায় তা দৃশ্যমান ছিল না। বরং সিনেমার গানে ম্যাজিক্যাল বিষয়টি ছিল উপভোগ্য। যা নিয়ে প্লেব্যাক সম্রাটখ্যাত প্রয়াত শিল্পী এন্ড্রু কিশোর বলেছিলেন, ‘এমন অভিজ্ঞতা আমার বহুবার হয়েছে– যেখানে একই সঙ্গে নায়ক, নায়কের বাবা এবং সহনায়কের জন্য আমার কণ্ঠে গান রেকর্ড করা হয়েছে। আবার এও হয়েছে, কাছাকাছি সময়ে মুক্তি পাওয়া সব অভিনেতার ঠোঁটে তুলে ধরা হয়েছে আমার গাওয়া গান। একদিক থেকে এটি যেমন ভালো লাগার, তেমনি চ্যালেঞ্জ জয় করার মতো ঘটনা। কারণ সিনেমার গান তৈরি হয় অভিনয়শিল্পীদের বিভিন্ন চরিত্র ও গল্পের বিভিন্ন ঘটনার উপস্থাপনা নিয়ে। তাই গায়কির মধ্য দিয়ে নিজ কণ্ঠকে অভিনয়শিল্পীর কণ্ঠ হিসেবে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা সহজ নয়।’
এন্ড্রু কিশোরের এই কথার সঙ্গে কখনও কাউকে দ্বিমত পোষণ করতে দেখা যায়নি। বেবী নাজনীনের মুখেও শোনা গেছে একই বয়ান। এই ব্ল্যাক ডায়মন্ডখ্যাত শিল্পী উল্টো শ্রোতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েছেন এই বলে যে, ‘অডিও অ্যালবাম বা একক গানে শ্রোতা আমাকে যেভাবে আবিষ্কার করেছেন, তার সঙ্গে প্লেব্যাকের বেবী নাজনীনকে মেলানো যায় কি? যদি যেত, তাহলে দুই মাধ্যমে আলাদাভাবে সাফল্য ধরা দিত না। তার চেয়ে বড় বিষয় হলো, সবাই প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে মানিয়ে নিতে পারেন না। ভালো গাইতে পারাই মুখ্য নয়, প্লেব্যাকের জন্য আলাদা দক্ষতাও অর্জন করতে হয়।’
বর্তমানেও একই কথা শোনা যায় তরুণ শিল্পীদের কণ্ঠে, যাদের আমরা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি এই সময়ের প্লেব্যাক প্রিয়মুখ বলে। শিল্পী ও সংগীতায়োজক ইমরান মাহমুদুলের কথায়, ‘সিনেমার চরিত্রগুলোর মধ্যে যতক্ষণ শিল্পী নিজেকে কানেক্ট করতে না পারবেন, ততক্ষণ সেই গানে প্রাণের সঞ্চার সম্ভব নয়। অডিওর গান রেকর্ড করা আর প্লেব্যাকের মধ্যে পার্থক্য এখানেই। যে কোনোভাবেই হোক, দর্শকের কাছে প্রমাণ করতে হবে, গানটিতে যিনি পারফর্ম করছেন, সেটি তাঁর মতোই হয়ে উঠেছে। এমনকি যখন সুরকার ও সংগীতায়োজক হিসেবে কাজ করি, তখনও বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়। চরিত্রের প্রয়োজনে গান যাঁর কণ্ঠে মানানসই হবে, তাঁকেই বেছে নিই।’
হালের ক্রেজ প্রীতম হাসানও বিষয়টি স্বীকার করেন। খ্যাতিমান প্লেব্যাক শিল্পী খালিদ হাসান মিলুর এই উত্তরসূরির কথায়, প্লেব্যাকের জন্য সব সময়ই আলাদাভাবে নিজেকে তৈরি করে নিতে হয়। যার মধ্য দিয়ে অন্য যে কোনো মিউজিক ভিডিওর সঙ্গে সিনেমার গানের দৃশ্যের তফাত তৈরি করা সম্ভব।
শিল্পী সোমনূর মনিরা কোনাল বলেন, ‘যখন আমার কাছে কোনো সিনেমার গান গাওয়ার প্রস্তাব আসে, তখন শুরুতেই জেনে নিই কোন অভিনেত্রীর ঠোঁটে সেই গানটি তুলে ধরা হবে। সেই অভিনেত্রীর টোন এবং কাহিনির কোন আবহে গানটি ব্যবহার করা হবে, তা জেনে প্রস্তুতি নিই।’
অন্যদিকে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ভার্সেটাইল শিল্পী হিসেবে যে চেষ্টা ছিল দিলশাদ নাহার কনার, সেটি প্লেব্যাকের পথ অনেকটা সহজ করে দিয়েছে। সে কথা স্বীকার করে কনা এও জানান, প্লেব্যাকের জন্য যেমন গল্প, চরিত্রের বিষয়টি মাথায় রেখে গান করেন, তেমনি প্রতিনিয়ত নিজেকে ভেঙে আরও নতুনভাবে তুলে ধরার চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছেন। শ্রোতামনে কড়া নাড়তে পারার এটিই তাঁর মূলমন্ত্র।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প র তম হ স ন প ল ব য ক র জন য আল দ ভ ব চর ত র ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কীভাবে কাজ করে এবং কত দূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে
ইসরায়েল পারমাণবিক স্থাপনা ও জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর জবাবে ইরান দেশটিতে কয়েক শ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
ইসরায়েল কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারলেও বেশ কয়েকটি তার প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেদ করে আঘাত হানে। যেসব স্থানে আঘাত হেনেছে, তার মধ্যে রয়েছে রাজধানী তেল আবিবসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ইরানের ঠিক কতগুলো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহৎ ও উন্নত ক্ষেপণাস্ত্রের ভান্ডার।
এমন ক্ষেপণাস্ত্র কীভাবে কাজ করে ও ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতে এগুলো কীভাবেই-বা ব্যবহৃত হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখেছে আল–জাজিরা:
আরও পড়ুনইরান ও ইসরায়েল: আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় কে এগিয়ে১৩ জুন ২০২৫কীভাবে কাজ করে
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এমন দূরপাল্লার অস্ত্র, যা প্রচলিত বা পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে বক্র বা ধনুকের মতো পথে চলে এটি।
শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিন দিয়ে উৎক্ষেপণের পর এ ক্ষেপণাস্ত্র বায়ুমণ্ডলের উঁচু স্তর, এমনকি মহাকাশে প্রবেশ করে। ছুটে চলে অবিশ্বাস্যরকম দ্রুতগতিতে। ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার পর এ ক্ষেপণাস্ত্র পূর্বনির্ধারিত পথ ধরে আবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিন দিয়ে উৎক্ষেপণের পর এ ক্ষেপণাস্ত্র বায়ুমণ্ডলের উঁচু স্তর, এমনকি মহাকাশে প্রবেশ করে। ছুটে চলে অবিশ্বাস্যরকম দ্রুতগতিতে। ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার পর এই ক্ষেপণাস্ত্র পূর্বনির্ধারিত পথ ধরে আবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে ১০ হাজার কিমি
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কয়েক শ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ১০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।
আরও পড়ুনইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ইরানের আর কী উপায় আছে১৪ ঘণ্টা আগেপাল্লা অনুযায়ী এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়—
যুদ্ধক্ষেত্র পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (বিআরবিএম): ২০০ কিলোমিটারের কম (১২৪ মাইল)।
স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (এসআরবিএম): ১ হাজার কিলোমিটারের কম (৬২১ মাইল)।
মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (এমআরবিএম/আইআরবিএম): ১ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার (৬২১ থেকে ২ হাজার ১৭৫ মাইল)।
দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (এলআরবিএম): ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার (২ হাজার ১৭৫ থেকে ৩ হাজার ৪১৮ মাইল)।
আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম): ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটারের বেশি (৩ হাজার ৪১৮ মাইল)।
একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোবাইল লঞ্চার থেকে সাগরের দিকে ছোড়া হচ্ছে। ২০২০ সালের ১৮ জুন, ইরানি সেনাবাহিনী এ ছবি সরবরাহ করে