জামালপুরের বকশীগঞ্জে ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ। গত কয়েকদিনে মসজিদ, বাজারসহ প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে এলাকার শতশত মানুষ। 

সরেজমিন দেখা গেছে, মুন্দিপাড়া ব্রিজের পূর্বপাশের অ্যাপ্রোচ ধসে পড়ায় দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ব্রিজটি। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে দশানী নদীর পানি। পানি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভাঙন। প্রতিদিন ভাঙছে বসতভিটা, রাস্তাঘাট-ফসলি জমি। ইতোমধ্যে মেরুরচর ও সাধুরপাড়া ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মেরুরচর ইউনিয়নের মুন্দীপাড়া গ্রামের বিদ্যুৎ মিয়া, সুন্দর আলী, জুয়েল মিয়া, সেমাজুল হক, শিক্কু মিয়া, লুৎফর রহমান, শফিকুল ইসলাম, সাজু মিয়া, মজিবুর রহমান, সোলায়মান হক, কালামত আলী, আলাল মিয়া, আমিরুল ইসলাম, ঘুঘরাকান্দি এলাকার ফকির আলী, গামা শেখ, হাসেম আলী, মকবুল শেখ, ফরিদ, মজিবুর রহমান, দুখু মিয়া, টুনু মিয়া, শের আলী, হযরত আলী, ওমান মিয়া, ইসরাফিল, আলামিন, সাধুরপাড়া ইউনিয়নের আইড়মারী এলাকার হেকতমত আলীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়েছে।

এছাড়াও ঘুঘরাকান্দি বাজার ও একটি মসজিদ ভেঙে গেছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন তারা। ভাঙনের মুখে হুমকিতে আরও প্রায় পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর। প্রতিনিয়ত ভাঙনের ফলে এলাকার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ। অনেকেই ভাঙনের কবল থেকে বাঁচতে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন ঘরবাড়ি। অনেকেই আবার ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শনে যান মেরুরচর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মঞ্জু। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ মিয়া, সুন্দর আলী, জুয়েল মিয়া, সেমাজুল হক জানান, বেশ কয়েকবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন তারা। এবার অসময়ে তীব্র ভাঙনে বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন তারা।

তারা আরও বলেন, এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ দরিদ্র কৃষক। তাদের অনেকের নতুন করে ঘর তোলার সামর্থ্য নেই।

ঘুঘরাকান্দি এলাকার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ফকির আলী, গামা শেখ, হাসেম আলী, মকবুল শেখ জানান, তাদের সবাই কমবেশি ভাঙনের শিকার। ভাঙনে সহায়-সম্বল বলতে যা ছিল, তার সব শেষ হয়ে গেছে। ফসলি জমিও নদীতে চলে যাচ্ছে। বারবার আবেদন করা হলেও ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।

মেরুরচর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ভাঙন রোধে রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুদ রানা জানান, মুন্দিপাড়া ব্রিজটির এপ্রোচ ধসে যাওয়ার খবর পেয়েই সংস্কারের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মানুষ যাতে ভোগান্তির শিকার না হয় সেজন্য ব্রিজের পাশেই একটি সাঁকোর ব্যবস্থা করা হবে। নদীভাঙনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ ম র রচর ল ইসল ম এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

সংগঠনকে অভিযুক্ত ও সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিধিমালার সংশোধন

ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনকেও অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করার বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যপ্রণালি বিধিমালায় সংশোধন আনা হয়েছে। এত দিন অভিযুক্ত হিসেবে শুধু ব্যক্তিকেই বোঝাত। পাশাপাশি তদন্ত চলাকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রয়োজনে অভিযুক্তকে অথবা সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন, এমন ক্ষমতাও বিধিমালায় রাখা হয়েছে।

‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যপ্রণালি বিধিমালা-২০১০’-এ এ দুটিসহ মোট ৪৪টি সংশোধনী ও সংযোজন এনে গতকাল বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই বিধিমালা এখন ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ কার্যপ্রণালি বিধিমালা ২০১০ (সংশোধন), ২০২৫’ নামে অভিহিত হবে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর ২২ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রণীত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যপ্রণালি বিধিমালা-২০১০’-এর ৬৬ বিধিতে উল্লিখিত ক্ষমতাবলে ট্রাইব্যুনাল এই সংশোধনী এনেছেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

১০ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল), ১৯৭৩ আইনের সংশোধন এনে অধ্যাদেশ জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেখানে সংগঠনের সংজ্ঞায় সংশোধন আনা হয়। সেই সংশোধন অনুযায়ী, সংগঠন বলতে যেকোনো রাজনৈতিক দলকেও বোঝাবে। পাশাপাশি সংগঠন বলতে রাজনৈতিক দলের অধীনস্থ, সম্পর্কিত বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন অথবা গোষ্ঠীকেও বোঝাবে।

আইনের সংশোধনীতে আরও বলা হয়েছিল, এই আইন বা প্রযোজ্য অন্যান্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয় যে কোনো সংগঠন এই আইনের ৩ ধারা উপধারা (২)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেছে, আদেশ দিয়েছে, চেষ্টা করেছে, সহায়তা করেছে, উসকানি দিয়েছে, মদদ দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সহযোগিতা করেছে অথবা অন্য যেকোনোভাবে সেই অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছে, তবে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার, সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার, এর নিবন্ধন বা লাইসেন্স স্থগিত অথবা বাতিল করার এবং এর সম্পত্তি জব্দ করার ক্ষমতা থাকবে ট্রাইব্যুনালের।

আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারির আগে সে দিনই (১০ মে) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। এ অবস্থায় ট্রাইব্যুনালের বিধিমালায়ও সংশোধন আনা হলো।

কার্যবিধি সংশোধনের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে সংগঠনের বিচার এবং শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। সেই বিচারের পদ্ধতি কেমন হবে, সংগঠনের পক্ষ থেকে কে কে ট্রাইব্যুনালে এই বিচারে প্রতিনিধিত্ব করবেন, তার বর্ণনাও এই সংশোধনীতে আনা হয়েছে।

গাজী মোনাওয়ার আরও বলেন, তদন্ত চলাকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কোনো মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, অথবা তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো প্রসিকিউটর যেকোনো অভিযুক্তকে অথবা সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন। গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে ট্রাইব্যুনাল অথবা যেকোনো ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করতে হবে।

এই আইনজীবী আরও বলেন, চিফ প্রসিকিউটর চাইলে একাধিক অভিযুক্তকে একসঙ্গে বিচারের আওতায় আনতে পারবেন। অথবা তাঁদের ভাগ ভাগ করে বিচারের আওতায় আনতে পারবেন। অথবা একাধিক অভিযোগ একই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যদি তদন্তে প্রমাণিত হয়, তাহলে ফরমাল চার্জ দাখিলের মাধ্যমে অনেকগুলো অভিযোগের বিচার একসঙ্গে করতে পারবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ