Samakal:
2025-05-23@11:15:47 GMT

রেনেসাঁসের আলোয় রবীন্দ্রনাথ

Published: 23rd, May 2025 GMT

রেনেসাঁসের আলোয় রবীন্দ্রনাথ

‘রেনেসাঁস ও রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থটি প্রবন্ধের। রেনেসাঁসের চেতনা নিয়ে প্রবন্ধ বা সাহিত্য অনেক রচিত হয়েছে। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রেনেসাঁস-চেতনা ধারণকে ঘিরে কিছু নিবিড় ভাবনা এ গ্রন্থের আলোচ্য। 
১৯২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অজিত চক্রবর্তীকে লেখা একটি চিঠিতে রেনেসাঁসের চেতনা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তার প্রকাশ ঘটে। তিনি ওই চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আমাদের জন্য একটি মাত্র দেশ আছে– সে হচ্ছে বসুন্ধরা, একটি মাত্র নেশন আছে– সে হচ্ছে মানুষ।’ এখানে মানবসভ্যতার ঐক্যের সম্পর্ক ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন কবি। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পরাধীন দেশের মানুষ। রেনেসাঁসের আলো থেকে তাকে শিখতে হয়েছিল যে, শিক্ষা জনগণ এবং সংগঠন মানবমুক্তির জন্য কতটা জরুরি। এটা তিনি বিশ্বাস করতেন এমন নয়, মনেপ্রাণে ধারণও করতেন। সেই উপলব্ধি কবি প্রকাশ করেছেন। বইটি পাঠ করলে ইউরোপের রেনেসাঁসের রূপ পাওয়া যাবে; একই সঙ্গে ইউরোপের রেনেসাঁসের তুলনায় যে বাংলার রেনেসাঁস খণ্ডিত সেটির প্রকাশও পাওয়া যাবে। তাতে রেনেসাঁসের মূল্য কোনো অংশেই খণ্ডিত হয় না। দুই রেনেসাঁস এক অভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। যে ইতিহাস বা ইতিহাসের প্রেক্ষাপট জানাটাও জরুরি। সেই সঙ্গে এ দুই জাগরণের বৈসাদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করাটাও জরুরি।
আলোচ্য গ্রন্থটিতে মোট ১০টি অধ্যায় রয়েছে। যথাক্রমে- ইতালীয় রেনেসাঁস ও বাংলার রেনেসাঁস: একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা, রেনেসাঁস ও বাংলা সাহিত্য, রবীন্দ্রনাথের রামমোহন মূল্যায়ন, রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর, মাইকেল ও রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রবীক্ষণে বঙ্কিম মনীষা, রবীন্দ্রকাব্যে রেনেসাঁস চেতনা, রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসে রেনেসাঁস ভাবনা, রেনেসাঁস চেতনার উজ্জ্বল স্মারক রবীন্দ্রনাটক এবং রবীন্দ্রপ্রবন্ধে রেনেসাঁস চেতনার দীপ্তি। প্রথম অধ্যায়ে ইতালীয় রেনেসাঁস ও বাংলার রেনেসাঁসের তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়েছে। সাবলীল উপস্থাপনায় তা তুলে আনা হয়েছে। দুই রেনেসাঁসের অভিন্ন ধারার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ওই প্রবন্ধে। অন্নদাশঙ্কর রায়ের ভাষায়, ‘রেনেসাঁস এসেছিল মানুষকে সর্বদেশে সর্বপ্রকারে মুক্ত করতে। শাস্ত্রের হাত থেকে, দেবতার হাত থেকে, গুরুর হাত থেকে, পুরোহিতের হাত থেকে, কুসংস্কারের হাত থেকে, কুপ্রথার হাত থেকে, অধীনতার হাত থেকে, অসাম্যের হাত থেকে।’
এ বিষয়গুলো আমাদের প্রত্যেকের কমবেশি জানা। রেনেসাঁসের সংস্কৃতি ছিল উপরিকাঠামোর সংস্কৃতি। আবার নব্যধনিক শ্রেণি, রাজন্যবর্গের সঙ্গে রেনেসাঁস পুরুষদের কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, তাদের পরিচর্যায় রেনেসাঁসের সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছিল। বই থেকে তুলে ধরছি- ‘.

..এই সংস্কৃতির সাথে সমাজের বৃহত্তর শ্রমজীবী জনসাধারণের কোনো সম্পর্ক ছিল না। অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষ ও গ্রামীণ কৃষকদের জীবন রেনেসাঁসের আলোয় আলোকিত হয়নি। এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এটি স্বীকার করতে কোনো বাধা নেই যে, সমাজ প্রগতির ইতিহাসে নানাদিক থেকে রেনেসাঁস আধুনিকতার সূচনাকারী।’ রবীন্দ্রনাথ যে শুধু বাংলার রেনেসাঁসের শ্রেষ্ঠ সন্তান নন, একই সঙ্গে মহত্তম স্রষ্টাও। বিষয়টি এ গ্রন্থের বিভিন্ন প্রবন্ধের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। যা পাঠে বিস্তৃতিভাবে সেই ইতিহাস ও তার বিশ্লেষণ জানা সম্ভব।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে রেনেসাঁসের সঙ্গে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের স্বরূপ উদ্ঘাটন করা হয়েছে। এছাড়া তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অধ্যায়ে চারজন প্রধান রেনেসাঁস ব্যক্তি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও মধুসূদন– এ তিন চরিত্র নিয়ে তাঁর ভাবনা পড়লে পাঠক অনেক সমৃদ্ধ হবেন নিশ্চিতভাবেই। এ ছাড়াও রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য সৃষ্টিভাণ্ডারে কীভাবে রেনেসাঁস চেতনা রূপায়িত হয়েছে, সে ধারণা পাওয়া যাবে পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে। এ ক্ষেত্রে তাঁর কবিতা, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধকে গুরুত্ব দিয়ে এখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসে রেনেসাঁস ভাবনা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কবিতা, নাটক, প্রবন্ধকে ছাপিয়ে উপন্যাসে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ১৯১০ সালে রচিত ‘গোরা’ উপন্যাসে যেভাবে গোরার সঙ্গে অন্য চরিত্রগুলোর প্রাণবন্ত বিতর্কে সত্যের বিভিন্ন রূপ প্রকাশ হয়েছে; এতে রেনেসাঁসের প্রভাব রয়েছে। কখনও এ বিতর্ক বিনয়ের সঙ্গে, কখনও পরেশবাবু, হারানবাবুর সঙ্গে কখনও বা প্রিয়তমা সুচরিতার সঙ্গে– এমনকি অসহায় মুসলমান ফেরিওয়ালার সঙ্গে গোরার কথোপকথনও শিক্ষণীয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রবন ধ উপন য স প রক শ গ রন থ ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমি সাধারণত সব দোষ নিজের ওপর নিই’

আলো নিভে গেলে অনেকেই হারিয়ে যায়। কেউ কেউ আবার অন্ধকারের মধ্যে খুঁজে নেয় নতুন আলো। বলিউড অভিনেত্রী বাণী কাপুর তাদেরই একজন– যিনি ব্যর্থতার ধুলো থেকে নিজের ভেতর শক্তি খুঁজে বের করেছেন, নিরবধি যুদ্ধ করে গেছেন নিজের অবস্থান, পরিচয় ও স্বপ্নের জন্য। যে স্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল অনেক দিন আগে থেকে। দিল্লির এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া বাণী কখনও ভাবেননি তাঁর মুখশ্রী একদিন হিন্দি সিনেমার বড়পর্দায় জায়গা করে নেবে।

মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, তবে তিনি জানতেন, তাঁর যাত্রাটা শুধু ক্যামেরার ফ্ল্যাশে থেমে থাকবে না। ২০১৩ সালে ‘শুদ্ধ দেশি রোমান্স’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় তাঁর। সুশান্ত সিং রাজপুত ও পরিণীতি চোপড়ার পাশে এক নবাগত হিসেবে তাঁর পারফরম্যান্স দর্শকের নজর কাড়ে। প্রথম ছবিতেই ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন ‘সেরা নবাগত অভিনেত্রী’ হিসেবে।

ক্যারিয়ারের আকাশ তখনই যেন উন্মুক্ত হয়েছিল তাঁর সামনে। কিন্তু আকাশে উড়তে থাকা পাখির ডানায় কখনও কখনও ঝড় এসে ধাক্কা দেয়। ২০১৬ সালে মুক্তি পায় রণবীর সিংয়ের বিপরীতে তাঁর দ্বিতীয় বড় বাজেটের সিনেমা ‘বেফিকরে’। প্যারিসের অলিগলিতে নায়কের সঙ্গে বাণীর রোমান্স, নিখুঁত শরীরী ভাষা, সাহসী দৃশ্য– সব ছিল ছবিতে। এরপরও দর্শকের মন জয় করতে পারেনি সেটি। বাণীর জীবনেও শুরু হয় আত্মবিশ্লেষণের এক কঠিন অধ্যায়।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণত সব দোষ নিজের ওপর নিই। যখন ছবি চলে না, মনে হয় আমারই ভুল ছিল। কেমন যেন গিল্ট ফিলিং কাজ করত।’ বাণীর এই কথা শোনার পর মনে হয়, এই মেয়েটা শুধু অভিনেত্রী নন, তিনি একজন যোদ্ধাও। হতাশা তাঁকে ভেঙে ফেলেনি; বরং নতুন করে গড়েছে। এরপর ২০১৯ সালে ওয়ার সিনেমায় ছোট চরিত্রে দেখা গেলেও বাণী নিজের উপস্থিতি টিকিয়ে রাখেন। সত্যিকার অভিনয়ের পরিপক্বতা তিনি দেখান ‘চণ্ডীগড় কারে আশিকী’ সিনেমায়।

এ সিনেমায় তিনি এক ট্রান্সজেন্ডার নারীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। এ চরিত্রের জন্য সাহস লাগে। দর্শকের প্রতিক্রিয়াও ছিল মিশ্র। তবুও বাণী পিছপা হননি।

তিনি বলেন, ‘সবাই যখন নিরাপদ চরিত্রে কাজ করতে চায়, আমি সেখানে ঝুঁকি নিয়েছি। কারণ আমি জানি, শিল্প-সাহিত্য কখনও নিরাপদ জায়গায় জন্মায় না।’ তাঁর এ বক্তব্যে যেন তাঁর শিল্পীসত্তার ছায়া পড়ে। এ বছর বাণীর দুটি ভিন্নধর্মী সিনেমা মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও মুক্তি পেয়েছে একটি। নাম ‘রেইড টু’। অন্যদিকে ‘আবির গুলাল’ রোমান্টিক কমেডি, যা রাজনৈতিক কারণে মুক্তি স্থগিত হয়েছে। 

বাণীর জীবনে নেই শুধু সাফল্যের পর সাফল্য; রয়েছে ব্যর্থতার ছায়ায় দাঁড়িয়ে নিজেকে নতুন করে খোঁজার গল্প। যিনি জানেন কীভাবে নিজেকে ভালোবাসতে হয়, কীভাবে নিজের আত্মার গভীরতম ভয়কেও আলিঙ্গন করতে হয়। বলিউড তাঁকে যতটুকু দিয়েছে, তার চেয়েও বেশি নিজের ভেতর থেকে তিনি তুলে এনেছেন শক্তি। তিনি প্রমাণ করেছেন, নায়িকা শুধু পর্দায় নয়, জীবনের মঞ্চেও লড়াকু হয়ে উঠতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নদী সুরক্ষায় চাই ‘জাতীয় নদী দিবস’
  • কোরবানির প্রস্তুতি 
  • ‘আমি সাধারণত সব দোষ নিজের ওপর নিই’