Samakal:
2025-11-03@09:11:36 GMT

রেনেসাঁসের আলোয় রবীন্দ্রনাথ

Published: 23rd, May 2025 GMT

রেনেসাঁসের আলোয় রবীন্দ্রনাথ

‘রেনেসাঁস ও রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থটি প্রবন্ধের। রেনেসাঁসের চেতনা নিয়ে প্রবন্ধ বা সাহিত্য অনেক রচিত হয়েছে। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রেনেসাঁস-চেতনা ধারণকে ঘিরে কিছু নিবিড় ভাবনা এ গ্রন্থের আলোচ্য। 
১৯২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অজিত চক্রবর্তীকে লেখা একটি চিঠিতে রেনেসাঁসের চেতনা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তার প্রকাশ ঘটে। তিনি ওই চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আমাদের জন্য একটি মাত্র দেশ আছে– সে হচ্ছে বসুন্ধরা, একটি মাত্র নেশন আছে– সে হচ্ছে মানুষ।’ এখানে মানবসভ্যতার ঐক্যের সম্পর্ক ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন কবি। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পরাধীন দেশের মানুষ। রেনেসাঁসের আলো থেকে তাকে শিখতে হয়েছিল যে, শিক্ষা জনগণ এবং সংগঠন মানবমুক্তির জন্য কতটা জরুরি। এটা তিনি বিশ্বাস করতেন এমন নয়, মনেপ্রাণে ধারণও করতেন। সেই উপলব্ধি কবি প্রকাশ করেছেন। বইটি পাঠ করলে ইউরোপের রেনেসাঁসের রূপ পাওয়া যাবে; একই সঙ্গে ইউরোপের রেনেসাঁসের তুলনায় যে বাংলার রেনেসাঁস খণ্ডিত সেটির প্রকাশও পাওয়া যাবে। তাতে রেনেসাঁসের মূল্য কোনো অংশেই খণ্ডিত হয় না। দুই রেনেসাঁস এক অভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। যে ইতিহাস বা ইতিহাসের প্রেক্ষাপট জানাটাও জরুরি। সেই সঙ্গে এ দুই জাগরণের বৈসাদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করাটাও জরুরি।
আলোচ্য গ্রন্থটিতে মোট ১০টি অধ্যায় রয়েছে। যথাক্রমে- ইতালীয় রেনেসাঁস ও বাংলার রেনেসাঁস: একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা, রেনেসাঁস ও বাংলা সাহিত্য, রবীন্দ্রনাথের রামমোহন মূল্যায়ন, রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর, মাইকেল ও রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রবীক্ষণে বঙ্কিম মনীষা, রবীন্দ্রকাব্যে রেনেসাঁস চেতনা, রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসে রেনেসাঁস ভাবনা, রেনেসাঁস চেতনার উজ্জ্বল স্মারক রবীন্দ্রনাটক এবং রবীন্দ্রপ্রবন্ধে রেনেসাঁস চেতনার দীপ্তি। প্রথম অধ্যায়ে ইতালীয় রেনেসাঁস ও বাংলার রেনেসাঁসের তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়েছে। সাবলীল উপস্থাপনায় তা তুলে আনা হয়েছে। দুই রেনেসাঁসের অভিন্ন ধারার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ওই প্রবন্ধে। অন্নদাশঙ্কর রায়ের ভাষায়, ‘রেনেসাঁস এসেছিল মানুষকে সর্বদেশে সর্বপ্রকারে মুক্ত করতে। শাস্ত্রের হাত থেকে, দেবতার হাত থেকে, গুরুর হাত থেকে, পুরোহিতের হাত থেকে, কুসংস্কারের হাত থেকে, কুপ্রথার হাত থেকে, অধীনতার হাত থেকে, অসাম্যের হাত থেকে।’
এ বিষয়গুলো আমাদের প্রত্যেকের কমবেশি জানা। রেনেসাঁসের সংস্কৃতি ছিল উপরিকাঠামোর সংস্কৃতি। আবার নব্যধনিক শ্রেণি, রাজন্যবর্গের সঙ্গে রেনেসাঁস পুরুষদের কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, তাদের পরিচর্যায় রেনেসাঁসের সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছিল। বই থেকে তুলে ধরছি- ‘.

..এই সংস্কৃতির সাথে সমাজের বৃহত্তর শ্রমজীবী জনসাধারণের কোনো সম্পর্ক ছিল না। অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষ ও গ্রামীণ কৃষকদের জীবন রেনেসাঁসের আলোয় আলোকিত হয়নি। এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এটি স্বীকার করতে কোনো বাধা নেই যে, সমাজ প্রগতির ইতিহাসে নানাদিক থেকে রেনেসাঁস আধুনিকতার সূচনাকারী।’ রবীন্দ্রনাথ যে শুধু বাংলার রেনেসাঁসের শ্রেষ্ঠ সন্তান নন, একই সঙ্গে মহত্তম স্রষ্টাও। বিষয়টি এ গ্রন্থের বিভিন্ন প্রবন্ধের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। যা পাঠে বিস্তৃতিভাবে সেই ইতিহাস ও তার বিশ্লেষণ জানা সম্ভব।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে রেনেসাঁসের সঙ্গে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের স্বরূপ উদ্ঘাটন করা হয়েছে। এছাড়া তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অধ্যায়ে চারজন প্রধান রেনেসাঁস ব্যক্তি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও মধুসূদন– এ তিন চরিত্র নিয়ে তাঁর ভাবনা পড়লে পাঠক অনেক সমৃদ্ধ হবেন নিশ্চিতভাবেই। এ ছাড়াও রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য সৃষ্টিভাণ্ডারে কীভাবে রেনেসাঁস চেতনা রূপায়িত হয়েছে, সে ধারণা পাওয়া যাবে পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে। এ ক্ষেত্রে তাঁর কবিতা, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধকে গুরুত্ব দিয়ে এখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসে রেনেসাঁস ভাবনা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কবিতা, নাটক, প্রবন্ধকে ছাপিয়ে উপন্যাসে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ১৯১০ সালে রচিত ‘গোরা’ উপন্যাসে যেভাবে গোরার সঙ্গে অন্য চরিত্রগুলোর প্রাণবন্ত বিতর্কে সত্যের বিভিন্ন রূপ প্রকাশ হয়েছে; এতে রেনেসাঁসের প্রভাব রয়েছে। কখনও এ বিতর্ক বিনয়ের সঙ্গে, কখনও পরেশবাবু, হারানবাবুর সঙ্গে কখনও বা প্রিয়তমা সুচরিতার সঙ্গে– এমনকি অসহায় মুসলমান ফেরিওয়ালার সঙ্গে গোরার কথোপকথনও শিক্ষণীয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রবন ধ উপন য স প রক শ গ রন থ ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত