Samakal:
2025-11-03@04:42:20 GMT

কোরবানির প্রস্তুতি 

Published: 23rd, May 2025 GMT

কোরবানির প্রস্তুতি 

কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আত্মত্যাগ, আত্মোৎসর্গ, সম্প্রীতি, সহমর্মিতা, সহানুভূতি; সর্বোপরি মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের মহিমায় চিরভাস্বর কোরবানি। এ ইবাদত শুধু উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে নয়; বরং পূর্ববর্তী সব উম্মতের মধ্যেও জারি ছিল। 

কোরবানি শব্দটি ‘কুরবুন’ মূল ধাতু থেকে এসেছে। অর্থ হলো, নৈকট্য লাভ, সান্নিধ্য অর্জন, প্রিয় বস্তুকে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য উৎসর্গ করা।

শরিয়তের পরিভাষায়, নির্দিষ্ট জন্তুকে একমাত্র আল্লাহপাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে মহান আল্লাহর নামে জবেহ করাই হলো কোরবানি। সুরা আল-মায়েদায় ২৭ থেকে ৩১ আয়াত পর্যন্ত হজরত আদম (আ.

)-এর দুই সন্তানের কোরবানির কথা বিবৃত হয়েছে। হজরত আদম (আ.)-এর পর প্রতিটি উম্মত বা জাতির মধ্যেই এই বরকতময় আমল বিদ্যমান ছিল। পবিত্র কোরআনের সুরা আল-হজের ৩৪ আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, আর প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যেন তারা আল্লাহর দেওয়া চতুষ্পদ পশুর ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। 

সকল উম্মতের কোরবানির নিয়ম এক রকম ছিল না। শরিয়তে যে পদ্ধতিতে কোরবানি করা হয়, তাও আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্দেশিত এবং তা মিল্লাতে ইবরাহিমির অংশ। সুরা কাউসারের ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা কোরবানি আবশ্যক হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে এরশাদ করেন, ‘তুমি তোমার রবের জন্য নামাজ পড়ো ও কোরবানি করো।’ রাসুলে কারিম (সা.) মাদানি জীবনের প্রতিবছর কোরবানি করেছেন। কখনও কোরবানি পরিত্যাগ করেননি, বরং কোরবানি পরিত্যাগকারীদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন।

হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে’ (ইবনে মাজাহ)।

যে পশুটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি দেব, তা যেন নিখুঁত হয়। কোনোভাবেই দুর্বল ও ত্রুটিযুক্ত, ল্যাংড়া, কানকাটা, শিংভাঙা এবং অন্ধ পশু কোরবানি করা বৈধ নয়।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ঈদে ধূসর রঙের শিংওয়ালা দুটি দুম্বা কোরবানি করলেন। তিনি সেগুলোকে নিজ হাতে জবাই করলেন এবং ‘বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবর’ বলে জবাই দিলেন (বুখারি ও মুসলিম)। এ ছাড়া কোরবানির পশু খুব ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করা উচিত। ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে জবাই করে পশুকে কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়। 

জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই তিন দিন যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রূপার যে কোনো একটির সমপরিমাণ সম্পত্তির মালিক থাকবে, তার জন্য গরু, মহিষ, উট– এগুলোর একটা অংশ অথবা ছাগল, দুম্বা এসব পশুর একটি কোরবানি করা ওয়াজিব। গোশত খাওয়ার নিয়তে কিংবা মানুষ খারাপ বলবে, এটা মনে করে কোরবানি দেওয়া হলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।

সুরা আল-হজের ৩৭ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে কখনও কোরবানির গোশত বা রক্ত পৌঁছায় না। বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াটুকুই পৌঁছায়।’

একজন কোরবানিদাতা এ ঘোষণাই প্রদান করেন– ‘নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সব কিছুই সারাজাহানের মালিক আল্লাহতায়ালার জন্য’ (সুরা আনআম, আয়াত: ১৬২)

ইব্রাহিম (আ.) ও স্বীয় পুত্র ইসমাইল (আ.) যে অবিস্মরণীয় ত্যাগ, আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও আনুগত্যের চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সেই স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় ও পালনীয় রাখতে কোরবানির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আবহমানকাল থেকে চলে আসছে। শুধু পশুর গলায় ছুরি চালানোয় কোনো পুণ্য নেই। বরং হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, দাম্ভিকতা, অবৈধ অর্থলিপ্সা, পরচর্চা-পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতাসহ যাবতীয় মানবীয় পশুত্বের গলায় ছুরি চালাতে পারলেই কোরবানি সার্থকতা বয়ে আনবে।

ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক রব ন ক রব ন র ও ক রব ন র ক রব ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত