কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আত্মত্যাগ, আত্মোৎসর্গ, সম্প্রীতি, সহমর্মিতা, সহানুভূতি; সর্বোপরি মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের মহিমায় চিরভাস্বর কোরবানি। এ ইবাদত শুধু উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে নয়; বরং পূর্ববর্তী সব উম্মতের মধ্যেও জারি ছিল।
কোরবানি শব্দটি ‘কুরবুন’ মূল ধাতু থেকে এসেছে। অর্থ হলো, নৈকট্য লাভ, সান্নিধ্য অর্জন, প্রিয় বস্তুকে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য উৎসর্গ করা।
শরিয়তের পরিভাষায়, নির্দিষ্ট জন্তুকে একমাত্র আল্লাহপাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে মহান আল্লাহর নামে জবেহ করাই হলো কোরবানি। সুরা আল-মায়েদায় ২৭ থেকে ৩১ আয়াত পর্যন্ত হজরত আদম (আ.
সকল উম্মতের কোরবানির নিয়ম এক রকম ছিল না। শরিয়তে যে পদ্ধতিতে কোরবানি করা হয়, তাও আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্দেশিত এবং তা মিল্লাতে ইবরাহিমির অংশ। সুরা কাউসারের ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা কোরবানি আবশ্যক হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে এরশাদ করেন, ‘তুমি তোমার রবের জন্য নামাজ পড়ো ও কোরবানি করো।’ রাসুলে কারিম (সা.) মাদানি জীবনের প্রতিবছর কোরবানি করেছেন। কখনও কোরবানি পরিত্যাগ করেননি, বরং কোরবানি পরিত্যাগকারীদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন।
হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে’ (ইবনে মাজাহ)।
যে পশুটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি দেব, তা যেন নিখুঁত হয়। কোনোভাবেই দুর্বল ও ত্রুটিযুক্ত, ল্যাংড়া, কানকাটা, শিংভাঙা এবং অন্ধ পশু কোরবানি করা বৈধ নয়।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ঈদে ধূসর রঙের শিংওয়ালা দুটি দুম্বা কোরবানি করলেন। তিনি সেগুলোকে নিজ হাতে জবাই করলেন এবং ‘বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবর’ বলে জবাই দিলেন (বুখারি ও মুসলিম)। এ ছাড়া কোরবানির পশু খুব ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করা উচিত। ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে জবাই করে পশুকে কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়।
জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এই তিন দিন যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রূপার যে কোনো একটির সমপরিমাণ সম্পত্তির মালিক থাকবে, তার জন্য গরু, মহিষ, উট– এগুলোর একটা অংশ অথবা ছাগল, দুম্বা এসব পশুর একটি কোরবানি করা ওয়াজিব। গোশত খাওয়ার নিয়তে কিংবা মানুষ খারাপ বলবে, এটা মনে করে কোরবানি দেওয়া হলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
সুরা আল-হজের ৩৭ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে কখনও কোরবানির গোশত বা রক্ত পৌঁছায় না। বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াটুকুই পৌঁছায়।’
একজন কোরবানিদাতা এ ঘোষণাই প্রদান করেন– ‘নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সব কিছুই সারাজাহানের মালিক আল্লাহতায়ালার জন্য’ (সুরা আনআম, আয়াত: ১৬২)
ইব্রাহিম (আ.) ও স্বীয় পুত্র ইসমাইল (আ.) যে অবিস্মরণীয় ত্যাগ, আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও আনুগত্যের চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সেই স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় ও পালনীয় রাখতে কোরবানির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আবহমানকাল থেকে চলে আসছে। শুধু পশুর গলায় ছুরি চালানোয় কোনো পুণ্য নেই। বরং হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, দাম্ভিকতা, অবৈধ অর্থলিপ্সা, পরচর্চা-পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতাসহ যাবতীয় মানবীয় পশুত্বের গলায় ছুরি চালাতে পারলেই কোরবানি সার্থকতা বয়ে আনবে।
ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক রব ন ক রব ন র ও ক রব ন র ক রব ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমি সাধারণত সব দোষ নিজের ওপর নিই’
আলো নিভে গেলে অনেকেই হারিয়ে যায়। কেউ কেউ আবার অন্ধকারের মধ্যে খুঁজে নেয় নতুন আলো। বলিউড অভিনেত্রী বাণী কাপুর তাদেরই একজন– যিনি ব্যর্থতার ধুলো থেকে নিজের ভেতর শক্তি খুঁজে বের করেছেন, নিরবধি যুদ্ধ করে গেছেন নিজের অবস্থান, পরিচয় ও স্বপ্নের জন্য। যে স্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল অনেক দিন আগে থেকে। দিল্লির এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া বাণী কখনও ভাবেননি তাঁর মুখশ্রী একদিন হিন্দি সিনেমার বড়পর্দায় জায়গা করে নেবে।
মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, তবে তিনি জানতেন, তাঁর যাত্রাটা শুধু ক্যামেরার ফ্ল্যাশে থেমে থাকবে না। ২০১৩ সালে ‘শুদ্ধ দেশি রোমান্স’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় তাঁর। সুশান্ত সিং রাজপুত ও পরিণীতি চোপড়ার পাশে এক নবাগত হিসেবে তাঁর পারফরম্যান্স দর্শকের নজর কাড়ে। প্রথম ছবিতেই ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন ‘সেরা নবাগত অভিনেত্রী’ হিসেবে।
ক্যারিয়ারের আকাশ তখনই যেন উন্মুক্ত হয়েছিল তাঁর সামনে। কিন্তু আকাশে উড়তে থাকা পাখির ডানায় কখনও কখনও ঝড় এসে ধাক্কা দেয়। ২০১৬ সালে মুক্তি পায় রণবীর সিংয়ের বিপরীতে তাঁর দ্বিতীয় বড় বাজেটের সিনেমা ‘বেফিকরে’। প্যারিসের অলিগলিতে নায়কের সঙ্গে বাণীর রোমান্স, নিখুঁত শরীরী ভাষা, সাহসী দৃশ্য– সব ছিল ছবিতে। এরপরও দর্শকের মন জয় করতে পারেনি সেটি। বাণীর জীবনেও শুরু হয় আত্মবিশ্লেষণের এক কঠিন অধ্যায়।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণত সব দোষ নিজের ওপর নিই। যখন ছবি চলে না, মনে হয় আমারই ভুল ছিল। কেমন যেন গিল্ট ফিলিং কাজ করত।’ বাণীর এই কথা শোনার পর মনে হয়, এই মেয়েটা শুধু অভিনেত্রী নন, তিনি একজন যোদ্ধাও। হতাশা তাঁকে ভেঙে ফেলেনি; বরং নতুন করে গড়েছে। এরপর ২০১৯ সালে ওয়ার সিনেমায় ছোট চরিত্রে দেখা গেলেও বাণী নিজের উপস্থিতি টিকিয়ে রাখেন। সত্যিকার অভিনয়ের পরিপক্বতা তিনি দেখান ‘চণ্ডীগড় কারে আশিকী’ সিনেমায়।
এ সিনেমায় তিনি এক ট্রান্সজেন্ডার নারীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। এ চরিত্রের জন্য সাহস লাগে। দর্শকের প্রতিক্রিয়াও ছিল মিশ্র। তবুও বাণী পিছপা হননি।
তিনি বলেন, ‘সবাই যখন নিরাপদ চরিত্রে কাজ করতে চায়, আমি সেখানে ঝুঁকি নিয়েছি। কারণ আমি জানি, শিল্প-সাহিত্য কখনও নিরাপদ জায়গায় জন্মায় না।’ তাঁর এ বক্তব্যে যেন তাঁর শিল্পীসত্তার ছায়া পড়ে। এ বছর বাণীর দুটি ভিন্নধর্মী সিনেমা মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও মুক্তি পেয়েছে একটি। নাম ‘রেইড টু’। অন্যদিকে ‘আবির গুলাল’ রোমান্টিক কমেডি, যা রাজনৈতিক কারণে মুক্তি স্থগিত হয়েছে।
বাণীর জীবনে নেই শুধু সাফল্যের পর সাফল্য; রয়েছে ব্যর্থতার ছায়ায় দাঁড়িয়ে নিজেকে নতুন করে খোঁজার গল্প। যিনি জানেন কীভাবে নিজেকে ভালোবাসতে হয়, কীভাবে নিজের আত্মার গভীরতম ভয়কেও আলিঙ্গন করতে হয়। বলিউড তাঁকে যতটুকু দিয়েছে, তার চেয়েও বেশি নিজের ভেতর থেকে তিনি তুলে এনেছেন শক্তি। তিনি প্রমাণ করেছেন, নায়িকা শুধু পর্দায় নয়, জীবনের মঞ্চেও লড়াকু হয়ে উঠতে পারে।