কাজী নজরুল ইসলাম আধুনিক যুগের বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন। কবিতার ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর– এদের পরে যে নতুনধারার কবিতা রচিত হয়েছে– সেই ধারার এক শাখায় রয়েছেন কাজী নজরুল, আরেক শাখায় রয়েছেন জীবনানন্দ দাশ। দুজনই সেই সময়ের শ্রেষ্ঠ কবি। এই দুজন দুই ধারার অনুভূতি ও উপলব্ধির অধিকারী ছিলেন। নজরুল ছিলেন জনগণের একজন। জনকল্যাণে তিনি সমস্ত শক্তি, চিন্তা ব্যয় করেছেন। এরই মধ্য দিয়ে অসাধারণ কবি-প্রতিভারও পরিচয় দিয়েছেন। অন্যদিকে জীবনানন্দ ছিলেন ভিন্ন অনুভূতি উপলব্ধির কবি। তাদের জীবৎকালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং আনুষঙ্গিক আরও অনেক নেতিবাচকতা পাশ্চাত্য সভ্যতায় দেখা দেয়। রেনেসাঁসের নামে মানুষের উন্নত আবেগ-অনুভূতি ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের যে সম্ভাবনা কবি-সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানীরা দেখতেন, তা ওই সমস্ত নেতিবাচক ঘটনার পরে আর অব্যাহত থাকেনি। হতাশা, সবকিছু সম্পর্কে অনাস্থা, মানুষ সম্পর্কে ধারণার অনেক পরিবর্তন ঘটে যায়। আগে ধারণা ছিল, মানুষ সবকিছু্ পারবে। রাতারাতি হয়তো পারবে না, কিন্তু প্রজন্মান্তরের চেষ্টায় পারবে। উন্নতি থেকে আরও উন্নতির দিকে মানুষ যাবে। এ ধরনের আশাবাদী ভবিষ্যৎ চিন্তা নিয়ে তখন কবি-সাহিত্যিকরা যে অনুভূতি ও উপলব্ধি প্রকাশ করতেন, তা আর তখনকার কবিদের মধ্যে পাওয়া যেত না। বরং জীবনের দুঃখময় দিকগুলোই তারা মহিমান্বিত করতে ও বড় করে দেখানো শুরু করেন। জীবনের নানান দিক থেকে মানুষের এই দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার ভাব, চিত্র জীবনানন্দের কবিতায় এসেছে। অনেকে বলেছেন জীবনানন্দ নৈরাশ্যবাদী ছিলেন, যদিও তা সত্য মনে করি না। অপরদিকে কবি নজরুল ইসলাম অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সংগ্রামী মানুষের বিজয় দেখিয়েছেন তাঁর কবিতায়, প্রবন্ধে, কথাসাহিত্যে।
নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা তাঁর কাব্যজীবনের একদম প্রথমদিকে লেখা। এই কবিতা লেখার পর থেকেই তিনি বাংলাভাষী সব অঞ্চলে কবিখ্যাতি লাভ করেন। এই কবিতায় অন্যায় অবিচার, ধর্মের নামে অনাচার– এই সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের চেতনা ব্যক্ত হয়েছে। মানুষের যে মনুষ্যত্ব সেটিকে তিনি খুব বড় করে দেখেছেন এবং বলতে চেয়েছেন— বর্তমানের কলঙ্কজনক কোনো ঘটনা তাকে কিছুদিনের জন্য পেছনে ফেলতে পারে, কিন্তু মানুষ শেষ পর্যন্ত তাকে অতিক্রম করবে। দুঃখ ও দুর্দশা কাটিয়ে সে ক্রমাগত উন্নতির দিকে যাবে। জীবন ও জগতের সব রহস্য মানুষ একদিন উন্মোচন করতে পারবে। ধর্মগ্রন্থ কিংবা ঈশ্বরের ওপরে নির্ভর করে নয়, মানুষ তার স্বাধীন চিন্তাশীলতা এবং উন্নত আবেগ-অনুভূতি দিয়ে জগৎকে নতুন করে গঠন করবে। মানুষের পরাজয় সাময়িক। জয়টাই অবশ্যম্ভাবী। ঐশ্বরিক ক্ষমতা মানুষের মধ্যেও আছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ নজর ল ইসল ম অন ভ ত নজর ল
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে চক্রান্ত করা হচ্ছে
অন্তর্বর্তী সরকারকে নানাভাবে ব্যর্থ করে দিতে ভারতীয় আধিপত্যবাদের দোসররা চক্রান্ত চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জুলাই ঐক্য নামের একটি প্ল্যাটফর্মের সংগঠকেরা। একই সঙ্গে সচিবালয় থেকে ভারতীয় আধিপত্যবাদীদের অপসারণ, ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালানো উপদেষ্টাদের অপসারণ এবং কালবিলম্ব না করে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদানের দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জুলাই ঐক্য আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়েছে।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে নানাভাবে ব্যর্থ করে দিতে চক্রান্ত চালাচ্ছে ভারতীয় আধিপত্যবাদের দোসররা। তারা এই সরকারকে ব্যর্থ করে দিয়ে জুলাইয়ের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে এই দেশকে আবারও ভারতীয় কর্তৃত্ববাদীদের হাতে তুলে দিতে চায়।
জুলাই ঐক্যের একজন কর্মী বা একজন জুলাই যোদ্ধা বেঁচে থাকতে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না মন্তব্য করে মুসাদ্দিক আলী বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ড. ইউনূস সাহেব (প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে থাকবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ড. ইউনূস সাহেবের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। আমরা আশা রাখি, তিনি ছাত্র–জনতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে উপদেষ্টা পরিষদকে সংস্কার করবেন।’
জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক মুসাদ্দিক আলী আরও বলেন, ‘কালবিলম্ব না করে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদান করতে হবে এবং এটাকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কোনো ধরনের টালবাহানা সারা দেশের ছাত্র–জনতা মেনে নেবে না।’
জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক আপ বাংলাদেশের প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, ‘আজকে জুলাই বিপ্লবের এতগুলো মাস পার হয়ে যাওয়ার পরেও আমাদেরকে রাজপথে কেন নামতে হচ্ছে, সেটা সবার কাছে পরিষ্কার। জুলাই যোদ্ধাদের যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা ছিল, সেগুলোর দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে, আমরা দেখতে পাচ্ছি তাঁরা ক্ষমতার কামড়াকামড়িতে লিপ্ত হয়েছেন।’
আবদুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলব, জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা শুধু নির্বাচন নির্বাচন করেন, আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতের ব্যাপারে আপনাদের মুখে কোনো কথা আমরা শুনছি না। আপনাদের এই নির্বাচনের স্বপ্ন, আমরা জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাস্তবায়ন হতে দেব না।’