কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এক কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টাকা না দিলে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে ওই ব্যবসায়ীকে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাত ৮ টা ২০ মিনিটের দিকে মোবাইলে ফোন করে ব্যবসয়ী আশরাফুল আলমকে হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তিনি রাতেই কুমারখালী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

আশরাফুল আলম উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং চর এতমামপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের ছেলে। 

আরো পড়ুন:

শেরপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

বরগুনায় শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ কারাগারে

পুলিশ ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে কাঠ ব্যবসায়ী আশরাফুল আলমের মোবাইলে নাম না জানা ব্যক্তি কল দেন। ফোনে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দিবি, যদি না দিস, তোর জন্য ৬টি বুলেট বরাদ্দ আছে।’

এর আগে, গত ২০ মে একই নম্বর থেকে আশরাফুলকে প্রথমে কল দেওয়া হয়েছিল। সেদিন ফোনে নাম না জানা ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আগামীকালের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা দিবি। যদি না দিস তাহলে তোর লাশ যেকোনো জায়গায় পড়ে থাকবে।

শুক্রবার (২৩ মে) সকালে ফোনে ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম বলেন, “ফোনে নাম না জানা ব্যক্তি বারবার পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছে। টাকা না দিলে গুলি করে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। পরিবার নিয়ে খুবই আতঙ্কে আছি। থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।” 

তার ভাষ্য, “আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান হওয়ায় দুর্বৃত্তরা ফোনে চাঁদা চেয়ে হুমকি দিচ্ছে।” 

এ বিষয়ে জানতে যে নম্বর থেকে ব্যবসায়ীকে ফোন করা হয়েছিল সেই নম্বরে কল করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে কুমারখালী থানার ওসি মো.

সোলায়মান শেখ বলেন, “লিখিত অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরাধীকে শনাক্ত করে দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ ব যবস য় আশর ফ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মুখ দিয়ে লিখে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন বাহার

হাত দিয়ে আমরা সবাই লিখি। বাহার উদ্দিন রায়হান লিখেন মুখ দিয়ে। কারণ, বাহারের এক হাত নেই, আরেক হাত থাকলেও, সেটি আছে কনুই পর্যন্ত। মুখে কলম আটকে কনুইয়ের সাহায্যে লিখে তিনি কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছেন, বাকিগুলো দিয়েছিলেন শ্রুতিলেখকের সহায়তা নিয়ে। এভাবে পরীক্ষা দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে ২০১৬-১৭ সেশনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করে সম্প্রতি সমাবর্তন নিয়েছেন তিনি। 
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পঞ্চম সমাবর্তনের ছবি দেখে যোগাযোগ করি তাঁর সঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান জীবনের নানা কথা। বাহার উদ্দিনের বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার জহির পাড়ায়। ২০০৪ সালের কথা। বাহার তখন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে বছরের ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় দেখতে পান, বাড়ির পাশে বিদ্যুতের খুঁটিতে বসানো ট্রান্সফরমারে একটি ছোট পাখি ঢুকে পড়েছে। সেই পাখিকে দেখার অদম্য নেশা পেয়ে বসে তাঁর। বৈদ্যুতিক তারে হাত দিতেই ঝলসে যায় তাঁর দুই হাত, বুকের কিছু অংশ ও পায়ের তলা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। কেটে ফেলা হয় তাঁর এক হাত ও আরেক হাতের কনুই পর্যন্ত। এরপর ধীরে ধীরে হাত ছাড়াই দৈনন্দিন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। গোসল, খাওয়া, পোশাক পরায় অভ্যস্ত তিনি। পারেন মোটরসাইকেল চালাতে, স্কেটিং করতে; এমনকি কম্পিউটার চালাতেও। মুখে কলম আটকে কনুইয়ের সাহায্যে কম্পিউটারে টাইপ করেন। বাহার প্রমাণ করেছেন, কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই তিনি। 
চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও চকরিয়া সরকারি কলেজ থেকে স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার হন বাহার। এখন থাকেন চট্টগ্রামের খুলশীতে। সেখানে ক্লাউড প্রজেক্ট লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন দুই বছর ধরে।
মায়ের গর্ভে থাকার সময় বাবা মারা যান। মা ক্ষেতখামারে কাজ করে অর্থ উপার্জন করেছেন। ছোটবেলা থেকে নানার বাড়িতে থাকার সুবাদে লেখাপড়া থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজের উৎসাহ পেয়েছেন সবার কাছ থেকে। নানা, নানি, মামা, খালাদের উৎসাহ, সাহস, দেখভাল, অর্থনৈতিক সহযোগিতা করার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে বারবার বলেন বাহার। সেই সঙ্গে শিক্ষকদের অবদানের কথাও অনস্বীকার্য। সবার অনুপ্রেরণা ও মায়ের চেষ্টায় অদম্য বাহার স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পেরেছেন। 
বাহার উদ্দিন রায়হান বলেন, ‘জীবনে অনেক বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। সামাজিকভাবে, চলাফেরায়, লেখাপড়ায়– এমনকি চাকরি ক্ষেত্রেও পদে পদে বাধার মুখে পড়েছি। প্রতিনিয়ত সবাই ভাবেন, হাত নেই বলে হয়তো আমি কাজ করতে পারব না। স্বাভাবিক ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে পেরেছি মনোবলের জোরে। যেহেতু আমাদের দেশে ফিজিক্যাল ডিজঅ্যাবলদের জন্য জীবনযাপন খুব সুবিধার নয়, তাই কষ্ট করে এতদূর এসেছি। বারবার নিজেকে প্রমাণ করতে পরীক্ষা দিতে হয়। তবে আমি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ এড়িয়ে চলি।’ 
তিনি আরও বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক। তবে স্কুলে পড়ার সময় যারা অর্থনৈতিকভাবে বেশি স্বাবলম্বী তারা আমাকে এড়িয়ে চলত। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠতা হয়েছে। দারুণ সময় কেটেছে ওদের সঙ্গে। শিক্ষকদের স্নেহাশিস পেয়েছি, যাতে লেখাপড়ায় মনোবল ধরে রাখতে পেরেছি।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ