১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে তালেবানের প্রথম শাসনামলে ভারত সরকার আফগানিস্তানের এই গোষ্ঠীটির সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল এবং তাদের শাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি। ওই সময় তালেবানের পাশে ছিল পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব। তবে সম্প্রতি ভারত তালেবানকে কাছে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তালেবান সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছে, সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ভারতের এমন পরিবর্তন কেন?

আল-জাজিরা অনলাইন শুক্রবার জানিয়েছে, ১৯৯৬ সালের আগে ভারত সোভিয়েত-সমর্থিত মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহর সরকারকে সমর্থন করেছিল। ১৯৯৬ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর কাবুলে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয় ভারত। তারা তালেবানকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একটি প্রক্সি হিসেবে দেখতে শুরু করে।

২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে তালেবানদের উৎখাতের পর ভারত কাবুলে তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করে এবং আফগানিস্তানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার হয়ে ওঠে। আফগানিস্তানের অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জল প্রকল্পে তিন বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করে ভারত।

২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর নয়াদিল্লি তাদের দূতাবাস খালি করে এবং আবারো এই গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে এবার ভারত প্রথমে গোপনে তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ গড়ে তোলে এবং পরবর্তীতে এই সম্পর্কের কথা প্রকাশ করতে শুরু করে।

তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ২০২২ সালের জুনে ভারত কাবুলে তার দূতাবাস পুনরায় চালু করে এবং এটি পরিচালনার জন্য ‘প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞদের’ একটি দল প্রেরণ করে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তালেবান মুম্বাইয়ের আফগান কনস্যুলেটে একজন ভারপ্রাপ্ত কনসাল নিয়োগ করে। গত জানুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এবং তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি একটি বৈঠকের জন্য দুবাই যান।

পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় ১৫ মে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তার এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানালেন, “সন্ধ্যেবেলায় ভারপ্রাপ্ত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে খুব ভালো কথাবার্তা হলো।”

তালেবান ইস্যুতে হঠাৎ ভারতের এমন পরিবর্তন কেন?

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো তানভি মদান বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই যে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা টেলিফোনে নিজেদের মধ্যে কথা বললেন এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যদি কারো থেকে থাকে সেটি অবশ্যই পাকিস্তানের!

মূলত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতিকেই যে ভারত কূটনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে চাইছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

পাকিস্তান বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে আফগান তালেবানই আসলে ‘তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান’ বা টিটিপি-কে মদত দিয়ে আসছে এবং আফগানিস্তানের ভেতরে তালেবান নাকি তাদের জন্য বেশ কিছু মুক্তাঞ্চল পর্যন্ত বানিয়ে দিয়েছে। এই ইস্যুতে গত বছরের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের ভেতরে বেশ কিছু এলাকায় পাকিস্তান আকাশপথে হামলা পর্যন্ত চালিয়েছে, পাকতিকা প্রদেশে এমন একটি হামলায় প্রায় ৫০জন নিহতও হয়েছেন। পাল্টা জবাব দিয়েছে তালেবানও। এরপর থেকেই তালেবান ও পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আর ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে এই ক্রমবর্ধমান দূরত্বকেই ভারত কাজে লাগাতে চাইছে। এই মুহূর্তে ভারত চাচ্ছে আফগানিস্তানকে পাকিস্তানের চেয়ে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে।
 

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পরর ষ ট রমন ত র আফগ ন স ত ন র র পরর ষ ট র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

১৫ বছর ধরে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করেছি: সিইসি

গত ১৫ বছর ধরে নির্বাচন কমিশন দেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করেছে বলে মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, এখন সময় এসেছে দায়িত্ব পালনের।

মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক এক্সেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় অন্য চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীন (জেবেল)। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, আমরা আজ যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজ আলাপের সময় দেখি উনি সব জানেন। ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সবকিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিকভাবে পৌঁছাচ্ছে। এজন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, এখন আমাদের বার্তা হবে- ভোট দিন, নাগরিক দায়িত্ব পালন করুন। এ দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটাই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।

শিরোনাম যেন বার্তার প্রতিবন্ধক না হয় সাংবাদিকদের প্রতি সে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দয়া করে আপনারা সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। অনেক সময় দেখেছি, ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ‘ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন’ চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারণায় আপনাদের যুক্ত করতে চাই।

ভোটের তারিখ দুই মাস আগে জানানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সবকিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়ন, সমস্ত ডিটেইলসহ।

সিইসি আরও বলেন, ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিসাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাদের বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়। প্রমাণ করুন, আমরা পারি। যেমন ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে পেরেছিলাম, এবারও পারব।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৫ বছর ধরে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করেছি: সিইসি