ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাণিজ্য প্রধান বলেছেন, ২৭ সদস্যের এই সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ, তবে তার ভিত্তি হবে ‘সম্মান’, ‘হুমকি’ নয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ইইউ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত সব পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দেয়ার পর সংস্থাটির দিক থেকে এমন বক্তব্য এলো।

শনিবার (২৪ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

আরো পড়ুন:

হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির পথ বন্ধ করলো ট্রাম্প প্রশাসন

ওয়াশিংটনে বন্দুক হামলায় নিহত ২ দূতাবাস কর্মীর নাম জানাল ইসরায়েল

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার ও বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে একটি ফোনালাপের পর ইইউ বাণিজ্য প্রধান বলেন, “ইইউ উভয়ের জন্য কার্যকর একটি চুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইইউ-মার্কিন বাণিজ্য হুমকি নয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধার মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া উচিত। আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে প্রস্তুত।”

এর আগে শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই পক্ষের মধ্যে চলমান আলোচনার ধীরগতিতে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, তার পরিকল্পনা হলো ইইউ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সকল পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক পহেলা জুন থেকেই কার্যকর করা।

সামাজিক মাধ্যম সোশ্যাল ট্রুথ এ ট্রাম্প লিখেছেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা কোনো দিক অগ্রসর হচ্ছে না’। তিনি আরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি বা উৎপাদিত পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না।

গত মাসে ট্রাম্প ইইউ পণ্যের উপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন, কিন্তু আলোচনার জন্য সময় দেওয়ার জন্য ৮ জুলাই পর্যন্ত তা অর্ধেক করে ১০ শতাংশ বহাল রাখেন।

শুক্রবার (২৪ মে) ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমি কোনো চুক্তির সন্ধান করছি না- আমরা চুক্তিটি তৈরি করেছি।” এরপর তিনি বলেন, ইউরোপের কোনো কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্রে বড় বিনিয়োগ হলে তিনি এ নিয়ে বিলম্ব করতে রাজি আছেন।

ইইউ ওয়াশিংটনের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। মার্কিন সরকারের তথ্যানুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত বছর ৬০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে এবং ৩৭০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য কিনেছে।

ট্রাম্পের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় দেশগুলো সতর্ক করে বলেছে, উচ্চতর শুল্ক উভয় পক্ষের জন্য ক্ষতিকর হবে।

আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বলেছেন, “আমাদের এই পথে যাওয়া উচিত হবে না। আলোচনাই সর্বোত্তম ও একমাত্র টেকসই পথ।”

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন্ট সেন্ট-মার্টিন বলেছেন, “আমরা একই নীতি বজায় রাখছি: উত্তেজনা কমানো, কিন্তু আমরা জবাব দিতেও প্রস্তুত আছি।”

জার্মানির অর্থনীতিমন্ত্রী ক্যাথেরিনা রেইচ বলেছেন, “ইউরোপীয় কমিশন যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অবশ্যই সবকিছু করতে হবে।”

ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ সাংবাদিকদের বলেছেন, বাণিজ্য আলোচনায় ইইউ যে কৌশল নিয়েছে তাকে তিনি সমর্থন করছেন। ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগেও আমরা শুল্ক কমতে ও বাড়তে দেখেছি”।

ট্রাম্পের অভিযোগ হলো ইউরোপ অসম বাণিজ্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চায় কারণ তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে।

তিনি বলেন, এই বাণিজ্য ঘাটতি আমেরিকান কোম্পানিগুলোর জন্য অন্যায্য। বিশেষ করে তিনি গাড়ি ও কৃষিপণ্যের বিষয়ে থাকা নীতিগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ট্রাম্পের হুমকির পর শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে শেয়ার বাজারের দরপতন হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র বল ছ ন আম দ র র জন য ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনিদের গাজার বাইরে পাঠাতে ফের আলোচনা

গাজা উপত্যকা থেকে লাখো ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক অন্যত্র স্থানান্তরের বিতর্কিত প্রস্তাব নিয়ে আবারও আলোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ২১ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের অবসানে ট্রাম্পের ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে কাতারে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলাকালে বিষয়টি ফের আলোচনায় এলো। 

এ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার গাজায় এক দিনে আরও ৪১ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। অবরোধের কারণে ত্রাণ না পৌঁছায় খাদ্যাভাবে শিশুসহ অনেকে মানুষ মারা যাচ্ছেন। তবে ইসরায়েলকেও এ নিয়ে কড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। গতকাল তাদের ৫ সেনা নিহত ও ১৪ জন আহত হয়। সম্প্রতি এটা আগ্রাসনকারীদের ওপর হামাসের সবচেয়ে বড় হামলা। 
আলজাজিরা জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্র সফররত নেতানিয়াহু ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। হোয়াইট হাউসের ব্লু রুমে তারা নৈশভোজে মিলিত হন। নেতানিয়াহু বৈঠকে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ফিলিস্তিনিদের ‘উন্নত ভবিষ্যৎ’ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করছে। তিনি পরামর্শ দেন, গাজার বাসিন্দারা প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে যেতে পারে। নেতানিয়াহু বলেন, ‘কেউ থাকতে চাইলে থাকতে পারে। আর যদি চলে যেতে চায়, তাহলে তাদের চলে যাওয়া উচিত। এটি একটি কারাগার হওয়া উচিত নয়। এটি একটি উন্মুক্ত জায়গা হওয়া উচিত। মানুষ স্বাধীনভাবে সেখানে পছন্দমতো ঘুরে বেড়াবে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন দেশ খুঁজে বের করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি, যারা ফিলিস্তিনিদের একটি উন্নত ভবিষ্যৎ দিতে চায়। আমার মনে হয়, আমরা বেশ কয়েকটি দেশ খুঁজে বের করার কাছাকাছি চলে এসেছি।’

এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বছরের শুরুতে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরিত করে উপত্যকাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানানোর কথা বলেছিলেন, যা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। তিনি দাবি করেছিলেন, ‘আশপাশের দেশ’ থেকে এ বিষয়ে ‘দুর্দান্ত সহযোগিতা’ আসছে। তাই ভালো কিছু ঘটবে। সূত্র জানায়, ইসরায়েলের কোনো প্রতিবেশীই চায় না ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজ মাটি থেকে বাস্তুচ্যুত হোক। 

জর্ডানের আম্মান থেকে আলজাজিরার হামদা সালহুত বলেন, ‘এটি এমন একটি বিষয়, যা ইসরায়েলিরা কিছুদিন ধরেই বলে আসছে। ফিলিস্তিনিদের তাদের মাতৃভূমি থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে। অবশ্যই এটা জাতিগত নির্মূল হিসেবে নিন্দার বিষয়।’  

হামাসের ব্যাপক প্রত্যাঘাত 

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, উত্তর গাজার একটি ঘটনায় তাদের পাঁচ সেনা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দু’জন। টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, বাইত হানুনে আরেকটি ঘটনায় রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরিত হয়ে আরও ১২ সেনা আহত হয়েছেন। হামাস বলছে, ইসরায়েল গাজার মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে পরাজিত করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তারা প্রতিরোধ চালিয়ে যাবেন। ইসরায়েল সামরিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক– সব দিক দিয়েই পরাজিত হয়েছে।  

১৮ হাজার শিক্ষার্থীর প্রাণহানি

ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে শিক্ষকসহ কমপক্ষে ১৮ হাজার ২৪৩ শিক্ষার্থী ও কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩১ হাজার ৬৪৩ জন। এর মধ্যে গাজায় ১৭ হাজার ১৭৫ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী নিহত ও ২৬ হাজার ২৬৪ জন আহত হয়েছেন। গাজার কমপক্ষে ২৫২টি পাবলিক স্কুল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১১৮টি ধ্বংস হয়েছে। পশ্চিম তীরে ১৫২টি স্কুল, আটটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। জেনিন, তুলকারেম, সালফিট ও তুবাসের বেশ কয়েকটি স্কুলের বেড়াও ধ্বংস করা হয়েছে। 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ