সরকারি হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালুর দাবি
Published: 24th, May 2025 GMT
সরকারি হাসপাতাল ও বিশেষায়িত ইনস্টিটিউটগুলোতে ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালু এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের নবম গ্রেডে পদায়নে দাবি করেছে বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফিজিওথেরাপি: স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সেমিনারের ফিজিওথেরাপিস্টরা এ দাবি করেন।
সেমিনারে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা.
আয়োজনে জানানো হয়, সংস্কার প্রতিবেদনে অন্যান্য স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সংজ্ঞায়িত করা হলেও ফিজিওথেরাপিস্টদের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বা এলাইড হেলথ প্রফেশনালদের অন্তর্ভুক্ত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সেমিনারে জানানো হয়, এই আইন কেবল ফিজিওথেরাপি পেশার মানকেই উন্নত করবে না, বরং এর মাধ্যমে এই পেশায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের অধিকারও সুরক্ষিত হবে।
এ সময় বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতে ১১ বা ১২তম গ্রেডে নিয়োগের প্রস্তাব বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল-বিআরসি কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ডের সঙ্গে বৈষম্যের সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ করে। এটি ফিজিওথেরাপি পেশার মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেও জানানো হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
উপকূলের দ্বীপে ত্বকের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা
প্রতিকূল প্রকৃতির নির্মম ছোবল, বিশুদ্ধ পানির সংকট ও দারিদ্র্য সব মিলিয়ে খুলনার উপকূলীয় প্রান্তিক মানুষের কাছে বেঁচে থাকাই একপ্রকার লড়াই। সেখানে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ভাবার সুযোগ কই? তার ওপর হাসপাতালে যেতে হলে পড়তে হয় যোগাযোগব্যবস্থার জটিলতায়। এমন বাস্তবতায় চিকিৎসাসেবা তাঁদের কাছে যেন সোনার হরিণ। নিয়মিত লবণপানিতে বসবাসের কারণে সেখানে ত্বকের নানা রোগ নিত্যদিনের সঙ্গী।
এসব মানুষের দোরগোড়ায় ত্বকের চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে চর্মরোগ–বিশেষজ্ঞদের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ একাডেমি অব ডার্মাটোলজি (বিএডি)। বিশ্ব ত্বক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে খুলনার দাকোপ উপজেলার তিনটি দ্বীপ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ এই চিকিৎসা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে।
চিকিৎসা কার্যক্রমের সমন্বয় করছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ–বিশেষজ্ঞ মো. ওয়াজেদ আলী মৃধা। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই প্রথম বাংলাদেশ একাডেমি অব ডার্মাটোলজি এমন আয়োজন করেছে। দাকোপের বাজুয়া, কালিনগর ও চালনা—এই তিন এলাকায় চিকিৎসা শিবিরের কার্যক্রম চলছে।
ঢাকা থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে অন্তত এক হাজার মানুষকে বিনা মূল্যে ত্বকের চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। প্রথম দুই শিবিরে দেখা গেছে, এ অঞ্চলের বেশির ভাগ রোগী ছত্রাকজনিত সংক্রমণে ভুগছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উষ্ণতা ও আর্দ্রতা বাড়ছে। ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।
আজ রোববার বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে দ্বিতীয় শিবিরের কার্যক্রম চলছে কালিনগর জি সি মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ২০০৯ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আইলার সময় দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে ডুবে গিয়েছিল পুরো কালিনগর। সেই ক্ষত এখনো শুকায়নি। সেখানে চিকিৎসা নিতে এসেছেন গৃহিণী সাহেরা খাতুন (৩৬)। দীর্ঘদিন ধরে একজিমায় ভুগছেন তিনি। দুই হাতের আঙুলে ঘা হয়ে গেছে। সারাক্ষণ যন্ত্রণায় কাঁদেন।
সাহেরা খাতুন বলেন, গ্রামের চিকিৎসকদের কাছ থেকে ওষুধ খেলে কিছুদিন ভালো থাকেন। অনেক ঝাড়ফুঁক করিয়েছেন। কিন্তু কখনো ভালো চিকিৎসক দেখাতে পারেননি। এবার সেই সুযোগ পেলেন। আরেক গৃহিণী শিবানী রায় (৪৭) বলেন, শরীরে দীর্ঘদিন ধরে চুলকানি। পায়ের গোড়ালিও ফেটে থাকে। বড় কোনো চিকিৎসক দেখানো হয়নি কখনো।
চিকিৎসক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএডির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের পানি ও মাটির লবণাক্ততায় ত্বকের রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ভোগেন নারী ও শিশুরা।
চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, এখনকার বহু মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দাঁত (ফাঙ্গাল ইনফেকশন), কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস (লবণপানি, কৃষিজমি বা দূষিত মাটি থেকে সৃষ্ট একজিমা), ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, হাত-পায়ে ক্ষত, চুলকানি, মুখের কালো দাগ, খুশকি ও চুল পড়া, শ্বেতীসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগলেও নিয়মিত চিকিৎসাসেবা পান না।
গত ২০ জুন বাজুয়া ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ে প্রথম শিবিরে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ একাডেমি অব ডার্মাটোলজির সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ–উপাচার্য শহীদুল্লাহ সিকদার। সেখানে ২৫০ জনের বেশি মানুষ চিকিৎসা নেন। আগামীকাল সোমবার চালনা মহিলা কলেজে হবে তৃতীয় শিবির। অধ্যাপক শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘ত্বক আমাদের শরীরের প্রথম সুরক্ষা স্তর। সুস্থ ত্বক মানেই সুস্থ শরীর। আমরা চাই, ত্বকের যত্ন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ুক। তৃণমূলের মানুষের কাছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা পৌঁছাক।’
বিশ্ব ত্বক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে মানুষকে ত্বকের যত্ন সম্পর্কে সচেতন করা এবং সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতেই এই আয়োজন করা হয়েছে।