ইমরান খান: হাসপাতালের জন্য ক্রিকেটে ফেরা, এরপর বিশ্বকাপ জয়
Published: 25th, May 2025 GMT
জাভেদ মিয়াঁদাদ ও ইমরান খান—পাকিস্তান ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তি। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯২ সাল সময়ে একসঙ্গে পাকিস্তান দলে খেলা এ দুই ক্রিকেটারের সম্পর্ক মাঠের বাইরেও গভীর ও জটিল। যে সম্পর্কের ধরন জানা যাবে মিয়াঁদাদের ‘কাটিং এজ: মাই অটোবায়োগ্রাফি’ বইটা পড়লে। পরপর দুটি অধ্যায়ে মিয়াঁদাদ লিখেছেন ইমরান সম্পর্কে অনেক কথা। ‘ইমরান অ্যান্ড আই’ নামে অধ্যায়ে মূলত প্রশংসা, ‘আ ডিফিকাল্ট রিটায়ারমেন্ট’ অধ্যায়ে তীব্র সমালোচনা। আজ পাঠকদের জন্য থাকছে মূলত প্রশংসার অংশটুকু।‘ইমরান অ্যান্ড আই’ অধ্যায়ে কী লিখেছেন মিয়াঁদাদ
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে জয় পাকিস্তানের জন্য এক গৌরবময় অর্জন। এটি ইমরান খানের সঙ্গে আমার দীর্ঘ সময়ের সম্পর্কের সেরা সাফল্যও।
আমার খেলোয়াড়ি জীবনে পাকিস্তানকে একটি বিশ্বমানের দলে পরিণত হতে দেখে আমি ভাগ্যবান। ইমরান ছাড়া এটি সম্ভব হতো না। একজন ক্রিকেটারের আত্মজীবনীতে অন্য একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে একটি পুরো অধ্যায় উৎসর্গ করাটা অদ্ভুত মনে হতে পারে। কিন্তু ইমরান কোনো সাধারণ ক্রিকেটার নন, তিনি ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। এই অধ্যায়ে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নিজের সেরা সময়ে ইমরান খান পাকিস্তান ক্রিকেটে শাসন করতেন। ছিলেন সেনাপতির মতো, যাঁর আদেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠত না। এর পেছনে আংশিক কারণ ছিল তাঁর শিক্ষা, আচার-আচরণ এবং পারিবারিক নাম (তাঁর দুই চাচাতো ভাই মজিদ খান ও জাভেদ বুরকি পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলেন)। কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেটে তাঁর শক্তিশালী ভূমিকার আসল কারণ তিনি দলের অপরিহার্য বোলার ছিলেন।
পাকিস্তান সব সময়ই ভালো মানের ব্যাটসম্যান তৈরি করতে পারত, কিন্তু ভালো মানের বোলার, বিশেষ করে ফাস্ট বোলার মনে হতো শুধু ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকেই বের হবে। ইমরানই পাকিস্তানের প্রথম বোলার, যিনি শীর্ষস্থানীয় বোলারদের একজন হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি শুধু তাঁর সময়ের সেরা একজন হিসেবেই বিবেচিত নন, ইতিহাসের সেরা বোলারদেরও একজন।
বিশ্বমানের ফাস্ট বোলার ছাড়া একটি প্রভাবশালী টেস্ট দল হওয়া সম্ভব নয়। বরং একটি দলে যত বেশি প্রথম সারির ফাস্ট বোলার থাকবে, বৈশ্বিক অঙ্গনে আধিপত্যের সম্ভাবনা তত বেশি বাড়বে।
ইমরান একজন নিখুঁত পেসার হিসেবে প্রথম স্বীকৃত হন ১৯৭৬-৭৭ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক জয়ের পর। এর অল্প পরেই তিনি কেরি প্যাকার্স ওয়ার্ল্ড সিরিজে বিশ্বের সেরা বোলারদের সঙ্গে টেক্কা দেন। সেখানে সব শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যানই তাঁর বলে ভুগেছেন।
এই সময়ে ইমরান বিশ্বের অন্যান্য ফাস্ট বোলারের সঙ্গে একটা গতির প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। ডেনিস লিলি, জেফ থমসন, মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস, লে রু, মাইক প্রক্টর, কলিন ক্রফট ও জোয়েল গার্নারের মতো বোলারদের সঙ্গে লড়াই করে ইমরান হয়েছিলেন দ্বিতীয় দ্রুততম (প্রথম থমসন)। এই অভিনব এবং আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতা ক্রিকেট বিশ্বে ইমরানকে একজন ব্যতিক্রমী ফাস্ট বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এতে ইমরানও আশ্বস্ত হন যে তিনি অন্যতম সেরা। পরবর্তী সময়ে এই আত্মবিশ্বাস কখনো কমেনি।
যখন ইমরান বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবে আবির্ভূত হলেন, তাঁর সঙ্গে পাকিস্তান ক্রিকেটের তারকাটাও উজ্জ্বল হলো। দলের ভেতরে, এমনকি পুরো দেশে ইমরানের গুরুত্ব দ্রুত বাড়তে থাকল।
ইমরান যখন পাকিস্তানের অধিনায়ক হলেন, তখন এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেন, যেখানে মাঝারি মানের পারফরম্যান্সের কোনো স্থান ছিল না। দলে জায়গা পাওয়া হয়ে গেল কঠোরভাবে পারফরম্যান্স-ভিত্তিক। প্রত্যেকেই দলে নিজেদের জায়গা হারানোর ভয়ে থাকত, যেটা আবার নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবেও কাজ করত। নিজের সামর্থ্যে আত্মবিশ্বাসী থাকায় ইমরান কাউকে ভয় পেতেন না। যে কারণে খেলোয়াড় এবং ক্রিকেটের হর্তাকর্তারা তাঁকে আরও বেশি ভয় পেতেন।
জাভেদ মিয়াঁদাদ ও ইমরান খান।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইমর ন খ ন র জন য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
৫৩ বছর বয়সে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসলেন সালেহা বিবি
সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তির প্রথম সপ্তাহেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল সালেহা বিবিকে। সংসারে ঢুকে বন্ধ হয়ে যায় স্কুলের পাট। কিন্তু পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার কষ্ট কখনোই ভুলতে পারেননি। এরপর সংসারের অভাব অনটন ও ছেলেদের পড়াশোনা সব মিলিয়ে আর নিজের পড়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে দেরিতে হলেও ধীরে ধীরে সেই ইচ্ছা পূরণ করছেন তিনি। চলতি বছর ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অংশ নিচ্ছেন ৫৩ বছর বয়সী সালেহা।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তক্তপাড়া গ্রামের গৃহবধূ সালেহা বিবি তক্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহার আলীর স্ত্রী। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী সালেহার জন্ম ১৯৭২ সালের মার্চে।
সোমবার শাহার–সালেহা দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পড়ার টেবিলে বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সালেহা বিবি। তিনি জানান, লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ থেকেই আবার তার লেখাপড়া শুরু। স্বামী ও ছেলেদের সহযোগিতায় ২০১৯ সালে উপজেলার শ্রীপুর রামনগর টেকনিক্যাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের ভোকেশনাল শাখায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ৪.৬০ পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে গত ২৬ জুন শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন তিনি। সালেহা জানান, সুযোগ থাকলে স্নাতক শেষ করে এলএলবি পড়ে আইন পেশায় নিয়োজিত হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার।
স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে সালেহার পরিবার। বড় ছেলে শামীম হোসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ছোট ছেলে সাগর হোসেন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে পড়ছেন।
সালেহার স্বামী শাহার আলী বলেন, অল্প বয়সে আমার সঙ্গে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে আর পড়াশোনার সুযোগ পায়নি। এজন্য নিজেকে অপরাধী মনে হয়। তাই তাকে নতুন করে ভর্তি করে দিয়েছিলাম। সে পড়াশুনায় ভালো করছে। তিনি নিজে স্ত্রীকে পরীক্ষার হলে পৌঁছে দেন এবংপরীক্ষা শেষে বাড়ি নিয়ে আসেন।
সালেহার বড় ছেলে শামীম হোসেন বলেন, এখন সুযোগ হয়েছে তাই আমরা মাকে আবার পড়াশোনা করাচ্ছি। এই বয়সে মায়ের লেখাপড়ার ধৈর্য দেখে অবাক হয়ে যাই। মায়ের জন্য গর্ব হয়।
ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজের প্রভাষক মাহবুবুর রহমান মনি জানান, সালেহা বিবি তার প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত শিক্ষার্থী। তিনি অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন।
বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, এই বয়সে লেখাপড়া সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। সালেহা বিবি অন্যদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।